কোদালকে কোদাল বলাই ভালো

হাসান মামুনহাসান মামুন
Published : 4 Dec 2013, 07:53 AM
Updated : 4 Dec 2013, 07:53 AM

শিক্ষক হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি যোগদানকারী এক স্নেহভাজন ফোনালাপে বললেন, 'ঢাকা ও রাজশাহী শহরের চা বিক্রেতার মধ্যে অনেক তফাৎ'। সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক মনোভাব বোঝাতেই ওটা বলেছেন তিনি। তাকে অবশ্য বলা হয়নি, উত্তরবঙ্গ হলেও রংপুর শহরের চা বিক্রেতাও কিছুটা ভিন্ন হবেন।

আমরা যে যে অঞ্চলে থাকি বা যে রাজনৈতিক দলের সমর্থক হই, তারা অনেক ক্ষেত্রেই মনে করি চারদিকে কেবল আমরা। নেতানেত্রীরা এটি কতটা মনে করেন জানি না। তবে মঞ্চে রাখা বক্তৃতা শুনে মনে হয়, তাঁরাও মনে করেন সামনে সমবেত জনতাই গোটা দেশের মানুষ তথা জনগণ! কী সহজেই না বলে ফেলেন, 'জনগণ' এটা চায়, ওটা চায়! নিজেদের চাওয়াকেই তাঁরা জনগণের বলে জাহির করেন।

একটু অবাক হয়ে দেখি, আমাদের লেখকদের এক বিরাট অংশ লিখেন, 'আমরা মনে করি'! তিনি নিজে যা মনে করেন, সেটিকে 'আমরা' বলে চালিয়ে দেন অবলীলায়। নিশ্চয়ই তিনি যা মনে করেন, তার সঙ্গে অনেকে একমত। কিন্তু তাঁরা কারা, সেটি তো জানা নেই কারও। তাঁরও জানা নেই।

সম্প্রতি মিসরে কর্মরত একজন সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারের শিরোনাম দেখে হোঁচট খাই। এদেশের বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকে সেটি ছাপা হয়েছিল। সাক্ষাৎকারের শিরোনাম– 'মিসরের জনগণ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র চায় না'। কীভাবে চাইল না তারা এমন রাষ্ট্র?

আমরা তো জানি, গণঅভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের একনায়কের পতন ঘটার পর ওখানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ধর্মীয় মৌলবাদীরাই ক্ষমতায় এসেছিল। তাদের বরং ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হয়নি। সেনাবাহিনী নিজেদের নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশটির ক্ষমতায়। সেজন্য রাজপথে মৌলবাদ সমর্থকদের নিষ্ঠুরভাবে দমনেও কুণ্ঠিত হয়নি। তাহলে?

সাক্ষাৎকারটি পড়ে দেখি, ওই ভদ্রলোক আসলে নিজের এবং তার মতো আরও যারা আছেন মিসরে, তাদের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু তারা তো 'জনগণ' নন; এর একটি অংশ মাত্র। হতে পারে, কমবেশি এমন মনোভাবের লোকই সংখ্যাগুরু মিসরে। একই সঙ্গে এও হতে পারে, তারা মোটেও সংগঠিত নয়। এদের ঠিকমতো নেতৃত্ব দিতে পারে, তেমন সংগঠন নেই দেশটিতে।

এর বিপরীতে মৌলবাদ সমর্থকরা হয়তো খুব সংগঠিত। তারা উজ্জীবিত হয়ে ভোট দিতে গেছে এবং ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়ে তারা হয়তো বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে বা ব্যর্থ হয়েছে ব্যাপক মানুষের প্রত্যাশা পূরণে। এতে দ্রুতই হয়তো কমে এসেছিল তাদের জনপ্রিয়তা। তা সত্ত্বেও এটা কি বলা যায়, 'মিসরের জনগণ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র চায় না' বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়?

বলা যায় না। আলজেরিয়ার জনগণও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায় বলে মনে হচ্ছে না। সেখানেও ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী সেনাবাহিনী পরোক্ষে ক্ষমতা আঁকড়ে বসে আছে। আলজেরিয়ায়ও নির্বাচনে জিতেছিল ধর্মীয় মৌলবাদীরা। তাদের ক্ষমতায় আসতেই দেওয়া হয়নি। এরা সম্ভবত আরও জনপ্রিয় হয়েছে এর মধ্যে। নতুন করে নির্বাচন দেওয়া হলে আর সেটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হলে তারাই জিতে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে সাধারণভাবে।

নিজের বা নিজেদের আকাঙ্ক্ষা থেকে দুমদাম মন্তব্য করা তাই ঠিক নয়। তাতে বাস্তবতা প্রতিফলিত হয় না আর অন্যরাও বিভ্রান্ত হয়। সচেতনভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন অনেকে। তাদের কথা আলাদা। অসতর্ক মন্তব্য করেও অনেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন। তাতে বেশি ক্ষতি হয়ে যায়।

'গণজাগরণ মঞ্চ' যখন গড়ে উঠল রাজধানীর শাহবাগে, জমায়েত বড় হতে লাগল; বিশাল এক কাণ্ড হয়ে গেল দেখতে না দেখতে। বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত অনেকেই তখন বলতে শুরু করলেন, দেশের তরুণ সমাজ মুক্তিযুদ্ধকে ফিরিয়ে এনেছে। তারা খেয়াল করলেন না, তরুণদের আরেক অংশ রয়েছে বিপক্ষ শিবিরে।

কিছুদিন পরই সেটি স্পষ্ট হল। অপর অংশটিকে দেখা গেল দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের মুখোমুখি হয়ে ভয়ঙ্করভাবে লড়তে। তাদের অনেকে নিহতও হল বিধিবদ্ধ আদালতে দণ্ডিত একাত্তরের চিহ্নিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বাঁচাতে গিয়ে।

তারা বিভ্রান্ত হলেও শুধু মুখের কথায় এদের উপস্থিতি ও শক্তি অগ্রাহ্য করা যাবে না। দেশে এদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্র তো ছিল। রয়েই গেছে। অর্থনীতির বিভিন্ন খাতেও রয়েছে তাদের বড় বিনিয়োগ আর সক্রিয় অংশগ্রহণ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে তহবিল আসা বন্ধ হয়ে গেলেও নাকি তাদের সমস্যা হচ্ছে না।

অনেকেই আশা করেছিলাম, জামায়াতের একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্মটা একটু ভিন্ন হবে। কীসের ভিত্তিতে সে 'প্রাক্কলন' করা হয়েছিল, বোধগম্য নয়। তবে সেটি যে সত্য হয়নি, তা এখন মানতে হচ্ছে।

ভারতের 'আনন্দবাজার' পত্রিকায় সম্প্রতি 'বারুদস্তূপ' শিরোনামে একটি সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে, একাত্তরে হানাদার পাকবাহিনীর সহায়তাকারী জামায়াত নেতাদের বিচারের উদ্যোগ জাতিকে 'খাড়াখাড়ি' দু'ভাগ করে দিয়েছে।

এখন কথা হলো, দেশে আমরা ক'জন এভাবে বলি? বিভ্রান্ত হয়ে বা কায়দা করে বরং বলি, 'জনগণ' যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চায়। আমরা কি এ প্রশ্নে গণভোট নিয়ে দেখেছি? অবশ্যই এটা গণভোটের বিষয় নয়– বরং অনেক পরে নেওয়া হয়েছে এমন সাহসী উদ্যোগ। তা সত্ত্বেও ভুলেও যেন না বলি, দেশের সব মানুষ চায় এটা।

জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে (ও সহিংসভাবে) এর বিরোধিতা করছে রাজপথে নেমে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকেও তারা প্রভাবিত করে ফেলেছে এ প্রশ্নে। বিএনপি নেত্রী থেকে তৃণমূল নেতারাও যুক্তি-অপযুক্তি খাড়া করে বিরোধিতা করছেন এ বিচারের। একাধিক জনমত জরিপের ফল দেখে কিন্তু বলা যায়, এতে মোটের ওপর তাদের জনপ্রিয়তা কমেনি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক অবশ্য বলেছিলেন, বিএনপি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ইতিবাচক অবস্থান নিলে তরুণসহ জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মন জয় করতে পারত। অতঃপর নির্বাচনে অংশ নিয়ে একাই জিতে আসতেন তারা।

বিএনপিতে যারা ভোটের হিসেব করেন, তারা এ প্রশ্ন একেবারেই ভেবে দেখেননি বলা যাবে না। রাজনৈতিক সম্পর্ক বাদ দিয়ে শুধু ভোটের হিসেব তো আর করা যায় না। বিএনপি নেত্রী ও তার পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গিও এখানে বিবেচ্য। দেশের দুই প্রধান দলেই আমরা দেখছি ব্যক্তি ও পরিবারতন্ত্রের অবিরাম বিকাশ। দলে অন্যদের ভূমিকা মনে হয় অনেকটা চাকরিজীবীর মতো। এসব দলে কোনো ফোরাম কি কার্যকর রয়েছে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনার?

বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধা কম নেই। এর প্রতিষ্ঠাতা নিজে ছিলেন বড় মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু নিজে তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন স্বাধীনতার পর। তাই বলে বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল বলা যায় না। মুক্তিযোদ্ধাদের দলও বলা যাবে না। অনেক যুদ্ধাপরাধী এতে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের আমলেই জামায়াতে ইসলামী পুনর্গঠিত হয় 'বহুদলীয় গণতন্ত্রের' নামে। বিএনপির প্রশ্রয় পায় তারা সবচেয়ে বেশি।

জামায়াতে ইসলামী নামের দলটি আওয়ামী লীগের প্রশ্রয় কখনও পায়নি, তাও বলা যাচ্ছে না। জামায়াতের সঙ্গে ওই সম্পর্ক নীতিগত না কৌশলগত ছিল, সে প্রশ্ন তোলা যাবে অবশ্য। কোথাও গুরুতর ভুল হয়ে থাকলে সেটি কিন্তু স্বীকার করা দরকার। অস্বীকার করে বা ঘুরিয়ে বলে লাভ কী? পরিস্থিতি মোকাবেলা তো করতেই হচ্ছে।

দেশে ধর্মীয় মৌলবাদ যাতে কোনোভাবেই বেড়ে উঠতে না পারে, সে লক্ষ্যে স্বাধীনতা অর্জনের পর কতটা কাজ করা হয়েছে আসলে? আত্মপ্রসাদে না ভুগে এ প্রশ্নও তোলা দরকার। সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা লেখা হলেও তার পক্ষে ঠিক কী কী কাজ করেছিলেন খোদ বঙ্গবন্ধু সরকার? দলবিশেষের জন্য বিব্রতকর বলে এ আলোচনা কি আমরা এড়িয়ে যাব?

অনেকে বলেন, সংবিধানে ওটা ছিল আরোপিত। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগ কখনও আনুষ্ঠানিক বা দালিলিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেনি। মুজিবনগর সরকার গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেও এটি নেই। এর অনেক আগে 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' অবশ্য আওয়ামী লীগ হয়েছিল। এটুকুই কি যথেষ্ট?

স্মরণ করব, সমাজতান্ত্রিক দল না হয়েও আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি করেছিল বাহাত্তরের সংবিধানে। নিজেদের মতো করে এর পক্ষে বরং কিছু কাজ তাঁরা করেছিলেন শাসনামলের শুরুর দিকে। তখনকার বিশ্ব বাস্তবতার চাপেই ওটা হয়েছিল সন্দেহ নেই। সেটুকুও কি করা হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতার সপক্ষে?

সমাজ ও রাজনীতিকে ধর্মনিরপেক্ষ করা মুখের কথা নয়। মুসলিম-অধ্যুষিত সমাজ বা রাষ্ট্রে এর পক্ষে কাজ করা বোধহয় আরও কঠিন। সেটি কিছুটা হলেও সহজ হত, যদি খোদ মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সরকার 'মিন' করে হাত লাগাত এতে। ভাবীকালের গবেষকরা নিশ্চয়ই এ প্রশ্ন খতিয়ে দেখবেন।

অনেকে অবশ্য বলেন, সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে শুধু গণতন্ত্রের কথা বললেই হত। গণতন্ত্র থাকলে তো অনিবার্যভাবেই থাকে ধর্মনিরপেক্ষতা। আলাদাভাবে এটি বলাতেও নাকি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দেশে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা তো বটেই, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও বিপন্ন।

গণতন্ত্র বলতে মোটা দাগে পশ্চিমা গণতন্ত্রই আমরা বুঝে থাকি। তার চর্চাও কি হয়েছে দেশে? কোনো সন্দেহ নেই, পঁচাত্তরের পর অনেক দুষ্কর্ম হয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরও গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে কতটা? দলে, সংসদে ও রাষ্ট্রে?

স্বাধীনতা-উত্তর কোনো পর্বেই কি গণতন্ত্রের ঠিকঠাক চর্চা আমরা করেছি? অথচ গণতন্ত্রের লড়াই করতে করতেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। স্বাধীন দেশের জন্য রচিত সংবিধানে ব্যক্তিবিশেষের হাতে সর্বময় ক্ষমতা রেখে দেওয়ার সুযোগও সৃষ্টি করলাম আমরা। নানা সংশোধনীর পরও সবাই মিলে এটি আবার সযত্নে সংরক্ষণ করি। তাতে কম গোল বাঁধেনি এ পর্যন্ত।

রাজনীতিতে সৃষ্ট সাম্প্রতিক গোলযোগের মূলেও রয়েছে মন্ত্রিসভার বদলে প্রধানমন্ত্রীর হাতে থেকে যাওয়া সর্বময় ক্ষমতা। গুরুত্বপূর্ণ সব মন্ত্রণালয় দিতে রাজি হলেও বিএনপি নাকি তাই যেতে চাচ্ছে না 'সর্বদলীয়' মন্ত্রিসভায়।

এখন দলটি যদি ভাবে, এ প্রশ্নে ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী 'জনগণের' মধ্যে খুব অজনপ্রিয় হয়ে পড়ছেন, তাহলেও ভুল হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ অবস্থানের পক্ষেও বিপুলসংখ্যক লোক রয়েছে দেশে। তার যে কোনো সিদ্ধান্ত সমর্থন করবে, এমন সমর্থক উল্লেখযোগ্যভাবেই রয়েছে। ২০০১-এর কঠিন নির্বাচনে পাওয়া আওয়ামী লীগের ভোট তার প্রতিপক্ষের মাথায় রাখতে হবে।

জামায়াতেরও মনে রাখা দরকার, একাত্তরে স্বজাতির বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের বিচার আয়োজনের ফলে এ মন্দা সময়ে ক্ষমতাসীনদের ভোট কিছুটা হলেও বাড়বে। এমন বহু লোক পাওয়া যাবে, যারা শুধু এ বিচারপ্রক্রিয়া রক্ষার জন্যই চাইছে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসুক। এমনই একজন সেদিন খোলাখুলি বললেন, 'একতরফা নির্বাচন' হলেই ভালো। নির্বাচনটা হয়ে যাক; আর অল্পদিনের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে রায়গুলোও কার্যকর হোক। তারপর যা হওয়ার হবে।

ইনি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে না পারা একজন। তবে কোনো অংশে কম বড় মুক্তিযোদ্ধা নন। এদের কথাই বোধহয় বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই তরুণ শিক্ষক। বলেছিলেন, বিএনপি তাদের মন জয় করতে পারত একাত্তর প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান নিলে বা নিতে পারলে।

তেমন অবস্থান নিলে আজ রাজপথে জনসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলেও যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাচ্ছে, সেটি কি এ মাত্রায় সম্ভব হত? এতে আর কিছু না হোক, সরকারের ওপর চাপ তো সৃষ্টি হচ্ছে।

চাপ আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকেও। সেটি অবশ্য বিএনপির ওপরও রয়েছে। ওই সম্প্রদায়ের এক বড় অংশ জামায়াতের সঙ্গে দলটির সম্পর্ককে সহজভাবে নিচ্ছে না। বলছে এমন পরিস্থিতিতে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সম্ভাব্য বিনিয়োগসহ আঞ্চলিক নিরাপত্তাও বিপন্ন হতে পারে এতে। বাম জঙ্গিবাদের ভয় তারা আর পাচ্ছেন না। ডান তথা ধর্মীয় জঙ্গিবাদই তাদের দুশ্চিন্তার বিষয়।

আমরা যারা একটি অগ্রসরমান গণতান্ত্রিক সমাজে বাঁচার আশা রাখি, তারাও তো চাই দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক। এমন ঝোঁক থাকলেও সেটি যেন সবসময় থাকে নিয়ন্ত্রণে। গভীর এ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেও আপ্তবাক্যের মতো বলব না, 'জনগণ' এটা চায়। তার সিংহভাগ এমনটি চাইলেই বরং খুশি হয়ে যাব। কম আশাবাদ ব্যক্ত করছি এজন্য যে, সমাজ ও রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে কাজ তো হয়নি।

এর বিপরীতে বরং কাজ হয়েছে বেশি। ভয়টা সেখানে।

হাসান মামুন : সাংবাদিক।