পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থল সীমান্ত তাৎক্ষণিক বন্ধের পাশাপাশি সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত।
Published : 23 Apr 2025, 11:37 PM
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় হতাহতের ঘটনার পর পাকিস্তানের বিষয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত। সার্ক ভিসা স্কিমের অধীনেও পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থল সীমান্ত বন্ধের পাশাপাশি ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে ভারতের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে পাকিস্তানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সিদ্ধান্ত আসার খবর দিয়েছে এনডিটিভিসহ দেশটির সংবাদমাধ্যম।
বৈঠকের পর বিফ্রিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এসব তথ্য জানান।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পহেলগামে মঙ্গলবার ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন। আহত হন আরও ১০ জন। কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে তারা এই হামলার শিকার হয়েছেন। প্রিয়জন হারিয়েছেন নানা প্রান্তের মানুষ।
‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন এই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই সংগঠনটি পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা। টিআরএফ এর পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর হাত আছে বলে ধারণা করা হয়।
প্রায় এক বছরের মধ্যে কাশ্মীর অঞ্চলে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
এমন প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব সফরের মাঝপথে দেশে ফিরে আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক করেন। এতে পাকিস্তানের বিষয়ে জোরালো এসব পদক্ষেপ নেন।
এনডিটিভি লিখেছে, সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অবিলম্বে ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি বন্টন চুক্তি স্থগিত করা সবচেয়ে বড় ও জোরালো পদক্ষেপ। এর ফলে সিন্ধু ও এর শাখা নদী ঝিলাম, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রু এর পানি যতটুকু যাওয়া প্রয়োয়জন তা যাবে না। এসব নদী পাকিস্তানের অনেক বৃহৎ এলাকার পানি সরবরাহের বড় উৎস। লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রায় এর প্রভাব পড়বে।
১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় দুই প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে পানি বন্টন নিয়ে এ চুক্তি হযেছিল। আন্তর্জাতিকে এ চুক্তিতে সই করেছিলেন ভারতের ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালের যুদ্ধেও এ চুক্তি টিকে ছিল, যা এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেল।
জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে ভারতের সর্বোচ্চ এ কমিটি একই সঙ্গে পাকিস্তানিদের সার্ক ভিসা এক্সেম্পশন স্কিমের (এসভিইএস) ভারতে আসা বন্ধ এবং এর অধীনে যারা ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চলে যেতে হবে।
আর আটারি স্থল সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে ওই নিরাপত্তা পোস্ট দিয়ে যারা ভারতে এসেছেন তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ফিরে যেতে হবে।
একই সঙ্গে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদে দুই দেশের হাই কমিশনে কর্মকর্তা কমানো ও ফিরে যাওয়াসহ একাধিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এসব সিদ্ধান্ত তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, বৈঠকে জঙ্গি হামলার পেছনে আন্তসীমান্ত সংযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এ হামলা এমন এক সময়ে করা হয়েছে যখন সফল একটি নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সূচনা হয়েছিল।
হামলার প্রকৃতি ও গুরুত্ব বিবেচনা করে কমিটি এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি তুলে ধরেন।
এরপর সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে স্থলপথে আটারি-ওয়াঘা চেকপোস্ট অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ পথ দিয়ে যারা ভারতে এসেছেন তাদের ১ মে এর মধ্যে ফিরে যেতে হবে।
পাকিস্তানের বিষয়ে নেওয়া ৫ সিদ্ধান্ত
>> ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত থাকবে। বিশ্বাসের সঙ্গে অপরিবর্তনীয়ভাবে যতদিন না পাকিস্তান সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের সমর্থন প্রত্যাখ্যান করছে, ততদিন এটি স্থগিত থাকবে।
>> তাৎক্ষণিকভাবে সমন্বিত আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত চেকপোস্ট বন্ধ হবে। বৈধ নথিপত্র নিয়ে যারা আটারি-ওয়াঘা পার হয়েছেন, তারা ওই পথ ধরে ১ মের মধ্যে ফেরত যেতে পারবেন।
>> সার্ক ভিসা এক্সেম্পশন স্কিমের (এসভিইএস) আওতায় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। পাকিস্তানি নাগরিকদের এর আগে দেওয়া যেকোনো এসভিইএস ভিসা বাতিল বলে ধরা হবে। ভারতে এ ভিসায় অবস্থান করা পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে।
>> দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনের সামরিক ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা যেমন- নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের অবাঞ্চিত (পার্সোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করা হয়েছে। তারা ভারত ছাড়তে এক সপ্তাহ সময় পাবেন। একইভাবে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশন থেকে নৌ ও বিমান উপদেষ্টা প্রত্যাহার করছে ভারত। উভয় হাই কমিশনের এসব পদ তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল হিসেবে ধরা হয়েছে। এছাড়া উভয় দেশের হাই কমিশনের ‘সার্ভিস অ্যাডভাইজারের’ পাঁচজন কর্মীকেও তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হবে।
> হাই কমিশনের সামগ্রিক লোকবল ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১ মের মধ্যে এটি কার্যকর করতে হবে।
আরও পড়ুন
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার নেপথ্যে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’, কোথায় এর শেকড়?
কাশ্মীরে হামলার নিন্দায় ইউনূস, ভারতের জন্য শোক
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা ঘটনার পর ভারতের পাশে থাকার বার্তা ডনাল্ড ট্রাম্পের
কাশ্মীর হামলার পর মোদীকে ফোন ট্রাম্পের, পাশে থাকার আশ্বাস
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলা, নিহত ২৬