এ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে ২১টি উপকূলীয় জেলা ডুবে যেতে পারে, এমন শঙ্কা ঝরেছে তার কণ্ঠে।
Published : 07 Apr 2025, 06:36 PM
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র নতুনভাবে আঁকতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার ঢাকার ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে ‘জাতীয় নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক এক অধিবেশনে তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক গভীর হুমকি।
“সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূল ধ্বংস এবং জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতির ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে তার মানচিত্র নতুনভাবে আঁকতে হতে পারে।”
এ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে ২১টি উপকূলীয় জেলা ডুবে যেতে পারে, এমন শঙ্কা ঝরেছে তার কণ্ঠে।
উপদেষ্টা বলেন, “কোটি মানুষ গৃহহীন হবে। কৃষি ও মাছ চাষে ব্যবহৃত নদীগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন মানে শুধু মিঠা পানি লবণাক্ত হয়ে যাওয়া নয়, এটা মানে আমাদের ভূখণ্ড হারানো, জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এবং সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়া।”
রিজওয়ানা বলছেন, দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ আমিষের জন্য মিঠা পানির মাছের ওপর নির্ভরশীল। লবণাক্ততা তা নষ্ট করে দিতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও খরার ফলে জিডিপির ১ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে।
“২০৫০ সালের মধ্যে এ হার দ্বিগুণ হতে পারে। ফসলহানি, পানির সংকট ও গণ-বাস্তুচ্যুতি সংঘাত সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে গেলে, বাকি দুই-তৃতীয়াংশে প্রচণ্ড চাপ পড়বে। অস্থিরতা তখন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।”
জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার জন্য ১১টি জলবায়ু ‘চাপ অঞ্চল’ চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়ছেন রিজওয়ানা হাসান। যে প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০৫০ সালের মধ্যে ২৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে।
‘শুধু অর্থ নয়, উন্নয়নের ধরণই পাল্টাতে হবে’
পরিবেশ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিলে তারা বলে, সারা দেশের জন্য মাত্র ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন।”
এ কারণে পরিবেশ দূষণরোধী অভিযানগুলোতে সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
“ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর কাজ শুধু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নয়, বরং জলবায়ু উদ্বাস্তু ব্যবস্থাপনাও হতে পারে। এটা শুধু গাছ বাঁচানোর লড়াই নয়, এটা দেশ বাঁচানোর লড়াই। আমরা ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক ভিন্ন বাংলাদেশ পাবে, যা আজকের মানচিত্রে কল্পনাও করা যায় না।”