কথা হোক, কথা হোক

আবেদ খান
Published : 3 Nov 2013, 03:35 PM
Updated : 3 Nov 2013, 03:35 PM

সেই গল্পটির সারাংশ দিয়েই শুরু করি, যেটি সম্ভবত প্রায় সবাই জানেন, কিন্তু সবাই মানেন– এমনটি বলতে পারব না। এ প্রসঙ্গে একটি ছোট্ট কথা বলে রাখি।

আমার একটি লেখার শুরুতে ব্যবহার করা রূপকথার সারাংশ নিয়ে কোনো এক মহলের কেউ কেউ অগ্নিশর্মা হয়ে বলেছেন, আমি নাকি ওই রূপক রূপকথায় এক শীর্ষ রাজনীতিককে সরাসরি কটাক্ষ করেছি! রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'রক্তকরবী' কাব্যনাট্যে বলেছেন, ''কথা বলি আমরা, আর মানে তো করে ওঁরা।'' কেউ যদি ক্রোধ বা হতাশার বশে সবকিছু নিজের ঝাঁপিতে ভরেন, সে ক্ষেত্রে তাঁকে এমন অজ্ঞতার জন্য অনুকম্পা ছাড়া আর কী করতে পারি?

এটাও এক রাজার গল্প। রাজা তাঁর পাচককে তাঁর জন্য বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্যবস্তু রন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাচক শত পদের সুস্বাদু খাদ্য রন্ধন করল বটে, কিন্তু শত ব্যঞ্জনের প্রতিটির প্রধান উপাদান ছিল 'জিহ্বা'। রাজা পরম তৃপ্তিভরে ভোজন সম্পন্ন করে পাচককে উপযুক্ত পারিতোষিক দিয়ে বললেন, ''বেশ! আগামীকাল তুমি বিশ্বের নিকৃষ্টতম বস্তু রন্ধন করে আমাকে মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশন কর।''

পরদিনও অন্যভাবে শত ব্যঞ্জন রন্ধন করা হল এবং সেই শত ব্যঞ্জনের মূল উপাদানও ছিল 'জিহ্বা'। রাজা বিস্মিত হয়ে পাচককে জিজ্ঞাসা করলেন, ''এইরূপ রন্ধনের কারণ কি?''

পাচক উত্তর দিল, ''মহারাজ! জিহ্বা এমন একটি বস্তু যা সুন্দররূপে ব্যবহার করলে মানুষ ধন্য ধন্য করে এবং কদর্যভাবে ব্যবহার করলে মানুষ নিন্দা করে। জিহ্বা বন্ধুকে শত্রুতে পরিণত করে, আবার শত্রুকে বন্ধুকে রূপান্তরিত করে। কেবলমাত্র জিহ্বার সঠিক ব্যবহার দ্বারাই অনেক অসাধ্য কর্মসম্পাদন সম্ভব; আবার এই জিহ্বার অপব্যবহার দ্বারাই অনেক সুন্দর পরিবেশ বিষবৎ হয়ে উঠতে পারে। মহাত্মন! জিহ্বার অসুন্দর ব্যবহার মহাযুদ্ধের কারণ ঘটায়, আবার সুচারু ব্যবহার মহাযুদ্ধের অবসান ঘটায়। আর এই উপাদানটির সুব্যবহারের জন্য কোনো প্রকার অর্থনাশের আশঙ্কা নেই।''

রাজা পাচকের কথায় এবং যুক্তিতে মোহিত হয়ে তাকে সহস্র স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করলেন।

২.

দুই নেত্রীর সাম্প্রতিক ফোনালাপে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠেছে। এমনকি দেশের বাইরেও গিয়ে পড়েছে এই ঝড়ের ঝাপটা। শুধু দেশের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরাই নন, বিভিন্ন কূটনীতিক মহলেও এই ৩৭ মিনিটের ফোনালাপ নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা চলছে। সবচাইতে বিস্ময়কর ব্যাপার হল–

ক) এই দুজনই হচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান ব্যক্তি। একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং অপরজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একজন এই রাষ্ট্রীয় প্রধান নির্বাহীর পদে দ্বিতীয়বার উপবেশ করেছেন এবং অন্যজন দু'বার পূর্ণমেয়াদে ও একবার অতি স্বল্পমেয়াদে এই শীর্ষ প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

খ) দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কার্যরত বিভিন্ন বিদেশি কূটনীতিক এমন একটা প্রচারণা চালিয়েছিলেন যে, দুই নেত্রীর বাক্যবিনিময় ঘটলেই বুঝি-বা সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নাগরিক সমাজের একাংশ এই নিয়ে প্রবল রব তুলেছিলেন বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে, টক শোতে এবং পত্রপত্রিকায়– যার ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের মনে প্রচণ্ড কৌতূহল দানা বেঁধেছিল যে, দুই নেত্রীর মধ্যে কী ধরনের কথাবার্তা হয়! কাজেই তিন-চার দিন ধরে ক্রমাগত মিডিয়ায় দুই নেত্রীর ফোনালাপের প্রচার মানুষের প্রত্যাশাকে শ্বাসরুদ্ধকর পর্যায়ে উন্নীত করে ফেলেছিল।

গ) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছিল হরতাল-কেন্দ্রিক সহিংসতার কারণে। অর্থনৈতিক প্রবাহ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল বলে সাধারণ মানুষের আশা ছিল যদি আলোচনায় একটা কিছু বেরিয়ে আসে, তাহলে হয়তো পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

ঘ) মানুষের আরও আগ্রহ ছিল আরেকটি বিষয়ের দিকে, তা হল– মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দুই প্রধান জোট, বিশেষ করে দুই নেত্রী অনড় অবস্থানে রয়েছেন– যদি দুজনের মধ্যে কথাবার্তা হয় এবং আলোচনার সূত্র ধরে কোনো পক্ষ যদি নিজে কিঞ্চিৎ নমনীয় হয়ে অপর পক্ষকে নমনীয় হতে সাহায্য করেন– তাহলে হয়তো-বা রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটতে পারে।

কিন্তু এই বাক্যবিনিময়ের ফল বরং উল্টোটাই হল। দুই পক্ষের অনমনীয়তা বৃদ্ধির ফলে, বৃদ্ধি পেল মানুষের হতাশা এবং অনিশ্চয়তার আশঙ্কা। দুই নেত্রীর বলয় থেকে আপন-আপন দৃষ্টিকোণের আলোকে এই ফোনালাপের ব্যাখ্যা দেওয়া হতে থাকল। দুই শিবিরের অনুসারী বুদ্ধিজীবীরা নিজ নিজ নেত্রীর ভূয়সী প্রশংসা এবং অপর পক্ষের নিন্দাভাষণে মুখর হয়ে মিডিয়ার মাইক্রোফোন এবং পত্রপত্রিকার পৃষ্ঠা উত্তপ্ত করে ফেললেন।

আর মানুষের নিরাশা ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক নিরাসক্তির দিকে ধাবিত হতে থাকল। কূটনীতি পাড়ার কূটনীতিকরা বিস্ময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি অবলোকন করলেন এবং পরিমাপ করতে শুরু করলেন আমাদের দেশের শীর্ষপর্যায়ের রাজনীতিকদের রুচিবোধ এবং শিষ্টাচারের মাত্রা।

৩.

কথা উঠেছে, মিডিয়ার এই সংলাপ প্রকাশের বিষয়টি বিধিসম্মত অথবা শিষ্টাচারবর্জিত হয়েছে কিনা। এ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে রীতিমতো আক্রমণাত্মক যুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে। 'অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স' কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অতিশয় আত্মরক্ষামূলক– যা মাঝেমধ্যে আত্মসমর্পণমূলক বলে মনে হয়– তেমনভাবে বিএনপির অভিযোগের জবাব দেওয়া হচ্ছে। একমাত্র তথ্যমন্ত্রী বাদে আর কাউকে যথাযথ যুক্তি দিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এর স্পষ্ট উত্তর আছে এবং উত্তরটি পরিষ্কার। প্রথমত, কেন বলা হচ্ছে যে, এটা প্রধানমন্ত্রী করেছেন? যে দুজন ফোনে কথা বলছিলেন তাঁরা দুজনেই বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই পৃথকভাবে হলেও তাঁদের প্রতিটি ফোনালাপ, তা তাঁরা যেখানেই কথা বলুক না কেন, মনিটরিং নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকবেই। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এটা জানেন এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীর এটা বিলক্ষণ জানার কথা।

বিরোধী দলের নেতারা এবং তাঁদের শুভাকাঙ্ক্ষীগণ যখন প্রশান্তির হাসি হেসে বলেন যে, তাঁদের নেত্রী সব সাফ সাফ বলে দিয়েছেন এবং দারুণভাবে জিতে গেছেন, তখন তো বলতেই হয় তিনি জানতেন এই সংলাপ মনিটরিং করা হচ্ছে এবং এটা বাজারে ছড়ানো হবে। কাজেই তিনি তো তাঁর মতো করে সবকিছু পাখির বুলির মতো বলে গেছেন।

তাঁদের প্রতিপক্ষ মহল যদি অভিযোগ করেন যে, এটা বাজারে ছাড়ার ব্যাপারেও তাঁদের অদৃশ্য হাত আছে, তা তাঁরা অস্বীকার করবেন কী করে? হ্যাঁ, ওঁরা বলতে পারেন, যে সব এজেন্সি এ কাজ করে থাকে সে সব এজেন্সির কার্যক্রম তো সরকারের নির্দেশেই পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেয় সব কিছু নির্ভর করে। অতি উত্তম।

তাহলে বিডিআর বিদ্রোহের সময় যেসব ভিডিও টেপ ছড়িয়ে গেল সর্বত্র, এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানের ক্যান্টনমেন্টের দরবার হলে সেনা অফিসারদের সঙ্গে কথোপকথন যে অডিও প্রচারিত হল– সেটা কারা করেছিল? কেন করেছিল? এ ব্যাপারে তো বিরোধী দলের নেতারা জানতে চায়নি কীভাবে এটা প্রকাশিত ও প্রচারিত হল ইন্টারনেটে। বরং তাঁরা এই বিষয়টিকে ধরেই তাঁদের রাজনৈতিক শত্রুতা চালিয়ে গেছেন।

দ্বিতীয়ত, দুই নেত্রীর সংলাপ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কোথায়? সরকারের কঠোর সমালোচক দেশের সর্বাধিক পঠিত প্রভাবশালী দৈনিকে। ওই দৈনিকটি এমনভাবে কাটছাঁট করে সংলাপের আংশিক বিবরণ প্রকাশ করেছিল, যা বিরোধী দলীয় নেত্রীর পক্ষে যায়। এতে কি বিরোধী দলের নেতারা চাপা হাসি হাসেননি?

পরে যখন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল পুরো কথোপকথনটি প্রচার করে বসল এবং তাতে সংলাপের পরিবর্তে রূঢ় বাক্যানল বর্ষণের ব্যাপারটি দর্শকশ্রোতাদের স্তম্ভিত করল, তখন তাঁরা অফেন্সিভ পলিসি গ্রহণ করে পুরো দায়টি উল্টো দিকে ঠেলে দিল।

আর আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার একটা বদঅভ্যাস আছে– অন্যের কৃতিত্ব দখল করা এবং নিজেকে জাহির করার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিংবা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা। দু-একটা টিভি চ্যানেল যখন স্বপ্রণোদিতভাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংলাপের অডিও টেপ সংগ্রহ করে প্রচার করে দিল, তখন তো উচিত ছিল তাঁদের চুপ করে পরিস্থিতি অনুধাবন করে সেটা দলীয়ভাবে বিশ্লেষণ করা। কিন্তু তা না করে এর দায়িত্বটা তথ্য মন্ত্রণালয় স্বতস্ফূর্তভাবে নিজের ঘাড়ে নিল। এর ফলে নির্বুদ্ধিতার যত প্রকার কুফল হয়, সবই তাকে ভোগ করতে হল।

তৃতীয়ত, এই সংলাপের ব্যাপারে বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষনেতাই অবগত ছিলেন না। তাঁদের এমন অনেকের সঙ্গে আমার দেখা কিংবা কথা হয়েছে যাঁরা এতে শুধু হতাশ বা বিব্রতই নয়, রীতিমতো রুষ্ট এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁদের কারও কারও ধারণা দেশনেত্রী আর তাঁদের পরামর্শের তোয়াক্কা করেন না। সবল পরামর্শদাতার প্যানেল নিয়মিত তাঁকে পরিচালনা করছে। মূলত তিনি তাদেরই হাতে বন্দি।

তারা যা বলবে, তাই করতে হবে। তারা যদি সংলাপ না চায়, তবে সংলাপ হবে না। তারা যদি বলে হরতাল দিতে হবে, তবে হরতাল দেওয়া হবে। তারা যদি বলে তাদের লোকজনের মুক্তির দাবি করতে হবে, তবে তাই করা হবে। একজন বিএনপি নেতা তো বলেই ফেললেন, আমরা পুতুলের সংসারের সদস্য ছাড়া আর কিছু নই। মাঝেমধ্যে যখন আমাদের নেতাদের সঙ্গে বসা হয়, তখন শুধু ওই প্যানেলের পাঠানো সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।

চতুর্থত, যাঁরা স্বকর্ণে শুনেছেন কিংবা বিস্তারিত পাঠ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়, তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝেছেন ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট সম্পর্কে কী ধরনের কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞ পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে, জামায়াত দীর্ঘদিন যাবৎ ১৪ ডিসেম্বর তারিখে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করত শুধু এটা দেখানোর জন্য যে, এটা তাদের কাজ নয়, আওয়ামী লীগের কাজ।

২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এবং বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রাণদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর ব্যাঙ্গোক্তি ছিল– পার্থ নামের ওই হিন্দুটাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেই বেরিয়ে যাবে কারা এবং কাদের পরিকল্পনায় গ্রেনেড হামলা হয়েছে। অথচ এই নিজামীর প্রত্যক্ষ সম্পৃক্তি প্রমাণিত হয়েছে চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র দিয়ে। এসব থেকেই তো বোঝা যায় ফোনালাপে উচ্চারিত নিষ্ঠুর মন্তব্যের মুসাবেদা কোন মহল থেকে করা হয়েছিল।

পঞ্চমত, সংলাপের বিষয়বস্তু নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। অনেকে এর প্রকাশ করা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যও করেছেন। একজন উচ্চপর্যায়ের নেতা বলেছেন এটা প্রচারের ব্যাপারটি যদি আমাদের জানা থাকত তাহলে তো ম্যাডাম এভাবে কথা বলতেন না। কী দাঁড়ায় এর অর্থ?

তিনি রূঢ় কথা বলবেন টেলিফোনে, এটাই তাহলে পূর্বনির্ধারিত ছিল? তিনি কথা বলতে দেবেন না এবং গড়গড় করে বলে যাবেন, এটাই কি ঠিক করা ছিল? লাল টেলিফোনকে কালক্ষেপণের এবং বিষয়বস্তুকে গৌণ করার জন্য ব্যবহার করা হবে, এটাই কি পূর্বপরিকল্পিত ছিল?

৪.

তারপরও আমার ধারণা সংলাপ হবে, আলোচনা হবে এবং ফল একটা আসবেই। জামায়াত সবকিছু মিসমার করার জন্য যত চেষ্টাই করুক না কেন, যেহেতু বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল এবং মাঠপর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীরা যেহেতু সম্ভাব্য বিজয়ের প্রত্যাশায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেহেতু তারা দীর্ঘসময়ের জন্য নির্বাচনী এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে চাইবে না। কারণ তাদের অনেকের পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শক্তি থাকবে না।

আর আমার সুস্পষ্ট অভিমত হচ্ছে সেই বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তি– ''তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?'' সংলাপের দরজাটা উন্মুক্ত হোক। সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে সংলাপ যদি শুরু হয় তো হোক না। আলোচনা সিঁড়ি বেয়ে উঠুক না ওপরের দিকে। ব্লেইম গেমের কূটকৌশলটি এবার বন্ধ হোক না। মানুষকে কষ্ট দেওয়ার, মানুষ মারার, গাড়ি পোড়ানোর, বৃক্ষবিনাশের এবং শিক্ষাঙ্গনগুলো অচল করার সর্বনাশা হরতাল, কলকারখানা হাটবাজার বন্ধ করার হরতালকে বিদায় দেওয়া যায় না দুপক্ষের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে?

প্রধানমন্ত্রী না হয় আরেকবার ডাকলেনই চায়ের কিংবা নৈশভোজের আমন্ত্রণে। সেখানে তো তিনি অনায়াসে দেশ-জাতি এবং গণতন্ত্রের স্বার্থের বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারবেনই। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, বৃহৎ যে হয় সে পায় মহত্বের অধিকার।

যে জিহ্বা নিয়ে এ লেখা শুরু করেছিলাম সেই জিহ্বাতেই প্রত্যাবর্তন করি। আগেই বলেছি জিহ্বাই অনেক সুন্দরকে অসুন্দর করে, আবার শত্রুকে মিত্রে পরিণত করে। সুবচন নির্বাসনে না দিয়ে সুবচনের অধিষ্ঠান ঘটানো হোক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। তাহলে রাজনীতিও বাঁচবে, রাজনীতিকও বাঁচবেন।

আবেদ খান : সাংবাদিক, প্রকাশিতব্য দৈনিক জাগরণ-এর সম্পাদক।