কোভিড-১৯: ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথির ওষুধ ও চিকিৎসা

অনির্বাণ সুকুল
Published : 9 June 2020, 05:14 PM
Updated : 9 June 2020, 05:14 PM

করোনাভাইরাস রোগ (কোভিড -১৯) একটি সংক্রামক রোগ যা সদ্য আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। বেশিরভাগ লোকেরা যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন তারা মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গগুলি অনুভব করেন এবং বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই আরোগ্যলাভ করেন।

কীভাবে এটি ছড়িয়ে পড়ে

আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি, কাশি বা শ্বাস ছাড়লে মূলত নি:সৃত বিন্দুগুলির মাধ্যমে সংক্রামিত হয় এই ভাইরাসটি। এই নি:সৃত বিন্দুগুলি খুব ভারী তাই দ্রুত মেঝে বা বস্তু উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়ে। কোনও ব্যক্তি যদি কোভিড-১৯ এর কাছাকাছি অবস্থানে থাকেন বা সংক্রমিত পৃষ্ঠের স্পর্শ করেন এবং তারপরে চোখ, নাক বা মুখে নিজের হাত স্পর্শ করেন, তখনই ভাইরাসটি আক্রমণ করে।

সমস্ত ভাইরাস অন্তঃকোষক পরজীবী। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মানবকোষের প্রক্রিয়াগুলি নিজের কপি তৈরি করা। গবেষণায় প্রমাণিত যে এটি এসিই-২ নামে পরিচিত একটি ঝিল্লি প্রোটিন দ্বারা মানব দেহে প্রবেশ করে। অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভারটিং এনজাইম ২ বা সংক্ষেপে এসিই-২ রিসেপ্টর সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশ। তাদের কাজ হলো এসিই-২ হরমোনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেহের স্ট্রেস প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেওয়া। এসিই-২ হরমোন রক্তনালীগুলি সঙ্কোচনে ভূমিকা রাখে যা দেহে রক্ত চাপ বাড়ায়। কোভিড -১৯ ভাইরাসটি এসিই-২ রিসেপ্টারের সঙ্গে আবদ্ধ হতে পারে, কারণ এটি প্রাণিজ থেকে উৎপত্তি। আবদ্ধ হওয়ার পর কোষটি বিনষ্ট হয়। সার্স-কোভ -২ কোষের জিনগত প্রজনন সরঞ্জামগুলির নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়, নিরলসভাবে নিজেকে প্রতিলিপি করে এবং পাশের কোষগুলিতে অনুপ্রবেশ করতে থাকে।

ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপযুক্ত লোকেরা- যারা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক, প্রায়শ এসিই ইনহিবিটারযুক্ত একশ্রেণির ওষুধ খান। এই ওষুধগুলি রক্তনালীগুলির সংকোচনকে সীমাবদ্ধ করে এবং এসিই ২ রিসেপ্টর সারা শরীর জুড়ে বিস্তার লাভ করে। কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করেছেন যে, এই কারণেই এই সমস্ত লোকেরা কোভিড -১৯ আক্রমনে অনেক বেশি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে গেছেন।

জনস হপকিন্স বেভিউ মেডিকেল সেন্টারের একজন পালমোনোলজিস্ট পানাগিস গ্যালিয়াটসাতস বলেছেন, "এসিই-২ রিসেপ্টর আমাদের অঙ্গগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তারা জিহ্বা এবংআমাদের খাদ্যনালীর কোষে রয়েছে।এগুলি কিডনি, হার্ট এবং খাদ্যনালীর কোষেও পাওয়া যায়, যে কারণে পেটের লক্ষণগুলি, যেমন ক্ষুধাহ্রাস পাওয়া ও ডায়রিয়ার লক্ষণ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের দেখা দেয়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হল,  এসিই-ি২ রিসেপ্টরগুলি ফুসফুসের সবচেয়ে সূক্ষ্ণ অংশের কোষে উপস্থিত হয়, যার নাম আল্ভিওলি। এগুলি অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড মুক্ত করার মত অত্যাবশ্যক গ্যাস এক্সচেঞ্জের জন্য দায়বদ্ধ। এই কোষগুলির ক্ষতি হলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ফুসফুস, সংক্রমণটি বহিষ্কার করার চেষ্টার ফলে কাশি শুরু হয়। প্রাথমিক গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে, লক্ষণহীন লোকেরা সংক্রামক হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভাইরাস বা সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কোভিড-১৯ এর মৃত্যুর হার সার্স এবংমার্স এর তুলনায় অনেক কম। কারণ এর মৃত্যুর হার শতকরা ১ থেকে ৪ শতাংশ। মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, কারণ তারা জানেনা যে তারা এই ভাইরাস বহন করছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে যে, ৮০ শতাংশ কোভিড-১৯আক্রান্ত রুগীরা লক্ষণহীনভাবে ঘুরছে, আর ঠিক এই কারণেই এর ভয়াবহতা এত বেশি। যেহেতু আজ অবধি কোভিড -১৯ এর কোনো সফলতম চিকিৎসা বের হয়নি, তাই আপনার নিজের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাই এখন কোভিড -১৯ সংক্রমণ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।

চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যাপারে বলার আগে বলি কীভাবে আপনি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন। 

আপনার দেহের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা বৃদ্ধির উপায় 

১. পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম। আসলে, অপর্যাপ্ত বা দুর্বল মানের ঘুম দ্রুত অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেবে। মনে রাখবেন ঘুম ও দেহের প্রতিরক্ষা খুব নিবিড়ভাবে যুক্ত ।

২. বেশি পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ এবং লেবুজাতীয় খাবার খাবেন যেগুলি পুষ্টিকর এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা ক্ষতিকারক রোগজীবাণুগুলির বিরুদ্ধে আপনাকে লড়তে সহায়তা করবে। এই খাবারের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি ফ্রি র‌্যাডিকাল নামক যৌগগুলির সাথে লড়াই করে প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে, যা উচ্চমাত্রায় আপনার দেহে তৈরি করলে তারা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

৩. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খান, যা আপনি পাবেন অলিভঅয়েল এবং স্যামন মাছের স্বাস্থ্যকর চর্বিতে; যা প্রদাহ হ্রাস করে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

অলিভ অয়েল, যা অত্যন্ত প্রদাহ-বিরোধী, যা হৃদরোগ এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের হ্রাসের সাথে যুক্ত। এছাড়াও, এর প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি আপনার শরীরকে ক্ষতিকারক রোগজনিত ব্যাকটিরিয়া এবংভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। 

৪. রোজ একটি প্রোবায়োটিক পরিপূরক খাবার খান। এই খাবারগুলির মধ্যে দই অন্তর্ভুক্ত। 

৫. শর্করা যোগ করা খাবার সীমাবদ্ধ করুন। 

৬. পরিমিত ব্যায়ামে নিযুক্ত হন।

৭. হাইড্রেটেড থাকুন বা পর্যাপ্ত পানি খান। 

৮. আপনার মানসিক চাপ স্তর আপনার নিয়ন্ত্রণে রাখুন। 

৯. কিছু পরিপূরক খাবেন- যেমন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, রসুন, হলুদ, জিরার মতো মশলা রান্নার সাথে যোগ করুন।  

এপর্যন্ত দেখা গেছে, কোভিড -১৯ আক্রান্ত রোগীরা প্রধানত তিন রকম লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

মৃদুরোগ

বেশিরভাগ রোগী মৃদু লক্ষণই অনুভব করে। এটি প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনের একটি হালকা সংক্রমণ করে, যার মূল লক্ষণগুলি হচ্ছে জ্বর এবং কাশি। শরীরে ব্যথা, গলাব্যথা এবং মাথাব্যথা সবই সম্ভবত নাও থাকতে পারে। জ্বর হলো সংক্রমণটির প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি প্রতিক্রিয়ার ফলাফল। এটি ভাইরাসটিকে শনাক্ত করে শরীরের একটি আক্রমণকারী হিসাবে চিহ্নিত করে এবং সাইটোকাইনস নামক রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলিমুক্ত করে।

মারাত্মকরোগ

যদি রোগটি অগ্রসর হয় তবে এটি ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার কারণে হবে। ফুসফুসের প্রদাহকে নিউমোনিয়া বলা হয়। এই অবস্থায় ভাইরাসটি রোগীর মুখ দিয়ে বাতাসের পাইপ থেকে নিচে এবং ফুসফুসের ক্ষুদ্রনলগুলোর মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে অবশেষে ছোট্ট ছোট্ট বায়ুথলির মধ্যে পৌঁছে যায়। এইস্থানেই অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যায় এবং নিউমোনিয়ায় ক্ষুদ্রথলিতে জলজমা শুরু হয় এবং অবশেষে হাপানি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শ্বাসকষ্টের পরিমান যথেষ্ঠ হলে রোগীকে শ্বাস নিতে সহায়তা করার জন্য একটি ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হবে। মনে করা হছে, এই পর্যায়টি প্রায় ১৪ শতাংশ লোককে প্রভাবিত করে।

গুরুতররোগ

কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত প্রায় ৬শতাংশ রোগী অতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই পর্যায় রোগীর শরীরটি চিকিৎসায় ব্যর্থ হতে শুরু করে যেখানে মৃত্যুর প্রকৃত সম্ভাবনা থাকে। প্রতিরোধব্যবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং সারা শরীর সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যখন রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে নিচে নেমে যায় এবং অঙ্গগুলি সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয় বা পুরোপুরি ব্যর্থ হয় তখন এটি সেপটিক শক করতে পারে। ফুসফুসে ব্যাপকভাবে প্রদাহজনিত কারণে তীব্র শ্বাসকষ্টের সংক্রমণ শরীরকে বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন পেতে বন্ধ করে দেয়। ভাইরাসটি এতবড় পরিমাণে প্রদাহ স্থাপন করে যে রোগীর বহু-অঙ্গ ব্যর্থ হয়ে যায় ফলস্বরূপ রোগীটি মারা যায়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আয়ুষমন্ত্রকের নির্দেশনাগুলি মেনে চলার জন্যে বারবার বলেছেন। উল্লেখ্য যে, ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিকারের প্রচলন আছে। ভারতের প্রায় সবকয়টি রাজ্য আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথি ওষুধপ্রয়োগ করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপক প্রচলন শুরু করেছে এবং এ বিষয়ে অভূতপূর্ব সাড়া মিলছে। হোমিওপ্যাথি ওষুধ আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ দিনে একবার করে তিনদিন খেতে বলা হয়েছে। একমাস পর এটি আবার এই নিয়মে খেতে হবে। 

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাক্ষেত্রে রোগীর দেহে উপস্থিত উপসর্গগুলির ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচন করা হয়। কোনও নির্দিষ্ট রোগের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ হয় না এবং এটি রোগের নামের সাথে সম্পর্কিত নয়। আর এটাই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার একটি বড়ো সুবিধা। সেজন্য ক্যান্সার, জিনগতব্যাধি, ভাইরাসঘটিত রোগ অথবা শল্যচিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যাধিগুলিতে হোমিওপ্যাথির বিশেষ সাফল্য।

ভারতের গুজরাট রাজ্যে, কোভিড -১৯ এর প্রতিরোধক হিসাবে হোমিওপ্যাথি ওষুধ গ্রহণ করেছেন প্রায় ১২ লাখের বেশি মানুষ। গুজরাট সরকারের স্বাস্থ্যসচিব ঘোষণা করেছেন, একটি পরীক্ষাতে দেখা গেছে, ১৭৯ টি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে, হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। ৬২১০ জনকে হোমিওপ্যাথি বড়ি সরবরাহ করেছিল যার মধ্যে ১১টি কোভিড পজিটিভ ছিল। ১০দিন পরে এগুলি নেগাটিভ হয়ে গেছে। কেরালা সরকার হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শিল্পকে বড় এক মাত্রা দিয়েছে। রাজ্যজুড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ লাখের বেশি মানুষকে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিতরণ করেছে। হোমিওপ্যাথি বিভাগের জেলা মেডিকেল অফিসার বলেছেন, তিরুবনন্তপুরমে চারটি মোবাইল ইউনিট ও ঘরে ঘরে ওষুধ বিতরণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে।

ভারতের অপর রাজ্য উত্তরাখণ্ড সরকার, কোভিড -১৯ যোদ্ধাদের অনাক্রম্যতা বাড়াতে আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ গ্রহণের জন্য দুই কোটি ৪৮ লাখ ভারতীয় মুদ্রা, তহবিলকে অনুমোদন দিয়েছে। দেরাদুনে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিভেন্দ্র সিং রাওয়াতের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কর্ণাটক রাজ্য আয়ুষ মন্ত্রকের নির্দেশিকাগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সরকার ঘরে ঘরে অভিযান শুরু করেছে। রাজ্যের বিভাগীয় আধিকারিকরা অশ্বগন্ধা এবং হোমিওপ্যাথি ওষুধ আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ বিতরণ করছেন।

দিল্লি আয়ুষ বিভাগের প্রধান আরকেমন চন্দা বলেছেন, মৃদু লক্ষণ নিয়ে যে সমস্ত রোগী আয়ুষ মেডিকেল সেন্টারে আসছেন, তাদের আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তিনি এও বলেছেন,সমসাময়িক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে কীভাবে আমাদের প্রাচীন জ্ঞানকে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে তাও লক্ষ্য রাখছেন। তেলেঙ্গানার আয়ুষ মেডিকেল অফিসার এনলিংগারু বলেছিলেন, "ইউনানী পাচন, চবনপ্রাস এবং আর্সেনিক অ্যালবাম-৩০ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সংক্রমণকারীদের দেওয়া হচ্ছে।" 

আয়ুর্বেদ এবং হোমিওপ্যাথি কলেজ এবং প্রতিষ্ঠানগুলি বিচ্ছিন্নতা ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করা হয়েছে। কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে ঘরে ঘরে আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০ বিলি করা চলছে।

বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যেমন ইতালি, ব্রাজিল, রোমানিয়া, ইরান, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশগুলিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ওপর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সফলতা লাভ করেছে। ইতিমধ্যে, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড এর তরফ থেকে বিভিন্ন জেলার নাগরিকদের আর্সেনিকঅ্যালবাম ৩০ প্রতিষেধক হিসাবে, বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে এবং বহু মানুষকে করোনাভাইরাসের হাত থেকে মুক্ত করা গেছে।

হোমিওপ্যাথি এখন করোনাভাইরাসের সাথে লড়াই করার ক্ষেত্রে নতুন আশা জাগিয়ে তুলেছে। সম্প্রতি ভারতের আয়ুষ মন্ত্রক এবং ভারত সরকার অধীনত, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) আগ্রার নইমিনাথ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের উপর ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছে। ইতিমধ্যে এই ট্রায়ালে বড়সড় সাফল্য মিলেছে এবং অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী আরোগ্যলাভ করছে। পাঁচটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ- আর্সেনিক অ্যালবাম, ব্র্যায়নিয়া অ্যালবা, এনটিম টার্ট, জেলসেমিয়াম এবং ক্রোটেলাস এইচ- করোনারোগীদেরকে চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। উল্লেখযোগ্য, এর মধ্যে তিনটি ওষুধ কার্যকরী, যার মধ্যে ব্র্যায়নিয়া অ্যালবা অন্যতম।

বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, এটা খুব পরিষ্কার যে করোনাভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের জীবন-যাপন করতে হবে। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারায় সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। সেজন্যে আমাদের সর্বপ্রথম মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। বাইরে বেরোলে সর্বদা মুখে মাস্ক পরতে হবে বা মুখ ঢেকে রাখতে হবে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর নিজের হাত স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। যত্রতত্র থুতু ফেলবেন না এবং হাত দেবেন না। বিশেষ করে দরজার হাতলে খালি হাতে হাত দেবেন না। রাস্তাঘাটে হাঁচি বা কাশি হলে মুখ ঢাকা দিতে হবে। সর্বোপরি নিজের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান এবং করোনাভাইরাসের সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলেই একজন সুচিকিৎসকের পরামর্শে হোমিওপ্যাথি ওষুধ সেবন করুন ও সুস্থ থাকুন।