গুনে পড়ে সারলি দফা, করলি রফা গোলেমালে

সোহেল হাসান গালিব
Published : 10 March 2013, 05:51 PM
Updated : 10 March 2013, 05:51 PM

ফরহাদ মজহারের একজন অনুরাগী পাঠক আমি। এ কথাটা স্বীকার করে নেয়া ভালো। তাঁর কিছু বই, যথা : প্রস্তাব, জগদীশ, সাঁইজীর দৈন্য গান, মোকাবেলা, ভাবান্দোলন এবং আরও কিছু টুকরো-ছিন্ন প্রবন্ধ আমার দৃষ্টিকে অনেকখানি প্রসারিত করেছে, যুক্তিকেও শান দিয়েছে, এ ঋণ একেবারেই অনস্বীকার্য। তার কবিতাও কৌতূহল-জাগানিয়া, যদিও আমার বিশেষ কোনো মুগ্ধতা নেই তাতে।

তবে ফরহাদ ভাইয়ের রাজনৈতিক কলামগুলি সাধারণত পড়া হয় না, একান্ত বাধ্য না হলে। যেমনটা এবার পড়তে হলো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। এই মুহূর্তে আমাদের প্রতিটি তৎপরতা মানুষের রক্তপাতের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক জিনিশই আর এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।

আরও একটি কথা বলে নিয়ে মূল আলোচনায় ঢুকবো। সম্ভবত ট্যাগ-লেবেলিংয়ের কবলে পড়েছি আমরা। যে কোনো সমালোচনাকে হয় পক্ষ নয় বিপক্ষের বলে ট্যাগিং করা হচ্ছে। কোনো কিছুকে অংশত গ্রহণ বা বর্জন না করে পূর্ণ সমর্থন অথবা প্রত্যাখ্যানের দিকে চলে যাচ্ছি আমরা। এর থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।

আমার দেশ অনলাইনে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করুন শিরোনামে একটি লেখাতে ফরহাদ মজহার বলেছেন : "বিচার কর, কিন্তু ফাঁসি ছাড়া আর কোনো রায় মানি না–দাবি করলে সেটা হয় আদালতের নাম ভাঙিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর নির্দেশ চাওয়া। পিটিয়ে মানুষ মারার মতো হত্যায় আদালতকে অংশগ্রহণের জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। শাহবাগ এ ধরনের পাবলিক লিঞ্চিং বা গণঅংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে দাঁড়িয়েছে কি? হাটে কাউকে ছেলেধরা হিসেবে অভিযুক্ত করে রব তুললে সবাই মিলে পিটিয়ে যেভাবে তাকে হত্যা করে, তাকেই বলে পাবলিক লিঞ্চিং। আমি ভদ্র ভাষায় অনুবাদ করেছি গণঅংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। একেই কিছু গণমাধ্যম আখ্যা দিয়েছে 'গণজাগরণ'। গণজাগরণ মঞ্চ বিচার নয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চায়।"

আমার বক্তব্য, হাটে কাউকে ছেলেধরা বলে রব তুলে গণপিটুনির হুজুগ তোলার সঙ্গে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে অভিযুক্ত ব্যক্তির ফাঁসি চাওয়াকে লিঞ্চিং বলে চালিয়ে দেয়াটা অন্যায়। এর মধ্যে রাজনৈতিক অসততা আছে। হাটুরে মারের সঙ্গে ফাঁসির দাবির এই যে জাক্সটাপোজিং, সাহিত্যিক দিক থেকে এরে মূর্খতা বলতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু এ হলো বুদ্ধিবৃত্তিক টেম্পারিং। অধিকন্তু, বিক্ষুব্ধ জনতার স্লোগানের ভাষাকে আক্ষরিকভাবে পাঠেও নিদারুণ মূর্খতা আছে।

ফরহাদ ভাইয়ের লেখাটার তাৎক্ষণিক সমালোচনা করেছিলেনন কবি তারিক টুকু। তিনি বলেছেন : "এই লেখাটায় ফরহাদ মজহার একবারের জন্যও প্রশ্নটা তোলেন নি, সারাদেশে কারা হিন্দু বা বৌদ্ধদের আক্রমণ করেছে, কেন করেছে! এই প্রশ্ন না তোলার কারণ আছে; তিনি বলছেন পুলিশ ও আওয়ামীলীগের লোকজন মিলে এই 'হত্যাকাণ্ড' চালিয়েছে। তার পক্ষে বলা সম্ভব হয় নি পুলিশ ও আওয়ামীলীগের লোকজন মিলে হিন্দুদের বাড়ি পুড়িয়েছে বা থানায় গিয়ে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। ফলে শিবিরের এই নৃশংসতা তার চোখে পড়ে না! তিনি বেমালুম চেপে যান। ফলে জামায়াত শিবির যে একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায়, ফরহাদ মজহার সে বিষয়ে নিশ্চুপ থেকেই সেটাকে এনডোর্স করেন। তার লেখায় কোথাও শিবির শব্দটাই দেখলাম না। এরা সবাই 'বিক্ষোভকারী'। মানে, তিনি একে এককথায় সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ বলেই দেখাতে চান! এরা যে সহিংস পথ বেছে নিয়েছে, তাও তাকে বলতে দেখি না। শিবির যদি কিছু চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর মুক্তি চাইতে পারে, তাহলে তো শাহবাগের তরুণরাসহ দেশের সাধারণ মানুষরাও পারেন তাদের ফাঁসি চাইতে! রাজাকার মুক্তি চাওয়ার দাবীকে তিনি রং দিতে চান গণমানুষের বিক্ষোভ বলে আর শাহবাগের আন্দোলন তার কাছে হয়ে দাঁড়ায় বিচার ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার মতন, কিন্তু শিবিরের থানা দখল, পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করা বা হিন্দুদের বাড়ি পোড়ানোকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ হিশেবে দেখেন না।"

না, শিবির শব্দটা তার লেখায় আছে। কিন্তু কিভাবে আছে খেয়াল করেন :

"জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি অপছন্দ করি বলে কিংবা আমাদের অবচেতনে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ও ঘৃণা কাজ করবার কারণে এক্ষেত্রে সব ধরনের বিবেচনা ও মানবতাবোধ আমরা হারিয়ে ফেলতে পারি না।"

আপাতদৃষ্টে উদার মানবতাবাদী আহ্বান। কিন্তু এরই মধ্যে ভয়ঙ্করভাবে লুকিয়ে আছে একটি তীব্র সাম্প্রদায়িক উশকানি। বাক্যের শুরুতেই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি অপছন্দ করার পাশাপাশি অবস্থান করছে ইসলাম সম্পর্কে আমাদের অবচেতনে আতঙ্ক ও ঘৃণার প্রসঙ্গ। পাশাপাশি প্রসঙ্গ উত্থাপনে লেখকের অভিপ্রায় হলো এই অর্থটি উৎপাদন করা : জামায়াতের শত্রু যারা, তাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ও ঘৃণা কাজ করে। খুব সুকৌশলে তিনি জামাতের বয়ানটাই হাজির করলেন। আরও স্পষ্ট করে বললে ব্যাপারটা দাঁড়ায়, জামায়াত-বিরোধিতা মানে ইসলাম-বিরোধিতা।

এই সরলীকরণের মস্ত বড় সুবিধাটুকু এই যে, এতে অভ্যন্তরীণ বিরোধাত্মক চিন্তাগুলিকে পাশ কাটিয়ে দুইটি প্রতিপক্ষ খাড়া করানো গেল। এখন জামাতের বিরুদ্ধে যে কোনো ক্রিটিককে ফরহাদ মজহার বা মাহমুদুর রহমানের পক্ষে মোকাবেলা করাটা সহজ হবে ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রিটিক হিসেবে দাঁড় করিয়ে।

ভাবান্দোলন বইটিতে এবং অন্যত্র আলোচনায় তিনি, ফরহাদ মজহার, বলেছেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ইসলামকে পরাজিত করার মাধ্যমেই তার অস্তিত্ব হাজির করে। ভাষান্তরে, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ইসলামকে দুশমন হিশেবে চিহ্নিত করার ভেতর দিয়েই বিকশিত হয়েছে।

তার বক্তব্যে ইমান রাখলে পাঠক ভাবতে বাধ্য, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের ব্যবচ্ছেদ মানে ইসলামকে প্রত্যাখ্যান।

অথচ তিনি নিজের কথা নিজেই ভুলে যান, জালেমের ইসলাম আর মজলুমের ইসলাম দুইটা আলাদা জিনিশ। একথা কে না জানে, জালেমের হাতে ধর্ম রেসিয়াল চরিত্র নিয়ে হাজির হয়, আর মজলুমের কাছে ধর্ম হলো প্রতিরোধের রিচুয়াল স্পিরিট।

এর প্রমাণ, পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে এই ভূখণ্ডে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিরোধ-আন্দোলন ধর্মের ভাষাতেই অভিব্যক্তি পেয়েছে। কিন্তু ৪৭-এর পর এই ভূখণ্ডে নিপীড়নমূলক ভূমিকায় বারবার ব্যবহৃত হয়েছে ইসলাম, যেহেতু ততদিনে সে শাসকের ধর্মে পরিণত হয়েছে।

ফলে বিগত ষাট বছরের ইতিহাসে যে নিপীড়কের সহচররূপে ইসলাম হাজির, তা যেমন অস্বীকার করার উপায় নেই, তেমনি দাবি করার সুযোগ নেই যে ইসলাম কোনোরকম মুক্তির দিশা এই জাতিগোষ্ঠিকে নিকট অতীতে দেখাতে পেরেছে।

ঠিক এই কারণেই, একাত্তরে পরাজিত ইন্টেলেজেন্সিয়ার পক্ষে এটা দেখানোর সুযোগ রয়ে গেছে যে, বাঙালি জাতির অভ্যুদয় ঘটেছে ইসলামকে খারিজ করার মধ্য দিয়ে। দুর্ভাগ্য হলো, সুযোগটি ফরহাদ মজহার নির্দয়ভাবে গ্রহণ করেছেন।

বস্তুত বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। বরং প্রাসঙ্গিক ছিল 'সোনার বাংলা শ্মশান কেন' এই বিক্ষোভকে সামনে নিয়ে আসা। আরও প্রাসঙ্গিক ছিল একটি ভাষাগোষ্ঠীর সাথে বর্ণবাদী আচরণের বিচার। এই যে অপ্রাসঙ্গিককে প্রাসঙ্গিক করে তোলার অসুখ, তার জের খুঁজে পাওয়া যাবে আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের ভেতর।

শুরুটা হয়েছিল মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিমের সময় থেকে। তিনি লিখেছেন :

যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ।

সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।।

সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী।

বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী।।

মারফত ভেদে যার নাহিক গমন।

হিন্দুর অক্ষর হিংসে সে সবের গণ।।

যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

এখানে স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি, শরিয়তপন্থিদের সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির গোলযোগ আজকের নয়। সতের শতকের এই কবির পর বিশ শতকের কবি নজরুলকেও বলতে শুনি :

"বাংলাসাহিত্য হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই সাহিত্য। এতে হিন্দু দেবদেবীর নাম দেখলে রাগ করা যেমন অন্যায়, হিন্দুরও তেমনি মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যে নিত্য-প্রচলিত মুসলমানি শব্দ তাদের লিখিত সাহিত্যে দেখে ভুরু কোঁচকানো অন্যায়। আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী। তাই তাদের এ-সংস্কারে আঘাত হানার জন্যই মুসলমানি শব্দ ব্যবহার করি, বা হিন্দু-দেবদেবীর নাম নিই। অবশ্য এর জন্যে অনেক জায়গায় আমার কাব্যের সৌন্দর্য হানি হয়েছে। তবু আমি জেনেশুনেই তা করেছি।"

দেখা যাচ্ছে, সংকটটা কবিদের মধ্যে ছিল না কখনোই। সমস্যা তৈরি হয়েছে এক শ্রেণির পাঠকের মধ্যে। এবং এই সমস্যা হলো মেটাফরিক জগতকে অতিক্রম করতে না পারা।

পাঠকের অস্বস্তি আরও ভিন্ন কারণেও তৈরি হতে পারে। লেখকের রাজনৈতিক অবস্থান যেমন লেখককে চালিত করে কিছু শব্দ বেছে নিতে, আবার পাঠককেও বীতশ্রদ্ধ করে তোলে ঐ ভাষার পারফর্মিং সম্পর্কে। উদাহরণত বলতে পারি, আল মাহমুদ ও ফররুখ আহমদের কথা।

প্রকৃতপক্ষে, ভাষার সংকট ধর্মকে এনকাউন্টার করা না করার মধ্যে সন্ধান করলে ফল মিলবে না। প্রশ্নটা তোলা দরকার জনমানুষের সম্পৃক্তির ক্ষেত্রে। অর্থাৎ ভাষা যার মুখে নিত্য প্রাণ প্রায়, সেই সজীব সত্তাকে ভাষিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ঠিক মতো অ্যাড্রেস করতে পারছে কি না? তাহলেই আরবি-ফারসি-সংস্কৃত-ইংরেজি শব্দ বিতাড়ন বা সুপার-ইম্পোজ দুদিক থেকেই আমরা রক্ষা পাব।

মোদ্দা কথাটি হলো এই, কতিপয় পাঠকের অস্বস্তিকে পুরা বাঙালি জাতির সংকট বলে চালিয়ে দেয়ার মধ্যে এক ধরনের চালিয়াতি আছে। এই চালিয়াতি জামাতের ইন্টেলেজিন্সিয়ার মধ্যে যেমন আছে, তেমনি আছে আমাদের মসজিদের কিছু ইমামদের মধ্যেও। শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। ইমাম সাহেব খুৎবায় বলছিলেন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অগ্নি-উপাসকদের কাজ। তার বক্তব্যের উদ্দিষ্ট ছিল শাহবাগের আন্দোলকদের কর্মকাণ্ড। নামাজ শেষে তাকে না পেয়ে তার বন্ধুকে শুধিয়েছিলাম, হুজুর, তারাবির নামাজের সময় কারেন্ট চলে গেলে মুসল্লিরা যে মোমবাতি জ্বালায়, সেটাও কি বেদাত বা শিরক? তিনি উত্তর দেন নাই।

এই ধরনের জেনারেলাইজেশনের খপ্পরে পড়েছি আমরা। আমরা বলতে চাই না যে বাঙালি জাতীয়তাবাদে কোনো সংকট নেই, বা তা সফলভাবে একটি বৃহত্তর আঙিনায় আমাদের দাঁড় করাতে পেরেছে। আমাদের আপত্তি শুধু এর শত্রু হিশাবে ইসলামকে টেনে আনায়। বরং ইসলামিক আন্দোলন বলে যে বিষয়টিকে সামনে আনা হচ্ছে, তা একভাবে 'প্যালেনজেনেটিক আল্ট্রা-ন্যাশনালিজম'। যা আমাদের চোখে সোনালি অতীত বলে ১৪০০ বছর আগের একটি চিত্র মেলে ধরে, বর্তমানের প্রায় সমস্ত কিছুতেই চোখ ঠেরে। নিজের দেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে আলিঙ্গন করতে যা অক্ষম। উল্টো, সে বিষয়গুলিকে 'অপর' বলে চিহ্নিত করে এবং তাকে নির্মূল করতে উদ্যত হয়।

একইভাবে সে অপর ধর্মগোষ্ঠীকেও নির্মূল করতে চায়। ভিন্নমতাবলম্বীকে মুরতাদ আখ্যা দিতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তার চিন্তা ও তৎপরতার নাম দেয়া যায় 'নন-মুসলিম ক্লিনজিং অপারেশন'। একাত্তর ও ২০১৩-তে তার আচরণ তাই অভিন্ন।

এখন প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্র যদিবা একটি ভাষা অবলম্বন করে তার প্রয়োজনে, তবে কি রাষ্ট্রের একটি ধর্মও থাকতে পারে? এই বিষয়ে আমরা গভীরতর বিতর্কে না গিয়েও একটা কথা বলতে পারি। এক ভাষাগোষ্ঠীর পক্ষে নিজের ভাষাকে অক্ষুণ্ন রেখেও অন্য আরেকটি ভাষা শিখে তা ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু নিজের ধর্মকে অক্ষুণ্ন রেখে অপর একটি ধর্মাচরণ কি সম্ভব? সেই কারণে একই পাল্লায় ধর্ম ও ভাষা উঠতে পারে না। এবং পরস্পরের প্রতিপক্ষও হতে পারে না।

কাজেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিশেবে দাঁড় করানোর মধ্যে হিন্দু-বৌদ্ধ সংস্কৃতি অপনয়নের সুপ্ত প্রস্তাবনা রয়েছে। যা কার্যত সাম্প্রদায়িক। পরিণামে একটি উদার সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র প্রস্তুত না করে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির শর্ত তৈরি করছে।

সোহেল হাসান গালিব: কবি ও শিক্ষক।