রাজনীতিতে শিশুদের অমানবিক ব্যবহার

মাসুদুজ্জামান
Published : 14 May 2013, 04:34 PM
Updated : 14 May 2013, 04:34 PM

লাশ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই চলছে কুটকচাল। শুরু হয়েছে অন্য এক রাজনীতি। মধ্যরাতে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়া হেফাজতিদের[হেফাজতে ইসলাম কর্মীদের]হটিয়ে দেওয়ার সময় কতজন নিহত হয়েছেন, সেই সংখ্যা নিয়ে সরকারের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। ফেইসবুকসহ অনলাইনেও চলছে জঘন্য মিথ্যাচার। হাইতির ভূমিকম্পে নিহত আর পাকিস্তানে বোমা বিস্ফোরণে নিহত মানুষের লাশ ফেসবুকে দিয়ে বলা হচ্ছে শাপলা চত্বরে নাকি এইসব লাশ পড়ে ছিল। একদিকে সংখ্যাতাত্ত্বিক বাগবিস্তার, অন্যদিকে ডিজিটাল কারসাজিতে মানবতা আজ বিপন্ন।

শাপলা চত্বরে আসা অভিযান পরবর্তী মাদ্রাসার কচি কচি মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে আমার ঠিক এই কথাটিই বার বার মনে পড়ছিল। কতটুকু রাজনীতি বোঝে ওই শিশু-কিশোররা? একটা জাতিরাষ্ট্র, যে-রাষ্ট্রটি তার সাংবিধানিক অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে সেকুলার হয়ে উঠতে চায়, উদারনৈতিক গণতন্ত্র যার অন্বিষ্ট, সেই রাষ্ট্রের মধ্যে ধর্মীয় ডিসকোর্সের কতটুকু ঠাঁই হতে পারে, আমাদের বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ যে কথা বোঝেন না বা বুঝতে চান না, কোমলমতি এইসব মাদ্রাসার ছাত্র তার কতটা বুঝবে? তাদের এই রাজনীতি বোঝাটাও কী জরুরি? রাজনীতির মধ্যে তাদের টেনে আনারও কী কোনো প্রয়োজন ছিল?

জামায়াতে ইসলামী আর শিবিরের কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মানবতার এই বিপন্নতার শুরু। হেফাজতিরা চেয়েছিল একে পূর্ণতা দিতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পর এই প্রথম আমরা লক্ষ করলাম ধর্মকে অসংসদীয় পদ্ধতিতে মূল রাজনীতির মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্যে আন্দোলনে নামলো একটা ধর্মীয় গোষ্ঠী। কোনো নির্বাচন নয়, কোনো ধরনের জাতীয় ঐকমত্য নয়, শ্রেফ আন্দোলন করে রাষ্ট্রের যে মূলনীতি আছে, তাকেই বদলে দিতে চায় হেফাজত। আমাদের সংবিধানের সঙ্গে চরমভাবে সাংঘর্ষিক, প্রতিক্রিয়াশীল, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূলনীতি-বিরোধী ১৩ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামলো তারা। এই আন্দোলন আবার শুরু করেছিল এমন একটা সময়ে যখন আরেকটি নির্বাচন আসন্ন। যেন নির্বাচনের আগে একটা ধাক্কা দিলেই সরকার পড়ে যাবে, যে ধাক্কার কথা বিরোধীদের মুখে প্রায়শই উচ্চারিত হয়।ৎ এই আন্দোলনে কার কতটা লাভ হলো, রাজনীতিতে এখন তার চুলচেরা হিসাবনিকাশ চলছে। ক্ষমতার সিঁড়িটা কতদূর, সেটা পায়ের কাছ থেকে সরে গেল কিনা, গেলে আবার কীভাবে তা পুনরুদ্ধার করা যাবে, তারও হিসেব কষছেন রাজনীতিবিদরা।

কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখেছি অবরোধের দিন দুপুরের পর থেকে কী নারকীয় তাণ্ডবই না ঘটে গেল সেদিন। বায়তুল মোকাররম-মতিঝিল-গুলিস্তান জুড়ে জ্বলে ‍উঠলো আগুনের লেলিহান শিখা, পুড়িয়ে দেয়া হলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়সম্বল, হামলা চালানো হলো এটিএম বুথে, যন্ত্রচালিত করাতের নিচে কাটা পড়লো কংক্রিটের এই শহরে অক্সিজেন সরবরাহকারী অসংখ্য গাছ। বাদ পড়লো না রাজনৈতিক দলের ভবনও। সমস্ত বিকেল আর প্রথম রাতের এই ঘটনার পর মধ্যরাতের শাপলা চত্বরে কী ঘটতে পারে, ঘটনা কোন দিকে গড়ায়, সেসব দেখার জন্যে সারারাত টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছি আমি। সেই্ রাতে হয়তো আমার মতো আরও অনেকেই এইভাবে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে বসে ছিলেন। হিন্দি ফিল্মের রোমহর্ষক দৃশ্যকেও হার মানিয়েছে সেদিনের সেই তাণ্ডব, যার শিকার হতে হয়েছিল ফুটপাতের ক্ষ্রদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাস্তার অসংখ্য সবুজ বৃক্ষরাজিকে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আমার মনে গেথে আছে কয়েকজন শিশু-কিশোরের ভয়ার্ত ছুটোছুটির দৃশ্য, টেলিভিশনের পর্দায় যে দৃশ্যগুলো কয়েকবার ভেসে উঠছিল।

বলতে চাই এই শিশু-কিশোরদের কথা। একসময় 'জেহাদি জেল্লায়' কী উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল তাদের কচি কচি মুখগুলো যখন তারা সকালের দিকে অবরোধে অংশ নিচ্ছিল। কিন্তু মধ্যরাতের মতিঝিলে পুলিশী অভিযানের মুহূর্তে দারুণ ভয়ার্ত দেখাচ্ছিল তাদের চাহনি। বেঁচে থাকবার আকুতিতে ছুটে পালাবার কী প্রাণান্তকর চেষ্টা। শুধু টেলিভিশনের পর্দায় নয়, দৈনিক পত্রিকাতেও ছাপা হয়েছে সেইসব ছবি। একটি পত্রিকায় দেখলাম, ১২/১৩ বছরের এক আতঙ্কিত শিশুকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন এক পুলিশ সদস্য। শিশুটি পরম নির্ভরতায় তার পিঠে চড়ে পার হয়ে যাচ্ছে লণ্ডভণ্ড ভষ্মীভূত এলাকা। শুধু কী ছবি? এইসব শিশু-কিশোরকে সেদিন কী ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, অনলাইন এবং ছাপা পত্রিকাতে তার কিছু বিবরণ ছাপা হয়েছে। সেইসব বিবরণ পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছিল, যেন কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত জনপদের কথা পড়ছি। একদল নিরস্ত্র মানুষকে – যাদের অধিকাংশই শিশু – ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সশস্ত্র সৈনিকদের সামনে। টেলিভিশনেই দেখেছি, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দুদিকে দুটো 'এক্সিট রুট' খোলা রেখে তারা অভিযান চালাচ্ছিল আর ওই পথ দুটো ধরেই অন্যদের সঙ্গে শিশুরাও মতিঝিল থেকে পালাচ্ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এই শিশুদেরকে এরকম একটা সমাবেশে আনা হলো? তারা কী স্বেচ্ছায় এসেছিল নাকি কেউ তাদের সেখানে আসতে বাধ্য করেছিল? এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত আছে রাজনীতির ক্ষেত্রে আমাদের নীতি-নৈতিকতার দিকগুলো কতটা উপেক্ষিত হচ্ছে। লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। শিশুদের ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না কিছুই। শিশুরা যে বড়দের মতো নয়, শিশুদের সুরক্ষার জন্যে সংঘাতপূর্ণ রাজনীতি থেকে যে তাদের দূরে রাখা দরকার, সেকথা এইসব রাজনীতিবিদদের মাথায়ই আসছে না। অথবা মাথায় এলেও তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের এভাবে ব্যবহার করছেন।

হেফাজত প্রথম থেকেই এই কাজটি করে আসছে। ১৩ দফা দাবি আদায়ের নামে শিশুদের তারা রাজপথে নিয়ে এসেছে। সহিংস আন্দোলন উস্কে দিয়েছে। সাঈদীর বিরুদ্ধে যখন জামায়াত-শিবির দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে, তখন নারী আর শিশুদের মিছিলের সামনে ঠেলে দিয়ে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। নারী ও শিশুদের এইরকম ব্যবহার মানবিকতার যে কোনো মানদণ্ডে নিন্দনীয় শুধু নয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমাদের রাজনীতিতে এইভাবে যোগ হয়েছে নতুন অশুভ মাত্রা।

শিশুর জীবন আর মনস্তত্ত্ব নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন তারা দেখিয়েছেন, বয়স্কদের চাইতে নির্ভরশীলতা আর নিরাপত্তাহীনতার বোধ শিশুদের অনেক বেশি। শিশু সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বোধ করে তখনই যখন তার চোখের সামনে কোনো সংঘাতময় ঘটনা ঘটে। সেই সংঘাতে কেউ আহত হলে বা কারুর মৃত্যু হলে তাৎক্ষণিকভাবে তো বটেই, সারাজীবন ওই ঘটনা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সন্ত্রাস, ভীতি, অসহায়ত্বের অনুভূতি তার জীবনকে গ্রাস করে। মনোবিজ্ঞানীরা একেই চরম পীড়াদায়ক বা আঘাত জনিত ঘটনা (অ্যাকিউট ট্রম্যাটিক ইভেন্ট) বলে অভিহিত করেছেন। শিশুদের তাই কোনো অবস্থাতেই কোনোরকম সংঘাতপূর্ণ পরিবেশে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু হেফাজতের আন্দোলনের সময় আমরা দেখলাম, মাদ্রাসার কোমলমতি শিশু-কিশোরদেরকে ধর্মীয় উন্মাদনার নামে কীভাবে মুত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হলো। আমাদের সমাজে যারা প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে, যারা সাবঅল্টার্ন গোষ্ঠীভুক্ত, নিম্নবিত্ত বা হতদরিদ্রের সন্তান, অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি, তাদেরকেই এভাবে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত এলিটদের সন্তান হলে এরকম ব্যবহার সম্ভব হতো না।

ঢাকায় সংঘাতে নিহত নরসিংদির এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর পিতা সন্তানের মৃত্যুর পর জানতে পেরেছেন হুজুর তার সন্তানকে ঢাকার সমাবেশে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এজন্যে যে অভিভাবকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন, তার কোনো তোয়াক্কা করেননি ওই হুজুর। অনলাইন একটা পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে ভয়াবহ আরও কিছু ঘটনা। টাঙ্গাইল মির্জাপুর কওমি মাদ্রাসার কিশোর শরীফউদ্দিনকে মানবঢাল হিসেবে মিছিলের সামনে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। মতিঝিলের সংঘাতে সে এতটাই বিপন্ন বোধ করেছে যে, ওই ঘটনার কথা মনে করে ঘটনার দুদিন পরও বার বার সে মুর্চ্ছা গেছে। ঢাকায় তাকে আনা হয়েছিল বেত্রাঘাত আর পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া হবে এই ভয় দেখিয়ে। মতিঝিলের ঘটনা তাকে এখন এতটাই তাড়িয়ে ফিরছে যে রাবার বুলেটে সামান্য আহত শরিফ মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। শরিফের মানসিক এই যে বিপর্যয়, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে উদ্বেগের দিক। শরীফের জীবন এর পর স্বাভাবিকভাবে চলাই কঠিন হয়ে পড়বে। সেদিন বায়তুল মোকাররম আর মতিঝিলের যে তাণ্ডব আমরা দেখেছি, সেই তাণ্ডবে শুধু শরীফ নয়, শরিফের মতো অনেকেই অংশগ্রহণ করেছিল বা অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। রাজনীতিতে শিশুদের এই যে ব্যবহার তা শুধু নিন্দনীয় নয়, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মানসগঠনের ক্ষেত্রেও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব রেখে যাবে।

বলছিলাম ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে শিশু-কিশোরদের ব্যবহারের কথা। শিশুদের জীবনকে এভাবে বিপন্ন করে তোলার অধিকার আমাদের কারোরই নেই। সেদিন একটা টেলিভিশন টক শোতে শিশুদের এভাবে রাজনীতিতে ব্যবহার করা কতটা সঙ্গত হচ্ছে সে সম্পর্কে কথা বলছিলেন দুজন আলোচক। এদের একজন একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বিতর্কিত' শিক্ষক, অন্যজন একটা বেসরকারি টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক। তারা দুজনেই এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-আলোচক বলছিলেন, হেফাজতের সমাবেশে যে শিশুরা এসেছিল তারা হয়তো স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়েছিল। শাহবাগেও অনেক শিশুকে নাকি এইভাবে নিয়ে এসেছিলেন কোনো কোনো অভিভাবক। তার মতে দুই ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটেছে – শিশুদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। হেফাজতের অপরাধকে লঘু করে দেখার বা তাদের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার এই যে বয়ান, তুলনা করলেই বোঝা যাবে কতটা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। শিশুরা হেফাজতের সমাবেশে স্বেচ্ছায় এলেও তারা একটা দলীয় ব্যানারের ছায়াতলে থেকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে শিশুরা গেছে পারিবারিকভাবে – বাবা-মায়ের পরমনির্ভর হাত ধরে। অভিভাবকেরাও তাদের শিশুদের নিয়ে গেছেন স্বাধীনতার ইতিহাস আর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে পরিচিত করাতে। শাহবাগে আসা অসংখ্য শিশু যখন তাদের কচিকণ্ঠে 'জয় বাংলা' শ্লোগান তুলেছে, তখন সেই স্লোগানের মধ্য দিয়ে ওই অভিভাবকেরা ফিরে গেছেন একাত্তরে, স্বাধীনতার রক্তঝরা সংগ্রামী দিনগুলোতে। মুক্তিযুদ্ধ কালের যে গান বা চলচ্চিত্র শাহবাগে দেখানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকেই নতুন করে আবিষ্কার করেছে। শিশুদের কাছে সেই অভিজ্ঞতা ছিল অভূতপূর্ব এক অভিজ্ঞতা। শাহবাগে আসা শিশু-কিশোররা তাই হেফাজতি শিশু-কিশোরদের মতো কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েনি। তাদের কোনো রকম সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়নি।

শাহবাগের পরিবেশের সঙ্গে আসলে সেদিনের হেফাজতিদের সমাবেশের তুলনা করাই নির্বুদ্ধিতার শামিল। শাহবাগে যারা আসেননি তাদের পক্ষে ওই পরিবেশ বোঝা একেবারেই সম্ভব নয়। টেলিভিশনের টকশোতে বসে শুধু ডিসকোর্স কপচানো যায় মাত্র, প্রকৃত ঘটনা থেকে যার মেরুদূর সম্পর্ক। ফলে শাহবাগে যে শিশু-কিশোররা এসেছে, তারা ইতিহাসের এক মধুর অধ্যায়ের স্বাদ পেয়ে দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হয়েছে। কিছুটা হলেও তাদের মনে জাতিগত পরিচয়ের বীজ প্রোথিত হতে পেরেছে। অন্যদিকে হেফাজতিরা তাদের আন্দোলনের ভেতর দিয়ে একদিকে ধর্মীয় উন্মাদনার বীজ শিশুদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে, একসময় এই বীজ হয়তো মহীরুহ হয়ে সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষে পরিণত হবে। গণতান্ত্রিক উদারনৈতিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠা বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের জন্যে যা কখনই কল্যাণ বয়ে আনবে না। অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়ভিত্তিক, সমতাসূচক বাংলাদেশের স্বপ্নও সুদূর পরাহত হয়ে থাকবে। প্রশ্ন হলো, আমরা কী এরকম বাংলাদেশ চাই, যে-বাংলাদেশ ধর্মীয়, জাতিগত, শ্রেণিগত, অর্থনৈতিক বৈষম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে? প্রত্যুত্তরে বলবো, কখনই নয়। এই মুহূর্তে তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অবসান চাই, সেই সঙ্গে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হোক শিশু-কিশোরদের অমানবিক ব্যবহার।

মাসুদুজ্জামান : কবি, লেখক। অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।