ফেব্রুয়ারি মাস নানা কারণেই আমাদের জাতীয় জীবনে সর্বদা পুনরুত্থানের মাস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। আমাদের জাতীয় পরিচয়ের সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এর শুরু হয়েছিল অল্প কয়েকজন ছাত্রের মাধ্যমে। তৎকালীন পাকিস্তানের দোর্দন্ড প্রতাপশালী গভর্নর জেনারেল এবং কায়েদে আজম বা জাতিরজনক হিসেবে স্বীকৃত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্লান সৃষ্টির মাত্র ৭ মাসের মধ্যেই এই তরুণদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হযেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হলে ছাত্রদের এক সমাবেশে অত্যন্ত আাত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি ঘোষণা করলেন, উর্দু , একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ওই তরুণেরা ভয় না পেয়ে সমাবেশ স্থলেই উঠে দাঁড়িয়ে গর্জন করে উঠেছিল, নো, নো।
পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি দেশের পূর্বাঞ্চলের মুসলমান কৃষক এবং মুসলমান মধ্যবিত্তদের জন্য দুধ ও মধুর নহর বয়ে যাওয়ার এক অলৌকিক স্বপ্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কৃষকরা ভেবেছিল, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেই হিন্দু জমিদাররা ভিটামাটি ছেড়ে ভারতে চলে যাবে এবং ফেলে যাওয়া জমি তাদের হবে। মুসলমান মধ্যবিত্তরা ভেবেছিল, তাদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত হিন্দুরা চলে যাবে এবং এর ফলে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং তাদের চাকুরি লাভ নিশ্চিত হবে। কিন্তু এই স্বপ্ন অচিরেই বাতাসে মিলিয়ে যায়। মুসলমান কৃষকরা দেখতে পান যে হিন্দু জমিদারদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে মুসলমান জোতদার, রাজনৈতিকভাবে যারা মুসলীম লীগের সঙ্গে জড়িত এবং এ দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবাঙালি।
মুসলমান মধ্যবিত্ত বাঙালিরা দেখতে পেল, বড় বড় সব চাকুরি বাগিয়ে নিচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানিরাসহ অন্য অবাঙালিরা। পাকিস্তানের রাজধানী করাচি বিধায় কেন্দ্রীয় চাকরি-বাকরি সেখানেই স্থানান্তরিত হয়ে যায়। মরার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো নেমে আসে সাংস্কৃতিক নির্যাতন। জিন্নাহর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা তারই প্রতিফলন। তারা বুঝতে পারে যে এখন থেকে এ ভাষা ব্যবহার করেই রাষ্ট্রীয় যাবতীয় কাজ হবে। অথচ সে সময়ে উর্দুতে পাকিস্লানের একেবারেই নগন্য সংখ্যক মানুষ কথা বলত। সেই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা জিন্নাহকে ভাষার প্রশ্নে নো, নো দিয়ে প্রতিবাদ শুরু করল শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের যাবতীয় বঞ্চনার অবসান ঘটল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে নাকচ করে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে।
ইতিহাসের কী আশ্চর্য মিল! সেই ১৯৫২ সালেই চট্টগ্রামে ২১ ফেব্রুয়ারির পর শহীদদের স্মরণে এক সমাবেশে কবি মাহবুবুল আলম ঢাকা থেকে গিয়ে নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করলেন, 'কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি'।
আজ আমরা রাজধানীর শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে দেখি, হাজারো তরুণ কণ্ঠ চিৎকার করে ঘোষণা করছে, একাত্তরের ঘৃণ্য ঘাতকদের ফাঁসি চাই। ভাষা আন্দোলনের সময়ে মাহবুব আলম নিজেই তরুণ ছিলেন। আজ প্রজন্ম চত্বরে তার উত্তরসূরী তরুণ-তরুণীদের কণ্ঠে একই স্লোগান ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। দুয়ের মধ্যে নিশ্চয়ই গভীর এক যোগসূত্র আছে। আজকের লেখায় এই যোগসূত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব।
আমার সামনে এখন ধরা আছে নোবল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বহুল আলোচিত একটি বই আইডেনটিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স: ইলিউসন অব ডেসটিনি-এর বাংলা অনুবাদ পরিচিতি ও হিংসা। অনুবাদের কাজটি করেছেন ভাস্বতী চক্রবর্তী। ২০০৫ সালে প্রকাশিত বইটির ভূমিকায় অমর্ত্য সেন লিখেছেন, 'মানুষের শ্রেণী, লিঙ্গ, বৃত্তি, ভাষা, বিজ্ঞান, নীতিবোধ ও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট যেসব অন্যান্য পরিচয় অনুষঙ্গ থাকে এবং যে গুলোকে তারা গুরুত্ব দেয়, সে সমস্ত অনুষঙ্গ উপেক্ষা করে পৃথিবীকে প্রায়ই কিছু ধর্মের (বা 'সভ্যতার' বা 'সংস্কৃতির' সমষ্টি বলে ধরে নেওয়া হয়। বাস্লবে আমরা বিশ্ব জোড়া নানাবিধ শ্রেণীকরণের জগতে বাস করি) অদ্বিতীয় একটি ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করার প্রবণতা তার চাইতে অনেক বেশি বিরোধপরায়ন।'
অমর্ত্য সেনের এই উদ্ধৃতি মূল ইংরেজিতে রয়েছে। মূল পাঠে হয়ত এর মর্ম আরও গভীরভাবে অনুভব করা যায়। তিনি বলতে চেয়েছেন, প্রত্যেক মানুষেরই একাধিক পরিচয় থাকতে পারে। এসব পরিচয়ের মধ্যে টানাপোড়েনও থাকতে পারে। টানোপাড়েন এমন পর্যায়ে যেতে পারে যখন ব্যক্তিটির পরিচয় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যেতে পারে। একেক ঐতিহাসিক মুহূর্তে একেকটি পরিচয় সামনে উঠে আসে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এই পরিচয়টি সারা জীবন তার কাছে অগ্রাধিকার পাবে। ১৯৪৭ সালের আগে পূর্ব পাকিস্তানের একজন কৃষক কিংবা মধ্যবিত্তকে যদি প্রশ্ন করা হতো, তোমার কোন পরিচয়কে সবচেয়ে বেশি মূল্য দাও। তখন হয়ত নিশ্চিতভাবেই জবাব মিলবে, মুসলমান পরিচয়। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা মুসলিম লীগকে সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছিল। এ থেকে পাকিস্তানের শাসকরা ধারণা করেছিলেন, এ দেশের জনগণ তাদের ভাষা বা জাতীয় সংস্কৃতির পরিচয়টি চিরতরে ভুলে গেছে। এটা ছিল তাদের মারাত্মক ভুল একটি সিদ্ধান্ত। অমর্ত্য সেনের তত্ত্ব অনুযায়ী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ একইসঙ্গে তাদের ভাষাভিত্তিক পরিচয়, অর্থনৈতিক স্বার্থভিত্তিক শ্রেণী পরিচয় এবং ধর্মভিত্তিক মুসলিম পরিচয়– এই তিনের যুগপৎ উপলব্ধিকে স্বীকার করে নিয়েই সবসময়- অতীতে, বর্তমানে-ভবিষ্যতে জীবনযাপন করবেন। যদিও একেক সময় একেকটি পরিচয় সাময়িকভাবে অধিক গুরুত্ব লাভ করতে পারে।
কিন্তু তার অর্থ এ নয় যে সেটাই হবে এক, অদ্বিতীয় বা একাধিপত্যবিস্তারকারী পরিচয়। মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক বা জীবিকার স্বার্থে তার অস্তিত্বের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই কৃষক এবং মধ্যবিত্ত মুসলমানরা ১৯৪৭ সালে মুসলিম পরিচয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন ইসলাম ধর্মের প্রতি গভীর অনুরাগ বা ইসলাম বিষয়ক গভীর জ্ঞানের থেকে নয়, বরং অর্থনৈতিক স্বার্থের বাহক বা প্রতীক হিসাবে ঐ পরিচয়ের ঐতিহাসিক উপযোগিতাই ছিল তার ভিত্তি। তখন এই পরিচয় অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছিল। সে জন্যই বলা হয় জিন্নাহ নিজে ইসলাম ভক্ত না হয়েও ইসলামকে ব্যবহার করেছিলেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কাজে! কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাঙালিরা যখন বুঝতে পারলেন যে তাদের সংগে প্রতারণা করা হয়েছে তখন বঞ্চিত বাঙালি মুসলমানরা স্বাভাবিকভাবেই বাঙালি পরিচয় নিয়ে পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন পাঞ্জাবী ও বাঙালিদের মধ্যে ধর্মীয় মিলের দিকটা গুরুত্ব হারালো এবং অমিল বা অসমতাকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য বেছে নেয়া হোল ভাষাভিত্তিক জাতীয় স্বাতন্ত্র্যকে। এর অর্থ এই নয় যে বাঙালিরা ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে হিন্দু বাঙালি হয়ে গিয়েছিলেন। আসলে হিন্দুরাও মুসলমান হয় নি, মুসলমানরাও হিন্দু হয়নি। যেটা হয়েছে তা হোল আর্থ-সামাজিক কারনেই এবার ধর্মীয় পরিচয়কে ছাপিয়ে ভাষাভিত্তিক জাতীয় পরিচয় প্রধান্যে চলে এসেছে।
পরিচয়ের একটি রাজনীতি আছে। পরিচয়কে যখন আমরা পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী সূত্রবদ্ধ করে ফেলি এবং অন্যদেরকে এই পরিচয়ের বিপরীতে স্থাপন করে শত্রু হিসেবে পরিগণিত করি তখন এই দুই পরিচয়ের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় সেটাই হচ্ছে পরিচয়ের রাজনীতি। এই রাজনীতি মহৎ হয়, যখন শোষিত সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিচয়ে শোষক সংখ্যালঘিষ্ট পরিচয়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করে। তবে অমর্ত্য সেনের এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিচয়ের দ্বদ্বকে স্বীকার করার পরও পরিচয়ের বহুত্ববাদকে রক্ষা করা এবং বহু পরিচয়কে ধারণ করার মত উদার একটি পরিচয় নির্মাণ করা। পশ্চিমা উদারনীতিকদের এই সাধনার সর্বশেষ ফলাফল হচ্ছে মানবতাবাদ অর্থাৎ মানুষের মনুষ্য পরিচয়। পশ্চিমে জন্ম নেওয়া আরেকটি চিন্তাধারা তথা মার্কসবাদীরা এই মানবতাবাদের মধ্যে শোষক মানুষ ও শোষিত মানুষের দ্বন্দ্বকে বৈরীতামূলক দ্বন্দ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে বিপ্লবী মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। আদিতে পৃথিবীতে যে ধর্মগুলো বিশ্বধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, প্রত্যেকটি ধর্মে মানুষের যে সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণিত আছে তাতে মানবজাতিকে ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে এবং মানবজাতির সকল সদস্যকে ভ্রাতৃতুল্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ধর্মীয় পরিচয়ের একমাত্রিক মৌলবাদিতা থেকে পৃথিবীতে বহু রক্তপাত এবং ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা হয়েছে, আর কোনো পরিচয় থেকে অত রক্তপাত হয়েছে কিনা সন্দেহ।
।পাকিস্তানে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে বাঙালির জাতীয় পরিচয়কে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তাতে বিভ্রান্ত হয়ে বাঙালিদের মধ্যেই গড়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী একটি দালাল শক্তি। এই বিভ্রান্তি এত উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় যে তারা ইসলামের কথা বলে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে এমনকি নিজের সম্মানিত শিক্ষকের বুকে ছুরি মারতেও দ্বিধাবোধ করেনি। তাতে কী বাকি বাঙালিদের কাছে ইসলাম ধর্মটাই পরিত্যাজ্য হয়ে যাবে? তা নিশ্চয়ই নয়। যে হত্যা করে সে মুমসলমান, নাকি বৌদ্ধ কিংবা খ্রিস্টান– সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে খুনী, সে মানবতাবিরোধী অপরাধী। আমরা ধর্মভিত্তিক কৃত্রিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ভেঙে ভাষাভিত্তিক জাতীয় রাষ্ট্র বাংলাদেশ কায়েম করেছি। পশ্চিম বাংলার বাংলা ভাষাভাষীরা আবার ভারতীয় রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে থাকার জন্য আগ্রহী। তাই তারা ভারতীয় বাঙালি পরিচয়ে পরিচিত। একই জাতির যেমন পৃথক দুই রাষ্ট্র সম্ভব, তেমনি একই রাষ্ট্রের মধ্যে বহু জাতির অস্তিত্ব সম্ভব। একের মধ্যে বহু এবং বহুর মধ্যে এক নিয়েই পৃথিবী গঠিত। পরিচয়ের রাজনীতি নিয়ে কারবার করার সময় একথা প্রগতিশীলদের সবসময় মনে রাখতে হবে।
আমরা যে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ কায়েম করলাম, সেখানে পরিচয়ের সঙ্কট কি দূর হয়ে গেছে? নিশ্চয়ই হয়নি। এখনো কেউ কেউ আমাদের মধ্যে ভাবেন, চাকমারা কেন বাঙালি হলেন না? অথবা বাংলাদেশের বাঙালিরা কেন ভারতীয় বাঙালিদের বিরোধী সত্ত্বা হিসেবে গড়ে উঠছে না? এটা সত্য যে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে, কিন্তু তাই বলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলাম নিয়ে তাদের বিতর্ক থাকবে না, এটাও আমাদের মানতে হবে। অনেক পন্ডিত এই সহজ সত্য অনুধাবন করেন না। আমরা আশা করবো নতুন প্রজন্ম এসব ছদ্মবেশী পন্ডিতদের দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না।
শাহবাগে আজ বাংলাদেশের যে নতুন প্রজন্ম আন্দোলন করছে তারা ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। ধর্মের আদি সুর যে মানবতাবাদ, সেটা প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য। যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, তাদের ধর্মীয় মুখোশ খুলে দিতে হবে। স্পেডকে স্পেড বলতে হবে। খুনিকে খুনি বলতে হবে। নানা বয়স, নানা মত, নানা রাজনৈতিক পথের পথিক, নানা রংয়ের মানুষ এখন নতুন প্রজন্মের ডাকে সাড়া দিয়েছে। তাদের সবার কণ্ঠে একটি মহাসঙ্গীত ধ্বনিত হচ্ছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের ফাঁসি চাই। কেউ বলতে পারে, যে আসামীর ফাঁসি চাইছে শাহবাগ সে কি মানুষ নয়? আমি বলব, শারীরিকভাবে সে মানুষ ঠিকই। কিন্তু মানসিকভাবে যদি মানুষ হতো তাহলে বহু আগে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতো, ক্ষমা চাইত এবং যথাযোগ্য শাস্তি মাথা পেতে নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করত। তাই বিপ্লবী মানবতাবাদীর দৃষ্টিতে তারা নরঘাতক পশু।
জিন্নাহ সাহেব ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় নো নো ধ্বনি শুনেছিলেন। সেই সংকেতের মর্ম বুঝে পাকিস্তানের প্রায়শ্চিত্ত করতে সময় লেগেছিল ২৪ বছর। আজ জামায়াতে ইসলামীকে শাহবাগের সংকেত বুঝে প্রায়শ্চিত্ত করতে অত সময় কি লাগবে? আমার মনে হয় তা লাগবে না। শাহবাগের তরুনদের অংগীকারের উপর ভবসা রেখেই একথা বলছি।
ড. এম এম আকাশ : অধ্যাপক অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।