রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা আছে?

সাজিদুল হক
Published : 8 May 2019, 07:12 AM
Updated : 8 May 2019, 07:12 AM

কিছুদিন আগে ফেইসবুকে বাংলাদেশের একজন মোটামুটি খ্যাতনামা অভিনেত্রী তার অভিনীত একটি নাটকের গানের দৃশ্যের ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের জন্য নির্মিত ওই নাটকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ভালোবেসে সখী' গানটার দৃশ্য দেখছিলাম। যিনি ঠোঁট মেলাচ্ছেন তিনি ভালোই মিলিয়েছেন । কিন্তু হাতে যে তাল রাখছে তা মোটেই গানটির তালে নয়। এমনকি আশপাশে আরও যেসব অভিনয় শিল্পীরা আছেন তাদেরও একই অবস্থা। একজনও সঠিক তালে হাত নাড়াতে পারেননি। ওই হাত নাড়ানোটা যে বেতালে হচ্ছিল তা বুঝতে এমন কোনও সংগীত বিশারদ হওয়ার দরকার নেই। সবাইকে তাল বুঝতে হবে এমনও নয়। কিন্তু একটি গানের সাথে যখন অভিনয় করতে হবে তখন অন্তত তালটা বোঝা জরুরি। নাটকটির পরিচালক এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংগীত জ্ঞান বাদ দিলেও, অভিনয় জ্ঞান নিয়ে প্রশ্নটা তোলা যেতেই পারে।

এত কিছু থাকতে হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে কথা তুললাম কেন? ওই যে আজ ২৫ বৈশাখ। রবীন্দ্রজয়ন্তী বলে কথা। আর সেই কারণেই একটা প্রশ্ন তুলতে ইচ্ছা করছে। বর্তমান বাঙালির যাপিত জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু?

ধরুন, আমি বললাম বাঙালির জীবনে দস্তয়ভস্কি বা ফ্রানৎজ কাফকার যেমন কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই, তেমনি রবীন্দ্রনাথের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। কেউ কেউ অন্তত আমাকে মারতে আসতে পারেন। বাস্তবে না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কারণ গণতন্ত্র আর বাকস্বাধীনতা চূড়ান্ত রূপ ফেইসবুক দেখিয়ে দিয়েছে।

সত্যি বলতে বাঙালির জীবনে রবীন্দ্রনাথের আর কোনও প্রাসঙ্গিকতাই নেই। আমাদের যে জীবন চর্চা সেখানে রবীন্দ্রনাথের দরকার পড়ে না বহুদিন হলো। কথাটা একটু ভুল বললাম হয়তো। যদি কখনও বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর দেবার দরকার হয় তখন কিন্তু রবীন্দ্রনাথের দরকার পড়ে। রবীন্দ্রনাথের জন্ম কত বঙ্গাব্দে? কোন সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন? বাবার নাম কী? পিতামহের নাম কী? ইত্যাদি ইত্যাদি। হ্যাঁ, এখানে কেউ কেউ বলতে পারেন খোদ বিসিএস পরীক্ষায় যেহেতু রবীন্দ্রনাথের দরকার পড়ে তাহলে অন্য কোথাও প্রয়োজন আছে কিনা সে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। হয়তো তাই। কারণ বিসিএসই এখন আমাদের জীবনের চরম ও পরম পাওয়া। সবার উপরে বিসিএস সত্য তাহার উপরে নাই।

আচ্ছা, মনে করে দেখুনতো শেষ কবে কোন অভিভাবককে দেখেছেন যে পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য তার সন্তানকে রবীন্দ্রনাথের বই উপহার দিচ্ছেন, কিংবা গানের অ্যালবাম?

স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইতে যতটুকু রবীন্দ্রনাথ আছে সেটুকুও না রাখলে কিছুই ক্ষতি হয় না। পারলে ওটুকুও কর্তৃপক্ষ বাদ দিয়ে দিতেন। দিতে পারছেন না, কারণ হলো নোবেল পাওয়া প্রথম কোন অ-ইউরোপীয় ব্যক্তি তাতে আবার বাঙালি; পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ গেলে কিছুই থাকে না। তাই ওই সুতোটুকু রেখে দেওয়া। তার ওপর জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। ওই পাঠ্যবইতে রবীন্দ্রনাথ পড়ে সেটা আসলে জীবনে কোনও কাজে লাগে না। অন্তত আমার তাই মনে হয়। আমাদের পাঠপদ্ধতি কিংবা গোটা শিক্ষা পদ্ধতি রীতিমত দানবিক। সেখানে মানবিকতার কোনও স্থান নেই। সৃজনশীল মন গড়ে ওঠাতো পরের বিষয়। যা হোক আলোচনা অন্য দিকে যাচ্ছে।

আমাদের প্রতিদিনকার যাপিত যে জীবন তার সাথে রবীন্দ্র প্রজ্ঞার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছি বহুদিন আগে। তবে হ্যাঁ, একদম যে ছেড়ে দিয়েছি তাও নয়। আমরা খবরের কাগজ পড়ি। মোবাইল ফোনে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালের ফেইসবুকে শেয়ার করা খবর পড়ি। শেয়ার বাজারের দর ওঠানামার খবর পড়ি। আর ফেইসবুকের মেসেঞ্জারে অন্যের পাঠানো বিভিন্ন নোংরা চুটকি পড়ি এবং মিম দেখি। সারাক্ষণ অমুক দল কাজ করছে না, তমুক নেতা খারাপ বলে ফেইসবুকে লিখে বেড়াচ্ছি। কখন লিখছি? নিজের কাজটা ঠিকমত না করে এই যে এত কিছু করছি, তার মধ্যে কোনটার সাথে রাবীন্দ্রিক প্রজ্ঞার সম্পর্ক আছে?

বাঙালির কাছে আর কখন রবীন্দ্রনাথের দরকার পড়ে? পহেলা বৈশাখে, তাও সেই একটা গান। আর রবীন্দ্র জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে। তখন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কিছু মানুষের মধ্যে হুল্লোড় পড়ে যায়। কারণ রবীন্দ্রনাথ বলে কথা! বিশ্বকবি! রাষ্ট্রীয়ভাবে রবীন্দ্রনাথ উদযাপন চাট্টিখানি কথা নয়। এর বাইরে? সাধারণ মানুষ কী ভাবে? কিছুই নয়। যারা হয়তো দিনটাকে মনে রাখেন তারা ফেইসবুকে একটা পোস্ট দেবেন। বা আমার মতো একটি লেখা কোনও গণমাধ্যমের বদান্যতায় প্রকাশ করে আহা! রবীন্দ্রনাথ, বাহ! রবীন্দ্রনাথ, বলেই শেষ।

ক'দিন আগে পহেলা বৈশাখ গেল। 'এসো হে বৈশাখ' খুব চললো চারদিকে। একটি কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এই গানটি নতুন আঙ্গিকে সামনে আনলো। সে কি আনা রে বাবা! শুনে মনে হলো ওই গানটি যিনি নতুন আঙ্গিকে তৈরি করেছেন! তিনি আসলে র‌্যাপ সংগীত করতে চাইছিলেন। হঠাৎ করে মনে পড়েছিল এটা রবীন্দ্রসংগীত। তাই একটু সম্মান দিলেন। ওটাকে র‌্যাপ করলেই ভালো করতেন। কাছাকাছি আরেকটি ইংরেজি শব্দের বাস্তব প্রয়োগ (যেটা মানুষ হত্যার মতোই বর্বর) না করলেই ভালো হতো। বাংলাদেশের একজন বয়স্ক গায়কও সেখানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। তার গান শুনি। কিন্তু এরকম একটি কাজে কেন তিনি সম্মতি দিলেন আমি জানি না।

বলতেই পারেন রবীন্দ্রনাথের গানে এখন আর কারও স্বত্ব নেই। আমরা করতেই পারি আমাদের মতো। হ্যাঁ, অবশ্যই পারেন। কেন পারবেন না? এখন ফেইসবুক আছে, যা ইচ্ছা তাই করা যায়। শুধু বলবো, একটু ওই গানগুলোর রিমিক্স করে দেখানতো, যেগুলো বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় পবিত্র জ্ঞানে চর্চা করে থাকে। পিঠের চামড়া থাকবে না। আর তার আগে গাল সমান হয়ে যাবে। চড় খেতে খেতে।

এখনকার সময়ে ইউটিউব-ফেইসবুকে যারা বিরাট গায়ক-গায়িকা হচ্ছেন কিংবা মোবাইল ফোন কোম্পানির বদান্যতায় এফএম রেডিও স্টেশনে বসে ইংরেজি স্টাইলে বাংলায় রবীন্দ্রসংগীত গাইছেন, এমন শিল্পীদের কাছে জিজ্ঞেস করুনতো শান্তিদেব ঘোষ, দেবব্রত বিশ্বাস, শাহানা দেবী এদের কণ্ঠে জীবনে একটা রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড শুনেছে কিনা? নাম শুনলেই বড় একটা হা করে তাকিয়ে থাকবে। কিংবা অদ্ভুত উচ্চারণে বলবে, 'আমড়া মডার্ন মিউজিক করি। আজকের যুগের মতো করে ড়বীন্দ্রনাথকে ট্রিবিউট কড়ি।" আসলে এরা শোনেই না। গাইবে কী। তাও যারা একটু ভালো গায় তারা এমন যন্ত্রাণুসঙ্গে অ্যালবাম বা ভিডিও বের করেন তাতে কণ্ঠ শোনা না গেলেও যন্ত্রণা মালুম হয় নিশ্চিত।

এখনকার সময়ে মাথা ঝাঁকিয়ে কিংবা দশটির কম যন্ত্র ছাড়া রবীন্দ্রসংংগীত শোনা বা পরিবেশন করা হয় না। এরা বোঝেই না গানের ভাবের সঙ্গে যন্ত্রের সঙ্গতি থাকতে হয়। সুরের সাথে যন্ত্রের ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রখ্যাত সব শিল্পীকেও কোনও কোনও টেলিভিশনে গিয়ে ওরকম পরিবেশনা করতে হয়। আর তার চারপাশে অদ্ভুত হাত পা নাড়ানো মানুষ (!) দেখা যায়। কণ্ঠের কথা ছেড়েই দিলাম। শুধু একটা তথ্য দিয়ে রাখি- দেবব্রত বিশ্বাস শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে রবীন্দ্রনাথের গান না গাইবার জন্য বলেছিলেন। মানবেন্দ্র তার গুরুসম দেবব্রত বিশ্বাসের কথা মেনে চলেছিলেন। রবীন্দ্র সংংগীতের দিকে খুব একটা যাননি। এখনকার সময়ের গায়ক-গায়িকারা কথাটা বুঝবেন কিনা জানি না।

এই জায়গাটায় গণমাধ্যমেরও একটা দায় আছে। কোনও একজন যদি ফেইসবুক বা ইউটিউবে যাচ্ছেতাই করে একটু গান গেয়ে একটা বড় রকমের 'ভিউ' পেয়ে যায়, তবেই হয়েছে। সেই 'ভিউ' পাওয়া গায়ক/গায়িকাকে ডেকে টক শো,  ফেইসবুক লাইভ, সাক্ষাৎকার প্রচার করে সর্বনাশের মাথায় বাড়ি! আর কেনই বা এরকম হবে না? যেসব গণমাধ্যম এটা করছে তাদের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক'জন আছে গান নিয়ে ন্যূনতম পড়াশোনা করেছে, বা করে? কিংবা সেটা নিয়ে চর্চা করে? খুঁজতে গেলে বছর পেরিয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যান্ডসংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু চলে গেলেন কিছুদিন আগে। তার মৃত্যুর পর একটি টেলিভিশন চ্যানেলের খবরে 'প্যাকেজ' চলছে। সেখানে প্রতিবেদক নানা ধরনের কথার মধ্যে বললেন, আইয়ুব বাচ্চু 'ক্ল্যাসিকাল' সংগীত করতেন। বুঝুন অবস্থা! আইয়ুব বাচ্চু বেঁচে থাকতে কোনদিন এই দাবি করেননি।

এবার শ্রোতাদের কথায় আসি। এখনকার সময় যাদের বয়স ৩০-৩৫ এর ভেতর, তাদের মধ্যে  জরিপ চালান। তারা ঘুরেফিরে 'তোমার খোলা হাওয়া' কিংবা 'ভালোবেসি সখী' বা বেশি হলে পঞ্চাশটা রবীন্দ্রনাথের গানের পাক খাবে। এখন গান কোনটা শুনবেন বা না শুনবেন সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তির ব্যাপার। আমি বলছি, এই আদিখ্যেতা করে রবীন্দ্রনাথের গান শোনার দরকার নেই। না শুনলে কোনও ক্ষতিই হবে না।  তবে কি জানেনতো শ্রোতাকেও শিক্ষিত হতে হয়। শ্রোতার শিক্ষিত হওয়ার কথা স্বয়ং রবি ঠাকুরই বলে গেছেন। শিক্ষিত শ্রোতা না হলে ভালো গানও তৈরি হয় না।

'স্বপন-পারের ডাক শুনেছি, জেগে তাই তো ভাবি/কেউ কখনো খুঁজে কি পায় স্বপ্নলোকের চাবি' এই গানটি যদি কোথাও বাজতে থাকে আর কোন শ্রোতাকে জিজ্ঞেস করা হয়, এখানে কী বলা হচ্ছে? তাহলে হয়তো হা করে তাকিয়ে থাকবে। 'স্বপনপারের ডাক? স্বপ্নলোকে চাবি?' ছাতার মাথা কিসব লেখা কিছুই বোঝা যায়না। বুঝবেই বা কি করে এগুলো বুঝতে গেলে ভাবতে হয়। আর এই ভাবতে গেলেই যত বিপত্তি। এখন কানের কাছে গান বাজলেই হলো। ওরকম কষ্টকর ভাবার মধ্যে কে যায়? সেই কোন যুগে রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন, তাতে আবার বুঝতে হবে? গানটা একটু ভালো লাগে তাই চালিয়ে দেয়।

এখন শ্রোতা মানেই কি সবাইকে স্বরলিপি শিখে গান শুনতে বসতে হবে? আমি মোটেও সেটা বলছি না। এরকম বহু মানুষ আছেন যারা গান গাইতে পারেন না, স্বরলিপি বোঝেন না, কিন্তু একটা  শিক্ষিত কান রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংংগীত শিক্ষা পাওয়া গায়কের গান শুনে তার ভুল ধরছেন এরকম শ্রোতাও আমি দেখেছি।

আমার পরিচিত একজন আছেন যার কাছে বহু পুরনো ভারতীয় এবং ইউরোপীয় সঙ্গীতের রেকর্ড আছে। যেগুলো তিনি নিয়মিত শোনেন। এরকম একজনকেও পেয়েছি যিনি এখনও প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য পড়েন। তাদের কথা আলাদা।

রবীন্দ্রনাথের লেখা বা তাকে নিয়ে অন্য কারও লেখার পাঠক এখন খুবই কম। এটা কথা হলফ করে বলতে পারি। এই সময়ে রবীন্দ্রনাথের লেখা বা অন্য শিল্পকর্ম নিয়ে আলোচনার চেয়ে যদি তার নারী সংসর্গ নিয়ে কোনও লেখা বের হয় তবে আর পায় কে! খাওয়া বাদ দিয়ে ওটা নিয়েই বাঙালি পড়ে থাকবে। শুধু এটুকুর জন্যই অপেক্ষা করছে কবে সেই বই প্রকাশ পাবে যেখানে রবীন্দ্রনাথের সাথে কোন নারীর যৌন সম্পর্ক নিয়ে একটা রগরগে বর্ণনা থাকবে।  কিংবা এমন কোনও গবেষণা গ্রন্থের জন্য অপেক্ষা করছে যেখানে লেখক বলবেন, রবীন্দ্রনাথের চেয়ে নজরুলের প্রতিভা বেশি ছিল। রবীন্দ্রনাথ ষড়যন্ত্র করে নজরুলকে বিষ প্রয়োগ করে অসুস্থ করে দিয়েছিলেন। আমি এরকম অনেক মানুষ দেখেছি যারা আমার চেয়ে বয়সে বড়, তারা বিশ্বাস করেন নজরুলের অসুস্থ হওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ দায়ী। কি পরিমাণ সাম্প্রদায়িক এরা!

যে দেশের রাজধানীতে এবং প্রধান প্রধান শহরগুলোতে সুস্থ বিনোদনের কোনও ধরনের আয়োজন নেই সেখানে লোকে রবীন্দ্রনাথ কেন পড়বে? কেন চর্চা করবে?  সারাদিন অফিস করে কোনও যুবক বা যুবতী যদি মনে করেন তিনি তার বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দেবেন, তাহলে কোথায় যাবেন? রওনা দিয়ে কখন পৌঁছাবেন? ফিরবেন কখন? সময়ের কোন ঠিক আছে? নেই। তারপরও ধরে নিলাম তিনি আড্ডা দিতে বের হলেন, কোথায় যাবেন? শাহবাগে? সেখানে আড্ডা দেওয়া যায় না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসা যায় না। টিএসসিতে যাবেনইবা কিভাবে? উনিতো ওখানে বহিরাগত। বাকি থাকে গরমকালে শরীরে গজিয়ে ওঠা ঘামাচির মতো খাবারের দোকান। সেখানে কথা বলবেন কখন, খাবেন কখন আর আড্ডাই বা দেবেন কখন? তাছাড়া চকচকে শপিং কমপ্লেক্সের ফুডকোর্টে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে তো আড্ডা চলে না। সেলফি তুলে ফেইসবুকে চেকইন দিতে হবে যে।

তাই বলে কি এ শহরে রবীন্দ্র চর্চা হয় না? অবশ্যই হয়। কিছু লোক সেটা করে। সেটা শতাংশের হিসেবে কত? যে মধ্যবিত্ত বাঙালির একটা বড় অংশ একসময় প্রতিদিন কিছু না হোক অন্তত রবীন্দ্রনাথের দুটো গান শুনতেন তারা এখন কোথায়? যে মধ্যবিত্ত এই ঢাকা শহরে একদিন রবীন্দ্র সংগীত চর্চার দাবিতে আন্দোলন করেছিল সেই মধ্যবিত্তের আজকের অবস্থান কোথায়?