ফরহাদ মজহারের বক্তব্য এবং কিছু সত্য

মিল্টন বিশ্বাস
Published : 1 Nov 2013, 05:54 PM
Updated : 1 Nov 2013, 05:54 PM

যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য জামাত-শিবির যেমন নাশকতা ও গুজবের আশ্রয় নিয়েছে, তেমনি ফরহাদ মজহারের মতো এদেশের কিছু মৌলবাদী বুদ্ধিজীবী তাদের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে উস্কানি যুগিয়ে চলেছেন। ধর্মীয় শপথ করে মৌলভীরা যেমন সাঈদীসহ একাত্তরের অপরাধীদের পক্ষে এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে তাণ্ডব ও গুজব ছড়িয়েছে, তেমনি আমার দেশ (অনলাইন), নয়া দিগন্তের মতো দৈনিক পত্রিকা প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে।

জামাত-শিবির ধর্মপ্রাণ মানুষকে দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করে হামলায় অংশগ্রহণে প্ররোচিত করছে। কুড়াল-করাত ধরিয়ে দিয়ে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করাচ্ছে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলাও তাদের পরিকল্পনার অংশ। ২৭-২৯ অক্টোবর, ২০১৩ এই তিনদিন বিরোধী দলের পালিত হরতালের মধ্যে সাংবাদিকদের ওপর হামলার পর ফরহাদ মজহার তা সমর্থন করলেন। যে ঘটনা স্বভাবতই দেশের সচেতন মানুষদের বিক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে। সবাই স্তম্ভিবত হযেছেন এটা ভেবে যে তিনি কীভাবে প্রকাশ্যে কোনো হামলা বা সন্ত্রাসী কাজকর্মকে সমর্থন করতে পারেন।

তবে আমি বলব, এটা তার আচরণ, কাজ ও কর্মসূচিরই ধারাবাহিকতা। আর সেজন্যই তিনি হরতালের মধ্যে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার প্রেক্ষাপট হিসেবে ২৭ অক্টোবর একুশে টেলিভিশনের 'টকশো'তে বিভিন্ন গণমাধ্যমের 'সন্ত্রাস'কে দায়ী করতে পারলেন। গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণকে 'সঠিক'ও বলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে দেওয়া এই বক্তব্য কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ নেওয়া ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছেন এক সাংবাদিক এবং অন্যটি করেছে পুলিশ।

ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের পর হরতাল চলাকালে সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। একাত্তর টেলিভিশনের কার্যালয়ের সামনে চারটি হাতবোমা ছোঁড়া হয়, এতে গুরুতর আহত হন সাংবাদিক জাকারিয়া বিপ্লব। বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয় দেশ টিভি, ভোরের কাগজ, মোহনা টিভি এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ের সামনেও। হামলায় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদক রাশেদ নিজামসহ কয়েকজন সংবাদকর্মী আহত হন।

চলতি বছরের (২০১৩) ৪ মার্চ দৈনিক 'নয়া দিগন্ত' পত্রিকার উপসম্পাদকীয় কলামে ফরহাদ মজহার 'নির্মূলের রাজনীতি' শীর্ষক কলামে নির্লজ্জভাবে জামাত-শিবিরকে সমর্থন করেছেন। আমি আমার বর্তমান লেখা শুরু করার আগে মজহারের এই লেখার লিংকটি দিয়ে ওই পেজে প্রবেশ করে লেখাটি পড়েছি। তবে পাঠকদের জানার সুবিধার্থে লেখার লিংকটি এখানে জুড়ে দিতে গিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, এখন আর লিংকটি কাজ করছে না। 'নয়া দিগন্ত' পত্রিকার ওই সংখ্যাটি ওয়েব থেকে হাওয়া!

এর আগেও একাধিক রচনায় ফরহাদ মজহার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াকে 'অস্বচ্ছ' বলে দাবি জানিয়েছেন। তার লেখা ও কথায় উস্কানি আছে, আছে সত্যকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দেবার প্রচেষ্টা। আর জামাত-শিবিরের কর্মকাণ্ডকে তার সমর্থন প্রমাণ দিচ্ছে যে তিনি সরকারের সদিচ্ছা সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব রাখেন।

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ 'আমার দেশ' পত্রিকায় 'ধর্ম ও আদালতের অবমাননা করছে ব্লগারচক্র' শীর্ষক উস্কানিমূলক প্রতিবেদনের মতোই ফরহাদ মজহার উঠেপড়ে লেগেছেন সরকারের বিরুদ্ধে বিষোৎগার করার জন্য। এর আগে তিনি ২০০৭ সালে জেএমবি, হরকাতুল জেহাদ প্রভৃতি জঙ্গি সংগঠনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে বক্তব্য প্রচার করেছিলেন।

শুধু তাই নয়, ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে জঙ্গি দলগুলো নিষিদ্ধের আলোচনা শুরু হলে যে বুদ্ধিজীবীরা দলগুলোকে রক্ষার জন্য জনমত গঠন শুরু করেছিলেন, ফরহাদ মজহার তাদের একজন হয়ে উঠলেন। এ সময়ে জঙ্গিদের পক্ষে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তার সরব উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে তখনকার কাগজগুলোতে এবং বিভিন্ন অনলাইনে।

এ রকম একটি লিংক দেখুন–

উপরের লিংকে গিয়ে পাঠক 'ব্লিৎজ' নামের একটি অনলাইনে Hizbut Tahrir in Bangladesh শিরোনামের একটি তথ্যবহুল লেখা দেখতে পাবেন। লেখাটির Green growth শীর্ষক সাবহেড বা উপশিরোনামের অংশের মাঝামাঝিতে আছে–

''At Dhaka University, initial successes were thwarted when in late 2003 activists of Bangladesh Chhatra League, the student wing of the main opposition party Awami League, chased away several Hizb ut-Tahrir members. Despite the incident, they have splintered support in the Commerce Faculty of the university. Several general students have mentioned being approached by Hizb ut-Tahrir, and some of them have also admitted to attending their seminars.

Seminars targeting Dhaka University students are organised close to the campus. For example, one of the largest seminars, accompanied with a debate between leftists and Hizb ut-Tahrir members, was held at the Public Library auditorium at Shahbag. With prominent figures like Farhad Mazhar attending, the seminar saw a large attendance.''

তাহলে দেখুন জঙ্গি মৌলবাদীদের দোসর এই ব্যক্তির গড়ে তোলা 'শস্য প্রবর্তনা' ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনাসহ সকল প্রতিষ্ঠান বর্জনের সময় এসেছে।

বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে জামাত-শিবিরের সকল হরতালকে প্রত্যাখ্যান করেছে আপামর জনগোষ্ঠী। যদিও তারা বিভিন্ন সময় ইসলামের নাম ভাঙিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনায় সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে। ইতোমধ্যে ধর্মপ্রাণ ওলামারা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ফ্যাসিবাদী মানসিকতায় বিশ্বাসী একটি সন্ত্রাসী দল। তাদের প্রতিষ্ঠাতা নেতা মাওলানা মওদুদী নবী-রাসুল ও সাহাবাদের নামে বহু অপকথা প্রচার করেছিল। তাকেই অনুসরণ করে জামাত-শিবির হরতালের নামে সহিংসতায় দেশের সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মীয় উন্মাদনায় উস্কে দিচ্ছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে যে পাকিস্তানবাদী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির তৎপরতা শুরু হয়েছিল তারই অনিবার্য ফল হচ্ছে জামাত-শিবিরের উত্থান। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় মৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠনের অপরাজনীতি শেকড় গেড়ে বসে। উল্লেখ্য, ক্ষমতা গ্রহণের পর জেনারেল জিয়া ১৯৭৬ সালে জামাত-শিবিরের রাজনীতি উন্মুক্ত করতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন (বিশেষ অধ্যাদেশ ৪ মে ১৯৭৬ এবং বাংলাদেশ সংবিধান, ৫ম সংশোধনী, ২২ এপ্রিল ১৯৭৭)।

সে অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব জামাতের রাজনীতি শুরু হয় এবং ইসলামী ছাত্র সংঘের কতিপয় নেতা ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ সালে ঢাকায় সমবেত হয়ে পরিবর্তিত নাম 'ইসলামী ছাত্র শিবির' ধারণ করে নতুনভাবে কর্মকাণ্ড শুরু করে। এদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের মতো বাংলাদেশকে পরিচালনা করে। এ লক্ষ্যে শিবির দেশের ছাত্র ও যুবসমাজের মধ্যে গভীরভাবে প্রবেশের পরিকল্পনা করে।

১৯৮০-এর দশকে আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধে আমেরিকা ও পাকিস্তান আফগানিস্তানকে সহায়তা করে। এ যুদ্ধে আফগানিস্তানের পক্ষে শিবিরের সদস্যসহ বেশ কিছু বাংলাদেশি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এরা পাকিস্তানে আইএসআই-এর অধীনে এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি প্যালেস্টাইন ও চেচনিয়া যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করে। এরা প্রায় সকলেই বাংলাদেশে ফিরে আসে।

এসব যুদ্ধফেরত সদস্যরাই পরবর্তীতে বাংলাদেশে আইএসআই/তালেবান ও আল-কায়েদার স্থানীয় সদস্য হিসেবে এদেশে আইএসআই/এলইটির (লস্কর-ই-তৈয়বা) এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করে। এভাবে আশির দশকের পর জামাতসহ মৌলবাদী সংগঠন ও তালেবানপন্থী গোষ্ঠী সংগঠিত হয়ে রাজনীতির আড়ালে ও ইসলামের নামে জঙ্গি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বাংলাদেশকে মৌলবাদী ও তালেবান রাষ্ট্র বানানোর একই অভীষ্ট লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।

১৯৯১-এ জামাতের সমর্থনসহ বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর ১৯৯২ সালে জামাতের সহযোগিতায় ইসলামি জঙ্গি সংগঠন 'হরকাতুল জিহাদ' আত্মপ্রকাশ করে প্রকাশ্যে জিহাদের ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে কথিত জিহাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামি শাসন চালুর অভিন্ন আদর্শে জামাত ও ইসলামি জঙ্গি সংগঠনসমূহ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ শুরু করে। ফরহাদ মজহাররা এদের উত্থান সম্পর্কে সচেতন হলেও বর্তমান পরিস্থিতি কেন সমর্থন করছেন এটাই রহস্যজনক। তিনি বিএনপি-জামাতের হালুয়া রুটির অপেক্ষায় আছেন কি?

এরই ধারাবাহিকতায় জামাত-শিবির জঙ্গিগোষ্ঠীর কার্যক্রম গোপনে চলতে থাকে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলেও। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পরে ২০০৬ পর্যন্ত দেশজুড়ে জঙ্গিবাদের বিস্ময়কর উত্থান বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়। কারণ জোট প্রশাসন জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। ২০০৪ সালে দেশব্যাপী বোমা বিস্ফোরণের কথা আমরা ভুলিনি।

সে সময় বিদেশি পত্রিকা থেকে আমরা জেনেছিলাম লাদেন এদেশে এসেছিল। ২০/৯/০৪ তারিখে 'যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়' শীর্ষক একটি দৈনিকে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে আল কায়েদা বা হামাসের সম্পর্ক খতিয়ে দেখার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। 'আজকের কাগজে'-এর এ সংবাদটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকমণ্ডলীর মধ্যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। জঙ্গিরা যে অধিকাংশই জামাতের সদস্য সে পরিচয় স্পষ্ট পাওয়া যায় তখন থেকেই। শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার কথা এ সূত্রে মনে রাখা দরকার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৯ মার্চ, ২০০৭ সালে যে শীর্ষ জঙ্গিদের ফাঁসি কার্যকর করে, তাদের সকলেরই জামাত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই অতীতে জামাত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ১৫ জুন, ২০০৭ সালে দৈনিক পত্রিকা থেকে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত কয়েকজন জেএমবি সদস্য অতীতে জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নান তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফজ্জামান বাবর এবং ইসলামী ঐক্য জোট নেতা মুফতী শহিদুল ইসলামের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। 'ইসলামি সমাজ', 'আল্লাহর দল' বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন। জামাতে ইসলামে একাংশ বের হয়ে তৈরি হয়েছিল 'ইসলামি সমাজ' আর 'আল্লাহর দলে'র প্রতিষ্ঠাতা ছিল ছাত্র শিবিরের কর্মী।

২০০০ থেকে ২০১০ সালের শুরুতে (৯বছরে) সারাদেশে ছাত্র শিবির ১০০ হিংসাত্মক ঘটনায় খুন করেছে ৫০ জনকে। ২০০০ সালের ১২ জুলাই চট্টগ্রাম শহরে শিবিরের হামলায় এক ছাত্রলীগ নেতা ও সাত কর্মীসহ ৯ জন মারা যায় (কালের কণ্ঠ, ১০/২/১০)। এসব খুনের ঘটনায় কারও কোনো শাস্তি হয়নি। ফলে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পথচলা শুরু হলে তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে হিংসাত্মক ঘটনা সংঘটিত করার জন্য।

আর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন হওয়ায় প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ভিন্ন পন্থার সন্ধানে চলতে থাকে জামাত-শিবির। তারা এখন 'হিযবুত তাহরীর উল্লাই'য়াহ বাংলাদেশ', 'হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ' (হুজি)সহ আরও অনেক জঙ্গি সংগঠনকে তাদের পতাকাতলে একত্রিত করেছে। আর কর্মীসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের মগজ ধোলাই করার জন্য ধর্মভিত্তিক বিচিত্র কর্মসূচি নিয়েছে।

এর মধ্যে অন্যতম কর্মসূচি হল বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালানো; ধর্মের নামে ভুণ্ডুল শিক্ষা দিয়ে সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে উদ্দীপনা জাগানো। ব্লগার রাজীবকে হত্যা করেছে নর্থ সাউথের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মৌলবাদী ছাত্র। ফরহাদ মজহারের লেখায় এ বিষয়টি উপেক্ষিত কেন?

সহিংসতার ঘটনা কয়েক বছর আগে শুরু হলেও চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জামাত-শিবিরের প্ররোচনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে অনেকেই এবং মারা পড়ছে নিরীহরা। কারণ তাদের সামনে এগিয়ে দিচ্ছে, হামলায় প্ররোচিত করছে মৌলবাদীরা। এমনকি শোনা গেছে মানুষের সহানুভূতি অর্জনের জন্য নিজেদের কর্মীকে নিজেরা হত্যা করছে।

জামাত-শিবির এখন পাগলা কুকুরের মতো আচরণ করছে। যাকে পাচ্ছে, যা মনে হচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগের– তাকেই শেষ করতে বদ্ধপরিকর হয়ে উঠেছে। এজন্য হিন্দুদের আক্রমণ করে সরকারকে বিব্রত করতে ও ব্যর্থ প্রমাণ করতে চেয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতির আগমনের দ্বিতীয় দিন ৪ মার্চ তার হোটেলের সামনে ককটেল ফুটিয়েছে।

ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ এটা প্রমাণ করতে উন্মাদের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। মসজিদের মধ্যে বোমা ও অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করছে। ধর্মপ্রাণ মানুষকে অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য করছে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে। সহিংস ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে জীবন দিয়ে দিচ্ছে যারা তাদের শহীদ বলে প্রচার করতে চাইছে জামাত।

এভাবে যখন জামাতি অপতৎপরতা চলছে তখন বিশিষ্ট ধর্মতাত্ত্বিকরা বলছেন, সব সহিংসতাই ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত ও হারাম কাজ। কোনো মুসলাম জেনে-শুনে এ কাজ করতে পারে না। ইসলামের দৃষ্টিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য উদ্বুদ্ধ করাটাও অন্যায় ও গুনাহর কাজ। জামাত-শিবির পুলিশকে আক্রমণ করে রাষ্ট্র ও সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে যা ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। একজন মুসলমান কখনও ধর্মের নামে অন্যের বাড়িঘরে হামলায় বা সহিংসতায় অংশগ্রহণ করতে পারে না।

জামাত-শিবিরের নিরপেক্ষ বিচারের প্রতি আস্থা নেই। তাদের কুখ্যাত নেতাদের পক্ষে আইনজীবী আছেন। সে ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থা মেনে নিলে বিচার ছাড়াই নেতাদের মুক্তি চাইছে কেন তারা? তাদের মূল লক্ষ্য সহিংসতা। অস্থিতিশীলতা তাদের মুখ্য রাজনীতি। ফরহাদ মজহার এসব ভালোই বোঝেন।

ফরহাদ মজহাররা আমাদের যে রাজনীতি বোঝাতে চাইছেন তা জনকল্যাণকর নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও পরিপন্থী। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে চেতনা মুক্তিযুদ্ধের মর্মমূলে ছিল তা থেকে তিনি অনেক দূরে। তিনি ধর্মীয় জঙ্গিবাদকে লালন করেন। মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করেন। তার সমর্থকরা এদেশকে তালেবান বানাতে পারলে নিজেদের জীবনকে ধন্য মনে করবেন।

আসলে ব্যর্থ এই মানুষগুলো শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের দাবিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার স্পর্ধা পেলেন কোথা থেকে সেই প্রশ্ন আমাদের। যুক্তি-বিচার ও বুদ্ধি দিয়ে মৌলবাদীদের মোকাবিলা করার জন্য এদেশে মানুষের অভাব নেই। এজন্য ফরহাদ মজহারদের মতো ব্যক্তিদের পথভ্রষ্ট ও জামাতের নগ্ন দালাল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে, যারা দেশকে ভালোবাসেননি বরং দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য শিল্প-সাহিত্য নিয়েও বিলাসী উন্মাদনায় মেতে আছেন। এদের চিনে রাখার সময় এসেছে।

সকলে সতর্ক থাকুন। তাঁকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনারও জোর দাবি জানাচ্ছি।