বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ

সাজ্জাদুল হাসান
Published : 18 August 2020, 12:41 PM
Updated : 18 August 2020, 12:41 PM

১৫ অগাস্ট, ১৯৭৫। মসজিদের শহর ঢাকার মসজিদগুলো থেকে ভেসে আসছে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি। বেশিরভাগ মানুষ ঘুমে অচেতন। এরকম এক শুনশান নীরবতার মধ্যে ধানমন্ডি ৩২ নং সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘিরে ফেলেছে একদল বিশ্বাসঘাতক। দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব আর সংবিধান রক্ষার শপথ বেমালুম ভুলে গিয়ে এই গুপ্ত হত্যাকারীরা সেখানে জড়ো হয়েছে এক গভীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে হঠাৎ করে কেঁপে উঠলো আশপাশের এলাকা। ঘাতকের দল প্রবেশ করল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। রচিত হলো ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতম আর কলঙ্কজনক অধ্যায়ের। খুনিরা একে একে নির্মমভাবে হত্যা করল জাতির জনকসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। এরা এতটাই উন্মাদ আর নির্দয় ছিল যে, তাদের হাত থেকে নিস্তার পায়নি ১০ বছরের শিশু, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা নারী!

সকাল ৭ টা। বাংলাদেশ বেতার থেকে একজন নিজেকে মেজর ডালিম পরিচয় দিয়ে উল্লসিত গলায় বলছে, 'স্বৈরাচারী মুজিব সরকারকে এক সেনাঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়েছে। সারা দেশে মার্শাল ল' জারি করা হলো।' এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদ সেই মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, 'দেশ থমকে দাঁড়িয়েছে। কি হচ্ছে কেউ জানে না। কি হতে যাচ্ছে তাও কেউ জানে না। মানুষের আত্মার মতো দেশেরও আত্মা থাকে। কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশের আত্মা দেশ ছেড়ে গেল।'

বিস্ময়ে হতবাক পুরো পৃথিবী। যে মানুষটা হাজার বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি, ঔপনিবেশিক শাসকদের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ একটা জাতিকে শৃঙ্খলমুক্ত করল, দিল স্বাধীনতার গৌরব আর মুক্তির উল্লাস তাকে কি-না হত্যা করল তার নিজের হাতে গড়া সেনাবাহিনীর নীতিভ্রষ্ট একদল সেনা সদস্য! যে কাজটি পাকিস্তানিরা করতে পারেনি বা করার সাহস দেখায়নি সেই জঘন্য কাজটি সংঘটিত হলো তার নিজের মাটিতে যার জন্য তিনি তার সারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন!

বঙ্গবন্ধু হত্যার খবরে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন বিশ্বনেতৃবৃন্দ এবং প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলিবান্ট মন্তব্য করেছিলেন, 'মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনও জঘন্য কাজ করতে পারে!' কিউবার কিংবদন্তি নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, 'শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।'

এই বিয়োগান্তক ঘটনার কিছুদিন আগে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত বাংলাদেশকে কয়েকটা ট্যাঙ্ক উপহার হিসাবে দেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলো বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। এতে আনোয়ার সাদাত এতটাই ব্যথিত ও বিমর্ষ হয়েছিলেন যে তিনি বলেছিলেন, 'তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাঙ্ক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।' তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী ছিলেন, তিনি পর্যন্ত মন্তব্য করেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তেজি এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।' প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের শিরোনাম ছিল, 'শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।' আর ফিনান্সিয়াল টাইমসের শিরোনাম 'মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিত না।'

সবচাইতে হৃদয়বিদারক প্রতিক্রিয়া হয় জার্মানির এক বিমানবন্দরে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শোকে পাথর তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশে আসার সময় তার পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন অফিসারকে দেখালে সেই অফিসার পাসপোর্ট দেখেই শেখ হাসিনাকে বললেন "ছিঃ! তোমরা বাংলাদেশিরা খুব জঘন্য একটি জাতি, যেই মানুষটি তোমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তাকেই তোমরা হত্যা করে ফেললে?" এর পরের ঘটনা আরও বেদনাদায়ক, সেই সময়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত সকলে দেখলেন শাড়ি পড়া এক নারী চিৎকার করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন।

অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে দৃশ্যত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। কি এক অদৃশ্য ভয়, আতংক, অজানা আশংকা বা অধিক শোকে সবাই কেমন চুপসে গেল। না, ব্যাপারটা পুরোপুরি সত্য নয়। এরকম ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে প্রিয় নেতাকে রক্ষা করার জন্য জান উজাড় করে লড়েছিলেন কয়েকজন অকুতোভয় মানুষ।

সিদ্দিকুর রহমান: পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এ.এস.আই সিদ্দিকুর রহমান বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। ১৫ অগাস্ট ভোর ৫:৪০ মিনিটে প্রতিদিনকার মতো তারা বিউগল বাজিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছিলেন। এমন সময় প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারপাশ। সাধারণ অস্ত্র সম্বল করে তিনি এবং তার কয়েকজন সহকর্মী তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু অত্যাধুনিক ও ভারী সমরাস্ত্রের বিপক্ষে তাদের এই প্রতিরোধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ঘাতকের দল প্রবেশ করে জাতির জনকের বাসভবনে। লাইন ধরে দাঁড় করানো হয় সিদ্দিকুরসহ আরো কয়েকজনকে। তখন মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি লড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু খুনিদের ব্রাশফায়ারে প্রাণ দেন সিদ্দিকুর রহমান। পিস্তলটি তখনো তার হাতে ধরা। প্রাণপ্রিয় নেতার জন্য এভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

এরকম নির্মোহ, কর্তব্যপরায়ণ ব্যক্তিদের বেলায় সচরাচর যা ঘটে সিদ্দিকুরও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। রেখে যেতে পারেননি স্ত্রী আর দুই সন্তানদের জন্য কোনো কিছুই। অকালে স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে এক কঠিন জীবন যুদ্ধে নামতে হয় সিদ্দিকুরের স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে। মৃত্যুর ৩৭ বছর পরে ২০১২ সালে সিদ্দিকুর রহমানকে সাহসিকতার জন্য মরণোত্তর বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) প্রদান করা হয়।

সিপাহী শামসুল হক: আরেকজন নির্ভীক যোদ্ধা। তিনিও সেদিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। গোলাগুলি শুরু হতেই শামসুল, সিদ্দিকুর রহমানের সাথে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

কর্নেল জামিল: পুরো নাম জামিল উদ্দিন আহমেদ। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব। ১৫ অগাস্ট ভোরে যখন দুষ্কৃতিকারীরা ৩২নং এর বাসভবন আক্রমণ করে, বঙ্গবন্ধু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান এবং কর্নেল জামিলকে টেলিফোন করেন। বঙ্গবন্ধু কর্নেল জামিলকে বলেছিলেন, তার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে এবং তাকে আক্রমণ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে কর্নেল জামিল সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ফোন করেন এবং তাদের সেনা পাঠাতে অনুরোধ করেন। গণভবনে অবস্থানরত পিজিআর (প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট) সদস্যদের ৩২ নম্বরের দিকে এগোনোর নির্দেশ প্রদান করেন এবং নিজেও বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে রওনা হন। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে স্ত্রী-সন্তানদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিপদ। কীভাবে আমি না গিয়ে পারি! স্ত্রীর প্রতি তার শেষ কথা ছিল, আমার কন্যাদের খেয়াল রেখো।

সোবহানবাগ মসজিদের কাছে পৌঁছালে পিজিআর কনভয় কর্নেল জামিলকে থামায়। তাকে জানানো হয়, সামনে সেনা ইউনিট রয়েছে এবং গোলাগুলি চলছে। তিনি সেনাদের সামনে এগোনোর জন্য বোঝাতে চেষ্টা করেন। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে নিজে গাড়ি চালিয়ে ৩২ নম্বর রোডে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় কয়েকজন অস্ত্রধারী সেনাসদস্য তার গাড়ির কাছে পৌঁছে যায়। কর্নেল জামিল দুই হাত উঠিয়ে তাদের কিছু বলার বা বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা গুলি করলে কর্নেল জামিল মাটিতে পড়ে যান এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তিনিই একমাত্র সেনা কর্মকর্তা, যিনি জাতির জনকের টেলিফোন পেয়ে তাকে রক্ষা করার জন্য ছুঁটে গিয়েছিলেন এবং নিজের জীবন দিয়ে তার ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি। সেদিন অনেকের মধ্যেই ছিল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব এবং সিদ্ধান্তহীনতা।

ঘাতকরা কর্নেল জামিলকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। তার মৃতদেহের প্রতিও প্রদর্শন করে চরম অবজ্ঞা আর অশ্রদ্ধা। কর্নেল জামিলকে দাফন করা হয় জানাজা ছাড়াই। এমনকি এই বীর সেনার কাফনের কাপড়েরও ব্যবস্থা করা হয়নি। বিছানার চাদরে মুড়িয়ে তাকে সমাহিত করা হয়।

২০১০ সালে কর্নেল জামিলকে মরণোত্তর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবি দেওয়া হয় এবং তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেছিলেন, মুজিববিহীন বাংলাদেশে তিনি বাস করবেন না। এই নির্মম হত্যার প্রতিশোধ নিতে তিনি ভারতে চলে যান এবং সংঘটিত করেন 'কাদেরিয়া বাহিনী'কে। কিন্তু আপাত ভুল রণকৌশল আর সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তার সেই লড়াই সফল হয়নি। তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল সীমান্ত এলাকার থানা এবং নিরীহ পুলিশ বাহিনী যারা কোনো অর্থেই বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বরং সবার আগে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন পুলিশের দুইজন বীর সদস্য।

কবি নির্মলেন্দু গ‌ুণ: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে শোকে-দুঃখে কবি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এই শহর ছেড়ে চলে যান বারহাট্টায় নিজ গ্রামে। নিজেকে গুটিয়ে নেন জাগতিক সব কর্মকাণ্ড থেকে। সারাদিন পড়ে থাকতেন গ্রামের শ্মশানে জগা সাধুর আশ্রমে। তার কেবলি মনে হতে থাকে, বঙ্গবন্ধুর আত্মা পুনর্জন্মের আশায় তার ভিতরে এসে আশ্রয় নিয়েছে আর এই খবর সবাই জেনে গেছে এবং কবিকে হত্যা করার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে। চারিদিকে রাষ্ট্র হয়ে যায় কবি পাগল হয়ে গেছেন। বেশ কয়েকমাস পরে কবি কিছুটা সুস্থ হলে ঢাকায় ফিরে আসেন তার প্রিয় বন্ধু কবি মহাদেব সাহার অনুরোধে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৭ নভেম্বরের সেনাবিদ্রোহের ঘটনার পরে কবিকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় পাঁচদিন ভোগ করতে হয় কারাবাস।

বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য ঘাতক আর তাদের প্রেতাত্মারা অনেক চেষ্টা করেছে। শত চেষ্টা সত্ত্বেও তাদের সেই অশুভ উদ্দেশ্য সফল হয়নি। মরহুম মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, 'টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবের কবর একদিন সমাধিস্থলে রূপান্তরিত হবে এবং বাঙালির তীর্থস্থানের মতো রূপলাভ করবে।' ১৯৭৫ সালে তিনজনের একটা আন্তর্জাতিক সাংবাদিকের টিম বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাদের একজন ব্র্যায়ন ব্যারন। যাদের তিন দিন শেরাটনে আটকে রেখে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। দেশে ফিরে ব্যারন লিখেছিলেন, 'শেখ মুজিব সরকারিভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনসাধারণের হৃদয়ে উচ্চতম আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেন। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। এটা যখন ঘটবে, তখন নিঃসন্দেহে তার বুলেট-বিক্ষত বাসগৃহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারক-চিহ্ন এবং তার কবরস্থান পুণ্য তীর্থে পরিণত হবে।'

বঙ্গবন্ধুর মাহাত্ম্য সম্মন্ধে সম্ভবত সবচেয়ে যুক্তিনির্ভর আর শিল্পিত মন্তব্য করেছিলেন প্রয়াত বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, "শেখ মুজিব দৈহিকভাবেই মহাকায় ছিলেন, সাধারণ বাঙালির থেকে অনেক উচুঁতে ছিলো তার মাথাটি, সহজেই চোখে পড়তো তার উচ্চতা। একাত্তরে বাংলাদেশকে তিনিই আলোড়িত-বিস্ফোরিত করে চলেছিলেন, আর তার পাশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছিল তার সমকালীন এবং প্রাক্তন সকল বঙ্গীয় রাজনীতিবিদ। জনগণকে ভুল পথেও নিয়ে যাওয়া যায়; হিটলার মুসোলিনির মতো একনায়কেরাও জনগণকে দাবানলে, প্লাবনে, অগ্নিগিরিতে পরিণত করেছিলো, যার পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। তারা জনগণকে উন্মাদ আর মগজহীন প্রাণীতে পরিণত করেছিলো। একাত্তরের মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলো শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ আগ্নেয়গিরি, নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালি মুসলমানকে, যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম।"