আরেকটি দৃষ্টিনন্দন চাঁদ হল শনি গ্রহের টাইটান। এর অনন্যতার কারণ হচ্ছে, এতে নদী, হ্রদ ও সমুদ্র সবই রয়েছে, যা পানির নয়, বরং তরল মিথেন ও ইথেনের।
Published : 16 Jan 2025, 07:35 PM
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের সৌরজগতে দূরবর্তী চাঁদ বিশেষ করে ইউরোপা, টাইটান ও এনসেলাডাসের মতো বিভিন্ন ভিনগ্রহে নজর রেখেছেন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা।
এত দূরে থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজ পাওয়ার জন্য সেরা সম্ভাবনা হতে পারে এসব ভিনগ্রহ। তবে এসব গ্রহের কঠোর পরিস্থিতি ও পরিবেশে মানুষের যাওয়ার বিষয়টি মারাত্মক হতে পারে। ফলে এসব রহস্যময় স্থান অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোবট।
সবচেয়ে রোমাঞ্চকর সম্ভাবনাগুলোর মধ্যে বৃহস্পতির গুরুত্বপূর্ণ চাঁদ ইউরোপা অন্যতম বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফে ঢাকা এ চাঁদের হিমায়িত ভূত্বকের নীচে রয়েছে তরল পানির এক বিশাল সমুদ্র।
প্রাণের জন্য অন্যতম মূল উপাদান হচ্ছে পানি। তাই প্রাণের খোঁজ পাওয়ার জন্য প্রধান প্রার্থী হতে পারে ইউরোপা। এরইমধ্যে নাসার ‘ইউরোপা ক্লিপার’ নামে এক মিশনের জন্য কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।
মিশনটি শিগগিরই চালু করবে নাসা, যা বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করবে ও এর উপগ্রহের পৃষ্ঠ, বরফ এবং পানি গবেষণার জন্য ইউরোপার খুব কাছ থেকে উড়ে যাবে।
ইউরোপায় না নামলেও সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ চলবে এ মিশনে, যা ভবিষ্যতের রোবট ডিজাইন করতে সহায়তা করবে বিজ্ঞানীদের। ফলে বরফ খনন করতে পারে বা নীচের সমুদ্রে ডুব দিতে পারে এমন সক্ষমতার রোবট বানাতে পারবেন তারা।
আরেকটি দৃষ্টিনন্দন চাঁদ হল শনি গ্রহের টাইটান। এর অনন্যতার কারণ হচ্ছে, এতে নদী, হ্রদ ও সমুদ্র সবই রয়েছে, যা পানির নয়, বরং তরল মিথেন ও ইথেনের। এর ঘন বায়ুমণ্ডলও রয়েছে, যা চাঁদের পরিবেশের জন্য বিরল। ২০৩০ এর দশকে টাইটানে যাওয়ার কথা রয়েছে নাসার ‘ড্রাগনফ্লাই’ মিশনের হেলিকপ্টার-সদৃশ ড্রোনটির।
এ রোবোটিক অনুসন্ধানকারী টাইটানের পৃষ্ঠের উপর দিয়ে উড়ে যাবে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লাফিয়ে ঘুরে বেড়াবে এবং এর পৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করবে। পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রাণের উদ্ভব হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে টাইটানের এই অদ্ভুত গঠন।
শনির আরেক চাঁদ এনসেলাডাস’ও নজর কাড়ছে বিজ্ঞানীদের। ইউরোপার মতো এরও বরফের ত্বকের নীচে একটি লুকানো সমুদ্র রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এটি জানেন কারণ, পৃষ্ঠের ফাটল দিয়ে জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য পদার্থের উষ্ণপ্রস্রবণ বা গিজারকে মহাকাশে ছুড়ে দিচ্ছে এনসেলাডাস।
দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গ্রহের চাঁদ অনুসন্ধান প্রযুক্তি। আধুনিক বিভিন্ন রোবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সহায়তায় তৈরি বলে এরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কারণ পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিলম্বিত হতে কয়েক মিনিট, এমনকি ঘণ্টা সময়ও লাগতে পারে, ওই মুহূর্তে এরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে।
ভবিষ্যতের পানে চেয়ে আরও উচ্চাভিলাষী মিশনের স্বপ্ন দেখছেন বিজ্ঞানীরা। যার মধ্যে রয়েছে প্রাণের চিহ্ন অনুসন্ধানের জন্য ইউরোপা বা এনসেলাডাসের মহাসাগরে সাবমেরিন পাঠানো বা বরফের পৃষ্ঠে বিশাল দূরত্ব ভ্রমণ করে বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে এমন রোবট পাঠানোর মতো বিষয়।
রোবোটিক অনুসন্ধানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল তবে এর ফলাফল পেতে কয়েক দশক সময় লাগলেও পৃথিবী থেকে দূরবর্তী গ্রহের এসব চাঁদে যাত্রার বিষয়টি মানুষের কৌতূহল ও দক্ষতারই প্রতিফলন। কে জানে, সেখানে আমাদের জন্য কী চমক অপেক্ষা করছে!