আমরা কোন সমাজে বাস করি!

খালিকুজ্জামান ইলিয়াস
Published : 3 July 2019, 01:18 PM
Updated : 3 July 2019, 01:18 PM

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত স্বনামধন্য অধ্যাপক ড. মাসুদ মাহমুদকে ছাত্র নামধারী কিছু গুন্ডার হাতে হেনস্তা হবার খবর শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হলাম। ড. মাসুদকে চিনি আজ প্রায় চল্লিশ বছর। তার মতো একজন বিদগ্ধ ও সর্বাংশে আদর্শ শিক্ষক আমাদের সমাজে বিরল। যতদূর জানি তার অপরাধ তিনি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের ক্লাসে যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

যৌনতা যেহেতু জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ সেজন্য এরকম বিষয় নিয়ে সাহিত্যের ক্লাসে আলোচনা করলে শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে- এ কেমন কথা? এমনটি বোধ হয় আমাদের এই অন্ধকার, অশিক্ষা-কুশিক্ষা অধ্যুষিত সমাজেই সম্ভব।

আসলে ড. মাসুদকে এই হত্যা প্রচেষ্টার পেছনে আছে অন্য কারণ। সম্প্রতি ওই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের কিছু অযোগ্য শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার জন্য সেখানকার শিক্ষক নিয়োগ কমিটি সুপারিশ করে। ড. মাসুদ ছিলেন সেই কমিটির প্রধান। এখন ব্যাপারটি স্পষ্ট যে ওই অপদার্থ শিক্ষকদের প্ররোচনাকারী ছাত্রনামধারী কিছু জানোয়ার চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় চল্লিশ বছর শিক্ষকতার পর অবসর নেওয়া এই শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করে।

আমাদের সমাজের এক বিপুল জনগোষ্ঠী আজো অন্ধকার যুগে বাস করে। এই অন্ধকার তাড়ানোর কাজে যে কজন শিক্ষক আলোকবর্তিকা হাতে ছাত্রদের আলোকিত করার চেষ্টায় রত, নি:সন্দেহে ড. মাসুদ তাদের প্রথম সারির একজন।

নাজেহাল হবার সময় তার হাতে থাকা কোলরিজ এবং ডি এইচ লরেন্সের দুটো বই অশিক্ষিত গুন্ডারা ছিড়েঁকুড়ে নষ্ট করে ফেলে। টেলিফোনে মাসুদ আপসোস করে বলছিলেন ওই বইদুটোয় তার মূল্যবান কিছু নোট লেখা ছিল, এখন বইয়ের সঙ্গে তার করা নোটগুলোও ধ্বংস হলো। মনে হচ্ছিল- নাজেহাল হবার কষ্টের চেয়ে বই হারানোর ব্যাথাই তাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছিল। এই হলেন ড. মাসুদ মাহমুদ। এই হত্যা প্রচেষ্টার নিন্দা জানাবার ভাষা আমার নেই। এই ঘৃণ্য জঘন্য আক্রমণের সুষ্ঠু তদন্ত ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানই পারে এধরনের অপচেষ্টার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে।