এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না

সারাহ বেগম কবরী
Published : 18 August 2011, 03:43 PM
Updated : 18 August 2011, 03:43 PM

তারেক মাসুদকে আমি চিনি এই তো কিছুদিন আগে থেকে। জুরি বোর্ডে 'মুক্তির গান' সুন্দর করে গুছিয়ে জাতীয় পুরস্কারের জন্য জমা দিয়েছিল। তারপর 'মাটির ময়না' । ছবিটি আমি মধুমিতা হলে গিয়ে দেখি।

তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সৃষ্টিশীলতা ছবিটির ফ্রেমে ফ্রেমে কথা বলছিল। একজন কৃতী পরিচালকের অদম্য ইচ্ছা, ভালোবাসা, না-বলা কথা বলতে পেরে সেলুলয়েডের ফিতায় যেন চকচক্ করছিল। তারেক মাসুদ ওখানেই থেমে থাকেনি। 'অন্তর্যাত্রা' , 'রানওয়ে' বানিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেই যাচ্ছিল। নতুন ভাবনা, নতুন বুনন, ভিন্ন চিন্তা সব মিলিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরি হচ্ছিল।

নিয়তি তাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। তাকে জোর করে আমাদের কাছ থেকে সরিয়ে নিল এক কুৎসিত দানব যার নাম 'সড়ক দুর্ঘটনা'।

মিশুক মুনীর শিশুদের মতো হাসতে পারত। কঠিন এক পেশা বেছে নিয়েছিল– টিভি সাংবাদিকতা। দুর্গম জায়গায় গিয়েও সে কাজ করত। তার পেশাগত কাজে নিষ্ঠার কোনো কমতি ছিল না। মৃত্যুভয় তাকে কাবু করতে পারেনি। সেই বিখ্যাত বাবা শহীদ মুনীর চৌধুরীর সাহসী মেধা, সদাহাস্য ছেলেটি হাসতে হাসতে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেল।

বাংলাদেশে এমন গুণী মানুষদের আমরা ধরে রাখতে পারলাম না। পৃথিবীর এক উন্নত দেশে মিশুকের কর্মস্থল ছিল, যার নাম কানাডা। নিজের দেশের মায়া, মাটির টানে চলে এসেছিল এখানে। কোনো লোভ তাকে ধরে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশে এসেই কত মানুষকে কাজ শেখাল, দেশের জন্য উন্নত প্রযুক্তিকে পরিচিত করাল। দেশকে এমনভাবে ভালো না বাসলে আরাম-আয়েশ ছেড়ে কেউ আসতে পারে? এমন কষ্ট করতে পারে?

মিশুক ভেবেছিল, তার কাজ আর পরিশ্রম দিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে এক স্বপ্নরাজ্যের স্তরে। হাজারো দুখী মানুষের দেশ বাংলাদেশও একদিন পৃথিবীর উন্নত দেশ হবে। এইসব চিন্তা করে তার বাংলাদেশে আসা।

তার ত্যাগ ভালবাসা আবেগ সব কেড়ে নিয়েছে নিষ্ঠুর ঘাতক বাস– অব্যবস্থাপনায় ভরা ট্রাফিক আর অদক্ষ ড্রাইভার। ওরা কি বুঝবে আমাদের সংস্কৃতিতে তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীরের অবদান ও গুরুত্ব?

প্রশাসন যদি অপরাধীদের বা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয় তাহলে বাংলাদেশ এ ধরনের ক্ষতি বাড়তেই থাকবে। এই গুণজনদের হারিয়ে শুধু প্রিয়জন হারানোর বেদনা নয়, সর্বশান্ত হবার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এখনই এই অপশক্তিকে গলা টিপে মেরে ফেলতে হবে।