রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ড ও শ্রমিক-স্বার্থ

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
Published : 1 May 2013, 11:12 AM
Updated : 1 May 2013, 11:12 AM

মে দিবস উপলক্ষে গোটা বিশ্বের শ্রমিকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দিবসটি প্রতি বছর পালিত হয় নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে। এটি শ্রমিকশ্রেণির বিজয়ের দিন, আনন্দ-উৎসবের দিন, তার সংগ্রাম ও সংগ্রামের শপথগ্রহণের দিন। সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্প্রদায় দিবসটি তাদের সংহতি প্রকাশের জন্যও পালন করে থাকে।

১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা যে রক্তক্ষরা সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন সেটি সারা দুনিয়াতেই ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনটি সুনির্দিষ্টভাবেই ছিল আটঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে। শ্রমিকদের ভাষায়, আমরা আটঘণ্টা কাজ করব, আটঘণ্টা বিশ্রাম করব, আর বাকি আটঘণ্টা বিনোদন বা সংগ্রাম করব। এভাবে প্রতিটি কর্মদিবস ভাগ করে দাবি উত্থাপন করার মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলনে একটি বিরাট গুণগত পরিবর্তন এসেছে। একে বিশ্লেষণ করলে আমরা শ্রমিকদের শ্রেণিসচেতন হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করতে পারি।

সে আলোচনায় আজকে আমরা যাচ্ছি না। তবে মে দিবস পালনের রেওয়াজ নিয়ে কিছু কথা বলব। ১৮৭০ সালে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রথম অধিবেশনে জার্মান কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিন ঘোষণা দেন, এখন থেকে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশেষ দিবস হিসেবে পালিত হবে। দিবসটি হবে শ্রমিকদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহ্যের প্রতি এক ধরনের স্বীকৃতি।

তারপর থেকেই ১ মে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে সাধারণত দেখা যায় যে, বিভিন্ন দেশের শাসকশ্রেণি দিবসটি নিয়ে খুবই ভয় পায়। তাই তারা এটি পালনের ব্যাপারে শ্রমিকদের উপর নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ বা নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এখনও এমনকি খোদ ইউরোপের কিছু দেশে সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যে মে দিবস পালন করা হয়।

পাকিস্তানি শাসনামলে আমাদের এ ভূখণ্ডে আমরা মে দিবস পালনের উদ্যোগ নিলে সরকারের পক্ষ থেকে বাধার মুখোমুখী হতাম। ফলে তখন স্বাধীন ও স্ততঃস্ফুর্তভাবে মে দিবস পালন করার সুযোগ আমাদের হয়নি। কখনও হয়তো কোনো কোনো দালাল সংগঠনের বিকেলের সমাবেশে আমরা হাজির হয়ে দূর থেকে বক্তৃতা শুনতাম। এ কারণে যে এ ফাঁকে আমরা সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম। পরে রাতের বেলায় আমরা হারিকেন বা মোমবাতি জ্বালিয়ে ছোট্ট ঘরের মধ্যেই মে দিবসের আলোচনা করতাম।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মে দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। এ দিন সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও ঘোষণা করা হযেছে। মে দিবসে শ্রমিকরা সকাল থেকেই ঢাক-ঢোল-বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মিছিল-সমাবেশ করতে পারছেন, সারাদিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, দাবি-দাওয়া পেশ হচ্ছে, সংগ্রামের শপথ গ্রহণ করা হচ্ছে। মোটকথা, বাহাত্তরের পর থেকে এ দেশে মে দিবস পালনের আয়োজন ও উৎসবে কমতি নেই। এটি একটি বড় অগ্রগতি নিংসন্দেহে। এ অর্জন আবার সম্ভব হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শ্রমিকশ্রেণির ব্যাপক অংশগ্রহণ ও অমূল্য অবদানের জন্য।

কিন্তু আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার দিক থেকে মে দিবস যতটা গুরুত্ব বা মর্যাদা পাচ্ছে- যাদের জন্য দিবসটি, মানে যে শ্রমিকদের জন্য, তাদের অধিকারের দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে দিবসটি আরও তাৎপর্য পেত। শ্রমিকরা এখনও এ দেশে মর্যাদা পাননি। তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার খর্বিত। আগে যেটুকু অধিকার ছিল এখন সেটিও সংকুচিত করার জন্য নিত্যনতুন ফন্দিফিকির করা হচ্ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পসহ যে সব শিল্প গড়ে উঠছে, সেখানে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেওয়া হচ্ছে না।

নতুন শ্রম আইন করার উদ্যোগটি দীর্ঘদিন ধরে ঠেকিয়ে রেখেছিল মালিকপক্ষ। সরকারের কাছে শ্রমিক ও মালিক উভয়পক্ষ কিছু দাবি-দাওয়া দিয়েছিল। সরকার মালিকপক্ষের প্রায় সব দাবি মেনে নিলেও শ্রমিকদের কোনো দাবিই মেনে নেননি। এরকমভাবেই শ্রম আইনের একটি খসড়া কেবিনেটে পাশ হয়ে গেছে।

ওদিকে শ্রমিকদের মজুরি-বেতন এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। তিন বছর আগে শ্রমিকরা দাবি করেছিলেন নূন্যতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা করার জন্য। এ মজুরি এখনও সব শ্রমিক পাচ্ছেন না। কিন্তু গত তিন বছরে দ্রব্যমূল্য এত বেশি বেড়েছে যে এখন নূন্যতম মজুরি কমপক্ষে আট হাজার টাকা করা দরকার। যে কোনো বিচারে এ দাবি যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু সরকার শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন স্কেল নির্ধারণের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

শ্রমিকদের রুটি-রুজির ক্ষেত্রে আরও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। তবে গত কয়েক বছরে শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে কারখানায় ওদের জীবনের নিরাপত্তা না থাকা। এটা শুধু সাম্প্রতিকের রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডের জন্য বলছি না, কয়েক বছর ধরে সংঘটিত এমন অসংখ্য ঘটনায় শতশত শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা দেখেছি কারখানায় কাজ করতে গিয়ে শ্রমিক লাশ হয়ে ফিরছেন। কখনও আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছেন। কখনও হুড়োহুড়ি করে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হচ্ছেন। কখনও-বা মারা যাচ্ছেন ভবনধসে।

এভাবে শ্রমিকের জীবন বিপন্ন করা একেকটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হলে কিছুদিন দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। কিন্তু এত বড় বড় হত্যাকাণ্ডের জন্য কারও শাস্তি হচ্ছে না। একটি বা দুটি ঘটনা এভাবে ঘটলে একে বিচ্ছিন্ন বা দৈব-দুর্বিপাক বলার একটা সুযোগ কেউ নিতে পারতেন। কিন্তু এগুলো একের পর এক ঘটেই যাচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মালিকদের অবহেলা, এবং আমি বলব সচেতন অবহেলার জন্যই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এর পাশাপাশি ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তির সংস্কৃতি আমাদের দেশে চালু হয়ে গেছে। এতগুলো 'হত্যাকাণ্ড' ঘটানোর পরও মালিকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ কাজ করছে। এসব সংগঠনের আশ্রয়ে-প্রশয়ে মালিকরা প্রতিবারই রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন।

অসংখ্য শ্রমিকের প্রাণহরণের পরও দায়ী মালিকদের বাঁচানোর জন্য সরকার পর্যন্ত সদাতৎপর। যেমন, তাজরীন গার্মেন্টসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আমাদের দাবি ছিল মালিককে গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখী করা। তা তো হয়নি, বরং তাকে বাঁচানোর জন্য সরকারের তরফ থেকেই 'সুমী নাটক' সাজানো হয়েছিল। সরকারের উদ্যোগে টেলিভিশন চ্যানেলে প্রদর্শিত একটি ভিডিও ক্লিপেদেখা গেছে 'সুমী' নামের এক মেয়ে একটি গার্মেন্টস কারখানায় দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিতে চেষ্টা করছে। পত্রিকায় ছয় কলাম জুড়ে হেডিং দিয়ে এটা প্রচার করা হল যে, সুমী ও তার সঙ্গী মকবুল আমাদের গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, পাঁচ মাস পরই এতবড় রাষ্ট্রদ্রোহীদের নামগুলোও আর শোনা যাচ্ছে না কেন? ওরা কোথায়? কী বিচার হচ্ছে ওদের? আসলে এই 'সুমী নাটক' ছিল চারদলীয় জোট সরকারের আমলের 'জজ মিয়া' নাটকের মতোই একটি বিষয়। মূল অপরাধীকে আড়াল করতে অন্যদিকে আলোচনাটা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।

তাজরীনের মালিককে এভাবে ছেড়ে দেওয়ার ফলে অন্য মালিকরাও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার সাহস করবেন এটাই স্বাভাবিক। সেটাই হয়েছে। আর এর ফলেই ঘটেছে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা। একে দুর্ঘটনা বলার কোনো সুযোগ নেই, বরং 'পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড'। এখানে জেনেশুনে শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে। কারণ, প্রথমত ভবনটির নির্মাণ কৌশলে ত্রুটি ছিল। দ্বিতীয়ত, ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল, এবং সেখানে কাজ করাও ছিল বিপজ্জনক। তবু শ্রমিকদের রীতিমতো মাইকিং করে, লাঠির ভয় দেখিয়ে, পুরো মাসের বেতন কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়ে সেদিন কারখানায় কাজ করতে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। ফলে এত মর্মস্পর্শী একটি ঘটনা ঘটেছে।

চারশ লাশ ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। আরও প্রায় সাত-আটশ নিখোঁজ। সঙ্গত কারণেই বোঝা যায়, এখন ভবনটি ভাঙার যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে ওই লাশগুলো আর উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। ধ্বংসস্তূপে মিশে যাবে সব। তার মানে, কমবেশি হাজার খানেক মানুষ এ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। টুইন টাওয়ার ট্র্যাজিডিতে যে সংখ্যক মানুষ মারা গিয়েছিলেন তার প্রায় এক চতুর্থাংশ নিহত হয়েছেন আমাদের রানা প্লাজা ট্র্যাজিডিতে। তাহলে টুইন টাওয়ার নিয়ে বিশ্বজুড়ে এত হৈ চৈ হল, রানা প্লাজা নিয়ে তার এক চতুর্থাংশ হল না কেন?

দুর্ভাগ্য যে সরকার সেভাবে বিষয়টি তুলে ধরেননি। বরং সরকারের কর্তাব্যক্তিরা শুরুতেই বললেন যে, এখন উদ্ধারের কাজ করতে হবে, 'ধরপাকড়' নয়। ফলে এ সুযোগে ভবন মালিক রানা পালিয়ে গেল। তারপর শ্রমিকরা যখন বিক্ষোভে রাজপথ উত্তাল করল, তখন সরকার রানাকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিতে বাধ্য হল।

ভবন মালিক ও পাঁচ গার্মেন্টস মালিককে বাঁচানোর জন্য সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা নানা হাস্যকর যুক্তিও হাজির করছিলেন। যেমন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর 'খাম্বা ঝাঁকানোর তত্ত্ব' হাজির করেছিলেন। তাঁর যুক্তিটি মানুষের মধ্যে শুধু হাস্যরসের খোরাক জুগিয়েছে তা নয়- এটি মূল অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য যে করা হয়েছে সেটাও স্পষ্ট করে দিযেছে।

প্রধানমন্ত্রী নিজেও অবিবেচকের মতো কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। ওই হত্যাকাণ্ডের দিন পার্লামেন্টে তিনি বলেছেন, শ্রমিকরা মূল্যবান জিনিসপত্র আনতে কারখানায় ঢুকেছিলেন। তাঁর কথাটি সত্যের পুরো বিপরীত। ওইদিন শ্রমিকরা ওই কারখানায় যেতে চাননি। তাদের জোর করে ওখানে ঢোকানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী আরেকটি কথা বলেছেন, সেটি হল- 'বাংলাদেশের নব্বইভাগ ভবনই তো এভাবে তৈরি হয়, তাহলে সব মালিককেই ধরতে হবে'।

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ভবন মালিকের অপরাধ হালকা করার একটি সুর উঠে এসেছে। সরকার এ ধরনের ফাঁকফোকর দিয়ে ঘটনাটি আড়াল করার চেষ্টা করলেও শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে সফল হয়নি।

ওদিকে গার্মেন্টস মালিকদের গ্রেপ্তার নিয়ে আরেক নাটক হয়েছে। বিজিএমইএ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মিডিয়াকে জানিয়েছে, তারা মালিকদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করার জন্য আলোচনা করেছে। তার মানে, বিজিএমইএ তার সদস্যরা যতবড় অপরাধই করুক না কেন, সে মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে তাদের। আরেকটি ব্যাপার লক্ষ্যণীয়। মালিকদের গ্রেপ্তারের খবর পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে। ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তার শাস্তি হবে খুবই লঘু। যেমন, নকশা অনুযায়ী ভবন তৈরি করা হয়নি বা ঘণ্টা বাজানো হয়নি ইত্যাদি। এসব অপরাধের জন্য তাদের পাঁচ কী ছ মাস, অথবা বড়জোর বছর দুয়েকের কারাদণ্ড হতে পারে।

কিন্তু তাদের আসল অপরাধ যেটি, অর্থাৎ গার্মেন্টস কারখানায় হত্যাকাণ্ড সংঘটনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। গার্মেন্টস শ্রমিকরা সঙ্গতভাবেই দাবি করছেন, একজন মানুষকে খুন করার জন্য যদি কোনো ব্যক্তির ফাঁসির আদেশ হয়, তাহলে চারশ মানুষকে খুন করার জন্য তো ওই ব্যক্তির চারশ বার ফাঁসি হওয়া উচিত।

এ জন্যই আমাদের শ্রমিকশ্রেণি এখন বলছেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমিকদের যেসব অধিকারের কথা বলা হয়েছে সেগুলো তাদের দিতে হবে। এটা আগে থেকেই বলা হয়েছে যে, গার্মেন্টস কারখানাগুলো তিনতলা বা চারতলার বেশি হওয়া উচিত নয়। হলেও সেখানে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। আরেকটি ভালো উপায় হল গার্মেন্টস পল্লী তৈরি করা যেখানে শ্রমিকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তাছাড়া প্রতিটি কারখানার কমপ্লায়েন্সের ব্যবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

সব মিলিয়ে বলব, এবারকার মে দিবস এমন একটি সময়ে এসেছে যখন শ্রমিকদের দিক থেকে কযেকটি দাবি উঠেছে। যেমন, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দেওয়া, নূন্যতম মজুরি আট হাজার টাকা করা, কাজের পরিবেশ উন্নত করা, এবং সর্বোপরি জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া। আমাদের শ্রমিকরা এবারকার মে দিবসে একদিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিকশ্রেণির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্বের শ্রমিক আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করছেন। পাশাপাশি অশ্রুসজল চোখে বেদনার পাহাড় ঠেলে তাদের শতশত সহকর্মীর করুণ মৃত্যুর জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে, বুর্জোয়ারা কখনওই সত্যিকারভাবে শ্রমিকস্বার্থের পক্ষে কথা বলবে না। যেটুকু বলে সেটা হচ্ছে তাদের পারস্পরিক স্বার্থের দ্বন্দ্বের ফলে। তাই ওরা আবার প্রয়োজনমতো জাতীয় স্বার্থের কথা তুলে শ্রমিকস্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে পারে। একমাত্র আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্প্রদায়ই পারে আমাদের শ্রমিকস্বার্থ রক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে। সস্তাশ্রমনির্ভর উন্নয়ন নীতির মাধ্যমে আমরা আমাদের শ্রমিকদের শুধু নিপীড়িত হতে দিচ্ছি, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের মৃত্য্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছি। সে জন্য আমরা আন্তর্জাতিক শ্রমিকশ্রেণির কাছে আহ্বান জানাই তারা যেন আমাদের এ নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলেন। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে কাজ করতে হবে।

শ্রমিকশ্রেণির পক্ষেই একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও শ্রমিকস্বার্থ রক্ষা করে কাজ করা সম্ভব।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।