ফেসবুক স্টেটাস কি সেডিশাস হতে পারে?

ফাহাম আব্দুস সালাম
Published : 10 Jan 2012, 07:35 AM
Updated : 10 Jan 2012, 07:35 AM

গত বছর জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়ার একটি টেলিভিশান ইন্টারভিউতে নরম্যান মুর প্রস্তাব করেন যে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার (অস্ট্রেলিয়ার একটি রাজ্য) উচিৎ হবে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশান থেকে বের হয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করা। তিনি সে রাষ্ট্রের সম্ভাব্য দুটো নামও উল্লেখ করেন: হিস্পিরিয়া কিংবা ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া। নরম্যান মুর কোনো হেদি-পেদি-নেদি নন, ঐ রাজ্যের ক্ষমতাসীন খনিজ মন্ত্রী। তার নালিশ: ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার খনিজ আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ চলে যাচ্ছে অন্যান্য রাজ্যে। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশান গঠিত হয়েছিলো যে চেতনাকে লক্ষ্য করে, এ ধরনের বণ্টন ব্যবস্থা তার বিপক্ষে যায় বলে এ ফেডারেশান থেকে বের হয়ে নতুন একটি রাষ্ট্র গঠন করা প্রয়োজন।

মি. মুরের বক্তব্যটিকে কি রাষ্ট্র-বিরোধী বলা যেতে পারে? ধারণা করি যে উপমহাদেশে, মিডিয়ায় এই ধরনের কথা বললে ফাঁসিতে লটকে পড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় মিডিয়ায় আপাত দৃষ্টিতে রাষ্ট্র-বিরোধী এই মন্তব্যের জন্য এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো রাষ্ট্রদ্রোহিতার (সেডিশান) মামলা হয় নি, মন্ত্রণালয় চলে যায় নি, এমন কি জানামতে তিনি রাজ্য সরকার কিংবা দল থেকে তিরস্কৃতও হন নি। মন্ত্রী হয়েছেন দেখে কি তার নিজস্ব কোনো মত থাকবে না?

ট্রিজন (Treason) এবং সেডিশান (Sedition) য়োরোপের দুটো মধ্যযুগীয় আইন যার প্রয়োগ ঘটতো মূলত রাজা-বাদশাদের ক্ষমতারক্ষার জন্য। আমাদের মতো দেশগুলোতে এর আগমন ঘটে ঔপনিবেশিক বিচারের মাধ্যমে, প্রজাদের ঠাণ্ডা করার জন্য। প্রথমে ছিলো শুধু ট্রিজন, সহজ ভাষায় রাষ্ট্রবিরোধী কোনো "কাজ", যেমন রাজাকে হত্যা করার চেষ্টা। ১৭ তম শতকে এসে শাসকরা দেখলো যে শুধু এই আইন দিয়ে জনগণকে যথেষ্ট শিক্ষা দেয়া যাচ্ছে না। কিছু দুষ্টু বুদ্ধিমান মানুষ সরাসরি রাজাকে উৎখাত করার চেষ্টা না করেও বড় বিষফোড়া হয়ে যাচ্ছে। এরা জ্বালাময়ী ভাষণ দেয় এবং লেখেও জ্বালাময়ী গদ্য যা জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলে। সেটা আরো সাংঘাতিক কেননা আগে ছিলো জনাকয়েক দুষ্টু, যাদের কল্লা নিলেই হোতো কেল্লাফতে। কিন্তু এখন জড়ো হচ্ছে জনগণ দলে দলে; এদের সবাইকে তো আর মারা যাচ্ছে না। তাই ঠাণ্ডা করতে হবে নষ্টের গোঁড়াটাকে। তাই তৈরি হলো সেডিশান এক্ট; এই আইনের আওতায় রাজনীতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় (পড়ুন, রাজার বিপক্ষে যায়), এমন কথা বলা ও লেখার জন্যে দুষ্টুদের সাইজ করা যাবে।

এই তো সেদিন, ১৯৫৪ সালে সিঙ্গাপুর ও মালয়শিয়ার উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল য়ুনিভার্সিটির পূর্বসূরি) সোশ্যালিস্ট ক্লাবের প্রকাশনা "ফজর" এর একটি লেখার জন্য সেডিশান এক্টে মামলা করা হয় সম্পাদকীয় পরিষদের ৮ ছাত্রের বিরুদ্ধে। তাদের অপরাধ, Aggression in Asia নামক সম্পাদকীয়তে তারা পশ্চিমা তথা ব্রিটিশদের "আধুনিক কালের আগ্রাসী শক্তি" বলে উল্লেখ করে এবং বলে যে "তাদের বর্বরতার কারণে এশিয়া চরমভাবে শোষিত হচ্ছে"। স্বভাবতই ঔপনিবেশিক শক্তি এতে খুব গোসসা হন এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। সৌভাগ্যবশত, সিঙ্গাপুর ডিসট্রিক্ট কোর্টের বিচারপতিরা আইনকানুন ও বিচারকাজটা বুঝতেন এবং সম্ভবত সরকার থেকে কোনো অনুদান নিতেন না (এবং হয়তো টকশোতেও অংশ নিতেন না) দেখে বিখ্যাত "ফজর ট্রায়ালে" রায় চলে যায় ছাত্রদের পক্ষে। বলা হোলো যে ছাত্রদের এই সমালোচনা বৈধতার সীমা অতিক্রম করে নি এবং মামলা থেকে তারা সসম্মানে অব্যাহতি পান। সিঙ্গাপুর ও মালয়শিয়ার স্বাধিকার আদায়ের ইতিহাসে "ফজর ট্রায়াল" একটি মাইলস্টোন কেননা এ ঘটনার পরেই জনমত চূড়ান্তভাবে ব্রিটিশদের বিপক্ষে চলে যায়।

সেডিশান খুবই স্পর্শকাতর এবং সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিক একটি ইস্যু। রাষ্ট্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র হোলো বাক-স্বাধীনতা এবং পরমত সহ্য করার ক্ষমতা যা নির্দিষ্ট হয় – নিদেন ধারণা করা হয় এ ধরনের মামলা ও তার কার্যবিবরণী থেকে। আদালত দ্বারা কোনো রাষ্ট্রের চরিত্র নিরূপণ হওয়াটা শোভন না, সেটা হওয়া উচিৎ রাজনীতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মযজ্ঞ থেকে; তাই উন্নত দেশের আদালত সাধারণত এ ধরনের মামলা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। কেননা সেডিশান কোনো সাধারণ অপরাধ না, শেষ বিচারে এটি একটি সাংবিধানিক ইস্যু। তাদের জানা আছে যে সেডিশানের মামলা আসলে রাষ্ট্রের দুর্বলতাই প্রকাশ করে, সবলতা না। এসব দেশের বিচারকরা কীভাবে যেন দশ, বিশ কিংবা পঞ্চাশ বছর পর একটি খারাপ সিদ্ধান্তের ফল কী হবে সেটা দেখতে পান, এখনই। এ নিরিখে, বাংলাদেশের হাইকোর্ট সম্প্রতি একটা ফেসবুক স্টেটাসের জন্য যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে সেটা আশ্চর্যজনক বৈ কি।

একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আদৌ সেডিশান এক্টের উপযোগিতা আছে কি না এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। এমন কি, রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হলে সেখানে মত প্রকাশের জন্য কোনো শাস্তি হতে পারে না দেখে সেডিশান কোনো অপরাধ হতে পারে না – এই মতও চালু আছে। তার মানে কি আপনি যা খুশী তাই বলবেন? না, তা কখনোই না। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে বাক-স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মৌলিক স্তম্ভ। তাত্ত্বিকভাবে, আপনি যদি আইন করে বাক-স্বাধীনতাকে রোধ বা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন তাহলে সে আইন বাক-স্বাধীনতার ঊর্ধ্বে স্থান পায়, যা গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। সেজন্য মনে করা হয় যে গণতন্ত্র নিজেই বাক-স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট, কোনো অতিরিক্ত আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির খণ্ডকালীন প্রভাষক মুহাম্মদ রুহুল আমীন খন্দকারের একটি ফেসবুক স্টেটাসের কারণে শাস্তি প্রয়োগ বহুলভাবে আলোচিত হয়। গত ১৩ অগাস্ট মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান সম্পাদক মিশুক মুনীরসহ পাঁচ জনের মৃত্যুর পর ফেসবুকে তিনি স্টেটাস দেন, "পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ফল তারেক ও মিশুক মুনীরসহ নিহত ৫: সবাই মরে, হাসিনা মরে না কেন?"

সন্দেহ নেই যে কারো মৃত্যু কামনা খুব নিম্ন রুচির একটা কাজ, তা সেটা প্রধানমন্ত্রী হোক বা অন্য কেউ। আর সেই নিম্নবুচি একজন শিক্ষকের মধ্যে থাকাটা আর্ও বেশি অনাকাঙ্খিত। কিন্তু যতোটুকু জানা যায় যে নিম্ন রুচি কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ না। কারও কারও মতে তিনি এই স্টেটাসের মাধ্যমে আদৌ মৃত্যু কামনা করেছেন কি না, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। স্টেটাসটিকে এভাবেও পড়া যায় যে তিনি একটি প্রশ্ন করেছেন মাত্র যা পৃথিবীর প্রতিটি জীবিত প্রাণীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেভাবেই পড়ুন না কেন যে কোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ সম্ভবত এ ব্যাপারে একমত হবেন যে অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণারত একজন সাধারণ পিএইচডি ক্যান্ডিডেটের পক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করা কিংবা সে ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়া নিতান্তই অসম্ভব একটা কাজ। কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষেরা সম্ভবত এ ব্যাপারেও একমত হবেন যে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুতে কোটি কোটি বাংলাদেশীদের মতো ক্ষুব্ধ রুহুল আমীন রাগের মাথায় কথাটি বলেছেন। হ্যাঁ, ভব্যতার মাপকাঠিতে স্টেটাসটি অবশ্যই অশোভন, কিন্তু এই স্টেটাসের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সামান্য ভর্ৎসনা করার অধিকারও রাখেন কি না, সেটাই তর্কসাপেক্ষ।

ধরা যাক আপনি বাসায় দাওয়াত দিয়েছেন, এসেছে আপনার বন্ধুরা। তাদের সামনে আপনি সম্ভাব্য সবচেয়ে মারাত্মক রাষ্ট্র-বিরোধী মন্তব্যটাই করে বসলেন যে বাংলাদেশের উচিৎ পাকিস্তান, ভারত কিংবা ব্রিটেনের সাথে এক হয়ে যাওয়া (এর চেয়ে শক্ত কোনো রাষ্ট্র-বিরোধী মন্তব্য এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না)। এ কথা বলার জন্য কোনো বন্ধু আপনাকে হয়তো চড় মেরে বসতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রদ্রোহিতার কোনো মামলা করা যেতে পারে কি? যতো রাষ্ট্র-বিরোধীই হোক, কথাটা আপনি ঘরের মধ্যে বলেছেন যেটা কোনো পাবলিকস্ফেয়ার না। তাছাড়া আপনি কোনো ষড়যন্ত্র করছেন না, করার চেষ্টাও করছেন না; অর্থাৎ আপনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো হুমকি নন। যেভাবেই দেখুন না কেন এটি একজন মানুষের একটি মত মাত্র। নিজের ঘরে আপনি কার সাথে কী কথা বলছেন তার ওপর নিয়ন্ত্রণ করা কি রাষ্ট্রের কর্তব্য হতে পারে?

ফেসবুক আসলে আপনার বাসায় দাওয়াতটিরই একটি ভার্চুয়াল সংযোজন মাত্র। আপনার স্টেটাস তো পৃথিবীর সবাই দেখছে না, দেখছে শুধুমাত্র আপনার বন্ধুরা। আপনি আপনার বন্ধুর সাথে কী কথা বলবেন এটা ঠিক করাও যদি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় তাহলে সে অরওয়েলিয়ান দুঃস্বপ্নে গণতন্ত্র যা, কমোডের মধ্যে জাফরান আর অর্কিডের বাগান ঠিক তাই। তাছাড়া সেডিশানের মামলায় খুব বড় একটি বিবেচনাধীন বিষয় হোলো সেডিশাস ইন্টেন্ট প্রমাণ করা। অর্থাৎ রুহুল আমীন শুধু যে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন তাই না, তার অভিপ্রায়ও প্রমাণ করতে হবে। কল্পনার লাগামটিকে পুরোপুরি ঢিল দিয়েও খুঁজে পেলাম না শেখ হাসিনার মৃত্যুতে ভিন দেশে গবেষণারত সাধারণ একজন ছাত্রের কী লাভ হতে পারে? তিনি কি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য যারা চাইছে একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করতে? তার বিরুদ্ধে কি কোনো জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে? শেখ হাসিনার মৃত্যুতে তার কি কোনো প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা আছে? জানামতে, আর দশ জনের মতোই সাধারণ এই ছাত্রের বিরুদ্ধে কখনোই এ ধরনের কোনো অভিযোগের কথা ওঠে নি। বুঝে উঠতে পারি না কীভাবে সেডিশাস ইন্টেন্টের অভিযোগ উত্থাপিত হবে এই ছাত্রের বিরুদ্ধে। অবশ্য বাংলাদেশে কোনো কিছু "হওয়ার" জন্য না বুঝতে পারাটাই বোধহয় সবচেয়ে শালীন, এতে বুদ্ধির অপচয় হয় না বললেই চলে।

আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হোলো এর চেয়ে বহুগুণ আক্রমণাত্মক ও কুৎসিত কথাবার্তা হরহামেশা অনলাইনে দেখা যায়। ধারণা করি মাননীয় বিচারকগণ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার অনলাইন ভার্শানে পাঠক প্রতিক্রিয়ার সাথে ওয়াকিফ আছেন। সাধারণ একজন নাগরিক হিসাবে শ্রদ্ধার সাথে প্রশ্ন করতে চাই যে রুহুল আমীন কি এমন কোনো অপরাধ করেছেন যা অসংখ্য বাংলাদেশী প্রতিদিনই অনলাইনে করছেন না? কিসের ভিত্তিতে তাহলে শুধুমাত্র একজন বাংলাদেশীই অভিযুক্ত হলেন এবং বাকীরা হচ্ছেন না।

বাংলাদেশে এ ধরনের প্রশ্ন করা হৃদয় ও মস্তিষ্কের ওপর অত্যাচার বিশেষ। তার চেয়ে বরং শুমার করি কে এতে লাভবান হোলো আর কে হোলো ক্ষতিগ্রস্ত।

ক্ষতির খাতায় সবার আগে নাম থাকবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির, এ কথা সবাই মানবেন বোধহয়। এখন থেকে পঞ্চাশ বছর পরেও সোশাল সায়েন্স, পলিটিকাল সায়েন্স ও কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্ররা বিভিন্ন টেক্সট বুকে এই ঘটনার উল্লেখ পাবে এবং জানবে যে কোনো কোনো দেশে সামান্য ফেসবুক স্টেটাসের জন্যেও মানুষকে জেলে যেতে হোতো। পরমত সহিষ্ণুতার ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষ যে উত্তর কোরিয়া, ইরান, চায়না, পাকিস্তান, সৌদি আরব এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে ভারত ও আমেরিকার চেয়েও উঁচু মান বজায় রেখেছে বহু দিন ধরে, এ জাতীয় ঘটনা তার প্রমাণ দেয় না।

বাংলাদেশের আদালতের লাভ হোলো না ক্ষতি, সে বিচার পাঠকরাই করুন (এই লেখার ৬ষ্ঠ প্যারায় যে প্রসঙ্গটি তুলেছিলাম তার উদাহরণ পাবেন এখানে। আমি যা বলতে চাই তা সঙ্গত হলেও বলছি না, পাঠকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি। কেননা আমি চিন্তিত যে সম্পাদক কিংবা আমি আবার ঝামেলায় পড়ে যাবো না তো? এভাবেই, ঠিক এভাবেই কিছু আইন বাক-স্বাধীনতার উর্ধে স্থান পায়, যে কথা বলা প্রয়োজন তা বলা হয় না)।

আয়রনিকালি, পুরো ফেসবুক স্টেটাস পর্বের একমাত্র বেনিফিশিয়ারি হলেন তিনি, যার বিরুদ্ধে এতো তোড়জোড়। অস্ট্রেলিয়ায় রুহুল আমীনের শিক্ষা ভিসা শেষ হওয়ার কথা ছিলো এ বছর মাঝামাঝি সময়ে। এ কথা নির্দিধায় বলা যায় যে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন এবং যথাযথ কারণে তাকে সেটা দেয়াও হবে। এ ঘটনা যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার মেইনস্ট্রীম এলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছে সেহেতু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরবর্তী চাকরি পাওয়াটা বেশ সহজ হয়ে যাবে। কোনোভাবেই আমি বোঝাতে চাইছি না যে তার নিজের যোগ্যতা চাকরি পাওয়ার জন্য যথেষ্ট না, বলছি যে এ ঘটনা তাকে চাকরি পেতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। ফ্রি পাবলিসিটির কথাটাও একবার চিন্তা করুন। একটি মাত্র বাক্যের জন্য বাংলাদেশ নিজে দুর্নামের ভাগীদার হলেও রুহুল আমীনকে যে বিস্ময়কর পরিচিতি যেচে পড়ে উপহার দিলো সেটা ঈর্ষনীয় নয় কি?

আর হ্যাঁ, বাংলাদেশ যে মেধাবী ছেলেটির পিছে বহু সম্পদ ব্যয় করে আজ এতোদূর পর্যন্ত নিয়ে আসলো, সে ছেলেটির জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু পাবে অস্ট্রেলিয়া – ক্ষতির খাতায় বাংলাদেশের আরেকটি অর্জন। শাবাশ বাংলাদেশ।