লড়াই টেনে বিদেশে নিলেন খালেদা

সৈয়দ বশির
Published : 1 Feb 2013, 02:34 PM
Updated : 1 Feb 2013, 02:34 PM

দেশে বা বিদেশে কোথাও কলাম লেখক হিসাবে পরিচিত নন খালেদা জিয়া। কিন্তু সেই তিনিই ওয়াশিংটন টাইমসে একটি নিবন্ধ ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোকে বাংলাদেশে 'গণতন্ত্র বাঁচাতে' এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

ওই নিবন্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি খালেদার আক্রমণ অত্যন্ত তীব্র; পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপে তার সন্তুষ্টি যথেষ্টই দৃশ্যমান।

শেখ হাসিনা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন- নিবন্ধে খালেদার এমন বক্তব্যে শ্লেষও ঝরেছে।
খালেদার বক্তব্যে মনে হয়, তিনি নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে একজন মিত্র হিসাবে পেতে চাইছেন, যে ইউনূস বিভিন্ন কারণে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সমালোচক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। ঠিক এ কারণেই খালেদা জিয়া তার নিবন্ধে ইউনূসের পক্ষ নিয়ে শেখ হাসিনাকে আক্রমণ করেছেন এবং এই নোবেলজয়ীর পক্ষে দাঁড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতাদের স্বাগত জানিয়েছেন।

এর মধ্যেও ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত ওই নিবন্ধের মূল আলোচ্য বিষয়টি স্পষ্ট।
বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিকে সামনে আনা হয়েছে এই নিবন্ধে, যাতে এ বছরের শেষে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন 'নিরপেক্ষ ব্যবস্থায়' হতে পারে।

খালেদা জিয়া এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে এক ধরনের বীমা হিসাবে তুলে ধরেছেন, যা কি না নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের নিশ্চয়তা দেবে।

হাসিনা সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়ার পর খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ফেরানোর জন্য কতোটা মরিয়া হয়ে উঠেছেন- যারা বাংলাদেশ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন তারা সবাই তা মোটামুটি জানেন।

খালেদা ও তার দলের সেই যুক্তিগুলোই আবারও তুলে ধরা হয়েছে ওয়াশিংটন টাইমসের নিবন্ধে।
তবে এ নিবন্ধের আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন।

রাজপথে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে যেহেতু আওয়ামী লীগকে টলানো যাচ্ছে না, এবং সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বিএনপির আনা প্রস্তাব যেহেতু ধোপে টিকবে না, সেহেতু এই নিবন্ধের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া আসলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর জন্য পশ্চিমা হস্তক্ষেপকে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্র্রতিক্রিয়া দেখতে চাইলেন।

বিএনপি এতোদিন দাবি করে আসছিল, সংসদে তত্ত্বাবধায়ক ফেরানোর বিল তুলতে হবে এবং ওই বিল যাতে পাস হয়- সে নিশ্চয়তাও সরকারকে দিতে হবে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দাবি মানায় অনাগ্রহী হওয়ার কারণেই খালেদা এবার বিদেশমুখী হলেন। তিনি আসলে দেখতে চান, বাংলাদেশের 'গণতন্ত্র বাঁচানোর' জন্য তার এই আবেদনে পশ্চিম কীভাবে সাড়া দেয়।

আর এই চেষ্টায় গণতন্ত্রের জন্য ভারত সরকারেরও প্রশংসা করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, মিয়ানমার যখন সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের পথে আসছে তখন যদি বাংলাদেশে একদলীয় বা পরিবারতান্ত্রিক শাসন কায়েম হয়, তবে তা হবে একটি ট্র্যাজেডি।

অবশ্য ৬০ বছরের পুরনো গণতন্ত্রের দেশ ভারত বা সদ্য গণতন্ত্রের অঙ্কুর জাগা মিয়ানমার- কোথাও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য 'তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা'র মতো কিছু নেই। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা কোনো পশ্চিমা গণতন্ত্রের সংবিধানেও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার কোনো বিধান নেই। ভারতে নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন করছে। কিন্তু খালেদার বিশ্বাস, বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকলে নির্বাচনে কারচুপি হবেই।

তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে সরকার ও বিরোধী দলকে সমঝোতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা যে মধ্যস্ততা করছেন, সম্প্রতি ওয়াশিংটনও তা স্বীকার করেছে।

তবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়ে খালেদা জিয়ার এ নিবন্ধের বিষয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ কী প্রতিক্রিয়া দেখায়- সেটাই এখন প্রশ্ন।

সৈয়দ বশির: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কলাম লেখক।