সংবাদপত্রের লেখাপড়া পাতা: নতুন করে ভাবা প্রয়োজন

গৌতম রায়
Published : 15 July 2014, 04:08 AM
Updated : 15 July 2014, 04:08 AM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত-বিশ্লেষণ বিভাগে ১৯ জুন, ২০১৪ তারিখে প্রকাশিত 'কিছু একটা করি' শিরোনামের লেখায় অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সংবাদপত্রে প্রকাশিত লেখাপড়া-সম্পর্কিত পাতা নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তাঁর মতে, বর্তমানে গাইড বই এবং কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে বলাবলি হলেও, দেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র শিক্ষা-সংক্রান্ত পাতার নামে গাইড বইয়ের দায়িত্ব পালন করছে। তিনি এটাও বলেছেন, "গাইড বই যে রকম ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করতে শেখায় এই পত্রিকাগুলোও সে রকম প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করতে শেখায়। গাইড বই যে রকম টাকা দিয়ে কিনতে হয়, এই পত্রিকাগুলোও টাকা দিয়ে কিনতে হয়"।

ড. ইকবাল এমন এক সময়ে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলেন যখন একই সঙ্গে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, অধিকহারে জিপিএ পাওয়া, লেখাপড়ার গুণগত মান ইত্যাদি চেনাজানা বিষয় নিয়ে প্রবল আলোচনা হচ্ছে। প্রসঙ্গটি তাই শিক্ষা-সংক্রান্ত আলোচনায় নতুন মাত্রা নিয়ে আসে; কারণ এ ধরনের অনালোচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিডিয়ায় কমই উঠে আসে।

২.

একটু পেছনে তাকাতে চাই। আজ থেকে বছর দশেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে মাস্টার্সে থিসিস করেছিলাম ঠিক এই বিষয়টি নিয়েই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নিজের খরচ নিজে চালানোর প্রয়াসে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে বিভিন্ন সময়ে প্রদায়ক হিসেবে কাজ করেছি এবং তখন এ ধরনের পড়ালেখা-সংক্রান্ত পাতার প্রকাশনার প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ হয়েছে।

যেহেতু নিজের পড়ালেখা শিক্ষা-বিষয়ে এবং মিডিয়ার প্রতি এক ধরনের কৌতুহল রয়েছে, তাই দুটোকে এক কাতারে মেলাতে গিয়ে মাস্টার্সে থিসিসের বিষয় হিসেবে এটি বেছে নিয়েছিলাম। এর বাইরেও অবশ্য অন্য এক কারণ রয়েছে যা একটু পরেই উল্লেখ করছি। গবেষণায় আমার দেখার মূল বিষয় ছিল, শিক্ষার্থীদের কাছে এ ধরনের পড়ালেখা-পাতার গুরুত্ব ও প্রভাব কতটুকু তা জানা।

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদেরা সংবাদপত্রে এ ধরনের পড়ালেখার পাতা কীভাবে দেখছেন– তা জানাও গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। সব মিলিয়ে সংবাদপত্রের পড়ালেখা পাতাটি হাইলাইট করে এর প্রভাব বের করতে চেয়েছিলাম।

গবেষণায় মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পড়ালেখা পাতাটিকে স্বাগত জানিয়েছে; আবার অন্য একটি অংশ জানিয়েছে যে, তারা এ থেকে আদৌ উপকৃত হচ্ছে না। কিন্তু অভিভাবক ও শিক্ষাবিদেরা পাতাটি ভালোভাবে নেননি।

থিসিস জমা দেবার পর এর মূল বক্তব্যটুকু লিখে তখন কয়েকজন শিক্ষাবিদকে চিঠি লিখেছিলাম। সংবাদপত্রের পড়ালেখার পাতাটি যে দিনশেষে গাইড বইয়ের কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব সুখকর না-ও হতে পারে, তা উল্লেখ করে আমার নিজস্ব কিছু আশঙ্কা ব্যক্ত করে শিক্ষাবিদদের কয়েকজনকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলাম, তাঁরা যেন বিষয়টি নিয়ে নানা জায়গায় লিখেন বা আলোচনায় আনেন।

দুঃখের বিষয়, কারও কাছ থেকে রিপ্লাই পাইনি। দীর্ঘদিন পত্রিকায় পাতায় খুঁজেছি তাঁরা সংবাদপত্রের পাতায় বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন কিনা। পাইনি। সম্ভবত সদ্য পাশ করা এক তরুণের আশঙ্কায় গুরুত্ব দেবার মতো কিছু মনে করেননি তাঁরা। অন্যদিকে আমি নিজেও সে সময় এক পত্রিকায় প্রদায়ক হিসেবেই কাজ করি, কিন্তু কলাম লেখার মতো সাহস অর্জন করতে পারিনি। তবে দুটো পত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে চিঠিপত্র কলামে চিঠি ছাপাতে সমর্থ হয়েছিলাম– দৈনিক মাতৃভূমি ও দৈনিক সংবাদ।

এত কথা বলার কারণ হচ্ছে, আজ, আমার ওই গবেষণার দশ বছর পর যখন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল একই বিষয় নিয়ে লিখলেন, তখন মনে হচ্ছে, এখন নিশ্চয়ই কেউ না কেউ এ বিষয়ে একটু হলেও ভাববেন।

৩.

আরও পেছনে যেতে চাই। একসময়, প্রায় কয়েক বছরের মধ্যে, বেশ কিছু নতুন সংবাদপত্রের দেখা পায় এদেশের মানুষ– আজকের কাগজ, জনকণ্ঠ, ভোরের কাগজ, বাংলাবাজার পত্রিকা, প্রথম আলো ইত্যাদি। এগুলোর গেটআপ ও মেকআপ ঐতিহ্যবাহী দৈনিক সংবাদ বা দৈনিক ইত্তেফাকের মতো নয়, একটু অন্যরকম। এসব সংবাদপত্র অচিরেই পাঠকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে নানা কারণে।

আমরা যারা স্কুলে পড়তাম, তাদের কাছে জনকণ্ঠ ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় সংবাদপত্র। দুটো কারণে। এক. অন্য পত্রিকা আসার অনেক আগেই জনকণ্ঠ পাওয়া যেত এবং দুই. পড়ালেখা পাতা। সাধারণত যেসব নোট বই বা গাইড বইয়ের উত্তর দেখে অভ্যস্ত ছিলাম আমরা (পপি গাইড, কাজল ব্রাদার্স, আবদুল্লাহ এন্ড সন্স-এর), তারা অচিরেই আবিষ্কার করলাম, জনকণ্ঠের পড়ালেখা পাতায় যেসব উত্তর দেওয়া থাকে সেগুলো প্রচলিত নোট বা গাইড বইয়ের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। সুন্দর করে লেখা, গোছানো।

আস্তে আস্তে এলাকার সাধারণ পাঠাগারে তো বটেই, একটু স্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা তাদের বাড়িতে জনকণ্ঠ রাখা শুরু করল। আমার নিজেরও একটি বড় সময় কেটেছে জনকণ্ঠের পড়ালেখা পাতার এসব উত্তর পড়ে।

৪.

স্বভাবতই মাস্টার্সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করার সময় নিজের অভিজ্ঞতাও কিছুটা মিলিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম। লক্ষ্য করলাম, যেসব সংবাদপত্র প্রথম হওয়ার লড়াইয়ে আছে, তাদের প্রায় সবাই এ ধরনের একটি করে পৃষ্ঠা বরাদ্দ করছে শিক্ষার্থীদের জন্য, কেউ-বা আধাপৃষ্ঠা। উদ্দেশ্য একটাই– শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে পারলে পত্রিকা বিক্রির সম্ভাবনা বাড়ে।

গবেষণায় দুটি সংবাদপত্রের পড়ালেখা পাতার বিভাগীয় সম্পাদকের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। যদিও তাঁরা দুজনেই মনে করতেন যে, ভালো কিছু দেওয়ার প্রয়াসে এ পাতা বের করছেন কিন্তু প্রচার বা সার্কুলেশনের বিষয়টি তাঁরাও অকপটে স্বীকার করেছিলেন। গোটা থিসিসে দেখা গেল, শিক্ষার্থীদের একাংশ তো বটেই, তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদেরাও মনে করেন, পত্রিকার পাতায় এসব কনটেন্ট প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নোট বা গাইড বইয়েরই বিকল্প ভূমিকা পালন করছে।

৫.

যেহেতু মিডিয়া বিষয়ে আনুষ্ঠানিক পড়ালেখা নেই, সুতরাং একটি দায়িত্বশীল মিডিয়ার কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়– সে ব্যাপারে কিছু বলার ক্ষেত্রে একটি আনুষ্ঠানিক বাধা থেকে যায়। অপরদিকে, একজন নাগরিক হিসেবে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু বক্তব্য থাকতেই পারে। এখানে দ্বিতীয় যুক্তিটি অবলম্বন করেই কিছু কথা বলতে চাই।

প্রথমত, এটা সরল-সোজা ব্যাপার যে, বাংলাদেশের মিডিয়া, বিশেষত সংবাদপত্র (ইতোমধ্যে অনলাইন মিডিয়াও এ ধারায় যুক্ত হয়ে গেছে) যে কোনো মূল্য পাঠক আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর। চটকদার শিরোনাম থেকে শুরু করে উত্তেজক ছবি– সবই এখন মিডিয়ায় আসছে। কোথাও কোথাও যে রাশ টানা হচ্ছে না, তা নয়; কিন্তু অধিকাংশ মিডিয়াতেই আমরা প্রফেশনালিজমের দিক থেকে খামতি দেখতে পাই। কারণ একটাই– পাঠক টানা।

দেশে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী আছে, তার অন্তত পাঁচ শতাংশও যদি একটি নিদিষ্ট সংবাদপত্র টানতে পারে, তাহলে ওই পত্রিকা দাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। আর শিক্ষার্থীদের টানার একটি বড় কৌশল হচ্ছে এ ধরনের পড়াশোনা পাতার মাধ্যমে তাদেরকে যুক্ত রাখা।

দ্বিতীয়ত, আজ থেকে বছর দশেক আগে যখন জরিপটি চালিয়েছিলাম, তখন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ জানিয়েছিল, তারা এ পাতাকে নোট বা গাইডের বিকল্প হিসেবেই মনে করে। অন্যদিকে আরেকদল শিক্ষার্থী প্রচলিত নোট বা গাইড বই-ই ব্যবহার করত, সংবাদপত্রের পাতার ওপর তারা ভরসা করতে পারেনি। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্যতার বিচারে এই পাতাটি কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ, অন্তত কিছু শিক্ষার্থীদের কাছে।

এই যখন অবস্থা, তাও বছর দশেক আগের তথ্য অনুসারে, তখন এ সময়ে এসে শিক্ষার্থীরা এই পাতা নিয়ে কী ভাবছে? আদৌ কি তারা এ পাতা পড়ে? আজকাল ইন্টারনেটে সংবাদপত্রগুলোর ওয়েব সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে। কোন পাতায় কিংবা কোন খবরে কতগুলো ক্লিক পড়ে, তা অনায়াসেই জানার কথা। এসব বিষয়ে নতুন কোনো গবেষণার দেখা পাইনি। কিন্তু যারা পড়ালেখা পাতা প্রকাশ করছেন, তাঁদের কাছে নিশ্চয়ই এ তথ্য থাকার কথা!

একটি সংবাদপত্রের আধা পৃষ্ঠা বা পুরো পৃষ্ঠা বরাদ্দ করা অনেক বড় ব্যাপার– অন্তত খরচের হিসেবে। বড় লাভ না থাকলে এই ইনভেস্টমেন্ট করার কথা নয়। অপরদিকে এ ধরনের পাতায় কী ধরনের প্রশ্ন থাকছে আর উত্তরগুলো কী ধরনের হচ্ছে, তাও অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছেন।

এই যখন অবস্থা, তাহলে আমরা যে বড় মুখ করে সৃজনশীলতার কথা বলছি, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে তোলার চেষ্টা করছি– সেই প্রচেষ্টার সঙ্গে এই নোট বা গাইড বইয়ের মাধ্যমে মুখস্থ করানোর প্রচেষ্টার সত্যিকার ফারাকটুকু কোথায়?

তৃতীয়ত, সাহিত্য বা এ ধরনের পাতা বের করা সংবাদপত্রের মূল কাজের মধ্যে পড়ে কিনা তা যেমন জানা নেই, ঠিক তেমনি জানা নেই পড়ালেখা পাতা বের করা তাদের আদৌ কোনো কাজ কিনা। তারপরও ধরে নিচ্ছি যে, নানা বিবেচনায় তারা এটা বের করছেন। কিন্তু দেশে যে বর্তমানে সৃজনশীল প্রশ্নের আদলে অনেক কিছুই করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তার কতটুকু প্রভাব পড়ছে এসব পাতায়?

গত কয়েকদিনের একাধিক দৈনিক সংবাদপত্রের পড়াশোনা পাতা পর্যবেক্ষণ করে যা উপলব্ধি হল, তা সুখকর নয়। মনে হচ্ছে, একই বিষয়বস্তু ঘুরিয়ে বা অন্যভাবে উপস্থাপনেই বোধহয় এ পাতায় সৃজনশীলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর বাইরে সৃজনশীলতার তেমন কোনো চর্চা চোখে পড়েনি। সে ক্ষেত্রে পত্রিকার পাতাগুলো আসলেই কি নোট বা গাইড বইয়ের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে না?

চতুর্থত, গবেষণাটি করার সময় শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট যেসব ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছিল, তাঁদের সবাই একবাক্যে বলেছেন, এ ধরনের পাতা লাভের বদলে ক্ষতিই বেশি বয়ে আনবে। তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁদের জানাবোঝা ও অভিজ্ঞতা থেকে কথাগুলো বলেছিলেন। এখন এটা দেখার সময় বোধহয় হয়েছে যে, সংবাদপত্রগুলো এ পাতার মাধ্যমে আদৌ কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পেরেছে কিনা। সংবাদপত্রগুলো নিজেরাও তাদের কাজের সাফল্য-ব্যর্থতা খুঁজে বের করতে পারে।

৬.

এই মুহূর্তে যদি বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হয় এবং তাতে যদি দেখা যায়, সংবাদপত্রের পড়াশোনা পাতা সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর, তারপরও আমি পাতাটি হুট করে বন্ধ করতে বলব না। আমাদের শিক্ষার্থীরা এমন এক অবস্থায় আছে যে, তাদেরকে নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করার কাজটিও কেউ সহজে করতে চায় না। দেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে টক-শো, খবর, নাটক, গান, সিনেমা ইত্যাদি নানা ধরনের শতশত প্রোগ্রাম তৈরি হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষা-বিষয়ে কয়টি প্রোগ্রাম আছে? আদৌ আছে কি?

সুতরাং কোনো সংবাদপত্র যদি দাবি করে, তারা শিক্ষার্থীদের বিকাশের লক্ষ্যে অর্ধেক বা একটি পাতা বরাদ্দ করেছেন, তাহলে বলব, এ ধরনের পড়ালেখা-সংক্রান্ত পাতা বন্ধ না হোক। বরং এর খোলনলচে পাল্টে দিয়ে একে এমনভাবে সাজানো হোক যাতে তা সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। সে উদ্দেশ্যে এখানে কিছু সুপারিশ করতে চাই।

প্রথমত, আমরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের যুগে প্রবেশ করেছি সত্যি, কিন্তু বিষয়টি 'ভালোভাবে' উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের ঘাটতি রয়েছে। সংবাদপত্রগুলো তাদের বর্তমান ধরনের কনটেন্ট ফেলে দিয়ে বা বাদ দিয়ে এবং দায়িত্ব নিয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে এমন কিছু কাজ করে দেখাক যা সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

মনে রাখতে হবে, সৃজনশীল পদ্ধতি শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়; এটি একাধারে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের জন্যও। উদাহরণস্বরূপ, পরীক্ষায় যদি 'একটি শীতের সকাল' রচনা আসে এবং সকল শিক্ষার্থী মোটামুটি তিন বা চারটি গাইড বই অনুসারে রচনা লিখে দিয়ে আসে, তাহলে তাতে কোনোভাবেই সৃজনশীলতা প্রকাশ করা হয় না। কিন্তু প্রত্যেক শিক্ষার্থীই যদি অভিজ্ঞতা থেকে রচনাটি লিখে, তাহলে একেকটি রচনা হবে একেক রকম এবং শিক্ষক কোন রচনায় কীভাবে নম্বর দেবেন তা যদি পড়ালেখা-সংক্রান্ত পাতার আলোচনার বিষয় হয়, তাহলেই এ ধরনের পাতার যথার্থতা শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সবার কাছে ফুটে উঠবে।

দ্বিতীয়ত, পড়ালেখা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের আরও নানা ধরনের বিকাশের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে পড়ালেখা-সংক্রান্ত অনেক ধরনের চর্চা এবং অভ্যাসগত বিষয় জানার সুযোগ। সংবাদপত্রগুলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফিচার আইটেম প্রকাশ করে। শুধু এই একটি পাতায় শিক্ষার্থীদের সুকুমার বৃত্তি প্রকাশের সুযোগ যদি থাকে, তাহলেও আমাদের অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে সংবাদপত্রগুলো যথাযথ পরিকল্পনা করতে পারে।

তৃতীয়ত, শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য পাতাটি সীমাবদ্ধ না রেখে একে এমনভাবে তৈরি করা যাতে অভিভাবক ও শিক্ষকরাও এতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট-অসংশ্লিষ্ট সবাই যেন যার যার জায়গা থেকে কন্ট্রিবিউট করতে পারেন, এমন একটি ক্ষেত্র হয় উঠতে পারে এই পাতা।

এগুলো সুপারিশের কিছু উদাহরণ। এ রকম আরও অনেক সুপারিশ করা সম্ভব এবং অনেক কিছুই করা যেতে পারে, কিন্তু সংবাদপত্রগুলো বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাববে কি? অনলাইন মিডিয়াগুলোও কিন্তু এসব নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে পারে।

গৌতম রায়: প্রভাষক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।