Published : 14 Mar 2021, 06:47 PM
দীর্ঘ সময়ের জন্য শাসিত এ ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আলাদা মানচিত্র অর্জন করে ১৯৭১ সালে। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পর পাকিস্তানের অংশ হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চরমভাবে শাসিত হয়েছে দীর্ঘ ২৪ বছর। এ সময়টাতেই বাংলার মানুষ সবচেয়ে বেশি অধিকার বঞ্চিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ের পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো প্রণয়ন ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার একটি স্পষ্ট রূপরেখা আমরা বাংলাদেশের সংবিধানে দেখি। সংবিধানের ভূমিকায় দেশ পরিচালনার চারটি নীতি প্রণীত হয়। এ মূলনীতিগুলোর মধ্যে অর্থনীতিবিষয়ক মূলনীতি হলো 'সমাজতন্ত্র'। অর্থাৎ সুষম অর্থনৈতিক বণ্টন ব্যবস্থায় একটি শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের নীতি গৃহীত হয়। বস্তুগত অর্থেই স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণে একটি আদর্শ পথ বেছে নিতে চেয়েছেন দেশটির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আক্ষরিক অর্থেই তিনি মনে-প্রাণে 'সমাজতন্ত্রের' প্রচলিত মডেল গ্রহণ করেছেন। আমরা তার মনোভাবে এ কথার স্পষ্ট প্রতিফলন লক্ষ করি। এক্ষেত্রে প্রসঙ্গক্রমে আবুল ফজল লিখিত শেখ মুজব: তাঁকে যেমন দেখেছি (পৃষ্ঠা: ২৩-২৬) গ্রন্থের একটি অংশ উদ্ধুত করা যেতে পারে-
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭২ সালের ২০ মার্চ বিকালে জনাব আবুল ফজল তাঁর দ্বিতীয় পুত্র জনাব আবুল মঞ্জুকে সঙ্গে নিয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হাউজে (তখনও গণভবনের সাজসজ্জা ও সংস্কার কাজ শেষ হয়নি) বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাৎকালে বঙ্গবন্ধু জনাব মঞ্জুর কাছে জানতে চান তিনি করেন। উত্তরে মঞ্জু বলেন তিনি কিছু করেন না। বঙ্গবন্ধু তাঁকে চাকরি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু জনাব মঞ্জু তাতে সম্মত না হয়ে ব্যবসা করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু তখন হাসতে হাসতে বলেন, "ব্যবসা-টেবসা হবে না। আমরা সব জাতীয়করণ করে নেবো।"
তিনি এও ঘোষণা করেছেন যে "শ্রম যার শিল্প তার"। এমনকি দেশের স্থপতি হয়েও তিনি , "ব্যবসা-টেবসা হবে না। আমরা সব জাতীয়করণ করে নেবো"- বক্তব্যে "আমি" নয় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই "আমরা" শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি নির্মাণে ব্যক্তিগত ব্যবসা অনুমোদনের পক্ষপাতি ছিলেন না। সমাজতন্ত্র একই আদর্শে পরিচালিত। এ নীতি মনে করে অর্থনৈতিক শ্রেণি বৈষম্যের পথ খুলে দেয় এ ব্যক্তিগত ব্যবসা। ব্যক্তিগত ব্যবসা সমাজে ধনী-দরিদ্র তথা মালিক-শ্রমিক শ্রেণি তৈরি করে। যেই বঞ্চনার অভিঘাত অতিক্রম করতে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে সে যন্ত্রণার পুনরাবৃত্তির কোনো সুযোগ দিতে চাননি বঙ্গবন্ধু। এক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন তিনি। তিনি চেয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক এ দেশের সমান মালিকানার দাবিদার। এক্ষেত্রে ১৯৭২ সালে তাঁর একটি ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করতে পারি।
১৯৭২ সালের ২ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় শ্রমিক প্রতিনিধিদের একটি কনফারেন্সে বক্তৃতা করেন। পরদিন ৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশ হয়। বঙ্গবন্ধু সেই ভাষণে বলেন, "অর্থনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া রাজনৈতিক মুক্তির কোনো অর্থ দাঁড়ায় না।"
বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতায় আরও বলেন, "সরকার জনকল্যাণে দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় চূড়ান্তভাবে দায়বদ্ধ।" শিল্প, ব্যাংক এবং বিমা কোম্পানিগুলোর জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে সরকার ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, "শ্রমিকের ও জনকলাণে আমি বিশ্বাস করি । আমরা চাই জাতীয় স্বার্থে অর্থনীতি কিছু মানুষের হাতে বন্দি না থাকুক। এই লক্ষ্যে আমরা দেশের নতুন অর্থনীতি তৈরিতে কাজ শুরু করেছি।"
তিনি আরো বলেন, "বাংলাদেশ হবে কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ মানুষের দেশ। ধনীদের একই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হতে হবে।…আমি জানি শিল্পপতিরা খুশি হননি। কিন্তু এখন থেকে শিল্পপতিদের জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষই এখন সম্পত্তির মালিক।"
বঙ্গবন্ধু এর আগেও ২৬শে মার্চ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ব্যাংক-বিমা, পাটশিল্প, বস্ত্র, চিনিশিল্প, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন খাতের বিরাট অংশ, ১৫ লাখ টাকার বেশি সম্পত্তির অনুপস্থিত মালিকদের পরিত্যক্ত প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ বিমান ও জাহাজ করপোরেশনের জাতীয়করণের কথা ঘোষণা করেন। সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরো উল্লেখ করেন, "আমরা শিল্প জাতীয়করণ করেছি। সেগুলো বাঙালি নাকি অবাঙালিদের হাতে রয়েছে সেটি বিবেচনায় না নিয়েই করা হয়েছে।"
এখন প্রশ্ন হচ্ছে 'সমাজতন্ত্র' নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি কী ধরনের বণ্টন ব্যবস্থা অর্থাৎ ডিস্ট্রিবিউশন জাস্টিস প্রিন্সিপাল ব্যবহার করতে সচেষ্ট হয়েছেন? বাংলাদেশের সংবিধান পর্যালোচনায় আমরা এই প্রশ্নের উত্তর পেতে পারি।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনে করতেন, সমাজতন্ত্র ধারণাটি সকল দেশের ক্ষেত্রে অভিন্ন নয়। একটি দেশের ভৌগোলিক পরিবেশসহ নানা উপকরণের সঙ্গে মাননসই হিসেবে সমাজতন্ত্র আলাদা আলাদা হতে পারে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান গ্রহণ উপলক্ষে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যায় বলেছেন:
আমাদের সমাজতন্ত্র মানে শোষণহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। এক এক দেশ এক এক পন্থায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে।…. সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সেই দেশের কী আবহাওয়া, কী ধরনের অবস্থা, কী ধরনের মনোভাব, কী ধরনের আর্থিক অবস্থা, সবকিছু বিবেচনা করে ক্রমশ এগিয়ে যেতে হবে সমাজতন্ত্রের দিকে, এবং তা আজকে স্বীকৃত হয়েছে। রাশিয়া যে পন্থা অবলম্বন করেছে চীন তা করেনি।… নিজ দেশের পরিবেশ নিয়ে, নিজ জাতির পটভূমি নিয়ে সমাজতন্ত্রের পথে চলেছে।… সেজন্য দেশের পরিবেশ, দেশের মানুষের অবস্থা, তাদের মনোবৃত্তি, তাদের রীতিনীতি, তাদের আর্থিক অবস্থা, তাদের মনোভাব, সবকিছু দেখে ক্রমশ এগিয়ে যেতে হয়। একদিনে সমাজতন্ত্র হয় না। (ড. অনুপম সেন, আদি-অন্ত বাঙালি : বাঙালি সত্তার ভূত-ভবিষ্যৎ ২০১১, পৃষ্ঠা. ১৭-১৮)।
বঙ্গবন্ধুর 'আমাদের সমাজতন্ত্র' কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের উপযোগী একটি সমাজতন্ত্রের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেছেন। সে পরিকল্পনার প্রতিফলন পড়েছে দেশটির সংবিধানে।
বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে (রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি) 'সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি' শীর্ষক ১০ নং অনুচ্ছেদে ঘোষণা দেওয়া হয়: "মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।" এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক শ্রেণি বৈষম্য বিলোপের উদ্যোগ প্রতিফলিত হয়। অর্থনৈতিক সমতায়নের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের সমান মর্যাদা নিশ্চিতের একটি শক্ত অভিপ্রায় আমরা এ নীতিতে দেখতে পাই। এখানে বলা সঙ্গত হবে যে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ওই অভিপ্রায় অনেক আগ থেকেই দেশটির স্থপতি ধারণ করতেন। উদাহরণ হিসেবে ১৯৪৯ সালে তরুণ শেখ মুজিবের একটি উপলব্ধি উদ্ধৃত করা যায়:
আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসেবে মনে করি। এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন দুনিয়ার মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না। পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে বিশ্বযুদ্ধ লাগাতে বদ্ধপরিকর। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জনগণের কর্তব্য বিশ্বশান্তির জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করা। যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে যারা আবদ্ধ ছিল, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যাদের সর্বস্ব লুট করেছে- তাদের প্রয়োজন নিজের দেশকে গড়া ও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। বিশ্বশান্তির জন্য জনমত সৃষ্টি করা তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। (বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর চীনে শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে তিনি তার এ উপলব্ধি অসমাপ্ত আত্মজীবনে তুলে ধরেন। পৃ. ২৩৪)
দার্শনিক দৃষ্টিতেও আমরা উপরোক্ত অনুচ্ছেদের একটি স্পষ্ট সমর্থন খুঁজে পাই। সমাজ দার্শনিক রুশোর রাষ্ট্রদর্শনে আমরা দেখি ব্যক্তি মানষের রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য তিনি অর্থনৈতিকভাবে মানুষকে এক কাতারে আনার কথা বলেছেন। কারণ, তিনি মনে করতেন সমাজে যদি অর্থনৈতিক শ্রেণি ব্যবধান থাকে তাহলে তাতে শোষণ আর শাসনের পথ উন্মুক্ত হয়। মানুষের সমান মর্যাদা রক্ষায় তাই তিনি অর্থনৈতিক সমতায়ন অপরিহার্য। এ কারণেই তিনি 'কমনওয়েলথ' ব্যবস্থার ধারণা প্রস্তাব করেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানেও মানুষের মানবিক মর্যাদা রক্ষার সেই অভিপ্রায় দেখা যায়। দীর্ঘ সময়ের শাসন- শোষণ আর বঞ্চনার মুক্তিসনদ হিসেবেই সংবিধানের সমাজতন্ত্রকে শোষণমুক্তির হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সংবিধানের উল্লেখিত অনুচ্ছেদের অভিপ্রায়টির সঙ্গে প্রথমেই আমরা অ্যারিস্টটলীয় 'সুবর্ণ মধ্যক' তত্ত্বের সামঞ্জস্য দেখতে পাই। অ্যারিস্টটটল সমাজের মানুষের অর্থনৈতিক ব্যবধান অবসান করতে সবাইকে এক কাতারে আনার কথা বলেছেন। একারণে তিনি অসমান সমাজে অসম বণ্টন ব্যবস্থা সমর্থন করেছেন। যাদের বেশি দরকার তাদের বেশি দিয়ে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমিয়ে একটি সুষম অর্থনৈতিক সমাজ গড়ার কথা বলেছেন তিনি। এই সুষম ব্যবস্থাকেই তিনি সমাজের জন্য 'সুবর্ণ মধ্যক' আখ্যা দিয়ে সেটিকে ন্যায় হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
সংবিধানের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ঘোষণাটি জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের ন্যায়পরায়ন তত্ত্বের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। কারণ এক্ষেত্রে কাজটির অভিপ্রায় কোনো শর্তাধীন বা ফলাফল নির্ভর নয়। কারণ বাঙালি জাতি শোষণমুক্ত হওয়ার জন্যই স্বাধীনতা চেয়েছে। সেই ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র প্রবর্তন যদি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের হাতিয়ার হয় তাহলে সেটিকে সবাই সাদরে গ্রহণ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং, একান্তই কর্তব্যবোধের প্রতিফলন হিসেবেই সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া এই অভিপ্রায় তথা কাজটি একটি সর্বজনীন নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতেও বাধা নেই। কেননা সময় শোষিত জাতিই শোষণমুক্ত হয়ে স্বাধীন হতে চাইবে এটিই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে খ্যাতনামা মার্কিন দার্শনিক জন রলসের সমতানীতি সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদকে সরাসরি সমর্থন জোগায়। তার অর্থনৈতিক বণ্টন সংক্রান্ত দ্বিতীয় নীতি অর্থাৎ ভিন্নতা নীতিটির সঙ্গে সংবিধানের এই অনুচ্ছেদটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। রলসীয় এ নীতি অনুসারে প্রতিটি মানুষেরই রাষ্ট্রের মালিকানা সমান। তাই ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বণ্টনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সুযোগেও সকলের সমান সুযোগ ও ভাগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সুতরাং, রলসের ন্যায় বণ্টনীয় নীতিটি বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবিত মূলনীতিরই প্রতিধ্বনি।
তবে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শের পথ বেয়ে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি স্বাধীনতার পর রাতারাতি বাস্তবায়িত হয়ে যাবে এমনটি আশা করা সমীচীন নয়। বঙ্গবন্ধু নিজেও সেটির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। ১৯৭২ সালের মে দিবসে বঙ্গবন্ধু লাল বাহিনীর এক জনসভায় বলেন: "শতাব্দী শোষণের সমস্যা আমাদের সামনে। এর সমাধানের জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং আরও আত্মত্যাগের প্রস্তুতি থাকতে হবে। তাহলেই সোনার বাংলা গড়ার ভিত্তি রচিত হবে। ভবিষ্যৎ বংশধরদের শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ নিশ্চিত হবে। সমৃদ্ধির পথে কোনও শর্টকাট রাস্তা আমার জানা নেই।"
কিন্তু হায়, সেই সময় আমরা তাকে দিলাম না। অকৃতজ্ঞ জাতি তার জনককেই হত্যা করল! জাতির পিতার সোনার বাংলা বিনির্মাণের সেই রোপিত বীজকে আমরা পাথর চাপা দিলাম তাকে চিরতরে সরিয়ে দিয়ে। যে পিতা তার সন্তানসম নাগরিকদের সুখ সমৃদ্ধি দিতে চাইলেন তাকেই কি-না জীবন দিতে হলো বিপথগামীদের কলুষিত হাতে! বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে সেই পাপ আমাদের মাথা নত করে!
তবে আশার কথা হলো পাথরচাপায় আড়ষ্ট অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বীজ অঙ্কুরতি হয়ে বর্তমানে টেকসই বৃক্ষের পথে ধাবমান। বঙ্গবন্ধু প্রার্থিত বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির এই খোলাপথ আরো পরিপুষ্ট হোক এটিই প্রত্যাশা।