‘তোমার পতাকা যারে দাও…’

কাবেরী গায়েন
Published : 27 March 2013, 01:16 PM
Updated : 27 March 2013, 01:16 PM

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে সংক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্ম শাহবাগে আন্দোলন করে যাচ্ছেন আজ এক মাস কুড়ি দিন হলো । তাদের দাবি প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। খানিক আগেই শাহবাগের মঞ্চ মশাল মিছিল করেছে ২৫ মার্চ কালো রাতের স্মরণে। মোম জ্বালিয়েছে তারা শহীদ মিনারে, জগন্নাথ হলে- আলোর স্মরণে আঁধার কাটার শপথে। গত পঞ্চাশ দিনের আন্দোলনে লাখো মানুষের সমাবেশ শাহবাগ পার হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে, দেশ ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতে, যেখানেই আছেন বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাভাষী মানুষ। গণজাগরণের এমন নজির পৃথিবীতে বিরল। দিন-রাত নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ সমাবেশ যে এতো সুশৃঙ্খল, এতো প্রাণময়, এতো আশা জাগানিয়া হতে পারে, চোখের সামনে এই উদাহরণটি তৈরী না হলে জানা হতো না। এই সমাবেশ থেকে কখনোই একটি ঢিল ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠেনি, লাখো নারী-পুরুষের সমাবেশে একটি ইভটিজিং-এর অঘটন ঘটেনি। বিশ্ব গণমাধ্যম শুরুতে এই জাগরণকে উপেক্ষা করলেও একেবারে নিশ্চুপ থাকতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এমনকি আল জাজিরা পর্যন্ত এই অভূতপূর্ব জাগরণের পক্ষেই রিপোর্ট করেছে।

প্রজন্ম চত্ত্বরের তরুণরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন অহিংস পথে। তারা দেখিয়েছেন বিপুল জনসমূদ্রের তিন মিনিট নীরবতায় কেমন প্রতিবাদী মহাকাল তৈরি করা যায়, লাখো-কোটি মানুষের একটি একটি মোমের শিখা কীভাবে সমর্থন-সহমর্মিতার আকাশ-গঙ্গা তৈরি করতে পারে দেশ জুড়ে, বেলুনে বেঁধে প্রিয়তম স্বজনের উদ্দেশ্যে উড়িয়ে দেয়া চিঠিগুলো কীভাবে হয়ে উঠতে পারে ৪২ বছর বুকে চেপে রাখা গভীর বেদনা প্রকাশের উপায়। দেখিয়েছেন তারা একটির পর একটি মহাসমাবেশ থেকে কীভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়া যায়। যখন তারা হারিয়েছেন সহযোদ্ধা রাজীব কিংবা শ্লোগানরত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া শান্তকে, তখনো তারা সহিংস হয়ে ওঠেননি মূহুর্তের জন্য। শোককে শক্তিতে পরিণত করেছেন বিপুলতর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে। এমনকি জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে যারা, ভেঙ্গেছে শহীদ মিনার, আগুন ধরিয়েছে জনতার মঞ্চে, এই তরুণ প্রজন্ম তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার পরিবর্তে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে করেছেন পতাকার সমাবেশ। ২১ ফেব্রুয়ারি বধ্যভূমির কাছেই চা-এর স্টলে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম একেবারেই খেটে খাওয়া এক মানুষের ইতিহাস বর্ণনা। তিনি বলছিলেন, 'ভয়ের কিছু নাই। পাকিস্তানি সেনারাই পারে নাই ৭১ সালে…।' এমন সব মানুষের সামষ্টিক যুদ্ধ-স্মৃতিই তরুণ প্রজন্মের শক্তি। সারা দেশটিই হয়ে উঠেছে যুদ্ধ-স্মৃতি বিনিময়ের জন-পরিসর, হেবারমাসের ভাষায় 'পাবলিক স্ফিয়ার'। এই শক্তিতেই, সুশৃঙ্খল অথচ প্রত্যয়ী মিছিলকেই জামাতের ডাকা হরতালগুলো প্রতিহত করার মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছেন তরুণ প্রজন্ম । দাবি আদায়ের এমন শান্তিপূর্ণ গণজাগরণ দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদি করে। কারণ এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছিলো 'একটি ফুলকে বাঁচানো'র জন্য।

কোন ঘটনাকে বোঝার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হলো বিপরীত ঘটনার সাপেক্ষে তাকে বিচার করা। সারাদেশে লাখো মানুষের সমাবেশ থেকে শ্লোগান, কবিতা, গান, নাটক, লেখায় যে প্রতিবাদ, তার বিপরীত শক্তিকে দেখলাম অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়তে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম-ভিত্তি যদি হয় ভাষা আন্দোলন, তার প্রতীক শহীদ মিনারকে আঘাত করা হলো সিলেটে। ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গেছিলো। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় শহীদ মিনার ভাঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনী ও তার সহযোগীরা ১৯৭১ সালে। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের সময় সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলা হয়। আর সিলেটে জঙ্গি মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাংচুর করা হলো গত ২২ ফেব্রুয়ারি। শহীদ মিনারের প্রতি কাদের ক্ষোভ, ইতিহাসের এই রেকর্ড সে'বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়। আমাদের পরম্পরা চিনে নিতে অসুবিধা হয় না। আমাদের পতাকার প্রতিই বা ক্ষোভ কাদের? স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস আছে, এমন কোন মানুষ বাংলাদেশের পতাকা ছিঁড়তে পারে, বিশ্বাস করি না। ইসলামি ব্যাংকের রংপুর শাখায় ঘর পরিস্কার করা ঝাড়ুর মাথায় জাতীয় পতাকা বেধে রাখার ছবিও এসেছে। তা'হলে তারা কারা? নিশ্চয়ই বাংলাদেশ রাষ্ট্রে যাদের অনুগত্য নেই, তারাই। দেখলাম বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতর রাখা জায়নামাজে আগুন দেয়া হয়েছে। কাদের ইতিহাস একই সাথে শহীদ মিনার, জাতীয় পতাকা এবং মসজিদের ভেতর আক্রমণ চালানোর?

প্রার্থনারত মানুষকেই আমরা সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় ধরে নেই, তিনি যে ধর্মেরই হোন; উপাসনা শেষে উঠে আসা মানুষ কখনো সহিংস হতে পারেন না। সেই শান্তিপ্রিয় উপাসনাকারী মানুষদের ইমেজকেই ব্যবহার করা হলো এদেশের মূল প্রতীকগুলোকে আঘাত করার জন্য। করলেন তারা যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে এসেছেন বরাবর। ১৯৭১ সালেও মসজিদের ইমাম রক্ষা পাননি এই শক্তির কাছে। অথচ একটু ঘুরে দাঁড়ালেই এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা জাতীয় পতাকার বিপরীতে তাঁদের দাঁড় করিয়ে দেবার এই রাজনৈতিক কূটচালের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠবেন বলে আমার বিশ্বাস। ফের এমন কোন উদ্যোগ তারা নিজেরাই প্রতিহত করবেন। ইসলামসহ সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ রুপটি এই বাংলা থেকেই বিশ্ববাসী সবচেয়ে পরিপূর্ণভাবে অনুভব করা সম্ভব বলে মনে করি, কারণ সব ধর্মের সহমর্মিতার নির্যাস সংহত হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়।

এরপর এই অপশক্তি গত একমাস ধরে ক্রমাগত আঘাত করে যাচ্ছে হিন্দুদের মন্দির, জনবসতি আর ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর। সরকার হিন্দুদের উপর নেমে আসা এই নির্যাতনকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে আর সেই অভয়ারণ্যে ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয়ের উপর আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। শুরু হয়েছিলো বাঁশখালি, সাতকানিয়া, বেগমগঞ্জে। গত একমাসে সারা দেশে এমন কোন এলাকা নেই, যার কোন না কোন মন্দির বা বিগ্রহ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েছে। বেদনা বোধ করি যখন দেখি, দফায় দফায় এই ধ্বংস-লীলা চালিয়েছে যারা, তাদের এক বড় অংশ ছিলো ১২ থেকে ১৫ বছরের শিশু-কিশোর। রামুর বৌদ্ধবিহারগুলোতে যারা আক্রমণ চালিয়েছিলো গত বছর অক্টোবরে, কিংবা তার আগে সাতক্ষীরায়, তাদের মধ্যেও ১৪ থেকে ২২ বছরের কিশোর-তরুণদের আধিক্যই ছিলো বেশি। এইসব শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যত কী?

এই আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য নানা প্রচারণা চালানো হচ্ছে শুরু থেকেই। রাজীব ব্লগার ছিলেন, কিন্তু তিনি এই আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় কেউ ছিলেন না। তিনি আস্তিক কি নাস্তিক সেই বিষয়েও কোন কথা তার জীবদ্দশায় ওঠেনি। তাকে হত্যার দুই ঘন্টার মাথায় তার নামে 'নূরানী চাপা সমগ্র'র লিংক প্রকাশ করে পাকিস্তানের একটি ওয়েবসাইট। সেখানে রাজীবের খুনের খবরের পাশাপাশি 'নূরানী চাপা সমগ্র'র লেখক হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। অনলাইন নিয়ে কাজ করেন এমন প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এই বিতর্কিত লেখাগুলো রাজীবের নয়। আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টকাস্টের (quantcast.com) দেয়া তথ্যেও এমনই প্রমাণ মেলে। যে পোস্টটিকে দাবি করা হচ্ছে ২০১২ সালে লেখা, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজীব হত্যাকান্ডের আগে কেউ সাইটটিতে ঢুকেছেন, এমন কোন প্রমাণ নেই কোয়ান্টকাস্টে অথচ লিংকটি ছড়িয়ে দেয়ার ফলে একদিনে মোট ভিজিটর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ হাজারের বেশী। অনলাইন ট্রাফিক ও পর্যবেক্ষণ সাইট alexa.com- এর মতেও ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে এই সাইটটিতে ভিজিট করার তথ্য নেই। আমারব্লগ.কম-এর অন্যতম অ্যাডমিন প্রকৌশলী সুশান্ত দাশগুপ্ত অ্যালেক্সা ও কোয়ান্টকাস্টের তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি জানান, "ব্লগটি এক বছর আগের দেখানো হলেও ওয়েব আর্কাইভে এর কোন হদিস নেই।" (বিডিনিউজ২৪ডটকম)। সবচেয়ে বড় কথা, যাকে হত্যা করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আর কী অভিযোগ থাকা সম্ভব?

ধর্মানুভূতিতে আঘাতের বিপক্ষে দেশে আইন রয়েছে, সে'পথে না গিয়ে আন্দোলনকারীদের ঢালাওভাবে অভিযুক্ত করার এই উস্কানিমূলক রাজনীতি না বোঝার কারণ নেই। আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছে সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস, তসলিমা নাসরীনের লজ্জা, ইউটিউব-ই বন্ধ করা হয়েছে ইনোসেন্স অব মুসলিম-এর জন্য। ব্যক্তিগত ব্লগের যে লেখাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে ধর্মানুভূতিতে আঘাতকারী হিসাবে, সেই লেখাকে চিরতরে নিষিদ্ধের দাবি না তুলে কেনো একটি জাতীয় দৈনিকের পাতায় ছাপানো হয়েছে সবার পড়ার জন্য? ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির ইতিহাসটি ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই জারি আছে এই ভূখন্ডে। আজ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারা দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠছে, তখন ট্রাম কার্ডটি যে ধর্মের নামেই ফেলা হবে, সেটিই স্বাভাবিক। সেই পঙ্কিল রাজনীতিকে যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এতো খোলাখুলিভাবে সমর্থন করবেন, সেটি অভাবিত ছিলো। আবার সরকারও যে ক্রমাগত এইসব অপপ্রচারের শক্তির কাছে নতি-স্বীকার করবে, সেটি শুরুর দিকে তাদের সমর্থন এবং উচ্ছ্বাস দেখে বোঝা যায়নি। বিশেষত, কমিটি গঠন করে ব্লগ ঘেঁটে ব্লগারদের কে কে 'ধর্মীয় অনুভূতি'তে আঘাত করেছে বের করার যে উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে সেটির উদ্দেশ্য খুব পরিস্কার নয়। ভোটের রাজনীতি ভিন্ন এর আর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? এ পর্যন্ত সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রশ্নে আন্তরিকই মনে হয়েছে। ফলে এইসব দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করে ব্লগার-অ্যাক্টিভিস্টদের জাতির সামনে নাস্তিক প্রমাণ করার দায়িত্বটি সরকার কেনো নিলেন বোঝা যাচ্ছে না। এই অস্পষ্টতা গোটা আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচারকে যেনো বাধাগ্রস্ত না করতে পারে, সেটিই এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সবার পাহারাদারির জায়গা।

প্রজন্ম চত্ত্বরের তরুণদের অর্জন অনেক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে দেশের দাবিতে পরিণত করা, সেই দাবির পাটাতনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটির রাজনীতি করার বৈধতার বিষয়টিকে জন-পরিসরের অভিতর্কে নিয়ে আসা এসব তাৎক্ষণিক অর্জনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রতিজ্ঞা ছড়িয়ে দেয়া সারা দেশে এবং এদেশে ভবিষ্যতের যে-কোন কর্মকাণ্ডের ন্যূনতম যাত্রাবিন্দু হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এমন আকাঙখাও জাতিকে দেখাতে পেরেছে এই আন্দোলন। তবে জাগরণের প্রথম উচ্ছাসশেষে আন্দোলনটি এখন কঠিন রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি। আন্দোলনরত তরুণদের জীবনাচরণসহ নানা ধরণের অপ্রধান বিষয়গুলোকে প্রধান করে তুলে আন্দোলনটিকে মূল দাবি থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা যা শুরু হয়েছে, তা জারি থাকবে। সেইক্ষেত্রে, শুনতে খারাপ লাগলেও, ভোটের রাজনীতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, শাহবাগ আন্দোলনের মূল স্পিরিটের সাথে সরকারি দলের সমর্থন কোন মাত্রায় জারি থাকবে, নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ দেখে। এসব অপচেষ্টার মুখে আন্দোলনের মূল দাবিকে সমুন্নত রাখা এবং বেগবান করাই সামনের দিনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। যারা পতাকা ছেঁড়ে, শহীদ মিনার ভাঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নকে বারে বারেই রক্তাক্ত করে – তাদের হাত থেকে জাতীয় পতাকা সমুন্নত রাখার ঐতিহাসিক দায়িত্ব আজ প্রজন্মের তরুণদের হাতে। শাহবাগের ঐতিহাসিক জাগরণের পরে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব অনিবার্যভাবে তাদের হাতেই ন্যস্ত হয়েছে, কারণ যারা স্বপ্ন দেখায় সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্বও তাদের উপরেই ন্যস্ত হয়। একইসাথে রাজনৈতিক দলবিহীন মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই শাহবাগ চত্ত্বরের প্রতিজ্ঞাকে, আন্দোলনকে এই দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি কীভাবে তাদের রাজনীতিতে সৃজনশীলভাবে প্রয়োগ করতে পারে, তার উপরেই বাংলাদেশের ভবিষ্যত চেহারাটি নির্ভর করছে।
তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি।

ড. কাবেরী গায়েন: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।