আদিবাসীদের ভাষার অধিকার : আইন আছে, প্রয়োগ নেই

আমিনুল ইসলাম সুজন
Published : 20 Feb 2013, 04:23 PM
Updated : 20 Feb 2013, 04:23 PM


মাতৃভাষা বাংলা জাতীয় ও দাপ্তরিক ভাষা। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে বাংলাকে মর্যাদাকার আসনে বসিয়েছে তাই অন্য ভাষার প্রতিও মর্যাদাবান হওয়া বাংলা ভাষাভাষীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অর্থাৎ পূর্ব প্রজন্ম মাতৃভাষা রক্ষায় প্রাণ দিয়েছে, তাই ভাষা আন্দোলনের সারথীদের পরবর্তী প্রজন্ম সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সেসব ভাষা রক্ষায় সক্রিয় হবে-এটা স্বাভাবিক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর গত ৪১ বছরে আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। বরং আমরা বাংলা ভাষা আদিবাসীদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছি, যা ভাষা আন্দোলনের মহত্বকে গৌণ করে তুলছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি), কক্সবাজার, বরগুনা, নওগাঁ, সিলেট, ময়মনসিংহ, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বসবাস করছে তাদের মাতৃভাষা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মুমূর্ষপ্রায়! শান্তি চুক্তির আগে পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে বেশ কয়েকটি যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবিতে যে সংগ্রাম চলমান ছিল, মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার সুযোগের দাবিও এতে যুক্ত ছিল। শান্তিচুক্তি হবার পর সে দাবিগুলোর কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে; সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুরা যেন তাদের ভাষায় লেখাপড়া করার সুযোগ পায় কিংবা পাঠ্যপুস্তক হিসাবে আদিবাসীদের মাতৃভাষা ও ধর্ম যেন স্বতন্ত্র বিষয় হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয় সে দাবিতো অযৌক্তিক নয়। তারা যেন তাদের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দুটি ভাষায় বর্ণমালা থাকলেও তাদের চর্চার সুযোগ নাই।

নিজস্ব ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ না থাকায় ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠী তথা আদিবাসী শিশুরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে। বাংলা তাদের দ্বিতীয় ভাষা। যারা নিতান্ত বাধ্য হয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখাপড়ার চেষ্টা করছে, তারা ক্রমশ নিজ মাতৃভাষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ইউএনডিপি'র সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে নিজস্ব ভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেখার সুযোগ তৈরি হলেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এটা বরং সরকারের উদ্যোগে আইন করেই আদিবাসীদের প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া নিজস্ব ভাষায় করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেখানে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা থাকতে পারে–এতে কোন মতবিরোধ নাই। পাশাপাশি মাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চতর সব পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের ভাষা যেন বিষয় হিসেবে অন্তর্ভূক্ত থাকে আইনের মাধ্যমে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলা ভাষাভাষীরা গর্ব করে বলি, বাংলা এখন আন্তর্জাতিক ভাষা। বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে যে আন্দোলন হয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, সে দিনটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই দেশের প্রত্যেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষা রক্ষায় আমাদের দায়িত্বই বেশি। পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি সম্মান এবং সংখ্যালঘু ও দুর্বল সম্প্রদায়ের ভাষা রক্ষায় সব দেশের সরকারদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সক্রিয় করতে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা রক্ষার দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে। এখন দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা চর্চা ও বিকাশ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই দেশের সব জাতির মাতৃভাষার প্রতি আমাদের সম্মান নিশ্চিত করা সম্ভবপর হবে।

২.
ইউনেস্কোর হিসাব মতে, গড়ে প্রতি ৩ মাসে একটি ভাষা হিসাবে ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৪০টি ভাষা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত কিংবা বিলুপ্তির পথে। তাই ভাষা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে ইউনেস্কো। বিশেষ করে, ব্রাজিল, চিলি ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা রক্ষায় কাজ করছে ইউনেস্কো।

ভাষা হচ্ছে জাতিগত পরিচয়, যোগাযোগ, সামাজিক সম্পর্ক, শিক্ষা ও মানব সমাজের উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম। ভাষা হচ্ছে অতীত ও ভবিষ্যতের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যম। প্রায় ৭ হাজার ভাষার মধ্যে ৯৬টি ভাষা ব্যবহার করে মাত্র ৪ ভাগ জনগোষ্ঠী। প্রায় ৪০০০ ভাষা বিভিন্ন আদিবাসীরা ব্যবহার করেন। এর মধ্যে পর্যাপ্ত চর্চা ও বিকাশের সুযোগ না থাকলে মোট ভাষার ৫০ভাগ আগামী কয়েক প্রজন্ম সময়ের মধ্যে বিলুপ্তি হয়ে যাবে বলে ভাষাবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৪৫ রকম ক্ষুদ্র জাতি বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রায় ৩৮টি আলাদা ভাষা রয়েছে। তবে মাত্র দুটি ভাষার পূর্ণাঙ্গ এবং কয়েকটি ভাষার আংশিক বর্ণমালা বিদ্যমান থাকলেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও চর্চার সুযোগ না থাকায় এসব ভাষার বিকাশ বাধাগ্রস্ত।

সাওতাল, চাকমা, মারমা, মান্ডি, ত্রিপুরা, মুরং, খাসিয়া, গারোসহ বাংলাদেশে যেসব আদিবাসী বা ক্ষুদ্র সম্প্রদায় রয়েছে, তাদের ভাষা রক্ষায় সরকারের উদ্যোগী হ্ওয়া উচিৎ। বিশেষ করে, আদিবাসীদের মধ্যে যাদের বর্ণমালা রয়েছে প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষায় সে ভাষা যুক্ত করা এবং আদিবাসীদের ভাষার বিকাশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হ্ওয়া জরুরী।

দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, বাংলাদেশে ভাষা নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন বাংলা একাডেমি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্কক বোর্ড বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষার বিকাশে কোন অবদান রেখেছে বলে মনে হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, বেসরকারি পর্যায়ে এশিয়াটিক সোসাইটি, ভাষাবিষয়ক পেশাজীবীদের বিলুপ্তপ্রায় সংগঠন বাংলাদেশ ভাষা সমিতিও কোন উদ্যোগ নেয়নি। বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য বাংলা একাডেমি যেমন গড়ে উঠেছে তেমনি ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠীর ভাষার বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য এরকম একটি একাডেমি গঠন আবশ্যক বলে মনে করি।


আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা বিদ্যমান। যেমন; বর্তমান সরকার প্রণীত "জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০" অন্যতম। শুধু জাতীয় শিক্ষানীতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করলেও আদিবাসীদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষায় এক যুগান্তকারী ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।

শিক্ষানীতির অন্যতম (৭ নং) উদ্দেশ্য হচ্ছে: 'জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে আর্থসামাজিক শ্রেণী-বৈষম্য ও নারীপুরুষ বৈষম্য দূর করা,অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।' পাঠক লক্ষ্য করবেন, এতে বলা হয়েছে জাতি-ধর্ম-গোত্র নির্বিশেষে, অর্থাৎ ক্ষুদ্র জাতি বা আদিবাসী এর বাইরে নয়।

এতে আরেকটি (১৬ নং) উদ্দেশ্য হিসাবে বলা হয়েছে, 'প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা।' কিন্তু এখন পর্যন্ত আদিবাসী শিশুদের নিজস্ব ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার সুযোগ বিদ্যালয়ে চালু হয়নি।

একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য (২৩ নং) সরাসরি আদিবাসীদের জন্য রচিত। এতে বলা হয়েছে, 'দেশের আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্রজাতিসত্তার সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো।' যার প্রতিফলন এখনও দেখা যায়নি।

অন্যদিকে একই শিক্ষানীতির দ্বিতীয় অধ্যায়ের (প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা) 'আদিবাসী শিশু' শিরোনামের ১৮ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'আদিবাসী শিশুরা যাতে নিজেদের ভাষা শিখতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য আদিবাসী শিক্ষক ও পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা করা হবে। এই কাজে, বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে, আদিবাসী সমাজকে সম্পৃক্ত করা হবে।' তিনটি আদিবাসী ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের কাজ স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছে। কিন্তু এর ব্যাপ্তি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলেই আদিবাসীদের ভাষার চর্চা ও রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

১৯নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে; 'আদিবাসী প্রান্তিক শিশুদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।' এবং ২০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে; ' আদিবাসী অধ্যুষিত (পাহাড় কিংবা সমতল) যেসকল এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেসকল
এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। যেহেতু কোনো কোনো এলাকায় আদিবাসীদের বসতি হালকা তাই একটি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আবাসিক ব্যবস্থার প্রয়োজন হলে সেদিকেও নজর দেওয়া হবে।'

জাতীয় শিক্ষানীতির তৃতীয় অধ্যায়ের (মাধ্যমিক শিক্ষা) অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে; ' বিভিন্ন রকমের মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক, নৃতাত্ত্বিক ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানো। পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর জন্যও যতদিন প্রয়োজন বিশেষ পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষার অগ্রগতি সমর্থন করা।' এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন; সমগ্র দেশেই আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আদিবাসীরা বিশেষভাবে পিছিয়ে রয়েছে। সুতরাং, পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ এবং ঐসব অঞ্চলে বিশেষ পদক্ষেপের মাধ্যমে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টির বিকল্প নাই।

জাতীয় শিক্ষানীতির সপ্তম অধ্যায়ের (ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) 'কৌশল'-এ "অন্যান্য ধর্ম শিক্ষা" প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 'আদিবাসীসহ অন্যান্য সম্প্রদায় যারা দেশে প্রচলিত মূল চারটি ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী তাঁদের জন্য নিজেদের ধর্মসহ নৈতিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।' বাস্তবে এখন পর্যন্ত এর প্রতিফলন অনুল্লেখযোগ্য।

শিক্ষানীতির অষ্টম অধ্যায়ের (উচ্চ শিক্ষা) 'কৌশল' ২নং-এ বলা হয়েছে; 'মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং আদিবাসীসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা, বিভিন্ন কারণে অনগ্রসর এবং অন্যান্য গোষ্ঠির সন্তানদেরকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবাসিক সুবিধাসৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ ও বৃত্তি প্রদানসহ বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে।'

শিক্ষানীতির ১৭তম অধ্যায়ের (কারুকলা ও সুকুমার বৃত্তি শিক্ষা) 'কৌশল'২-এ বলা হয়েছে, ' সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসহ পিছিয়েপড়া গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদেরকে বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে।'

শিক্ষানীতির ২৮তম অধ্যায়ের (শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে বিশেষ কয়েকটি পদক্ষেপ) এর ১৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ' বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা ও তৎসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ব্যবস্থা করার জন্য স্থাপিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে কার্যকর ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'

শিক্ষানীতিতে ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের সব অঞ্চলের শিশুদের বিকাশের কথা বলা হলেও আদিবাসী শিশুদের ক্রীড়া চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা এখনও লক্ষনীয় নয়। এরকম আরও কয়েকটি ধারা আদিবাসীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়, জাতীয় শিক্ষানীতি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর আংশিক বাস্তবায়নই দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

আদিবাসীদের ভাষা রক্ষায় বর্তমান সরকার অতীতের যে কোন সরকারের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আইনও করেছে। 'ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক আইন ২০১০' প্রণয়ন করে সরকার আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক বিকাশের পথ মসৃন করেছে। একথা অনুল্লেখযোগ্য যে, সংস্কৃতির প্রধান হাতিয়ার কিংবা সাংস্কৃতিক চর্চা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের প্রধান মাধ্যম ভাষা। এ আইন আদিবাসীদের ভাষা রক্ষার গুরুত্বও স্বীকার করে নিয়েছে।

এছাড়া 'বান্দরবান-রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮' এর ৩৬ (ঠ) ধারায় 'মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা'কে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর আগে প্রণীত এ আইনও বর্তমান সরকারের পূর্ববর্তী মেয়াদে হয়েছে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর এ আইনেরও যথাযথ বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায়নি। অন্যদিকে বর্তমান সরকারও মেয়াদের ৪ বছর শেষ করলেও এ আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে করেনি বলে প্রতীয়মান।

সব ভাষাভাষীর মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট হবার মাধ্যমে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং প্রণীত আইন ও নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদিবাসীদের ভাষা রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্টরা মনোযোগী হবেন বলে আশা করি।

আমিনুল ইসলাম সুজন: পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয় সদস্য।