স্বাধীনতার ৫০ বছর: যেদিন আবাহনীর অভিনন্দনে সিক্ত মোহামেডান

নাজমুল হক তপন
Published : 9 March 2021, 01:57 PM
Updated : 9 March 2021, 01:57 PM

একবার মোহামেডান সমথর্ক বনে গিয়েছিলাম! শুধু কি আমি? আমার মতো আরও কত কট্টর আবাহনী সমর্থকের আবেগও মোহামেডান মুখী হয়েছিল সেবার! ১৯৮৮ সালের এশিয়া ক্লাব কাপে।

এক কথায় আবাহনীর কট্টর সমর্থক ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য তখন ঢাকায়। থাকি খিঁলগাও সিপাহীবাগের দিকে। ওদিকে মিরপুরে চলছে ফুটবল উৎসব। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটে জেরবার অবস্থা। অনেকটা পথ হেঁটে আর শেয়ারে ভ্যানে চড়ে পৌঁছুলাম মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। আমার মতো আরও অনেকের স্রোতও মিরপুরের দিকে। গ্যালারিতে গিয়ে দেখি তিল ঠাঁই আর নাহিরে… অবস্থা।

১৯৮৮ সালের এশিয়া ক্লাব কাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মোহামেডান গোলশূন্য ড্র করে তুলনামূলকভাবে দুর্বল শ্রীলঙ্কার স্যান্ডার্স ক্লাবের বিপক্ষে। এদিকে স্যান্ডার্সকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে পিরুজি। সব মিলিয়ে মূলপর্বে খেলতে হলে মোহামেডানকে মেলাতে হবে কঠিন সমীকরণ–ইরান লিগ বিজয়ী পিরুজির বিপক্ষে জিততেই হবে। ড্র করলেও মূলপর্বে উঠবে পিরুজি।

জাতীয় দলের এক ঝাঁক খেলোয়াড় নিয়ে এশিয়ার ক্লাব ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি পিরুজি; যাদের ডাক নামও দশাসই 'রেড আর্মি'। তাদের ব্যুহ ভেদ করে মোহামেডান খুব বড় কিছু করতে পারবে, এমন ভাবনা ছিল চিন্তারও অতীত। কিন্তু স্রোতের বিরুদ্ধে একজন ভেবেছিলেন, মোহামেডানের সে সময়কার ইরানি কোচ নাসের হেজাজি। ঘরোয়া সাফল্যে এবং ফর্মের তুঙ্গে থাকা মোহামেডানের ফুটবলারদের মধ্যে সেই ভাবনাটা দারুণভাবে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন তিনি। হেজাজি টনিকে উদ্দীপ্ত সাদা-কালো জার্সিধারীরা শেষপর্যন্ত অসম্ভব কল্পনাকে পরিণত করেছিল সম্ভবে। পিছিয়ে পড়া ম্যাচে আক্রমণের ঝড় তুলে দু-দুটো গোল করে ২-১ ব্যবধানের অবিশ্বাস্য রোমাঞ্চকর জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মোহামেডান। পিরুজি ক্লাবের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে বাংলাদেশের প্রথম দল হিসাবে এশিয়া ক্লাব ক্লাবের চূড়ান্তপর্বে জায়গা করে নেয় সাদা-কালো জার্সিধারীরা। দুটি গোলই করেন তরুণ উইঙ্গার সালাউদ্দিন।

ম্যাচের শেষ দিকে মোহামেডানের সমর্থকদের গলায় গলা মিলিয়েছি। জীবনীশক্তির সবটুকু ঢেলে শ্লোগান দিয়েছি। ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বাসের কেন্দ্রে সালাউদ্দিন। গ্যালারির উচ্ছ্বাস মাঠের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ল বাইরে। মিছিল আর শ্লোগানে মিরপুর স্টেডিয়ামের আশাপাশ তখন মুখরিত। এই জন-উচ্ছ্বাস, উৎসব কতক্ষণে থেমেছিল, মনে নেই।

এই জয়কে ফ্লুক কিংবা ঘটনার আকস্মিকতায় ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা হিসাবে দেখার কোন সুযোগই নাই বলে জানিয়েছেন ওই সময় মোহামেডানের হয়ে মাঠ মাতানো ডিফেন্ডার কায়সার হামিদ ও মধ্যমাঠের প্রাণভোমরা রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির। সাব্বিরের ভাষায়, "ওই সময় আমরা এশিয়ার সেরা দশ ক্লাবের একটা ছিলাম। এশিয়ার যে কোন দলকে আমরা হারাতে পারি, আমাদের মধ্যে এই বিশ্বাসের বীজ বুনে দিয়েছিলেন কোচ হেজাজি।" একই কথা বললেন 'ডিফেন্স জেনারেল' খ্যাত কায়সার হামিদও, "মূলপর্বেও আমরা কিন্তু চমৎকার খেলেছি। হেজাজির তত্ত্বাবধানে তখন আমরা দুর্দান্ত একটা দল।"

ওই আসরের চূড়ান্তপর্বে প্রথম ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার লিগ বিজয়ী এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ ক্লাবকে ১-০ গোলে হারায় মোহামেডান। পরের ম্যাচে কাতারের আল সাদ ক্লাবের সঙ্গে ২-২ ড্র করে। বলা বাহুল্য এই আল সাদ ক্লাবই সেবার শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখায়। ওই আসরে নিজেদের শেষ দুটি ম্যাচে মোহামেডান হারে যথাক্রমে সৌদি আরবের আল ইত্তেফাক (৩-১) ও মালয়েশিয়ার পাহাং (২-১) ক্লাবের কাছে।

১৯৯০ সালে একই আসরে আবারও মূলপর্বে খেলার কৃতিত্ব দেখায় মোহামেডান। ভারতের সালগাঁওকার ক্লাবকে ২-১ গোলে হারিয়ে যাত্রা শুরু। গ্রুপ পর্বে পরের ম্যাচে মালদ্বীপের লাগোনস ক্লাবকে বিধ্বস্ত করে ৫-০ ব্যবধানে। মূলপর্বে তিন ম্যাচ ড্র করে মোহামেডান। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংক ক্লাবের বিপক্ষে ১-১, এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে গোলশূন্য আর ইরানের ইসতেগলালের সঙ্গে ১-১ ড্র। পয়েন্ট সমান হলেও গোল গড়ে পিছিয়ে থাকার কারণে সেমি-ফাইনাল খেলা হয়নি মোহামেডানের। গোলপার্থক্যে এগিয়ে এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ খেলে সেমি-ফাইনাল। উল্লেখ্য ওই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইরানের দল ইসতেগলাল।

হালের মোহামেডানের প্রসঙ্গ থাক। ক্লাবটির সেরা সময়ের একটা পর্ব ছিল ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০। আর এই সময়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন দলটির ইরানি কোচ নাসের হেজাজি। ১৯৭৮ সাল থেকে সুদীর্ঘ ৪৩ বছর মোহামেডানের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে একাত্ম হয়ে আছেন সংগঠক আনোয়ারুল হক হেলাল। ক্লাবটির ওই সোনালী সময়ে ফুটবল সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্বপালন করেছেন। ওই সময়ের মোহামেডান ক্লাব টেন্ট সম্পর্কে তার ভাষ্য, "মোহামেডানের ইতিহাসের সেরা সময় ছিল ১৯৮৬-৯০। এশিয়া লেভেলে প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য ছিল আমাদের। দক্ষিণ এশিয়ার যে কোন দলকে আমরা হারাতে পারতাম। আর এতে হেজাজির অবদান অনেক।" হেলাল আরও যোগ করেন, "ইরানি হওয়ার সুবাদে পিরুজির স্ট্র্যাটেজি খুব ভালভাবেই জানা ছিল হেজাজির। কিছু ছকও কষে বুঝিয়ে দিয়েছিল পিরুজির বিপক্ষে ভাল করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। ওই ম্যাচে আমাদের ইরানি খেলোয়াড়রাও খুব ভাল ভূমিকা রেখেছিল।"

মোহামেডানর বিদেশী কোচদের মধ্যে হেজাজি সেরা, এই মত হেলালের। একই মত কায়সার হামিদ ও সাব্বিরের। সাব্বির যেমন জানালেন তার ভূমিকাই বদলে দিয়েছিলেন হেজাজি, "কোচ হিসাবে তিনি অসাধারণ। আমাদের ফরমেশনে পরিবর্তন আনলেন। ৪-৪-২ পদ্ধতি অনুসরণ করলেন। আর এতে আমার খেলার স্পেস বেড়ে গেল অনেক। আমি উইঙ্গার হিসাবে খেলতাম। আমাকে দেওয়া হল প্লেমেকারের দায়িত্ব। মোট কথা, সবার ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারতেন তিনি।" গুরু সম্পর্কে কায়সার হামিদ এক কথায় মূল্যায়ন, "আমার দেখা সেরা কোচ হেজাজি।"

এই ইরানিকে কোচ হিসাবে আনার গল্পটাও শোনালেন হেলাল। সেখানেও উঠে এলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর কথা, "এর আগে (১৯৮৩-৮৫) লিগ শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিক করেছে আবাহনী। আমরাও মোহামেডানকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিই। এমেকার (ইউজেগি) সঙ্গে কথাবার্তা বলার উদ্দেশ্যে কলকাতা গেলাম। সে-ই আমাকে হেজাজির কথা জানাল। বলল, একজন ইরানি খেলোয়াড় আছে। ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপ খেলেছিল। ভারতে খেলার জন্য এসেছে। সে আমাদের মাঝে মধ্যে কোচিং করায়। এটা আমাদের খুব উপকারে আসছে। ওর খুব ভাল কোচ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।"

কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, হেজাজি তখনও খেলছেন এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোচ হিসাবে কাজ করার কোন অভিজ্ঞতাও নাই। মোহামেডানের মতো দলের দায়িত্বে আনা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ঝুঁকিটা নিয়ে নিলেন হেলাল। 'মুনাফাও' ধরা দিল হাতেনাতে! হেলালের কথায়, "হেজাজির সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমিও সন্তুষ্ট হই। তাকে কোচ হওয়ার প্রস্তাব দিই। বলি, খেলতে চাইলে তুমি খেলতে পার; তবে তোমার প্রধান দায়িত্ব কোচ হিসাবে। প্লেয়ার কাম কোচ হিসাবে মোহামেডানে যোগ দেয় সে।"

মোহামেডানকে আমূল বদলে দিয়েছিলেন হেজাজি। খাদ্যাভাস থেকে শুরু করে ফরমেশন, সবকিছুতে এনেছিলেন আমূল পরিবর্তন। খাবারের ওপর ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেন শুরুতেই। সন্ধ্যার পর খেলোয়াড়দের খেতেই দিতে চাইতেন না। আসলে মোহামেডানের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে গিয়েছিলেন হেজাজি। তার ইচ্ছাতেই ইরানি ফুটবলার বোরহান জাদেহ, রেজা নালজেগার ও বিজেন তাহিরির মতো তারকাদের পা পড়ে মোহামেডানে। সাফল্যও ধরা দিতে থাকে ধারাবাহিকভাবে।

ধারাবাহিকভাবে সাফল্যের জন্য ভাল খেলোয়াড়, ভাল কোচের পাশাপাশি আরও একটা বিষয় খুব-খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন হেলাল, সেটা হচ্ছে ক্লাবের সঙ্গে মানসিকভাবে একাত্ম হওয়াটা। উদাহরণ হিসেবে টানলেন ভারতের কেরালায় নাগজী ট্রফির কথা, "আমরা রানার্সআপ হয়েছিলাম। সেমি-ফাইনালের আগে এমেকা অসুস্থ হয়ে পড়ল। কোনভাবেই ওর পক্ষে মাঠে নামা সম্ভব ছিল না। খেলার সময় রিজার্ভ বেঞ্চে বসেছিল। ম্যাচে আমরা পিছিয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখি এমেকা নাই। ওয়ার্ম আপ শুরু করে দিয়েছে। এরপর মাঠে নামল। এমেকা দারুণ খেলল এবং মোহামেডানও ফাইনালে উঠল!"

এখন ঢাকার ক্লাব ফুটবল বিদেশি ফুটবলারে সয়লাব। ভিনদেশিদের ভারে আমাদের জাতীয় দলের স্ট্রাইকাররাও নিজের ক্লাবে খেলার সুযোগ নিয়মিত পান না। অ্যাটাকিং মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগে দেশি ফুটবলারদের জায়গা কার্যত রিজার্ভ বেঞ্চে। দশ ম্যাচে কোন দেশি খেলোয়াড়ের গোল নাই, পুরো ফেডারেশন কাপে স্থানীয় ফুটবলারদের গোল নাই, এমন সংবাদ শিরোনাম প্রায়শই দেখা যায়। এ বিষয়ে সংগঠক হেলাল মনে করেন, "আগে বড় ক্লাব মানে আবাহনী, মোহামেডান বিদেশি ফুটবলার দলে ভেড়াত। এখন ছোট-বড় ভেদ নাই। সব দলই বিদেশি খেলোয়াড় আনছে। এতে সমস্যা হচ্ছে, স্ট্রাইকার কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পজিশনগুলোতে আগের মতো প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় বের হয়ে আসাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে।"

এখানে কিন্তু এ প্রশ্নটাও থেকে যায়, দেশি খেলোয়াড়রা কি পাল্লা দিয়ে পারছে না বিদেশিদের সঙ্গে? একসময় যেমন দেশি খেলোয়াড়রাই হয়ে উঠতেন নিজ নিজ দলের ব্র্যান্ড। যেমন আবাহনীর 'সালাউদ্দিন', মোহামেডানের 'কায়সার হামিদ', আবাহনীর 'আসলাম', মোহামেডানের 'সাব্বির'। এই ব্র্যান্ডিং যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা উঠে আসে সাব্বিরের কথা, "দেখুন, এতে করে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ক্লাবের সম্পর্কের গভীরতা অনুধাবন করা যায়। ক্লাব পাল্টে টাকা পাওয়াটাই কিন্তু সব নয়। এখন ক্লাবের সঙ্গে খেলোয়াড়দের মানসিক সম্পর্ক, টান, ভালোবাসা অনেক কমে গিয়েছে।"

ক্লাবে চারজন বিদেশি ফুটবলার খেলানোর যে পলিসি, তা থেকে কি বেরিয়ে আসা উচিৎ-এই প্রশ্নের জবাবে সাব্বির বললেন, "ক্লাবগুলো বিদেশি খেলাতে চাইবেই। কেননা সাফল্য দরকার। তবে একটা ভারসাম্য রাখাটাও জরুরি। এর জন্য উদ্যোগী হতে হবে ফেডারেশনকেই।" আরেকটি দিকও দেখালেন এই সাবেক তারকা, "আরেকটা সমাধান হতে পারে দল বাড়ানো। ধরুন, দল যদি ২০টা হয়। তাহলে মিনিমাম ১৪০ জন লোকাল প্লেয়ার খেলার সুযোগ পাবে। এর অর্থ এখন যতজন খেলছে তার দ্বিগুণ পরিমাণ স্থানীয় ফুটবলার খেলার সুযোগ পাবে। এতে করে প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় পাওয়ার সম্ভবানাও বাড়বে।"

বাংলাদেশ ফুটবলকে গৌরবের জায়গায় ফেরাতে হলে, আগের সময়ের আবাহনী-মোহামেডান ঝাঁঝটা ফেরত আনতে হবে, এ বিষয়ে একমত সবাই। সাব্বির যেমন বললেন, "মোহামেডান-আবাহনী উত্তাপ না থাকাতে ক্ষতিটা কিন্তু হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবলের।" ক্ষতির প্রধানতম কারণ হিসাবে মেহামেডানের রেস থেকে ছিটকে যাওয়াটাকে সামনে আনলেন সাব্বির, "অনেকদিন থেকেই মোহামেডান কিন্তু চ্যাম্পিয়নশিপের মূল রেসে নাই। আগের বছর লীগে মোহামেডানের অবস্থান ছিল দশ নম্বরে।" চলতি লিগের প্রথম পর্ব শেষ করেছে ষষ্ঠ স্থানে থেকে; শীর্ষে থাকা বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে দূরত্ব ১৫ পয়েন্টের!

মোহামেডান ফিরলে আবাহনী আরও প্রতিদ্বন্দিতার মুখে পড়বে, আর এতে করে বাংলাদেশ ফুটবল সেই চেনা সময় ফিরে পাবে, এই বিশ্বাস সাব্বিরের। কিন্তু সেটা কি নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব? আমার প্রশ্ন কেড়ে নিয়ে সাব্বির আশাবাদী কণ্ঠে বললেন, "অবশ্যই মোহামেডান ফিরবে।" পড়ন্ত বিকালে মোহামেডান ক্লাবে বসে আড্ডার এ পর্যায়ে সেই পুরান সময়ে ফেরত গেলেন তিনি; প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন, "সর্বশেষ ফেডারেশন কাপে মোহামেডান সেমি-ফাইনাল খেলেছে। ক্লাবে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সামনে ভাল দিন আসবেই।"

মোহামেডানের ভাল দিন আসুক–মোটা দাগে এই চাওয়া সব ফুটবলপ্রেমীদের। আবাহনী-মোহামেডান উত্তাপ ফেরানো গেলে বাংলাদেশ ফুটবল ফিরবে, এ অভিমত সাবেক আবাহনী উইঙ্গার ও বর্তমানে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কর্মকর্তা আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নুরও। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক ফুটবলেও আবাহনী-মোহোমেডানের যে মনস্তাত্বিক লড়াই, সে কথাও বলেছেন দীর্ঘদিন আবাহনী আক্রমণভাগের এই পরীক্ষিত যোদ্ধা। শেখ জামাল ক্লাবে আড্ডার ফাঁকে চুন্নু বললেন, "মোহামেডান নাগজীতে রানার্সআপ হয়েছে, সুতরাং আবাহনীকে শিরোপা জিততে হবে, এই ধরনের মানসিক লড়াই সবসময়ই থাকত।"

পিরুজি ক্লাবের বিপক্ষে মোহামেডানের জয়কে বাংলাদেশ ফুটবলের অন্যতম এক 'বড় অর্জন' বলেও জানালেন চুন্নু। সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, "পিরুজিকে হারানোর পর আবাহনী ক্লাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মোহামেডানকে অভিনন্দনও জানানো হয়েছিল।"

ক্লাবের বৈরীতা মোহামেডান এভাবেই ভুলিয়ে দিয়েছিল ১৯৮৮ সালে। সিক্ত হয়েছিল আবাহনীর অভিনন্দনে!