স্বাধীনতার ঘোষণা ও ঘোষক বিতর্ক

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 25 March 2022, 03:36 PM
Updated : 25 March 2022, 03:36 PM

আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিদেশি পত্রপত্রিকা, গবেষণাপত্র এবং পাকিস্তানি জেনারেলদের লেখা বইপত্র পর্যবেক্ষণ করি, তাতে কোথাও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া আর কারো নাম উজ্জ্বলভাবে পাওয়া যায় না। মওলানা ভাসানী সম্পর্কেও পাকিস্তানিদের বইয়ে প্রশংসামূলক বক্তব্য আছে, কিন্তু শেখ মুজিবকে নিয়ে তাদের কোনও বইয়েই একটি প্রশংসাবাক্য নেই, নিন্দা ছাড়া। পাকিস্তান ভাঙার জন্য এখনও পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেই 'গাদ্দার' বলে গালি দেয়। সেই সময়ের পাকিস্তানিদের কারো লেখায় জেনারেল জিয়াউর রহমানের নামের উল্লেখ পাওয়া যায় কি? 

বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে খবর বা বিশ্লেষণে বারবারই বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ হয় বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে, বাঙালি জাতির পিতা হিসেবে। তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ, এমনকি খোন্দকার মুশতাক আহমদও মুক্তিযুদ্ধকালে যে সব সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, তারা আর কারো নয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ করছেন। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি শেখ মুজিব তার অনুপস্থিতিতেই যে একটি জাতির মুক্তিযুদ্ধে এককভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সে কথা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রতিটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ আছে।

পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা একাত্তর নিয়ে বেশ কিছু বই লিখেছেন। এসব বইয়ে তারা নিজেদের অপরাধ আড়াল করার পাশাপাশি সে দেশের মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন, পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাঙালি নেতাদের 'একগুঁয়েমি' এবং কতিপয় পাকিস্তানি নেতার 'নির্বুদ্ধিতা'র কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের অনমনীয়তার কারণেই পাকিস্তান  ভেঙেছে।

পাকিস্তানি বিশ জন সামরিক কর্মকর্তার লেখা বই [ফজল মুকিম খান (পাকিস্তান ক্রাইসিস ইন লিডারশিপ), সিদ্দিকুল্লাহ খান (ইস্ট পাকিস্তান বাংলাদেশ), সিদ্দিক সালিক (উইটনেস টু সারেন্ডার, ওন্ডেড প্রাইড), মোহাম্মদ আসগর খান (জেনারেল ইন পলিটিকস, উই হ্যাভ লার্লন্ট নাথিং ফ্রম হিস্টরি: পাকিস্তান, পলিটিকস অ্যান্ড মিলিটারি পাওয়ার), জেনারেল মোহাম্মদ মুসা (জওয়ান টু জেনারেল), তোজাম্মেল হোসেন মালিক (দ্য স্টোরি অব মাই স্ট্রাগল), রাও ফরমান আলী (হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড) লে জে গুল হাসান (মোমোয়ার্স), লে জে কামাল মতিন উদ্দিন (ট্র্যাজেডি অব ইরোরস, ইস্ট পাকিস্তান ক্রাইসিস), এ আর সিদ্দিক (পাকিস্তান দ্য অ্যান্ড গেইম, দি মিলিটারি ইন পাকিস্তান: ইমেজ অ্যান্ড রিয়ালিটি), জেনারেল কে এম আরিফ (ওয়ার্কিং, উইথ জিয়া: পাকিস্তান ও পাওয়ার পলিটিক্স, খাকি শ্যাডোজ), ব্রি. জে. জি এ খান (দি ওয়ে ইট ওয়াজ), লে জে এ কে নিয়াজি (বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান), মে. জে. হাকিম আরশাদ কোরেশী (দি ১৯৭১ ইন্দো-পাক ওয়ার: এ সোলজারস ন্যারেটিভ), মে জে এ ও মিট্টা (আন লাইকিং বিগেনিং: এ সোলজারস লাইফ), ক্যাপ্টেন গওহর আইউব খান (গ্লিমপস ইন টু দ্য করিডোর অব পাওয়ার), মোহাম্মদ আইউব খান (ডায়েরিজ অব ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইউব খান ১৯৬৯-৭২, সম্পাদনা: ক্রেইগ বক্সটার)] পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা প্রায় প্রত্যেকেই বাংলাদেশ ও বাঙালিদের সম্পর্কে হীন ধারণা পোষণ করেছেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান ভাঙার জন্য দায়ী করেছেন। তাদের কোনো আলোচনাতে জিয়াউর রহমানের নাম কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারপরও যারা জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন, তারা মতলববাজ ছাড়া আর কিছুই নন। কারণ ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি এতই স্পষ্ট উচ্চকিত যে, এ নিয়ে বিতর্ক করা মূর্খতা মাত্র।

বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় এরকম কোনো দুরন্ত আয়োজনের কোনো দুঃসাহস দেখায়নি কেউই, এমনকি মেজর জিয়াও কখনও ঘোষণার বিষয়টিকে বিতর্কিত বলে মন্তব্যও করেননি, দাবি তো দূরের কথা। 

কিন্তু জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে স্বাধীনতার 'ঘোষক' হিসেবে মেজর জিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার এক আয়োজন লক্ষ করা যায়। কারণ ১৯৭৯ সালে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত দল ও ব্যক্তিদের প্লাটফর্ম হয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে তাদের 'স্বাধীনতাবিরোধী' কলঙ্কমোচনের জন্য একজন 'ঘোষক' বড় বেশি প্রয়োজনীয় হয় দেখা দেয়। 'মেজর জিয়া'কেই এ ক্ষেত্রে যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। উপরন্তু, তিনিই ছিলেন সামরিক বাহিনীর সেই ব্যক্তি যিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা 'পাঠ' করেছিলেন। 'বাঙালি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনিই সবার আগে বিদ্রোহ করেন' (মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর, গোলাম মুরশিদ, প্রথমা প্রকাশন, জানুয়ারি ২০১০, পৃঃ ৯২) বিএনপির এই দাবি প্রবল হয়ে দেখা দেয় ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর। তারা আন্দোলন ও ইতিহাসের ধারাবাহিকতার অনিবার্য ফলাফল অস্বীকার করে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দেয়া জিয়াউর রহমানের বেতার-ঘোষণাটিকেই অনেক বড় করে দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ ও সুবিধাকে প্রতিষ্ঠিত করতে মনগড়া ইতিহাস গড়তে চেয়েছেন।

কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা যে কোনও দৌড় প্রতিযোগিতা নয়, যে কেবল একজন মেজর একটি হুইসেল বাজালেন আর সবাই পঙ্গপালের মতো দৌড় শুরু করলেন- এই কথাটা জিয়াউর রহমানের কপট-অনুসারীরা বুঝতে পারেননি, বুঝতে চানও না। একটি জাতির স্বাধীনতার লড়াই কোনো একদিনের ব্যাপার নয়, কোনো একজন মেজরের বেতার-ঘোষণারও ব্যাপার নয়। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ প্রস্তুতি। ইতিহাস এটা বলে যে,  ১৯৬৩ সাল  থেকে শেখ মুজিব ধাপে ধাপে পূর্ব বাংলার স্বাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে যদি এই কালক্রমিক আন্দোলন না থাকতো, তাহলে ২৬ মার্চে যে কেউ এসে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই দেশ যে স্বাধীন হতো না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি আন্দোলনের এই দীর্ঘ ইতিহাস না থাকলে স্বয়ং শেখ মুজিবও হঠাৎ করে ২৬ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও দেশ স্বাধীন হতো কি না, সন্দেহ।

স্বাধীনতার পক্ষে দেশবাসীকে তিনি ধাপে ধাপে উদ্বুদ্ধ ও প্রস্তুত করে তুলেছিলেন বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং কেউ একজন এসে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই দেশ স্বাধীন হয়নি। ইতিহাসের ঘটনাক্রম ও বঙ্গবন্ধু পরস্পর এমন অবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়েছে যে সেখানে শেখ মুজিব ছাড়া আর কারও পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া সম্ভবই ছিল না।

আন্দোলনের ইতিহাসটি যারা জানেন তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার পর ''পূর্ব পাকিস্তান চলতে শুরু করে মুজিবের আদেশে। কেবল আওয়ামী লীগের নয়, তিনি সবার নেতায় পরিণত হন ততদিনে। তার নেতৃত্বে দেশের জনগণ আন্দোলনে ফেটে পড়লেন" (গোলাম মুরশিদ, 'মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর', প্রথমা, জানুয়ারি ২০১০, পৃ-৬৭)।

রাজনীতির প্রবল ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুর পরিবর্তে জিয়াউর রহমানের মতো একজনকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগটা বিএনপি গ্রহণ করেছে মূলত চট্টগ্রামের 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' থেকে প্রচারিত ঘোষণাটিকে পুঁজি করে। কীভাবে সম্ভব হয়েছিল  সেই ঘোষণাটি? কোনো সামরিক লোক নয়, বরং স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করার কথা বেতার কেন্দ্রের কর্মীরাই প্রথম ভেবেছিলেন জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে। ঘোষণা তো বঙ্গবন্ধু আগেই দিয়ে রেখেছেন তার ৭ মার্চের বক্তৃতায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈদুল হাসান সে কথা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন তার 'মূলধারা '৭১' বইয়ে: "ঢাকার বাইরে এ কথা রাষ্ট্র হয়ে পড়ে যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন এবং পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতৃত্ব দান করে চলেছেন" (মঈদুল হাসান, 'মূলধারা '৭১', ইউপিএল, জানুয়ারি ২০১৬ পৃ: ৪)।

কিন্তু বেতারের কর্মীরা বঙ্গন্ধুর 'স্বাধীনতার ডাক' জনসাধারণে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জিয়াউর রহমানকে বেছে নিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের তখনকার কর্মকর্তা বেলাল মোহাম্মদ জানিয়েছেন, জিয়াউর রহমানকে ডেকে নিয়ে এসে তারা স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করান।

মঈদুল হাসান তার বইয়ে জিয়ার ঘোষণাটি সম্পর্কে বলেছেন, "স্বল্পকালের জন্য চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র যখন বিদ্রোহীদের দখলে আসে, তখন ২৬শে মার্চ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান এবং ২৭শে মার্চ সন্ধ্যায় ৮ ইবির বিদ্রোহী নেতা মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। মেজর জিয়া তার প্রথম বেতার বক্তৃতায় নিজেকে 'রাষ্ট্রপ্রধান' হিসেবে ঘোষণা করলেও, পরদিন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন" (পৃ: ৫-৬)।

স্বাধীনতার মনস্তাত্ত্বিক ভিতটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল একাত্তরের মার্চেই, যখন 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো'- স্লোগানটি দিকে দিকে উচ্চারিত হচ্ছিল। যার জন্য পুলিশ আনসারদের অস্ত্রাগার লুট হতে শুরু করেছিল ২৫ মার্চের আগেই। ৭ মার্চের ভাষণের যে দিকটা এখানে প্রযোজ্য সেটা হলো 'ঘরে ঘরে দুর্গ' গড়ে তোলা এবং যুদ্ধের কৌশল বলে দেওয়া হলো যে 'আমরা ভাতে মারবো পানিতে মারবো'। তবে কখন থেকে সেটা অফিসিয়ালি করতে হবে সেটাও ৭ মার্চের ভাষণে আছে। 'আর যদি একটা গুলি চলে' ২৫ মার্চে সেই 'একটা গুলি' না চালানোর নির্দেশ অমান্য করায় 'যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে' পড়েছিল বাঙালি । ২৫ মার্চ রাতে যখন ইপিআর বা পিলখানায় নির্বিচারে গুলি করে বাঙালি সেপাইদের হত্যা করা হয়েছিল তারাও পাল্টা গুলি চালিয়েছিল সেটাই বিদ্রোহ। রাজারবাগ পুলিশে লাইন যখন রক্তের বন্যায় বইছিল সেখান থেকেও বাঙালি পুলিশ ভাইয়েরা গুলি চালিয়ে প্রতিরোধ করেছে সেটাই বিদ্রোহ। এগুলো মেজর জিয়ার বিদ্রোহের আগেই ঘটেছিল।

স্বাধীনতার আহ্বান বা ঘোষণা যে কেউ করতে পারে না। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। স্বাধীনতার ঘোষণা করতে পারেন, এমন একজন নেতা যিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে একটি জাতির মুক্তির জন্য লড়াই করে আসছিলেন। মানুষও এমন একজন নেতার আহ্বানে সর্বস্ব নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে যিনি নিজের জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে তাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন। জিয়াউর রহমানকে একাত্তরের ২৭ মার্চের আগে জনসাধারণ দূরে থাক, দেশে রাজনীতিবিদরাও চিনতেন না। কীভাবে চিনবেন? জিয়াউর রহমান ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর।

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস ২৭ মার্চ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়:

শেখ মুজিবুর রহমান শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামী জাতিটির (পাকিস্তান) দুই অংশের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা অসন্তোষ গৃহযুদ্ধে রূপ নেওয়ায় তিনি এ ঘোষণা দেন।

দালিলিক প্রমাণ নিশ্চিত করে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা শোনা গিয়েছিল এবং পরের দিন সকালে এ নিয়ে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯৭১ সালের শেষ দিকে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসমূহ বিষয়টি স্পষ্ট করেছে যে ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত ঘোষণার ভিত্তিতেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে মধ্যরাতে ঢাকায় ইপিআর ও পুলিশ ব্যারাকের ওপর হামলার ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত বার্তা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। যদিও সরকার গঠনের ব্যাপারে কালুরঘাট থেকে মেজর জিয়ার ঘোষণাও বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রচার পেয়েছিল। তবে স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে জেনারেল জিয়াকে কোনো কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি।