সাইপ্রাস-সঙ্কট কি শুধু সাইপ্রাসেরই

নাদিরা মজুমদার
Published : 1 April 2013, 07:22 PM
Updated : 1 April 2013, 07:22 PM

সাইপ্রাসের পোশাকি নাম রিপাবলিক অব সাইপ্রাস। একটি দ্বীপ দেশ। ভূমধ্যসাগরে এর অবস্থান। আকারের দিক দিয়ে ভূ-মধ্যসাগরস্থিত দ্বীপগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম। তার মানে, আয়তনের দিক থেকে ইতালির দুটি দ্বীপ সিসিলি ও সার্ডিনিয়ার পরই এটির অবস্থান।

তবে সম্পূর্ণ দ্বীপটি সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র নয়, দ্বীপের উত্তরাংশ তুর্কি সাইপ্রিয়টদের দখলে। দ্বীপটিকে গ্রিসের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ১৯৭৪ সালের ১৫ জুলাই গ্রিক সামরিক সরকার এক ক্যু করে প্রেসিডেন্ট তৃতীয় মাকারিয়ুসকে উচ্ছেদ করে, এবং নিজের লোক নিকোস স্যামসনকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। এর দিন পাঁচেক পর, ২০ জুলাই সাইপ্রাসে শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দোহাই দিয়ে তুর্কি সেনাবাহিনি গিয়ে হাজির হয়। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত 'গ্যারান্টি চুক্তি' বা 'ট্রিয়েটি অব গ্যারান্টি' অনুযায়ী, সাইপ্রাস প্রশ্নে তুর্কিদের এ ধরনের হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হয়েছিল।

তবে এ জন্য তুর্কিরা ভৎর্সনা ও তিরস্কার পেয়ে আসছে প্রচুর। ওরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাব অবজ্ঞা করেছে। কিন্তু দ্বীপদেশ সাইপ্রাস দ্বিখণ্ডিতই রয়ে গেছে; তুরস্ক ও সাইপ্রাসের মধ্যকার সমস্যা মিটমাট হয়নি। খণ্ডিত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র তুরস্কের সঙ্গে বিবাদ না মেটালেও কেমন করে যেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়ে গেছে। ইইউ'র সদস্য হতে হলে প্রার্থী দেশকে যেসব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও লেজিসলেটিভ বিষয়াদির সমাধান করতে হয়- তার মধ্যে একটি হল অন্য কোনো দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক ভূখণ্ড-সংক্রান্ত বিবাদের মীমাংসা।

সাইপ্রাস সেটা না করেও ইইউ'র সদস্যপদ পেয়েছে হয়তো এ কারণে যে, ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সাইপ্রাস দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান কৌশলগত দিক দিয়ে যথেষ্ট আর্কষণীয়। গ্রিস, তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, ইজরাইল ও গাযা স্ট্রিপ, মিসর ইত্যাদি দেশগুলো সাইপ্রাসকে চারদিকে দিয়ে ঘিরে রেখেছে। আর তাই ২০০৪ সালের ১ মে যে দশটি দেশকে ইইউ'র পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়া হয়, সাইপ্রাস এর অন্যতম।

দ্বীপটির জনসংখ্যা বড়জোর দশলাখ, ঢাকার জনসংখ্যার চেয়েও অনেক কম। কমবেশি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ইইউ'র অর্থনৈতিক ও মুদ্রা ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে। ফলে, ইউরো জোনের সদস্য হিসেবে দেশটি ইউরো গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) "দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ-প্রবৃদ্ধি, স্বল্প-কর্মহীনতা ও মজবুত আর্থিক ব্যবস্থার জন্য" বিনা দ্বিধায় সাইপ্রাসের প্রশংসা করে এসেছে।

মোটকথা, বিশ্বায়িত আর্থ-সঙ্কটের পূর্ব পর্যন্ত, সাইপ্রাস বেশ ভালোই করছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে বিশ্বায়িত আর্থ-সঙ্কট ইউরো জোনে যে অর্থনৈতিক পড়তির ছোঁয়া নিয়ে এসেছে, সাইপ্রাসও তা অনুভব করে। এমনকি ২০১১ সালে দ্বীপদেশটি মস্কোর কাছ থেকে আড়াই বিলিয়ন ইউরো ধার নেয়। তাতেও অবস্থার খুব একটা হেরফের হয়নি।

কাল যে ধনী আজ সে ফকির- সাইপ্রাস এর বড় উদাহরণ। এ পর্যন্ত ইউরো জোনের যে পাঁচটি দেশ মন্দায় ঘায়েল হয়েছে, তাদের মূল সমস্যা ছিল সভরিন ঋণ আর ব্যাঙ্ক সিস্টেমের বেবন্দোবস্ত।

সাইপ্রাসের এ ফকিরী হাল হওয়ার কারণ বলতে গেলে আইএমএফ-য়ের ভাষা ব্যবহার করতে হয়: সুদিনের বছরগুলোতে সাশ্রয়ের কথা না ভেবে, একদিকে যেমন সরকারি ঋণের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে সরকার ও ব্যাংকগুলো গ্রিসকে দেদার ধারকর্জ দেয়; হাউজিং ব্যবসাও তেজি হয়ে ওঠে। অর্থাৎ আয়ের চেয়ে ব্যয় হয় বেশি। আর্থিক-সঙ্কটের সময়ে আয়ারল্যান্ড, গ্রিস, স্পেন বা ইতালিসহ অন্য অনেক দেশের সরকারই ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষা করতে ব্যাংক খাতে প্রচুর টাকা ঢালে, এবং বিনিময়ে সরকার শেয়ারের মালিকানার অধিকারী হয়। অর্থাৎ 'রিক্যাপিটালাইজ' নামক বিভাষা বা জার্গনের আড়ালে ব্যাংক জাতীয়করণ হয়; তবে ব্যবস্থাটিতে সমাজতন্ত্রের অ্যাসেন্স থাকায় এবং এটি মুক্তবাজার ব্যবস্থার পরিপন্থী বলে, যথেষ্ট বিতর্কিতও বটে। তবু যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশই ব্যবস্থাটি প্রয়োগ করে থাকে।

কিন্তু সাইপ্রীয় সরকারের সে অবস্থাও নেই। কারণটা সহজ। ইউরো জোনের প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক হার, সঙ্গে উৎপাদন খাতের শ্লথগতিতে সাইপ্রাসও পীড়িত। ফলে, অনিশ্চিত আর্থিক-বাজার সরকারি অবস্থানকে এমন এক নাজুক জায়গায় নিয়ে এসেছে যে কারও কাছ থেকে ধারকর্জ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ব্যাংক ব্যবস্থা বাঁচাতে হলে যত টাকাকড়ির প্রয়োজন, সাইপ্রাসের তা নেই। এখানেই সাইপ্রাস মার খেয়ে গেছে। ২০১০ সাল হলে সাইপ্রাসের ভোগান্তি কি কম হত? সে সময় আয়ারল্যান্ড ও গ্রিসকে জামিন দিয়ে উদ্ধারের ব্যবস্থা হয়। ২০১২ সালে স্পেনও বাদ যায় না; জামিনের প্যাকেজ পায়। তবে স্পেনের কথা আলাদা। ইইউ'র ধনী দেশগুলোর অন্যতম এটি, আকারে বড়, লোকবলও বেশি; ফলে, সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে স্পেন।

সাইপ্রাস এখন আর চলতে পারছে না। তৃতীয় পার্টির সাহায্য ছাড়া মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা দেশটির। মস্কো যদি আরও দু'বিলিয়ন ইউরো দেয়, টের পাওয়ার আগেই তা দেনার গর্তে ভুশ করে তলিয়ে যাবে। ছোট্ট দেশ সাইপ্রাস, ইউরো জোনের অর্থব্যবস্থায় তার অবদানও খুব কম, বিন্দুতুল্য বলা চলে, অথচ আর্থিক বাজারে অনিশ্চয়তার কাঁপুনি ঠিকই পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ার বাজারের লেনদেনে এর প্রভাব পড়েছে। আর বিশ্ববাজারে ইউরোর মান নেমে এসেছে।

অথচ অন্য দেশগুলোর তুলনায় সাইপ্রাসের চাহিদা অনেক কম; মাত্র ষোলো বিলিয়ন ইউরো দিয়েই সেখানকার সঙ্কট কাটবে। কিন্তু ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইএমএফ- এ তিনে মিলে যে ত্রয়কার সৃস্টি হয়েছে, সেটি সাইপ্রাসকে বলে যে, 'তুমি আগে ছয় বিলিয়ন ইউরো যোগাড় করো, দেখাও আমাদের, আমরা তখন তোমাকে বাকি দশ বিলিয়ন দেব।'

সাইপ্রাসের অর্থনৈতিক সুদিন-দুর্দিনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ব্যাংকগুলো। লুক্সেমবুর্গ, নেদারল্যান্ডসের মতো সাইপ্রাসও ট্যাক্স-হেভেন বা করের-স্বর্গ নামে সুখ্যাত। মূলত কর্পোরেট ট্যাক্স ও অন্যান্য সুবিধাদির কারণে যেমন ইইউ সদস্যদেশের মাঝারি ও বৃহৎ কোম্পানিগুলো আস্তানা গাড়ে ইউরোপীয় করের-স্বর্গ দেশগুলোতে- তেমনি ঠাঁই নেয় ইইউ-বহির্ভূত দেশের মাঝারি ও বৃহৎ কোম্পানিগুলোও। যেমন, গুগল, আমাযান বা স্টারবাকস কফির মূল আস্তানা নেদারল্যান্ডসে বলে যুক্তরাজ্য কর্পোরেট ট্যাক্সের আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে ইংলিশ সংসদে বেশ তোলপাড় হচ্ছে।

যাহোক, করের-স্বর্গ বলে লুক্সেমবুর্গ, নেদারল্যান্ডসের মতো সাইপ্রাসের ব্যাংকেও প্রচুর বিদেশি পুঁজির বিশাল সঞ্চয় গড়ে ওঠে। আইএমএফ-য়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১ সালের মধ্যে ঋণ ও ধারকর্জ সমেত সাইপ্রাসের পরিসম্পদ বা অ্যাসেটের পরিমাণ দাঁড়ায় বার্ষিক জাতীয় আয় বা জিডিপির ৮৩৫ শতাংশের সমপরিমাণ। এর একটা অংশ বৈদেশিক মালিকানাধীন ব্যাংকের আওতাধীন। কিন্তু সাইপ্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো গ্রিক ঋণকারীদের যে পরিমাণ ধারকর্জ দেয়, সেটিও কম নয়- জিডিপির ১৬০ শতাংশ।

অর্থাৎ দেশটি নিজের সর্বমোট জাতীয় আয় তো বটেই, বাড়তি আরও ষাট ভাগ গ্রিসের হাতে তুলে দেয়। গ্রিস তখন দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত। ফলে, ব্যাংকগুলো গ্রিসের বেসরকারি ঋণকারীদের কাছে যেমন মার খায়, আবার গ্রিক সরকারের কাছে প্রাপ্য ঋণও সাইপ্রাস মওকুফ করে দেয়। গ্রিসের তাতে কিছুটা আরাম হয় বটে, কিন্তু দেউলিয়া হয় সাইপ্রীয় ব্যাংকগুলো।

আন্তর্জাতিক জামিন-প্যাকেজ বা বেইল-আউট পেতে হলে প্রায় সময়েই দাতারা গ্রহীতাকে কর-বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন পরিসম্পদের তথা অ্যাসেটের পরিবর্তে আমানতের টাকা সংগ্রহ করতে বলে। সাইপ্রাসের ক্ষেত্রে বলা হল যে, ব্যাংকে জমাকৃত টাকার ওপর কর বসিয়ে আমানতের টাকা জোগাড় করা যেতে পারে।

কে ব্যাংক-লেভির এ প্রস্তাব উত্থাপন করে- ত্রয়কা নাকি সাইপ্রীয় প্রেসিডেন্ট আনাস্তাসিয়াডিস- সেটা খুব স্বচ্ছ নয়; তবে প্রায় নিঃসন্দেহে তাতে রাজনৈতিক মাত্রা রয়েছে। প্রাথমিক প্রস্তাবটি ছিল এরকম: যাদের সর্বোচ্চ এক লাখ ইউরো রয়েছে, ব্যাংক-লেভি হিসেবে তারা দেবে ৬.৭৫ শতাংশ; আর যাদের জমার পরিমাণ এক লাখের বেশি, তারা দেবে ৯.৯ শতাংশ।

সিদ্ধান্তটি আসলে লিখিত ও অলিখিত আইনের পরিপন্থী; তাই একে আইনসম্মত করার জন্য সংসদে পাঠানো হয় একাধিকবার। প্রতিবারই জমাকারীর টাকা হরণকে আইনসিদ্ধ করতে অস্বীকার করে সংসদ। পরিস্থিতি বেশ টান টান হয়ে ওঠে। দুই বড় ব্যাংক- ব্যাংক অব সাইপ্রাস ও লাইকি ব্যাংকসহ সবগুলো ব্যাংক তালা আটকে লেনদেন বন্ধ করে দেয়। প্রথম দুটো ব্যাংক কোনোদিনই খুলবে না হয়তো, কিন্তু বাকিগুলো কবে যে খুলবে কেউ জানে না।

লোকজন যে নিজের ইচ্ছামতো এটিএম মেশিন থেকে টাকা তুলবে, সে আশায়ও গুড়ে বালি। যত দিন যাচ্ছে, দিনপ্রতি টাকা তোলার পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাটবাজারে, রেষ্টুরেন্টে, কফিহাউজে, পেট্রোল পাম্পে ক্রেডিট কার্ড নেয়া বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। আবার দোকানদাররা মালের অর্ডার দিয়েও মাল পাচ্ছে না; সবাই নগদ টাকা চাচ্ছে। কিন্তু নগদ টাকা কারও হাতে নেই। অর্থাৎ শান্তির সময়েও সাধারণ সাইপ্রীয়রা জরুরী অবস্থার মধ্যে রয়েছে।

ব্যাংক-লেভির সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মাত্রার প্রসঙ্গে আসা যাক। রেটিং এজেন্সি মুডি'স-য়ের অনুমিত হিসেব মতে, সাইপ্রাসের বিভিন্ন ব্যাংকে রুশদের প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার রযেছে। এ দু'দেশের মধ্যে নিবিড় র্অথনৈতিক সর্ম্পকের সূত্রপাত ১৯৯০-য়ের দশকে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিখণ্ডন প্রক্রিয়ার কাল থেকে। নতুন রাষ্ট্রীয় র্অডার প্রতিষ্ঠাকালে কিছু লোক হঠাৎ ধনী হয়ে যায়, যারা অলিগার্ক পরিচিতি পায়, তারা তাদের অর্থলগ্নির জন্য করের-স্বর্গ সাইপ্রাসকে বেছে নেয়।

সাইপ্রাসে অন্য অনেক দেশের পুঁজি থাকলেও, সাইপ্রাস-সঙ্কট কেন্দ্র করে রুশ-বিত্ত প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়। ইইউ'র কারও কারও, বিশেষ করে জার্মানির ঘোর সন্দেহ যে রুশ-বিত্তের বিরাট অংশের মূল উদ্দেশ্য- কালো টাকা সাদা করা। জার্মান ইনটেলিজেন্সের ফাঁস হয়ে যাওয়া রিপোর্টে বলা হয় যে, ইউরো জোন যদি সাইপ্রাসকে জামিন-প্যাকেজ দিয়ে উদ্ধার করে তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকার ভোগ করবে রুশ অলিগার্ক বা ব্যবসায়ীর দল এবং মাফিয়োসি।

তাই "সন্দেহজনক" রুশ-বিত্তই নাকি এ নজিরবিহীন ব্যাংক-লেভির দৃষ্টান্ত আরোপে অনুপ্রেরণা যোগায়। ত্রয়কা ও ইউরো জোনের অর্থমন্ত্রীদের তথা ইউরোগ্রুপের আলোচনায় মস্কোকে ডাকা হয়নি। প্রেসিডেন্ট পুতিন ব্যাংক-লেভিকে "অনুচিত, অপেশাদারসুলভ ও বিপজ্জনক" বলেন। সাইপ্রীয়রা পৃথকভাবে মস্কোর কাছ থেকেও সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করছিল, এমনকি সম্প্রতি আবিষ্কৃত উপকূলবর্তী গ্যাসের মজুত মস্কোকে দিতে রাজি হয়। যদিও তুরস্ক গ্যাসের কিছুটা হিস্যা চেয়েছে, তবে মনে হয় যে, মস্কো সাইপ্রাসকে সাহায্য করতে নিমরাজি ছিল।

কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তাই ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান খোসে ইমানুয়েল বারোসো সাইপ্রীয় র্অথমন্ত্রী মিখায়েল সারিসকে সঙ্গে নিয়ে মস্কো যান; মেদভিয়েদেভের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে সাহায্যের প্রশ্নে আশাব্যঞ্জক কোনো আশ্বাস ছাড়াই ফিরে আসেন তারা।

সাইপ্রাস-সঙ্কট মোচনের খসড়া সিদ্ধান্ত হল যে, এক লাখ ইউরো পর্যন্ত গচ্ছিত অর্থ লেভি-মুক্ত থাকবে; এ সীমা এক লাখ ইউরোর উর্ধ্বে হলেই লেভির আওতায় পড়বে। কিন্তু লেভির হার কত হবে, কেউ জানে না। ফলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে ৪০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। অবশেষে দুই সপ্তাহ বাদে ব্যাংক খুলেছে, তবে দিনপ্রতি টাকা তোলার পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সে সঙ্গে সিদ্ধান্তের ভাষা বদলে বলা হচ্ছে যে, লেভি নয়, বরং যে পরিমাণ টাকা সরকার কেটে রাখবে, তার বিপরীতে ডিপোজিটের শেয়ারের অধিকারী হবে। তবে এমন শেয়ারের ভবিষ্যৎ আসলে লেভির সমতুল্য।

এখন প্রশ্ন হল যে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে কত টাকা রয়েছে? "লেভি" বসিয়ে ছয় বিলিয়ন ইউরো যোগাড় হবে তো? ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ মেকানিজম সঙ্কটের আভাস বেশ আগে থেকেই পেতে থাকে, ঘাগু ক্লায়েন্টরা তাই তাদের গচ্ছিত পুঁজি ইউরোপের অন্য ব্যাংকে সরিয়ে নেয়ার সময় পেয়েছে। সাইপ্রাসের ২০০০ চেক কোম্পানি বলছে যে, প্রায় মাসখানেক আগে তারা তাদের পুঁজি অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছে। অন্য অনেক দেশ তো বটেই, রুশরাও তাদের বিশাল বিত্তের কিছুটা অন্তত অন্য ব্যাংকে পাঠিয়েছে।

অনুমান করা হয় যে, তা সত্ত্বেও রুশ-বিত্ত কিছুটা থেকে যাবেই। সাইপ্রাস থেকে পুঁজির এই "এক্সোডাস"-য়ের অর্থ সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসের ব্যাংকগুলোর পৌষমাস; তারা বেশ র্কমতৎপর হয়ে উঠেছে। বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা বলে একটা কথা রয়েছে না, গ্রিস, সাইপ্রাস সে অবস্থায় রয়েছে।

এ যাত্রায় সাইপ্রাস রক্ষা পাবে। কিন্তু কদিনের জন্য?

নাদিরা মজুমদার : বিশ্লেষক, লেখক, সাংবাদিক।