অর্থনীতির জন্য সুবর্ণসময় ২০১২

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
Published : 31 Dec 2012, 05:36 PM
Updated : 31 Dec 2012, 05:36 PM

বছর শেষ হলেই একটি মূল্যায়নের পালা থাকে। একটি বছরের মূল্যায়ন করতে হলে সে বছরে প্রাপ্ত সাফল্য ও ব্যর্থতার কথা বলতে হয়। আমি বাংলাদেশের অর্থনীতির একজন গভীর পর্যবেক্ষক হিসেবে মনে করি, ২০১২ সাল বাংলাদেশের জন্য সুবর্ণ একটি সময় ছিল। কিছু ব্যর্থতা আছে। সে তুলনায় অর্জন অনেক বেশি। প্রথম অর্জন হচ্ছে, গ্রীষ্ম থেকেই বিদ্যুত সমস্যার সমাধান প্রায় হয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ, এজন্য মূল্য দিতে হয়েছে অনেক, কুইক রেন্টাল করতে হয়েছে। কিন্তু সাময়িকভাবে জরুরি ভিত্তিতে এ সমস্যা সমাধানের জন্য এর কোনো বিকল্প ছিল না।

সরকারের নীতির ধারাবাহিকতায় এবারও কৃষিখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য বীজ-সার ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। বিদ্যুত শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তর করে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য রেকর্ড পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি টন খাদ্যপণ্য উৎপন্ন হয়েছে। তবে গুদামের ক্ষমতা মাত্র ১৫ লাখ টন বলে আরও বেশি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে চালের দাম একটু বাড়বে।

২০১২ সালে আরেকটি বিষয় হয়েছে। শ্রমজীবীদের মজুরির ক্ষেত্রে। হিসেবটা বেশ সহজ। ১৯৭২ সালের ২ কিলো, ১৯৯১ সালের ৩ কিলোর তুলনায় ২০১২ সালে এটা ১০ কিলো হয়েছে। ৩০০ টাকা মজুরি ও চালের কেজি ৩০ টাকা। তাহলে ১০ কিলো চাল ৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তাতে শ্রমজীবীরা যদি অর্ধেক মাস কাজ করে বাকি সময় কাজ না পান, তবু তাদের খাদ্য-সংকট হবে না।

আমি আরও কিছু অর্জনের কথা বলতে পারি যেগুলোর জন্য আমরা বিদেশ থেকে অনেক সাফাই পাচ্ছি। অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষা খাত। শিক্ষার হার বাড়ছে, গুণগতমান ধীরে হলেও বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের ভর্তি হওয়ার অনুপাত ভালো। তবে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার বেশি। সেদিকে নজর দিতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহণের হার ৩০ শতাংশ। বিশ বছর আগে এটা অনেক কম ছিল। এ হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

এবার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট নিয়ে বলব। এর মানে হল জনসংখ্যার কত শতাংশ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর হার ৬৩ শতাংশ। তার মানে, প্রায় নয় কোটি জনসংখ্যা কর্মক্ষম। এদের যদি মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়া যায় তবে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট আহরণ করা যাবে। পৃথিবীতে মাত্র অল্প কিছু দেশে এটা আছে। চীন এত বিপুল জনসংখ্যা নিয়েও পারছে না। কারণ সেখানে দীর্ঘদিন ধরে এক সন্তান নীতি অনুসরণ করেছে বলে নারী-পুরুষের অনুপাত ৮৬:১০০। তাছাড়া শ্রমজীবী মানুষের সংকট আছ বলে ওদের শিল্পগুলো বাইরে স্থানান্তর করতে হচ্ছে।

শিশুমৃত্যুর হার আমাদের দেশে এখন হাজারে ৩৯। দশ বছর আগেও ছিল হাজারে ১০০-এর বেশি। আর চল্লিশ বছর আগে ছিল ২০০-এর বেশি। ফার্টিলিট রেট ২.৩ সেটা উন্নয়নশীল বিশ্বে সবচেয়ে কম। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩ বেশ ইমপ্রেসিভ। এসব কারণে প্রয়াত ড. মাহবুব-উল হক এবং নোবেলজয়ী ড. অমর্ত্য সেন বলেছেন, 'দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও এর সামাজিক রূপান্তর বিস্ময়কর।' অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের সবসময়কার সমালোচনাকারী ইকোনোমিস্ট পত্রিকা পর্যন্ত বলেছে, 'বাংলাদেশ একটি আনসলভড মিষ্ট্রি।' মুডিস বলেছে, 'বাংলাদেশে গত এক দশক ধরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে স্থিতিশীলতা আছে তা দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশে নেই।' মুডিস একটি বিশ্বব্যাপী র‌্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান। কানাডীয় গবেষক কাটলার বলেছেন, 'বালাদেশ ইজ হামিং উইদ অ্যাকটিভিস।'

আইএমএফ বলছে, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৬.১। তবে আমাদের মনে হয় এটা ৬.৬ বা ৬.৭ হবে। চীনে ৫.৯ ও ভারতে ৪.৯। সুতরাং একদিকে আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে বলে মাথাপিছু আয় বড়েছে।

আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তি শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী মানুষ। কীভাবে? ২০১২-১৩ এদেশে রেমিট্যান্স আসবে ১৪০০ কোটি ডলার আগে যা ছিল অকল্পনীয়। গার্মেন্টস চালাচ্ছেন শ্রমজীবী শ্রেণি। পাশাপাশি বলতে হবে, আমাদের খুবই চমৎকার উদ্যমী একটি উদ্যোক্তা শ্রেণি আছেন। মাসখানেক আগে আমাদের রেডিমেড গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার শিল্পের বিশ্ব বায়াররা এদেশে এসেছিলেন। তারা বলে গেছেন, বিশ্ববাজারে চীনের রেডিমেড গার্মেন্টসের মার্কেট শেয়ার ৩৭ শতাংশ আর বাংলাদেশের ৫ শতাংশ হলেও, আমাদের শেয়ারটাই বাড়বে; কারণ চীন শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর অভাবে শ্রমঘন শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারছে না। বাকি বিশ্বে শ্রমের মজুরি বেশি। তাই বাংলাদেশের সামনে অনেক সম্ভাবনা। এক ব্রিটিশ বিশ্লষক বলেছেন, বাংলাদেশে রেডিমেড ও নিটওয়্যার খাতে যত বায়ার একদিনে আসেন, পাকিস্তানে সারা বছরেও তত আসেন না।

এগুলো সবই ভালো দিক। এখন প্রশ্ন হতে পারে আমাদের অর্থনীতিতে সমস্যা কোথায়? কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। যেমন, তাজরীন ফ্যাশনসের দুর্ঘটনার কথা যদি বলি, হয়তো এটা ষড়যন্ত্র হতে পারে কিন্তু আমরা কেন সুযোগ করে দেব এত লাভজনক ও সম্ভাবনাময় একটি শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য? কেন শুধু সরকারকে এ সেক্টরে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে? বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ কেন দায়িত্ব নেবে না? আশা করি, এখন তারা করবে। কারণ বায়াররা বলছে, না করলে আমরা ফিরব না। কিন্তু কেন গত ৮/১০ বছরের গার্মেন্টস শিল্পে এত প্রাণহানি হল? কেন আগুন লাগলে যথাযথ ব্যবস্থা থাকবে না? এ শিল্পকেই সবচেয়ে বেশি স্ট্যান্ডার্ডাইজ করা উচিত।

আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মজুরির দিক থেকে। তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণের দিক থেকে। চতুর্থত, বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করা দরকার। এজন্য আমাদের অবশ্যই মজুদ কয়লা ব্যবহার করতে হবে। এত কয়লা মাটির নিচে ফেলে রেখে লাভ নেই। যে মজুদ আছে তা দিয়ে আমরা আগামী ৫০ বছরে ২০ হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারব। তাই এ ব্যাপারে রাজনৈতিক মতৈক্যের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য 'কোল বাংলা' গঠন করতে হবে যেভাবে বাপেক্স গঠন করে একে শক্তিশালী করে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব দিযেছিলাম আমরা। তবে কোল বাংলাকে শক্তিশালী করতে যে সময় লাগবে ততদিন কিছু বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। আমরা তো বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজমান। এখানে বিচ্ছিন্ন থাকার কোনো সুযোগ নেই। কথা হচ্ছে যে টার্ম দেওয়া হচ্ছে, তা সামঞ্জস্যপূর্ণ আছে কিনা। আমি যদ্দুর জানি, মোট উৎপাদনের ৬ শতাংশ, টার্মে এটাই আছে। এখন এটা আসলে কতটুকু তা সরকারকেই ব্যাখ্যা করতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটি করতে পারে তা হল রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাজনীতিবিদরা যদি মনে করেন যে, সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এটা খুব ভালো তাহলে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর যে সুযোগ আছে আমরা তা হারাব। এজন্য দলগুলোকে বড় বড় জাতীয় ইস্যুতে একমত হয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।

আর এ প্রবৃদ্ধিটা যদি আমরা দশ বছর ধরে রাখতে পারি তাহলে ২০২১ সালের দিকে আমাদের দেশকে 'মধ্যআয়ের দেশ' বলে আখ্যা দেওয়া যাবে। তবে আমরা একটু ভিন্নভাবে বলি- জাতিসংঘের একটি কনসেপ্ট আছে হিউম্যান ডেভলপমেন্ট সূচক নামে- এটিতে আমরা খুব দৃষ্টিনন্দনভাবে অগ্রসর হচ্ছি। প্রতি বছর প্রায় দু' কী আড়াই ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা খুব ভালো একটা বৃদ্ধি। আগে এ সূচকে আমরা ছিলাম নিচের দিকে, এখন মাঝারি আর আর আগামীতে আমরা চলে যাব উপরের দিকে।

আমাদের রেমিট্যান্স ২০১২-১৩ সালের দিকে ১৪ বিলিয়ন ডলার হবে। আর আমাদের রিজার্ভ এখন আছে ১২-১৩ বিলিয়ন ডলার। কিছু কিছু বিষয় নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। আমরা যারা ১৯৯৬-২০০১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারে ছিলাম, তারা খুব স্বল্প রিজার্ভের সাহায্যে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি মূ্ল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, রিজার্ভ অলস পড়ে থাকলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তাই মোটামুটি একটি অংক রিজার্ভ রেখে বাকিটা অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করতে হবে। অবকাঠামো উন্নত হলে ক্যাপিটাল-আউটপুট অনুপাত অনেক কমে যাবে। বিনিয়োগ বেড়ে যাবে।

আমাদের আরেকটি বড় সমস্যা হল পুঁজি-পাচার বা ক্যাপিটাল ফ্লাইট। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনিশিয়েটিভ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছে যে, ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এখন এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এজন্য আমাদের যে ভাইয়েরা পুঁজি পাচার করতে পছন্দ করেন,তাদের একটু বিবেকবান হতে হবে। আর সরকার তথা প্রশাসনকেও কঠোর হাতে এসব দমন করতে হবে।

যেকোনো দেশের উন্নয়নের জন্য নির্মাণ অথবা অটোমোবাইল এ দুটো খাতের একটিকে বিকশিত করতে হয়। আমাদের দেশে তো অটোমোবাইল শিল্প গড়ে ওঠেনি। এখানে নির্মাণ ও টেলিকম খাতের বিকাশ হয়েছে। নির্মাণ খাতে এখন নানা কারণে ভাটা পড়লেও প্রবৃদ্ধি কিন্তু হচ্ছে।

কেউ কেউ বলছেন, ক্যাপিটাল গুডসের আমদানি কমে গেছে। কিন্তু এর প্রেক্ষিত দেখতে হবে। মাস তিনেক আগেও ক্যাপিটাল গুডস, ইন্টারমিডিয়েট গুডস ও কাঁচামাল আমদানি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এসব জিনিসের আমদানি প্রতিদিনই হবে না। আমদানি হচ্ছে, উন্নয়নের সোপান তৈরি হচ্ছে। তাই এ নিয়ে আমি অতটা চিন্তিত নই। এমনিতে আন্তর্জাতিকভাবে পেট্রোল ও জিনিসপত্রের দাম কমেছে এবং আমাদের খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হচ্ছে না।

তিনটি বিষয় আমি সবসময় বলে এসেছি। প্রথমত, রেমিট্যান্স ও রিজার্ভকে ইকুইটিতে রূপান্তর করে অবকাঠামো সৃষ্টি করতে হবে। দ্বিতীয়টি হল, কৃষিকে সমবায় করার কথা ভাবতে হবে। উৎপাদন ও বিপননের পর্যায়ে কৃষিকে সমবায়ের অধীনে নিয়ে আসতে পারলে আমরা দাম আরও ভালো পাব এবং খাদ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা যাবে। তৃতীয়ত, কর্মসংস্থানমূলক উন্নয়ন কৌশল নিতে হবে। কৃষিকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট ও মাঝারি শিল্প গড়ে তুলতে হবে।

আমাদের এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে হবে। এর মধ্যে সৌরশক্তি ও বাযোগ্যাস আমাদের বাস্তবতায় সম্ভব। আরেকটি হচ্ছে উইন্ডমিল বা বাতাসের শক্তি আহরণে করে উৎপাদন খাতে লাগনো। সেটা অনেক ব্যয়বহুল। কারণ সেজন্য বায়ুমণ্ডলের অনেক উপরে যেতে হয়। তাছাড়া আমাদের দেশ ঝড়প্রবণ বেশি। প্রকৃতি যেখানে খুব শান্ত সেখানে এটা সহজে গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা যদি গ্রামাঞ্চলের ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোকে সৌরশক্তি দিয়ে চালু করতে পারি তাহলে বিরাট সুবিধা হবে। সোলার এনার্জি গ্রামাঞ্চলে খুব সহজেই কাজে লাগানো সম্ভব। কারণ সেখানে সূর্যালোক পাওয়া যায়। তাছাড়া সেখানে বাড়িঘরের যে ক্লাস্টারিং তাতে এটা তৈরি করা সম্ভব। গ্রামীণ অর্থনীতির কর্মকাণ্ডের যে চাহিদা তা সৌরশক্তি দিয়েই মেটানো সম্ভব।

সরকারের একটি অবকাঠামো নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ইটকল লক্ষাধিক সোলার প্রোগ্রাম নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিশাল কিছু কাজ করছে। গত বছর সম্ভবত এটি লাখ খানেক কর্মসূচি নিয়েছিল। এবার এটা আড়াই লক্ষাধিক হবে। একে দশ লাখের মতো করা সম্ভব। সারা পৃথিবীতে এটা প্রসার লাভ করছে। ভারতে মোট শক্তির দশ ভাগ আসছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। আমাদের এখানে মাত্র শতকরা জিরো দশমিক তিন শতাংশ। একে আর অবাস্তব বলে উড়িয়ে না দিয়ে বরং এর বিকাশের কথা ভাবতে হবে।

আমাদের অর্থনীতির জন্য আরেকটি ভালো খবর দিয়েছে গার্ডিয়ান। ওরা বলেছে, আগামী পঞ্চাশ বছর পর উন্নত বিশ্ব বলতে সাতটি দেশকেই বোঝানো হবে। এগুলো এখনও উন্নয়নশীল দেশ। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, চীন, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, তুরস্ক এবং অবশ্যই বাংলাদেশ। তখন পৃথিবীর অর্থনীতিকে এ দেশগুলোই নিয়ন্ত্রণ করবে।

বাংলাদেশ আকারে ছোট হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনীয়। আমাদের একটি বড় সুবিধা হল, এখানে পরিবার পরিকল্পনার কাজটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তিনটি কাজ করে গিয়েছিলেন যার সুফল আমরা এখনও পাচ্ছি। অর্থনীতির পুনর্বাসন, কৃষির উন্নয়ন ও জনসংখ্যার পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধি। তবে এক্ষেত্রে আরও কিছু কাজ করতে হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে এ জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তর করা দরকার। আর নারীদের আরও বেশি হারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা জরুরি। তাহলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনেক কমবে। সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার বাড়বে।

আমরাও কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন করতে পারব যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে পুরো দেশ। ২০১৩ সাল সে লক্ষ্যেই চালিত হোক।

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন : অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা।