সাম্যবাদী ভাইরাস এবং জাতীয়তাবাদী ভ্যাক্সিন

ইশরার ওসমান
Published : 5 August 2020, 05:49 PM
Updated : 5 August 2020, 05:49 PM

"করোনাভাইরাস সাম্যবাদী ভাইরাস, সবার জন্য সমান। রাজা-প্রজা যেই হোক, কোন ভেদাভেদ নেই। আসলে এটা আসলে ন্যাচারাল অর্ডার, মানুষের সৃষ্টি এই কৃত্রিম সামাজিক বৈষম্যকে ব্যালেন্স করতে প্রকৃতি প্রদত্ত সমাধান।" ফেইসবুক ফিডে জনৈক বামপন্থি বন্ধুর অনেকটা এরকমই একটা স্ট্যাটাস পড়ছিলাম।

বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী করোনাভাইরাস মহামারী ২০২১ সালের মধ্যে ৮০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ  এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিমাণ প্রায় ১২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার হ্রাস করতে পারে। সেহেতু বাম-ডান-মধ্য যে পন্থি-ই হউক,  সবাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই মহামারীটির সমাধান করতে আগ্রহী।

কিন্তু এই মহামারীর যে প্রতিকার, সেই ধন্বন্তরী ভ্যাক্সিনটা, সেটাও কি ভাইরাসের মত সাম্যবাদী রূপ ধারণ করবে? বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কারিগরি অবস্থা আর মহামারীর পূর্ব ইতিহাস বলে অন্যরকম। আর সেজন্যই এ লেখার অবতারণা।

মার্কিন মুলুকে উৎপাদিত কোভিড ভ্যাক্সিন কী প্রক্রিয়াতে বিশ্বব্যাপী বরাদ্দ বা বিতরণ হবে সে প্রসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বক্তব্যটি মোটেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। ব্যাপারটা নাকি 'ডিপ্রেসারাইজড বিমানের ভেতর ঝুলে থাকা অক্সিজেন মাস্ক পরার মত'– উদাহরণ টেনেছেন তারা- 'আগে নিজেরটা বাঁধুন তারপর অন্যকে সাহায্য করুন। প্রথমে আমরা নিজেদের চাহিদা  মিটিয়ে  তারপরে অন্যদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাহায্য করতে চাই।'

সুতরাং এ ধারনা অমূলক নয় যে এই ধরনের 'ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ' বা বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে 'আমেরিকা ফার্স্ট' পদ্ধতিই সুদূরপ্রসারী হবে। বাকিরাও ন্যাশনাল প্রাইওরিরিটির পথেই হাঁটছে বৈকি।

জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১৬০টি ক্যান্ডিডেট ভ্যাক্সিনের মধ্যে  ২১টির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ধরে নেওয়া যায় যে, পাইপলাইনের বেশিরভাগ ক্যান্ডিডেটই ব্যর্থ হবে, হয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অথবা বিলম্বের কারণে। তবে সম্প্রতি মডার্না (যুক্তরাষ্ট্র), অ্যাস্ট্রাজেনেকা (যুক্তরাজ্য), সিনোভ্যাক (চীন) এরা যেহেতু তৃতীয় ফেজের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এক বা একাধিক ভ্যাক্সিন নিরাপদ এবং কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়ে উৎপাদন এবং বিতরণে যাবে অথবা অন্তত জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পাবে।

তবে এই হবু উৎপাদনকারী এবং অন্যান্য ধনী দেশেরা চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারা ইতিমধ্যে ভ্যাক্সিনের অগ্রিম 'বুকিং' এর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে।

হোয়াইট হাউস, 'অপারেশন অয়ার্প স্পিড' (Operation Warp Speed) এর আওতায়, ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে দেশীয় ভ্যাক্সিন রিসার্চ কোম্পানিগুলোতে আসছে জানুয়ারির মধ্যে কয়েক মিলিয়ন ভ্যাক্সিন সরবরাহের জন্য। তার উপর নিজ দেশের বাইরে জার্মানির ফাইজার কোম্পানির সাথেও ২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সাক্ষর করেছে ১০০ মিলিয়ন ডোজের জন্য।

ওদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা (ব্রিটিশ- সুইডিশ) ভারতীয় সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে ১ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাক্সিন উৎপাদনের চুক্তি করেছে। সিরাম ইন্সটিটিউটের সিইও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শুরুতে এই ভ্যাক্সিন ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ভারতীয় জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। অনুরূপভাবে অন্যান্য ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো ও নিজেদের গভর্মেন্ট ও বিনিয়োগকারীদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রাথমিক ভ্যাক্সিন স্টক বিক্রি করার, যেমন ইতিমধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ৩০০ মিলিয়ন ডোজ যুক্তরাজ্যের জন্য বরাদ্দ হয়ে গেছে। এদিকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং নেদারল্যান্ডস নিজেরাই একটি জোট তৈরি করেছে নিজেদের সাপ্লাই ভাগ-বাটোয়ারার জন্য। সুতরাং ধনী দেশগুলিতে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত ভ্যাকসিনের সরবরাহ সীমিত থাকলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলি।

কারিগরি দিক থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদন একটি অতি ব্যয়বহুল এবং জটিল প্রক্রিয়া, যাতে সূক্ষ্ম একটি পরিবর্তনও ফাইনাল প্রডাক্টের বিশুদ্ধতা, সুরক্ষা বা কার্যকারিতা বদলে দিতে পারে। এ কারণেই ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পর্যায়েই জন্যই আলাদাভাবে  রেগুলেটরের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে এবং গুণগত মান বজায় রাখতে বাধ্য থাকে – কেবল ফাইনাল ভ্যাকসিন প্রোডাকশনের এর জন্য নয়। মোটা দাগে প্রোডাকশনের কারিগরি মূল ধাপগুলো হচ্ছে – ভ্যাকসিন তৈরির কাঁচা উপাদানগুলি পরিশোধিত করা; স্ট্যাবিলাইজার (Stabilizer) , প্রিজারভেটিভস (Preservatives) এবং অ্যাজুভ্যান্ট (Adjuvant – যা ইমিউন রেসপন্স বাড়ায়) গঠন এবং সংযোজন, এবং বোতল বা সিরিঞ্জ এ ডোজ প্যাকেজিং যা 'ফিল অ্যান্ড ফিনিশ' (Fill and Finish) নামে পরিচিত।

এটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে  বিশ্বজুড়ে হাতেগোনা মাত্র কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠানই শুধু 'ফিল অ্যান্ড ফিনিশ' সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারে। আর বলাই বাহুল্য, যে দুনিয়ায় আরও স্বল্পসংখ্যক সংস্থাই ভ্যাক্সিন তৈরির প্রথম ধাপগুলো অর্থাৎ এই মৌলিক উপাদানগুলির সঠিক গুণমান-নিয়ন্ত্রণকরনের মাধ্যমে  উৎপাদন পরিচালনা করতে পারে।

ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভিত্তিক চারটি বৃহৎ বহুজাতিক সংস্থাগুলোই ভ্যাক্সিন  উৎপাদন এবং সরবরাহে প্রাধান্য পেয়ে আসছে। এর বাইরে বিশ্বের কয়েকটি বৃহৎ ভ্যাকসিন উৎপাদক সংস্থার মধ্যে এখন 'সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া'-রও এ ধরনের ভ্যাকসিন তৈরির দক্ষতা রয়েছে। তবে বাদ বাকিরা বেশিরভাগই ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান, যারা বিলিয়ন ডোজ উৎপাদন করতে অক্ষম।

প্রোডাকশনের এই জটিল ব্যাপারটি জটিলতর হয়ে উঠে যখন জানা যায় যে বর্তমান শীর্ষস্থানীয় কিছু কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট (মডার্না, এবং ফাইজার কর্তৃক পরিচালিত) এমআরএনএ (mRNA), অর্থাৎ জেনেটিক কোডভিত্তিক উদীয়মান প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল, যা আগে কখনো মানব ভ্যাক্সিনে ব্যবহৃত হয়নি। তার মানে সমৃদ্ধ দেশগুলির জন্য এই নতুন অভিনব ভ্যাকসিনগুলির জন্য উৎপাদন বাড়ানো এবং সময়োচিত অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করাই একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক এবং কারিগরি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচিত এ বিষয়গুলো থেকেই বোঝা যায় যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনগুলোর উৎপাদন এবং বিপণন কয়েকটি মুষ্টিমেয় দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে, ২০০৯-এর ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস এইচ১এন১ (H1N1) এর মহামারী, যা সোয়াইন ফ্লু নামে পরিচিত, এর কথা উল্লেখযোগ্য। এটি বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই লাখ ৮৪ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল। এটি নিরাময়ের জন্য বিজ্ঞানীরা মাত্র সাত মাসের মাথায় একটি ভ্যাকসিন তৈরি করে বাজারজাত করতে সম্ভব হয়েছিলেন; কিন্তু ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিনের কার্যত সমস্ত সরবরাহ ক্রয় করে ফেলে। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুদানের জন্য আবেদন করলে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য ছয়টি দেশ তাদের ভ্যাকসিনের দশ শতাংশ দরিদ্র দেশগুলির সাথে ভাগ করে নিতে সম্মত হয়েছিল। তবে কেবল তাদের অবশিষ্ট সরবরাহগুলির গার্হস্থ্য চাহিদা মিটিয়ে।

এক দশক পেছনে না তাকালেও চলবে, চলমান মহামারীর প্রথম দিকেও বিশ্বব্যাপী ঘাটতির মুখে প্রথমে চীন, তারপরে ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব হাসপাতালের কর্মীদের ব্যবহারের জন্য রেস্পিরেটর (Respirator), সারজিক্যাল মাস্ক এবং গ্লাভ মজুদ রেখেছিল। এমনকি মহামারীর প্রথম চার মাসের মধ্যে ৭০টিরও বেশি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পারসোন্যাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (PPE), ভেন্টিলেটর এবং ওষুধের রপ্তানি নিষিদ্ধ অথবা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এই গোষ্ঠিটির বেশিরভাগ দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেখানে সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হচ্ছে। সবশেষে এই এপ্রিলেই আমেরিকার  ইবোলার ড্রাগ রেমডেসিভার (Remdesivir) এর সারা দুনিয়ার  ৩ মাসের সরবরাহ  একাই মজুদ করে ফেলা তো সর্বজনবিদিত।

এই শতাব্দীর সবচেয়ে মারাত্মক মহামারীটির একমাত্র সমাধান কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনকে ফরাসি রাষ্ট্রপতি মানুয়েল ম্যাক্রোঁ, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং জাতিসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেসকে এর মতো বিশ্ব নেতারা বৈশ্বিক পাবলিক পণ্য হিসেবে বিশেষায়িত করেছেন।  এ ভ্যাক্সিন সবার জন্য সহজলভ্য করার প্রচেষ্টা যে শুধু মানবতার বা নৈতিকতার খাতিরে সেটাও ঠিক নয়, আসলে সবার স্বার্থেই এটি প্রয়োজন। পাবলিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এজাতীয় মহামারীর ক্ষেত্রে যদি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সুরক্ষা না করা যায় তবে প্রকৃতপক্ষে উন্নত দেশেগুলোও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও নিরাপদ থাকবে না। তবে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে এর প্রভাব অনেক জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী। বিশ্বায়নের এই পৃথিবীতে সাপ্লাই চেইন ভেঙ্গে পড়লে সেটার নেতিবাচক প্রভাব হবে ভয়াবহ, বিশেষ করে যেই ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন উৎপাদনের অনেকগুলো কাঁচামালই আমদানিকৃত পণ্য।

বিশ্ব রাজনীতি থেকে এই ভ্যাক্সিন জাতীয়তাবাদের ঝুঁকি কখনই সমূলে দূর করা সম্ভব নয়। তবে আশার কথা এই যে বিজ্ঞানীরা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক কিছু অলাভজনক সংগঠন ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছে। উল্লেখযোগ্য একটি উদ্যোগ হচ্ছে কোভ্যাক্স (Covid-19 Vaccine Global Access – COVAX), এটি গঠিত হয়েছে গাভি (Gavi), ডাব্লিউএইচও (WHO), এবং সেপি (Coalition for Epidemic Preparedness Innovations – CEPI) এর যুক্ত উদ্যোগে। সংস্থাটি এই ভ্যাক্সিনে যেন বিশ্বের সকল দেশের সমানভাবে ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার রক্ষ্যা হয়, সেটি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত অন্যান্য দেশগুলার পক্ষে একটি ফিনান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে কাজ করছে, ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি কোভ্যাক্স-ও (COVAX) ভ্যাক্সিন গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলিতে সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিলম্ব হ্রাস নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য যে সেপি (CEPI) আর গাভি (GAVI) দুটিই গেটস ফাউন্ডেশনের (Bill & Melinda Gates Foundation) উদ্যোগে গঠিত। মধ্য এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ভ্যাক্সিনের সরবরাহ যেন সোয়াইন ফ্লু ভ্যাক্সিনের মত বিতরণ ঘাটতিতে পরিণত না হয় সেটা প্রতিহত করাই কোভ্যাক্সের লক্ষ্য।

'হাইপোথেটিক্যালি যদি বিশ্বব্যাপী সমবণ্টন সম্ভব হয়, তারপরও বাস্তবানুগভাবে প্রথম ১২ থেকে ১৮ মাস এই ভ্যাক্সিনের সরবরাহে স্বল্পতা থাকবে প্রতিটি দেশেই' – গাভি (Gavi) সিইও, ড. বার্ক্লির অভিমত।  সেক্ষেত্রে পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া তো পরের কথা, জাতীয়ভাবে এই ভ্যাক্সিনের বণ্টন নীতিমালা কী হবে? প্রথমে কি স্বাস্থ্য কর্মীরা অগ্রাধিকার পাবে, তারপর হাই রিস্ক গ্রুপ আর তারপর সাধারণ ব্যক্তিরা?

পরিশেষে ট্র্যাম্প প্রশাসনের বক্তব্যের যুক্তিখণ্ডন করা যায় এভাবে যে, ডিপ্রেসারাইজড প্লেনে অক্সিজেন মাস্ক, ফার্স্ট ক্লাস আর ইকোনমি ক্লাস, সবার জন্য সমান সময়ে সরবরাহ হয়, আগে কিংবা পরে নয়। এই ভ্যাক্সিন রিজার্ভ করার দৌড়ে আসলে সত্যিকার কোন বিজয়ী নেই। বলাবাহুল্য যে ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের সাথে সাথে মহামারীর সম্পূর্ণ সমাধান মোটেও হবে না, যদি পুরো বিশ্ব ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে না পারে।  তবে সময় ফুরিয়ে আসছে: প্রথম ভ্যাকসিনগুলির আবিষ্কারের যত কাছাকাছি আমরা পৌঁছে যাচ্ছি, বরাদ্দ দেওয়ার জন্য একটি উপযুক্ত, প্রয়োগযোগ্য নীতিমালা এবং ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য সময় তত কমে আসছে।

শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল একজন আমেরিকান যুবক, নাকি বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন করোনাযোদ্ধা একজন নার্স- এই ভ্যাক্সিনের উপর কার অধিকার বেশি, প্রশ্নটি শুনতে সহজ হলেও উত্তরটি হয়তো নয়, অন্তত ইতিহাস তাই বলে।

সূত্র:

1. Foreign Affairs – Tragedy of Vaccine Nationalism

2. Vox News – The Global risk of 'Vaccine Nationalism'

3. Financial Express – Oxford-AstraZeneca Coronavirus vaccine: Serum Institute

4. The Economist – Nationalist Issue and concerns about equitable access – vaccine

5. India Today – Serum Institute seeks DGCI nod