গুডবাই হুমায়ুন ফরীদি

লুৎফর রহমান রিটন
Published : 13 Feb 2012, 02:53 PM
Updated : 13 Feb 2012, 02:53 PM

ফুলফাগুনের উৎসবের দিনে, আজ আমাদের অভিনয় জগতের সবচে বর্নাঢ্য মানুষটি চলে গেলেন। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা তিনি, হুমায়ুন ফরীদি। আমাদের মঞ্চ টিভি আর চলচ্চিত্রে এরকম ভার্সেটাইল অভিনেতা একটিও নেই। কী অসাধারণ ক্ষমতা নিয়ে এসেছিলেন ফরীদি। বিটিভির শাদাকালো যুগের সবচে বর্নিল অভিনয় শিল্পী হুমায়ুন ফরীদি। নিখোঁজ সংবাদ নামের একটি টিভি নাটকেই প্রথম দেখি তাঁকে। প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমার মতোই মুগ্ধ হয়েছিলেন অগুনতি দর্শক। প্রথম নাটকেই বাজীমাৎ করেছিলেন তিনি। বিটিভির দর্শকরা শক্তিমান একজন নায়কের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন। একেকটি নাটকে একেক রকম চরিত্রে দুর্ধর্ অভিনয় করে চমকে দিচ্ছিলেন তিনি। প্রতিটি চরিত্রেই এতোটা সাফল্যের সঙ্গে অভিনয় করেছেন যে তাঁর অভিনীত চরিত্রটিতে অন্য কোনো শিল্পীকে কল্পনাও করা যেতো না। মনে হতো, এই চরিত্রটি নাট্যকার বুঝি বা হুমায়ুন ফরীদিকে ভেবেই সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি চরিত্রেই ফরীদি নিজেকে অতিক্রম করে যেতেন অভাবনীয় সাফল্যের সঙ্গে। ফরীদি অভিনীত টিভি নাটকগুলো এদেশের মানুষকে সম্মোহিত করে রেখেছিল দীর্ঘকালব্যাপী।

এক পর্যায়ে আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাতারা শক্তিমান এই অভিনয়শিল্পীকে দখল করে নিলেন। ফরীদি টেলিভিশন ছেড়ে চলচ্চিত্রের মোহে পড়ে গেলেন। খল চরিত্রে শীর্ষ অভিনেতার আসনটি খুব অনায়াসেই দখল করে নিলেন তিনি। এবং দীর্ঘদিন ধরে সেই আসনটিকে টলাতে পারেন নি কেউ। আমাদের চলচ্চিত্রের অনিবার্য অভিনেতা হয়ে উঠলেন হুমায়ুন ফরীদি। নায়ক-নায়িকা নির্ভর আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পটি এক পর্যায়ে ফরীদি নির্ভর হয়ে উঠেছিল। ফরীদি অভিনয় করেছেন অথচ চলচ্চিত্রটি ব্যবসা সফল হয়নি এরকম উদাহরণ খুব একটা নেই। মঞ্চ এবং টেলিভিশন আরো অনেক কিছু প্রাপ্য ছিলো ফরীদির কাছে। কিন্তু ফরীদি সময় দিতে পারেন নি। চলচ্চিত্র তাঁর সকল সময় কেড়ে নিয়েছিল। যদিও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিভি নাটক ও টেলিফিল্মে দর্শকরা তাঁকে পেয়েছেন গত এক দশকে।

কী দাপুটে অভিনেতাই না ছিলেন ফরীদি। খুব ছোট্ট একটা চরিত্রে স্বল্পকালীন উপস্থিতিতেই সবাইকে স্লান করে দিয়ে অপরূপ দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হয়ে দর্শক-হৃদয় তোলপাড় করে ফেলার অসামান্য ক্ষমতা ছিলো তাঁর। বিটিভির সাদাকালো যুগে সেলিম আলদীনের 'ভাঙনের শব্দশুনি' নাটকে তাঁর "আমি তো জমি কিনি না, পানি কিনি, পানি কিনি" সংলাপটি কেউ কি ভুলতে পেরেছেন আজও? সেই সময় আরেকটি নাটকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের উপস্থিতির একটি চরিত্রে ভিক্ষুকের ভূমিকায় কী অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন অসামান্য এই শিল্পী!

সেই নাটকে ফরীদির সংলাপটি ছিলো "ইগগা টিঁয়া দিবেন নি স্যার?"

হুমায়ূন আহমদের বেশ কিছু নাটকে হুমায়ুন ফরীদির উজ্জল উপস্থিতি আমাদের  স্মৃতিতে জমা হয়ে আছে। ফরীদি এমন মাপের একজন অভিনেতা যে, চাইলেই তাঁকে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা যাবে না।

আমরা আমাদের সময়ে একজন ফরীদিকে পেয়েছিলাম বলেই আমাদের সময়টা এতো বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছিল। ফরীদির প্রয়াণে আজকের ফুলফাগুনের বসন্তটি কীরকম রঙহীন রঙহীন লাগছে।

গুডবাই হুমায়ুন ফরীদি।
শুভ হোক আপনার অগস্ত্যযাত্রা।
বাংলাদেশ আপনাকে চিরদিন মনে রাখবে।