পুলিশ কাদের বন্ধু? শত্রু কার?

শামীমা বিনতে রহমান
Published : 10 August 2011, 03:44 PM
Updated : 10 August 2011, 03:44 PM

২৬ জুলাই নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের রহিমারটেক এলাকার চর কাঁকড়া গ্রামে ডকাত পড়ে। মোরশেদ হোসেন মাসুদ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে ডাকাতরা তাকে গুলি করে মেরে ফেলে। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রামবাসী ২৭ তারিখ দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন ঝোপে ঝাড়ে লুকিয়ে থাকা ডাকাতদের ধরে ধরে পিটায়ে মেরে ফেলে। বিভিন্ন দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়- ঢাকার আমিন বাজারের পর কোম্পানীগঞ্জে ৬ ডাকাতকে গণপিটুনিতে হত্যা। তখনো, আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামে ৬ ছাত্রকে পিটায়ে হত্যা করার বিহবলতা সাধারণ মানুষকে যেভাবে অস্থির করে রেখেছিল, তার রেশ কাটে নাই। নানা প্রশ্ন, ঘুরে বেড়াচ্ছিল, পুলিশের উপস্থিতিতে কী করে ৬ ছাত্রকে গ্রামবাসীরা ডাকাত সন্দেহে শুধু পিটালোই না, মেরেই ফেললো! এরও আগের ঘটনা, কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, বড়দেশি গ্রামের ঘটনার পর। সেটা হলো, ১৫ জুলাই, খিলগাঁও থানার পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যিলয়ের প্রাণ মাস্টার্সে পড়ুয়া ছাত্র আব্দুল কাদেরকে 'ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়ার সময়' সহযোগিসহ গ্রেফতার করে, এরপর তাকে বেধড়ক পিটানির পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন তার পায়ে চাপাতি দিয়ে কোপায়। আর সোমবার ৮ অগাস্ট, বিভিন্ন দৈনিকে এবং ৭ অগাস্ট একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে কোম্পানীগঞ্জে, ২৭ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১ টার মধ্যে পুলিশের সরাসরি সহযোগিতায় কী করে মিলন নামে ১৬ বছরের একটা ছেলেকে পিটায়ে মেরে ফেলে গ্রামবাসী, সেই দৃশ্য এবং খবর বের হয়। এই খবর আমাকে পুলিশ সম্পর্কে দরিদ্র, অযথাই হয়রানী তৈরি করে মানুষের কাছ থেকে চিকন থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খাওয়া চেনা চেহারার বাইরে এখন খুনী এবং খুনে উস্কে দেয়া ইমপ্রেশন নিয়ে হাজির হয়েছে। প্রিয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের নানা অনুষ্ঠানে গিয়ে আপনি যে একটা মুখস্ত সংলাপ সব সময়েই দেন, 'পুলিশ জনগণের বন্ধু'; সব সরকারের আমলে সব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য বুঝদার নাগরিকরা বরাবরই তামাশা করে মার্জিনের বাইরে রেখে পুলিশ নিয়ে আলাপ তোলেন। কিন্তু আর তো মার্জিনের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। পুলিশ কেন সাধারণ মানুষকে খুনের জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠেছে, এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাকে জবাব দিতে হবে। কেবল তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে টাইপ ক্যামেরা-বক্তৃতা দিয়ে চললে ভরসা রাখা যাচ্ছে না। পাঠক, কোম্পানীগঞ্জের ঘটনা নিয়ে একটু ডিটেইলে যাই।

২৮ জুলাই খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ৬ ডাকাতকে পিটায়ে হত্যা করে গ্রামবাসী। তখন ৪ জনের পরিচয় দেয়া হয়েছিল, বাকী দুজনের পরিচয় দেয়া হয় নি। ৩ অগাস্ট মিলনের মা আদালতে পুলিশকে অভিযুক্ত করে তার ছেলেকে খুন করার মামলা করলে ২৪ ঘন্টা সংবাদ পরিবেশনকারী একটা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল স্ক্রলে টিকার হিসাবে এ খবর প্রকাশ করলে, ভিডিও চিত্রটি ধারণ করা ছেলেটি উৎসাহিত হয়ে সময় টেলিভশনকে তার মোবাইলে ধারণ করা ফুটেইজ দেয়। সেই ফুটেইজ ৭ অগাস্ট, রোববার প্রচারিত হয়। দৃশ্যমান হয়ে ওঠে কীভাবে পুলিশ ভ্যান থেকে মিলনকে ডাকাত পিটানোর জন্য অপেক্ষা করা ক্ষুব্ধ মানুষের হাতে তুলে দেয়া হয়। তাদের চোখের সামনে, লাঠি দিয়ে পিটায়ে, আশ্রয় নিতে গিয়ে এক দোকানে পড়ার পর সেখানে ইট দিয়ে মাথা থেতলে মেরে ফেলা হয়-ভিডিও ফুটেইজে সবটুকু দেখা যায়। এও দেখা যায়, এরপর লাশ পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়। অজ্ঞাত বাকী দুই লাশের একজন মিলন, মারা যাবার ১০ দিন পর জানা যায় নাম পরিচয়। একটা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের নোয়াখালী প্রতিনিধি আবু নাসের মঞ্জু জানান, তিনি নিজেও ভিডিও ফুটেইজ সংগ্রহ করেছেন, সেখানে দেখা গেছে, পুলিশ বলছে, মার মার, মাইরা হালা। মঞ্জু বলেন, ২৭ জুলাইয়ের পর তারা থানায় খবর নিলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকউল্ল্যা বলেছিলেন, ৬ জনের বিরুদ্ধেই ডাকাতি মামলা রয়েছে। সোমবার, ৮ অগাস্ট নোয়াখালীর পুলিশ সুপার হারুনুর রশীদ হাজারির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললে তিনি জানান, তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে এসেছেন এবং মিলনের বিরুদ্ধে কোন ডাকাতির মামলা নেই।

এরপর হারুনুর রশীদ হাজারীকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে পুলিশ কেন তার হেফাজতে না রেখে হত্যায় উন্মত্ত ক্ষুব্ধ মানুষের হাতে তুলে দিল মিলনকে? হাজারী সাহেব বলেন, ‌' ওইতো দায়িত্বে অবহেলা। দ্যাখেন মিলনের সমস্যা হলো, মিলন খালি গায়ে, প্যান্ট পরা অবস্থায় একটা পুকুর ঘাটে বসে ছিল। ওর ড্রেস আপ দেখে ডাকাত খুঁজতে থাকা মানুষদের সন্দেহ হয়, মিলনও একজন ডাকাত। তারা তাকে আটক করে মাইর-ধইর করে এরপর পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরপর পুলিশ তাকে ক্যানো ক্ষুব্ধ মানুষের হাতে তুলে দিল! দেয়ার তো কথা না। এটাইতো দায়িত্বে অবহেলা। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর মিলনের মা তো মামলা করেছেনই।
আচ্ছা, কোম্পানীগঞ্জে কি এতোই ডাকাতি হয় যে সেখানকার মানুষ আতঙ্কে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিচ্ছে?

হ্যাঁ। কোম্পানীগঞ্জে থাকে ৫ থেকে ৬ লাখ লোক। আর এর মধ্যে রাস্তা ঘাটের পরিস্থিতি খুবই ভাঙ্গা চোরা। আর পুলিশ আছে মাত্র ২৫ থেকে ২৬ জন। এত অল্প সংখ্যা নিয়ে তো এত মানুষ দেখাশোনা করা সম্ভব না।

পাঠক খেয়াল করুন, মিলনের ড্রেস আপ, তাকে, যদি ধরে নেই, সেখানকার লোকজন ডাকাত পেশার মানুষদের ওপর ভীষণরকমের ক্ষিপ্ত। খুন করতেও বাঁধে না। যদি ধরে নেই এই মানসিকতার লোকজনদের কাছে, খালি গায়ে জিনসের প্যান্ট পরা মিলনের প্রতিচ্ছবি হলো ডাকাতের। তাইলেও কি পুলিশ, ডাকাত গেটআপের মিলনকে স্থানীয় জনগণ পিটানোর পর তাদের হাতে তুলে দেয়ার পর আবার রহিমারটেক এলাকায় ডাকাত পিটায়ে খুন করার উন্মত্ততা নিয়ে অপেক্ষা করা খুনী মানুষদের হাতে ছেড়ে দিয়ে আসবে? এটা কি শুধুই দায়িত্বে অবহেলা? অথবা, বাসিন্দাদের তুলনায় খুবই কম সংখ্যক পুলিশ থাকা কি এই বাস্তবতা তৈরি করে? নিরাপত্তা হেফাজতে না রেখে মিলনকে খুনী মানুষদের হাতে ছেড়ে দিয়ে 'শ্যাষ করেই ছাড়ি' মানসিকতা তৈরি করবে পুলিশের মধ্যে? এসব মানসিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কোন ব্যাখ্যা হতে পারে না মিলনকে খুন করতে পুলিশের দায় সম্পর্কে।

বরঞ্চ প্রশ্ন তুলতে হয়, পুলিশ আসলে কেন করছে, এসব খুন?

পুলিশ কেন শবেবরাতের রাতে, যেই রাতে কিশোর-তরুণ বয়সী ছেলেরা সারা রাত মসজিদে নামায পড়ার ছলে বাসার বাইরে থাকার স্বাধীনতা উপভোগ করে, বেশীর ভাগই, সেরকম তরুণদের বড়দেশি গ্রামে ড্রাগস নিয়ে উপভোগের স্বাভাবিকতাকে উপলক্ষ্য করে কিছু খুনি লোক দিয়ে ৬টা ছেলেকে মেরেই ফেললো? স্বাভাবিকতা বলছি, এ কারণে, উত্তরবঙ্গ থেকে রাজধানীতে ঢোকার মুখে আমিনবাজারে এই গ্রাম, গাবতলীর পাশেই। কাগজে কলমে প্রায় ২২ মাইল দূর অবস্থানে থাকা সাভার থানার ভেতরে এই গ্রাম। ওপেন সিক্রেটের মতো প্রায় সবাই জানে আমিন বাজারের ট্রাকস্ট্যান্ডের পেছনে বড়দেশি গ্রাম একটা জমজমাট ড্রাগস ব্যবসার খুচরা বাজার। আর এর ভৌগোলিক অবস্থানটা এমন, একপাশে তুরাগ আর পেছনে বুড়িগঙ্গার শাখা কালীগঙ্গা নদী। এই ভৌগোলিক অবস্থান, এখানে যখন-তখন রেইড দেয়াটা সম্ভব না করে রেখেছে মনে হলেও, ওখানে সব সময়ই পুলিশ থাকে। আর ড্রাগসসেবীরা ফিলিংস নেয়ার জন্য বড়দেশি গ্রাম থেকে কিনে নদীর পাড়ে বসে হাওয়া লাগিয়ে গায়ে খেতে থাকে। ফেন্সিডিল, গাঁজা। আরো অনেক কিছু। এসব গ্রামবাসী-পুলিশ-ড্রাগসসেবীদের নিজস্ব জানাজানির লেনদেন। তারপরও বলা হতে থাকে ড্রাগস বেচে নিজেদের চালায় যে গ্রামের লোকজনরা, তারাই ডাকাত সন্দেহে পিটায়ে হত্যা করে ৬ ছাত্রকে। কিন্তু ৬ জনের সাথে শবেবরাতের রাত উদযাপনকারী আরো একজন, যে কোনমতে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল, আল আমীন, সে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, সেখানে পুলিশ উপস্থিত ছিলো এবং পুলিশ বলেছিল, 'একটারে বাঁচায়ে রাখ।'

একই প্রশ্ন, পুলিশ কেন এমন করলো? কী স্বার্থ? কার স্বার্থ? যদি ধরে নেয়া হয়, সেখানে গ্রামবাসী ওই সময়ে ক্ষিপ্ততার কারণে ডাকাত ভেবে কিছু মানুষকে পিটাতে থাকে আর সেথানে পুলিশ দাঁড়ায়ে থাকে, তাহলেও এটাই বলতে হবে, পুলিশ নির্যাতিতের পক্ষে অবস্থান নেয় নি। আরো জরুরী কথা হলো, পুলিশ যদি সত্যিকার অর্থেই দায়িত্বশীল হতো, তাহলে মাদকের স্পট হিসাবে আমিনবাজারের ট্রাক স্ট্যান্ডের পেছনের গ্রামগুলা ব্যাপক পরিচিত হয়ে উঠতো না।

মোটামুটি ঢাকা শহরের ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী বেশিরভাগের কাছেই মাদকের স্পটগুলা পরিচিত। এখন মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে কাঙ্খিত মাদক সংগ্রহ করা জনপ্রিয় হলেও মাদকের স্পট বলে রাজধানীতে বেশ অনেকগুলা খুচরা বাজারই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। পুলিশ কি কখনো কোন মাদক স্পট কে বা কারা চালায়, খুচরা বিক্রেতার হাত ঘুরে ফের কার বা কাদের হাতে যায় মাদক বেচার পয়সা, তাদের গ্রেফতার করতে পেরেছে? অর্থাৎ, যারা মাদক ব্যবসার মূল পরিচালক, মালিক। এমন নজির তো একটাও নাই। তাইলে পুলিশ আসলে কার পক্ষের?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল কাদেরের ঘটনাতো রীতিমতো ঢাকা শহরের রাস্তায় স্বাভাবিক হাঁটাহাঁটির মধ্যে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিয়েছে। একটা ছেলে বা মেয়ের মনে হলো রাত ১২টার পরে নিজের শহরে এলোমেলো হাঁটবো, বা যেটুকু রাস্তাকে নিরাপদ মনে করা যায়, ওইটুকুর মধ্যে হাঁটা ফেরা করবে, তা ও তো নিরাপদ না। মানে মন খুলে নিজের শহরে হাঁটা যাবে না। ছিনতাইকারী না, পুলিশের ভয়ে। পুলিশ যে কোন সময় যে কোন কিছু করে ফেলতে পারে – কাদেরের ঘটনা অনেকের মধ্যেই এই আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিয়েছে। মা বোন মিলে গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গান শুনে ইস্কাটনে খালার বাসায় রাতে খেয়ে নিজের হলে ফেরার পথে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে ডাকাত বানায়ে ফেলে। মামলা দেয়। নিরাপত্তা হেফাজতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন চাপাতি দিয়ে কোপালেনও। নারী ও পুরুষ পাঠক, আমার ঠিক এরকমই মনে হয়েছে, এটা কি আমার শহর! প্রতিদিন এ শহরে নিরাপত্তাহীনতার নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। আবারও একই কথা, পুলিশ আসলে কাদের শত্রু? কাদেরের ঘটনায় কি মনে হয়, পুলিশ সাধারণ মানুষের মিত্র? বহু পুরানা এই ইমপ্রেশনের সাথে পুলিশকে শত্রু মনে করার নতুন ইমপ্রেশনে যোগ হয়েছে, সন্ত্রাসীর হাতে থাকা চাপাতি, পুলিশের হাতেও থাকে এবং পুলিশ কোপায়।

আর কোম্পানীগঞ্জের মিলনকে পুলিশ যেভাবে পুলিশ ভ্যান থেকে খুনী মানুষদের হাতে ছুঁড়ে দিয়েছে, অনেকটাই হাঙ্গরের চৌবাচ্চায় জীবন্ত মানুষকে ছেড়ে দেয়ার মতো নৃশংস ঘটনা। মুত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ আবার তুলে নেয়া। মিলনের মা কোহিনুর বেগম টেলিফোনে কান্না করে জানান, তার নিরপরাধ ছেলেকে পুলিশ মেরে তো ফেলেছেই, আবার বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে আঞ্জুমান মফিদুলে দিয়ে দাফন করিয়েছে। 'আঁর হোলারে পুলিশে মারি হালাইছে……' টেলিফোনে প্রশ্নকারীর চেহারা না দেখা গেলেও কোহিনুর বেগমের সাথে কথা বললে, তিনি এভাবেই কেঁদে কেঁদে বলতে থাকেন।

কোম্পানীগঞ্জের মিলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাদের বা শ্যামলী, দারুস সালাম এলাকার ৬ তরুণ–এরা কেউই ডাকাত নন, এদের কারো বিরুদ্ধেই থানায় কোন মামলা নাই। মামলা না থাকাটাকে নিরীহ মনে করার একটা ইন্ডিকেটর ধরে নিয়ে বলা যায়, এরা কেউই অপরাধকারী নয়। তাহলে, কেন এদের ডাকাত বলে পিটায়ে মেরে ফেলা হলো? প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমার সোজা কথা পুলিশ আসলে কেন এসব খুন করে বেড়াচ্ছে? মামলা তদন্তানাধীন, এখনই খুন-টুন বলা যাবে না, এরকম প্রশ্ন তুলে বসেন যদি কেউ, সেক্ষেত্রেও বলছি, পুলিশ এতো দায়িত্বহীন ভূমিকা পালন করছে কেন?

জবাবদিহিতা বলে কোন কিছু কি পুলিশ প্রশাসনে কাজ করছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই পুলিশ বিভাগ নিয়ে নানান রকম অভিযোগ বরাবরই উঠে আসছে। পুলিশের ঘুষ খাওয়া পুরানা কথা, সাধারণ মানুষকে ফাঁসানো, হয়রানী করা-এসবও অনেকখানিই গা সওয়া। কিন্তু এসব অভিযোগ তো দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেতন ভাতা, প্রশিক্ষণ এসব দুর্বলতার কথা বলে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলাকে গা সওয়াও করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা সেখানে নয়, বিষয়টা হলো, তিনটা ঘটনাতেই লক্ষ্য করা গেছে, মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের কোন মনোযোগ নাই, দায়িত্ব পালনের কোন চেষ্টাই নাই। তাহলে পুলিশ কার স্বার্থে চাকরি করে যাচ্ছে? আসলে কী কারণে পুলিশের দায়িত্বহীনতা এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে অথবা নিরপরাধ মানুষ ধরে ধরে অপরাধী বানানো এবং কখনো কখনো হত্যা করতে পুলিশ ইউনিফর্মের জোর ব্যবহার করে খুনীদের জন্য সুরক্ষা প্রাচীর তৈরি করা-এসব খুঁজতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে।

শামীমা বিনতে রহমান : লেখক ও সাংবাদিক।