জামায়াত আমাদের রাজনীতিতে ফ্যাক্টর নয়

কামাল লোহানী
Published : 6 Dec 2012, 04:40 AM
Updated : 6 Dec 2012, 04:40 AM

ক'দিন ধরেই দেশের রাজনীতির অঙ্গন বেশ উত্তপ্ত। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত নানাভাবে দেশে অস্থিরতা তৈরি করছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বের ক'জন একাত্তরের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। তাদের বিচারকাজ শেষের পথে। রায়ে তারা দোষী সাব্যস্ত হলে জামায়াতের রাজনৈতিক পরাজয় ঘটবে। তাই জামায়াত তো বটেই, ওদের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপিও এখন যুদ্ধাপরাধীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছে।

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এদেশের মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক ঐক্য দীর্ঘদিন ধরেই নানা অপচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। তারা চেষ্টা করেছিল মুক্তিযুদ্ধ যাতে না ঘটে, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় না হয়। তাই তারা একাত্তরে পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছে, তাদের হযে জল্লাদের ভূমিকাও পালন করেছে। তারপরও একটা বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট ছিল যে, মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা যারা করেছিল- এই মাটিতে তাদের জায়গা হবে না।

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল- মুক্তিযুদ্ধের পর যে যুদ্ধাপরাধীরা দেশে গোপনে আশ্রিত ছিল তারা পুনর্বাসনের সুযোগ পেল। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন গোলাম আজম। তাকে পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেরার সুযোগ করে দেওয়া হল। ঘটনাটা ঘটল জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপারিবারে হত্যার নারকীয় ঘটনার পর দেশের রাজনীতিতে একটা পটপরিবর্তন হল। আর তারই ফলে এসব ঘটনা ঘটছিল।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ কিন্তু প্রথম শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৩ সালের দালাল আইনের মাধ্যমে। তখন ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার যুদ্ধাপরাধীর বিচারকাজ চলছিল। পরে অবশ্য বঙ্গবন্ধু বিশেষ পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ ছাড়া অন্যান্য অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের বিচারের আওতা থেকে মুক্ত ঘোষণা করেন। আমার মনে হয়েছে, এতে যুদ্ধাপরাধীদের একটা অংশ লাভবান হযেছে। তবে ইতোমধ্যে বেশকিছু যুদ্ধাপরাধীর বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়ে রায় হয়ে গিয়েছিল। একজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ফাঁসির আদেশ হযেছিল অনেকেরই।

জেনারেল জিয়া দৃশ্যপটে এসে পুরো চিত্র পাল্টে দিলেন। তিনি ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ। একাত্তরে তিনি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে খুব একটা অংশ নিয়েছেন এমন প্রমাণ নেই। তবে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করায় সাধারণ মানুষের কাছে তার নামটা পরিচিত ছিল। এর ফায়দা নিয়ে তিনি দল গঠন করলেন। নতুন দল বিএনপি'র পক্ষে জনসমর্থন পাওয়াটা অনেক কঠিন হবে ভেবে তিনি গোলাম আজমকে দেশে ফিরে আসার অনুমতি দিলেন। ওদিকে দালাল আইন বাতিল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজটি বন্ধ করে দিলেন।

১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের রাজনীতি করার সুযোগও ছিল না। গোলাম আজম দেশে না আসা পর্যন্ত এ দলের কার্যক্রমও তেমন ছিল না। এরপর যারা দেশে লুকিয়ে ছিল তারা মাথাচাড়া দিল। খালেদা জিয়া তো পরে গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিযেছিলেন। যাহোক, আটাত্তরে ভীষণভাবে প্রতিবাদ হযেছিল গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে আনায়। মনে আছে বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ পড়তে গেলে সমবেত মুসল্লিরা তার গায়ে জুতো ছুঁড়ে মেরেছিলেন। জামায়াতে ইসলামি ও রাজাকারদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ঘৃণা এতটাই তীব্র ছিল। কারণ এই লোকটি তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের শেষদিকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের যে আন্দোলন চলছিল তার বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন জোরালোভাবে। মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করতে রাজাকার-আলবদর বাহিনী সৃষ্টি করেছেন, অর্থ দিয়ে গোটা দেশে এ বাহিনীগুলোকে সংগঠিত করেছেন, এদেশের প্রগতিশীল মানুষদের বিরুদ্ধে নিরন্তর অপপ্রচার চালিয়েছেন- তিনিই ছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের শিরোমণি।

মতিউর রহমান নিযামী তখন ছিলেন ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রেসিডেন্ট। আজকের যে ছাত্র শিবির, সেটি তখন ছিল ছাত্র সংঘ। নিজেদের কুকীর্তি ঢাকতে নাম পাল্টে ফেলেছে সংগঠনটি। গোলাম আজম ও নিজামীর মতোই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সক্রিয় ও ঘৃণ্য ভূমিকা পালন করেছেন দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী, মুজাহিদী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, আজাহারুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, কাসেম আলী। এরা মুক্তিযুদ্দের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। পাকিস্তানকে সমর্থন দিযেছেন।

জামায়াতে ইসলামীর এমন এক নিবেদিতপ্রাণ কর্মীকে আমার কাছ থেকে দেখার সুযোগ হযেছিল। তিনি চৌধুরী মঈনুদ্দিন। তার সঙ্গে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় কাজ করেছি আমি। মঈনুদ্দিন ছিলেন খুব তীক্ষ মেধাবী এক রিপোর্টার। ইসলামী ছাত্র সংঘ ও পরে আলবদরদের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। পরে শুনেছিলাম ওদের শ্লোগানগুলো তিনিই তৈরি করে দিতেন।

একদিনের ঘটনা এখনো চোখে ভাসে। মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণের সংবাদ শুনছিলাম আকাশবাণীতে। আমরা তখন অফিসে বসে। খবরটা শুনে উপস্থিত সবাই 'জয় বাংলা' বলে চিৎকার করে উঠলেও মঈনুদ্দিন তখন চুপচাপ ছিলেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন তিনি। পরে দেখলাম আ ন ম মোস্তফাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলা হল। অবজারভারের স্পোর্টস এডিটর এসএ মান্নান ভাইকেও ধরে নিয়ে হত্যা করা হযেছিল। কী দোষ ছিল তাঁর? পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। পশ্চিম পাকিস্তানে যখন ফেডারেশনের মিটিং হত, তিনিসহ এবিএম মূসা যেতেন। সেখানে তাঁরা পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে দাবি-দাওয়াগুলো তুলে ধরতেন। এটাই কি ছিল মান্নান ভাইযের অপরাধ? এ জাতীয় অনেক ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের পরামর্শে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রগতিশীল ব্যক্তি ও দেশকে যারা ভালোবেসেছেন তাদের হত্যা করা হয়েছে।

একচল্লিশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজটা শুর করতে পেরেছে। বিচারপ্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। আগামী এক বছর এ সরকার ক্ষমতায আছে। অনেকেরই বিচার কার্যকর হযে যেতে পারে। জামায়াতের সাম্প্রতিক তাণ্ডবের এটাই একটা কারণ। ওরা দেশকে একটা বিপন্নতার মধ্যে, অস্থিরতার দিকে নিযে যেতে চাচ্ছে। উন্মাদ হয়ে গেছে ওরা। নিজেদের প্রভুর গাড়িতে পর্যন্ত হামলা করে বসেছে, আগুন দিতে চেয়েছে। দেশকে বিপন্নতার মধ্যে ঠেলে দিতে পারলে ওরা যেভাবে লাভবান হবে তা হল- নিজেরা ক্ষমতায় যেতে না পারলেও তৃতীয় শক্তি বা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায আসার সুযোগ করে দেওয়া যাবে।

জামায়াত যেমন একদিকে অস্থিরতা তৈরি করছে, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিও সরকারের সঙ্গে জেদাজেদি করছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু না করলে আমরা নির্বাচন করব না ইত্যাদি ইত্যাদি। দুঃখজনক বিষয় হল, বিরোধী দল হিসেবে এরা কতদিন সংসদে এসেছেন? সেখানে গিযে জনগণের পক্ষে ক'টি কথা বলেছেন, দাবি তুলেছেন? জনগণ তো তাদেরও ভোট দিয়েছে। দল হিসেবে নির্বাচনে হেরে গেলেও কিছু আসন তারা পেয়েছেন। সে হিসেবে পার্লামেন্ট তথা সরকারের অংশ তারাও। কিন্তু পার্লামেন্টে গিযে কি জনগণের পক্ষে একটা দাবি তুলেছেন? আজ দেশের মানুষের জন্য এত দরদ দেখাচ্ছেন, ক্ষমতায় গেলে একেবারে দেশটাকে পাল্টে ফেলবেন- কী করেছেন গত চার বছরে? বরং বলতে চাচ্ছেন সরকার যা করেছে সব খারাপ করেছে। 'যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা'- তাই কী? আমার আরো কিছু প্রশ্ন রয়েছে। এখন দেশে হত্যা-গুম বেড়ে গেছে বলছেন। কানসাটে কৃষকদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছিল কারা? ফুলবাড়িতে কারা আন্দোলনরতদের ওপর গুলি চালিয়ে দশ-বারোজনকে হত্যা করেছিল?

আমার স্পষ্ট বক্তব্য হল, রাজনৈতিকভাবে আমরা ব্যর্থ হযেছি বলেই এসব ঘটছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও এর মূল শ্লোগান ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এই তিনটি মূলনীতিকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা ব্যর্থ হযেছি। সমাজতন্ত্রের কথা না-হয় বাদ দিলাম, কোনো জাতীয়তাবাদী শক্তি সমাজতন্ত্র বিষয়টি ঠিক বুঝতে পারে না। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা তো আমাদের ঐতিহ্য। আমি মনে করি, এটাই বাঙালির ঐশ্বর্য। অথচ এর ওপর আক্রমণের চেষ্টা হযেছে বারবার। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ তো রয়েছেই, ২০০১ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আমার পর কী-কী করেছিল আমরা ভুলে যাইনি। কত হিন্দু পুরুষকে গুম-খুন করা হয়েছিল? কত হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল? চারদলীয় জোট সরকারের আমলের এসব ঘটনা তো খুব বেশিদিন আগের নয়। আমাদের ব্যর্থতা হল, মূল জায়গা থেকে আমরা দূরে সরে গেছি। গণতান্ত্রিক চর্চাটা সেভাবে হয়নি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি।

যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিএনপি'র অবস্থান দেখে মনে হয়, আমরা কি এখানে আহাম্মকের ভূমিকা পালন করছি? অতীত থেকে কি কোনো শিক্ষা নিযেছি আমরা? আমার কাছে কখনও-ই মনে হয়নি জামায়াত এদেশের রাজনীতিতে বড় কোনো শক্তি। একাত্তরে এতবড় অপরাধ করেছে ওরা, দেশের মানুষ সেটা ভোলেনি। বিএনপি নিজেদের দুর্বল ভাবে বলে জামায়াতকে সবসময় আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। ক'দিন আগে বিএনপি তাই একটি আলোচনা ছড়িয়ে দিল যে, ওরা আর জামায়াতের সঙ্গে থাকতে পারছে না- কারণ আওযামী লীগই জামায়াতকে কাছে টানতে চাচ্ছে। এসবই ওদের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার রাজনৈতিক কৌশল।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে সারাদেশে জামায়াতের ঘাঁটিগুলোতে জনসমাবেশ করেছি। সেখানে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হযেছে আমাদের। যুদ্ধাপরাধীদের দ্বারা নির্যাতিত মানুষেরা প্রকাশ্যে মঞ্চে দাঁড়িযে গা-ছমছমে বর্ণনা দিযেছেন– কীভাবে তাদের বা স্বজনদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন হয়েছে সেসব কথা বলেছেন। এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যারা বুকে লালন করেন তাদের এভাবেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আমাদের রাজনীতিতে জামায়াত যে এতটুকু জায়গা পায় এর পেছনে বামপন্থীদের দুর্বলতাকে প্রধান কারণ বলে মনে হয় আমার। কারণ একটি দেশে সরকারের নানা দুর্বলতা থাকে। কিন্তু মাঠে-ময়দানে থেকে জনগণের দাবিগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরতে, আদায়ের ব্যবস্থা করতে পারেন বামপন্থীরাই। ক্ষমতার মসনদ দখল করতে না পারলেও জনগণের কাছাকাছি থাকেন তারাই। এই বামপন্থীরারাই এখন বিভক্ত। এ অঞ্চলের বামপন্থীরা সেই ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল জাতীয়করণ ইস্যুতে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছি। পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন সামরিক চুক্তির বিরোধিতা করেছি। পুরো বিশ্ব জেনেছে আমাদের এসব প্রতিবাদের কথা। আর এখন মার্কিন সরকারের রাষ্ট্রদূতরা এদেশে এসে আমাদের ওয়াজ-নসিহত করেন, এসব শুনতে হয় আমাদের। বামপন্থীরা বিভক্ত হযে গেছেন বলে আজ জামাযাতে ইসলামীর মতো শক্তি রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের বড় একটি শক্তি হিসেবে দেখাতে চায়।

প্রসঙ্গক্রমে ২০০৮ এর নির্বাচনের আগের একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের যে তালিকা প্রকাশ করল সেখান থেকে কৌশলে পৌনে দু'কোটি নতুন ভোটারকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আমরা এদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিলাম। এই ভোটাররা যুদ্ধাপরাধের বিচার, দ্রব্যমূল্য কমানো এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। ওরা ন্যায়ের পক্ষে, যুক্তির পাশে থাকতে চেযেছিল। এ প্রজন্মের মধ্যে আগুন রয়েছে। শুধু একটি সঠিক দেশলাইযের কাঠি দিয়ে এ আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অপেক্ষা। দুই দলের কোনোটি থেকে এমন কোনো নেতা তৈরি হচ্ছেন না। কারণ রাজনেতিক স্বার্থের দিক থেকে সবাই সমান।

আমার ব্যক্তিগত মত হল, যেসব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য ন'মাস লড়াই করেছে- যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী- তারও আগে তেইশটি বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকশিত করেছেন- সে শক্তিকে নতুন করে উঠে দাঁড়াতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে এর পেছনের চক্রান্তের কথা। একাত্তরের পরাজিত শক্তির কথা। এ জন্য আমার আহ্বান থাকবে পাড়ায়-মহল্লায় গণপ্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। একাত্তরের মতো ঐক্য গড়তে হবে। একে একটা আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। পাকিস্তানের দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীকে যদি নিরস্ত্র বাঙালি মোকাবেলা করতে পারে তাহলে জামায়াতকে কেন নয়?

পাশাপাশি নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা এবং প্রচার-প্রচারণার ব্যর্থতা দূর করতে উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের। জনগণের কাছে প্রতিশ্রুত যে-কাজগুলো করা হয়নি সেগুলো করতে হবে। মোট কথা, জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমরা নিজেরা দুর্বল হয়ে যাব। তখন জামায়াতকে বড় শক্তি মনে হবে। আর জনগণের কাছে থাকলে কোনো সমস্যা নেই।

কামাল লোহানী: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।