এ রায় আমাদের আন্দোলনের বিজয়ের প্রথম পদক্ষেপ

শাহরিয়ার কবিরশাহরিয়ার কবির
Published : 21 Jan 2013, 07:03 PM
Updated : 21 Jan 2013, 07:03 PM

বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য, আমাদের জাতির জন্য কালকের দিনটি একটি অনেক বড় অর্জনের দিন। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হওয়ার মাধ্যমে জাতির চাওয়া প্রতিফলিত হয়েছে। পাশাপাশি আমি মনে করি, এটি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের বিজয়ের প্রথম পদক্ষেপ।

এ প্রসঙ্গে একটু পেছনে ফিরে যাব। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর, জামায়াতে ইসলামী গোলাম আযমকে দলের আমীর হিসেবে ঘোষণা করে। এর ফলে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। নানাভাবে এর প্রতিবাদ জানানো শুরু হয়। এ প্রতিবাদের জন্য একটি সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির চিন্তা থেকেই, শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আজ থেকে ঠিক একুশ বছর আগে আমরা একটি আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম। সেটি ছিল একাত্তরে সংঘটিত পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার দাবি।

এ লক্ষ্যে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ জন নাগরিক একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করে 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি' গঠন করেন। ঘোষণায় একাত্তরে সংগঠিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিবরণ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতে ইসলামীসহ সব ধর্মব্যবসায়ী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণের দাবি জানানো হয়েছিল। শুরুর দিকে এগুলো নির্মূল কমিটির একার দাবি হলেও, খুব শিগগির দেশের অনেকগুলো রাজনৈতিক দল, অসংখ্য ব্যক্তি এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন এ দাবিতে সমর্থন দিয়ে এক জোরালো করে তুলেন। ধীরে ধীরে এ দাবিতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠি।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার একুশতম বার্ষিকীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচারের জন্য গণআদালতের আয়োজন করা হয়েছিল। সেদিন ওই আদালতে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন তরুণ প্রজন্ম। স্বত;স্ফুর্তভাবে সবাই এ প্রতীকী বিচারের আয়োজন প্রত্যক্ষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি জোরালো করেছিলেন।

এভাবেই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি একটি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। একাত্তরে যে ত্রিশ লাখ শহীদ প্রাণ দিয়েছিলেন, দুই লাখ নারী ধর্ষিত হয়েছিলেন, আরও লাখ লাখ মানুষ বাস্তুহারা, নিপীড়িত হয়েছিলেন- তাদের সবার স্বজনরা এবং নির্যাতিতদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তারা সবাই একচল্লিশ বছর ধরে এ বিচারের জন্য প্রতীক্ষা করছিলেন। তাই জাতির আজকের এ অর্জন অসাধারণ মহিমান্বিত।

আমি সবসময়ই বলে এসেছি, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পেরেছি যে, একটি দেশ বা এর জনগণ বা এর সরকার চাইলে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের বিচার দেশীয় আদালতে, দেশীয় বিচার ব্যবস্থার অধীনে ও দেশীয় বিচারকদের দিয়েও সম্পন্ন করতে পারে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইতিহাসে বাংলাদেশ এ দিক থেকে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

তবু বলব, শুধু এ রায় প্রদানই যথেষ্ট নয়, আগামীদিনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আজ যে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় হল তিনি এখনও পলাতক। তাই এ রায় তার জন্য শাপে বর হতে পারে। এটি দেখিয়ে তিনি ইউরোপে বা কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে পারবেন। তাই আমাদের উচিত হবে অন্যান্য দেশকে সঙ্গে নিয়ে একটি জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো যাতে কোনো দেশ যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় না দেয়। এভাবে কোনো দেশ যুদ্ধাপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠলে বিশ্ব থেকে যুদ্ধাপরাধ নির্মূল করা যাবে না, দেশে দেশে মানবতাবিরাধী অপরাধ সংঘটনে অনেক রাষ্ট্র বা নেতৃত্ব উৎসাহী হয়ে উঠবে।

বিশ্ববাসীকে আমাদের বলতে হবে যে, এ বিশ্বকে সব মানুষের জন্য বাসযোগ্য করতে চাইলে, নিরাপদ-নির্বিঘ্ন করতে হলে, সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও শাস্তিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশের আইনে নৃশংসতম অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। আমরা সেটার প্রয়োগ করব। আগামীতে এসব চ্যালেঞ্জ আমাদের নিতে হবে।

বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায়ের মাধ্যমে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, তার মতো যুদ্ধাপরাধীরা একাত্তরে জাতির ওপর যেসব বর্বরতা চালিয়েছে, তার কোনোটিই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করেনি- অনেককে তারা ব্যক্তিগতভাবে চিনত না বা তাদের সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল না- তবু তারা সে মানুষদের হত্যা করেছে বা তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে। কারণ তারা যেসব দল বা সংগঠনের সদস্য ছিল, যেমন, জামায়াতে ইসলামী বা রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী- সেগুলোই এসব বর্বরতা চালানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দল বা গ্রুপের সিদ্ধান্ত ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধাদের, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক এবং দলের কর্মীদের নিশ্চিহ্ন করে দেবে। আর তাই এ যুদ্ধাপরাধীরা দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেছে। এর মাধ্যমে আমরা একাত্তরের গণহত্যার নৃশংসতার কথা জানতে পারছি। আজকের রায়টির প্রভাব পরবর্তীতে যেসব রায় দেওয়া হবে তার ওপর পড়বে। অন্য রায়গুলোও এর দ্বারা উপকৃত হবে।

দ্বিতীয় যে জরুরি বিষয় রয়েছে তা হল, ব্যক্তি হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করা একটি দিক- তবে বাচ্চু রাজাকারদের মতো অপরাধীদের দলের বিচার করাও জরুরি। এদের বাহিনী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে, এসব বাহিনীর জন্মদাতা জামাযাতে ইসলামীরও বিচার চাইতে হবে। তা না হলে ধর্মর নামে হত্যা, নারীনির্যাতন বন্ধ হবে না।

এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিশ্বের দেশে দেশে গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের কথা স্মরণ করছি। সে ট্রায়ালে কিছু চিহ্নিত নৃশংস যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পাশাপাশি, সাতটি দলের ভূমিকা বিশ্লেষণ করে চারটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে নাৎসী হাই কমান্ড এবং গেস্টাপো বাহিনী। আমাদের সেভাবেই চিন্তা করতে হবে, কাজ করতে হবে।

এখানে আমি আরেকটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, জামায়াতে ইসলামী দলটি কিন্তু আদর্শগতভাবে নাৎসীবাদ ও ফ্যাসিবাদের কাছাকাছি। এর বড় প্রমাণ ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী হিন্দের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর লেখালেখি। দল গঠনের অনেক আগে থেকেই তিনি লেখালেখি করেছেন প্রচুর। তবে ১৯৪২-৪৩ সালের দিকে নাৎসী ও ফ্যাসিস্ট বাহিনীগুলো যখন সারা বিশ্বে হলোকাস্ট চালাচ্ছে- তখন এ মওদুদী সাহেব এসবের প্রশংসা করে আর্টিকেল লিখতেন। আমার লেখা বইযে আমি এসব ডকুমেন্ট তুলে ধরেছি। মওদুদীর লেখা বই শিয়াসী কাশমাকাশ এবং জুমানুল কুরআনেও তার ফ্যাসিস্ট চেতনার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।

মওদুদীর রাজনৈতিক ভূমিকাগুলোও সবসময় এর প্রমাণ দেয়। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তানের লাহোরে আহমদীয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেন। এর ফলে অসংখ্য আহমদীয়া নিহত ও নিপীড়িত হন। পাকিস্তানের তখনকার সরকার মওদুদীর অপরাধের গুরুত্ব বুঝে তাকে ফাঁসির আদেশ দেন। তবে ১৯৫৪ সালেরর দিকে সৌদি সরকারের সুপারিশে তার ফাঁসির আদেশ রহিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে তার দলটি ধর্মের নামেই বাংলাদেশের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বশেষে হত্যা-ধর্ষণ করেছে, লুণ্ঠন চালিয়েছে। আর এর জন্য ওরা মোটেই অনুতপ্ত হয়নি। একবারও নিজেদের ভুল স্বীকার করেনি। মওদুদীবাদের অনুসারী জামায়াতে ইসলামীর এ ফ্যাসিস্ট আচরণ মোটেই অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। তাই বিচার ও শাস্তি তাদের অবশ্যই প্রাপ্য।

আমরা আশা করছি, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল অবশ্যই অন্যান্য শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচারপ্রক্রিয়াতেও জনগণের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটাবে। এদের মধ্যে রয়েছেন গোলাম আযম যিনি একাত্তরে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর। আমরা যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি তুলতে শুরু করেছিলাম তখন গোলাম আযমের অপরাধের বিষয়টি সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেছি। এর কারণ হিসেবে এখানে আমি 'সুপ্রিম রেসপনসিবিলিটি' বা 'কমান্ড রেসপনসিবিলিটি'র কথা বলব। বাংলায় একে আমি বলছি 'অধিনায়কের দায়বদ্ধতা।' একটি দল বা সংগঠন বা বাহিনী যদি মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য সব অপরাধ করে তবে এর দায় অধিনায়ককে নিতে হবে। বরং অপরাধ সংঘটনকারীর চেয়েও তার দায় অনেক বেশি হবে।

আন্তর্জাতিক আইনেও এটাই বলা হযেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফিলিপাইনের ম্যানিলায় বর্বরতা চালানোর জন্য জাপানের জেনারেল ইয়ামাশিতার বিচার হয়েছিল। সে ট্রায়ালের রায় তার বিপক্ষে গেলে আপিল চাওয়া হয়েছিল এ দাবিতে যে, ম্যানিলায় গণহত্যা চালানোর সময় তিনি ছিলেন হাজার মাইল দূরে, সরাসরি তিনি কোনো কমান্ড দিয়েছিলেন এ ধরনের লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি- তাহলে কেন তিনি অভিযুক্ত হবেন? কিন্তু এ দাবি ধোপে টেকেনি। কারণ হিসেবে বলা হযেছিল, তার বাহিনীর চালানো বর্বরতার দায় তাকেই নিতে হবে, কারণ তিনি তো এজন্য নিজের বাহিনীকে অভিযুক্ত করেননি বা এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি- তাহলে তিনি কীভাবে দায়মুক্ত হবেন? আমাদের দেশে একাত্তরে চালানো গণহত্যা ও জনগণের ওপর পরিচালিত অন্যান্য নিপীড়নের দায়ও সেভাবে গোলাম আযমকে নিতে হবে।

আজ যদি আমরা এ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে একাত্তরের পাকবাহিনী্র এদেশীয় দোসরদের বিচার করতে পারি, তবে ধাপে ধাপে পাকবাহিনীর মধ্যে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও করতে পারব। আজকের রায়ে খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটি কথাও বলা হয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনীর ১৯৫ জন জেনারেল এখানে বন্দী ছিলেন। ১৯৭৪ সালের এক চুক্তিবলে তখনকার বাংলাদেশ সরকার তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। ট্রাইব্যুনাল বলছে, এটা ছিল একটি প্রশাসনিক নির্দেশ, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তাই বলে ওই পাকি যুদ্ধাপরাধীদের আমরা বিচার করতে পারব না তা নয়।

প্রথমত, আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে যে, ভিনদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি হলে সংসদ যদি তা অনুমোদন না করে তাহলে এর কোনো আইনগত বৈধতা নেই। দ্বিতীয়ত, ভিয়েনা কনভেনশনে বলা হয়েছে যে, জুস কজেস (ল্যাটিন শব্দ, যার বাংলা অর্থ আমি করেছি 'সর্বমান্য অপরাধ')-এর জন্য অভিযুক্তরা কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে রেহাই পেতে পারে না। এ ধরনের জুস কজেস রয়েছে দশটি যার মধ্যে গণহত্যা, দাসবৃত্তিতে নিয়োগ ইত্যাদি অন্যতম। তাই আমি বলব, আমাদের এ ট্রাইব্যুনাল স্থায়ী হলে দ্বিতীয় ধাপে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব। আর ট্রাইব্যুনালও সে কথাই বলছে।

নানা কারণেই আইনের মাধমে ট্রাইব্যুনালকে স্থায়ী করার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি। বিএনপি বলছে, তারা ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ যা যা করেছে সব বাদ দেবে। এখন যদি ট্রাইব্যুনালও বাতিল করে দেয় তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া থেমে যাবে। তাই আইনের মাধ্যমে একে স্থায়িত্ব দিলে সরকার বদলালেও বিচারকাজ চলতে থাকবে।

আমি বলব, আমাদের বর্তমান দাঁড়িয়ে আছে অতীতের ওপর। আর ভবিষ্যত দাঁড়িয়ে আছে বর্তমানের ওপর। তাই ইতিহাস বাদ দিয়ে আমরা সামনে এগুবো কীভাবে? যে জাতি ইতিহাসের কথা জানে না সে সামনে যেতে পারে না। পাকিস্তানে খুব পরিকল্পিতভাবে তাদের ইতিহাস তরুণদের জানতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই দেশটি এগুতে তো পারেইনি, বরং এ মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

আমরা সে পথে যেতে চাই না। আমরা ইতিহাস জানতে চাই, সবাইকে জানাতে চাই। আমাদের ইতিহাস তো অনেক গৌরবময়। ভাষার দাবিতে আর কোন জাতি এভাবে প্রাণ দিয়েছে? ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে কটি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে? আজ যদি আমরা এক আলোকিত প্রজন্ম তৈরি করতে চাই তবে তাদের পাঠ্যপুস্তকে আমাদের জাতির গৌরব আর অর্জনের কথাগুলো বলতে হবে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত ইতিহাস-পাঠ বাধ্যতামূলক রাখতে হবে।

তাহলেই তরুণরা আমাদের অহংকারের কথা জানতে পারবে। একে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারবে। বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চিন্তা করতে হলে এর বিকল্প নেই।

শাহরিয়ার কবীর : লেখক, সাংবাদিক, চিত্রনির্মাতা ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যকরী সভাপতি।