শাহবাগকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

Published : 19 Feb 2013, 03:20 PM
Updated : 19 Feb 2013, 03:20 PM

শাহবাগ বাংলাদেশের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে। এ এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত। রাজনৈতিক নেতৃত্বহীন হাজার হাজার তরুণ বন্ধুরা এক দিন নয়, দু'দিন, দীর্ঘ দিন দীর্ঘ রাত ক্লান্তিহীন জোয়ারে জাগিয়ে তুলেছে দেশকে, দেশের মানুষকে। অচেনা পাখির ডাকও একসময় থেমে যায়। ব্যস্ত শহর ঘুমিয়ে পড়ে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর জেগে থাকে ঘুমহীন। তীব্র দ্রোহের ও প্রতিবাদের এমন উদাহরণ খুব কম। শাহবাগের বন্ধুদের প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই, দল নেই, নেতাকর্মী নেই, অস্ত্র নেই, কিচ্ছু নেই। তাঁদের আছে শুধু তারুণ্য, চেতনা, সাহস আর স্বপ্ন। এই শক্তি দিয়েই তারা মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে জেগে আছে রাজপথে। তাঁদের অদৃশ্য মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে ছুটে আসছে সবাই!

১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৯০-এর পর আবার অন্যভাবে বাংলেদেশ ঘুরে দাঁড়ালো। দেশের নোংরা রাজনীতিতে দেশবাসী যখন হতাশায় নিমজ্জিত, তখনই জেগে উঠলো শাহবাগ। তিন মিনিটের জন্য দাঁড় করিয়ে দিলো বাঙালিকে। এক সাথে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলো। এখন আকাশে উত্তোলন করা হবে শান্তি আর সৌহার্দের বেলুন। তার আগে লক্ষকোটি মোমের আলোয় আলোকিত হলো বাংলাদেশ। সেই আগুনের পরশ মনি ছড়িয়ে পড়লো রাজধানী থেকে তেতুলিয়া-টেকনাফ, ছড়িয়ে পড়লো সারাদেশে এবং বিদেশে। যেখানে বাঙালি, সেখানেই সৃষ্টি হচ্ছে মিনি শাহবাগ। আমার প্রিয় শাহবাগ ছড়িয়ে পড়েছে টরন্টো, টোকিও, লন্ডন, নিউইয়র্ক রোমে, স্টকহোম, সিডনি, ব্রাসেলস, সারা বিশ্বে। প্রচন্ড তুষার ঝড়, মাইনাস কুড়ি তীব্র শীতের তাপমাত্রা উপেক্ষা করে শাহবাগের সমর্থনে নেমে এসেছে রাস্তায়।

শাব্বাস শাহবাগ। অভিবাদন শাহবাগ। শাহবাগ আমার অহঙ্কার। আজ তেরো হাজার মাইল দূরে বসে আমি আমার শাহবাগকে উপলব্ধি করি। মনে প্রাণে প্রতি মুহূর্তে মিশে আছি শাহবাগের সাথে, শাহবাগের তরুণ্যের সাথে।

শাহবাগের গণজাগরণ আজ আর শুধু মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর সাথে যুক্ত হয়েছে অনেক চিন্তা, অনেক চেতনা। ব্লগ ও ফেইসবুকের তরুণ বন্ধুরা বাংলাদেশের ইতিহাসে খুলে দিয়েছে নতুন দিগন্ত। আজ শাহবাগের আন্দোলন থেকে আমাদের তথাকথিত রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নিতে হবে। অজস্র নিত্য নতুন স্লোগান, পোষ্টার, কার্টুন, কবিতা, ছড়া, গানের পাশাপাশি প্রজন্ম মঞ্চে বেজে উঠছে- 'বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা'। এই বিশাল সমাবেশে কোলের শিশু থেকে আবালবৃদ্ধবনিতা, আমাদের বীরঙ্গণা বোন, বীর পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা এমন কি রাজাকারের মেয়েও যিনি এসেছেন- জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বাবার বিচারের দাবিতে।

কিভাবে এই শাহবাগকে তুলে ধরবো কোন ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না। আমি নিজে সার্বক্ষণিক বিভিন্ন চ্যানেলে শাহবাগকে দেখছি, আমার হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা আর আবেগ দিয়ে অনুভব করছি এই শাহাবাগকে। সেই সাথে ফেইস বুকের মাধ্যমে আমিও সারাক্ষণ জেগে আছি শাহবাগে। পাশাপাশি দেখতে পাচ্ছি শাহবাগ নিয়ে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র আর অপপ্রচারও । সেই সব মিথ্যাচার ও অপপ্রচার ভেসে গেছে জনতার জোয়ারে।

প্রতি মুহূর্তে পাচ্ছি অনেক অজানা তথ্য। যেমন- কাদের মোল্লা তার জবানবন্দিতে বলেছে, তিনি সদরপুরে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন (!), ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনীর উপর পাকিদের নির্যাতনের কথা, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভাষণ, কবীর সুমনের গান, বোন লাকীর জ্বালাময়ী কণ্ঠ।

আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই আজ সংসদে আইন সংশোধন হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সমগ্র জাতি, জাতীয় প্রেসক্লাব বাতিল করেছে যুদ্ধাপরাধীদের সদস্যপদ। এভাবেই আমাদের শাহবাগের আন্দোলন দেশ ও জাতির কলঙ্ক মোচন করে অর্জন করবে ভিন্ন বাংলাদেশ, পূরণ করবে বাঙালির স্বপ্ন।

শাহবাগকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল: কবি ও প্রাবন্ধিক। বর্তমানে কানাডা-প্রবাসী।