আমাদের সব ধারণাই মেয়াদোত্তীর্ণ

Published : 1 July 2022, 10:53 PM
Updated : 1 July 2022, 10:53 PM

'কোন জলদস্যু ছদ্মবেশ ধরে যদি- চোর সমিতির নির্বাচন করতে চায় জনগণ তাকে স্বাগত জানাবে। কোন ব্যবসায়ী মরা ইঁদুরকে গরুর দুধ বলে বিক্রি করলে রাষ্ট্র প্রতিভার মর্যাদা দেবে, যেহেতু তার থাকবে সেবা দেয়ার মতো এলিট একটি বার্বর সার্ভিস; তারা মানুষকে বিনামূল্যে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। মানুষ ঘুমাবে আর পাখির ডাকে জেগে উঠবে। অনাদর্শ রাষ্ট্রের জাতীয় পাখি হবে পুলিশ।'

– রাষ্ট্র কবিতায় লিখেছেন ইমতিয়াজ মাহমুদ

সব তথ্য সংবাদ নয়, তথ্য দেয়াটাই সাংবাদিকতা নয়!

বাজারে দাম বাড়লে বলবেন, 'কম খেলেই তো পারে!' শিক্ষক লতা সমাদ্দার টিপ পরলে বলবেন, 'বেশরিয়তি! না পরলেই তো পারে!' হৃদয় মণ্ডল ক্লাস নিলে বলবেন, 'অতো বিজ্ঞান আলাপ না করলেই তো পারে!' বাউল রীতা দেওয়ান গান গাইলে বলবেন, 'ধর্ম গেল, না গাইলেই তো পারে!' বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বসানো প্রশ্নে বলবেন, 'এসব হারাম, ঝামেলা না করাই ভালো!' মেয়েরা বাইরে বের হলে বলবেন, 'বেপর্দা, বের না হলেই তো পারে!' তাইতো আপাতত এভাবেই শান্তি কল্যাণ হোক। বেঁচে থাকি, ক্ষমতায় থাকি, বিরাজিত থাকুক কবরের শান্তি। এবং এভাবে একদিন শিক্ষক স্বপন কুমারের গলায় 'জুতার মালা!'

আপনি আর দশটা ঘটনার মতো 'আইন-শৃঙ্খলা' ইস্যু হিসেবে ঘোষণা দিলেন তদন্তের।

অথচ এত ঘটনায় তদন্ত হলো না সমাজের। তদন্তের প্রশ্ন উঠল না শিক্ষা-চিন্তা-সংস্কৃতির। এই তদন্ত এস্টাবলিশমেন্ট করবে না। সেটা তার কাজ নয়। তার কাজ ক্ষমতা জারি রাখা। তদন্ত, যে অর্থে অনুসন্ধান, যে অর্থে জনস্বার্থ প্রশ্ন, তা সাংবাদিকতার কাজ। যদিও সাংবাদিকতাও ক্ষমতা কাঠামোর বাইরের কিছু নয়। তবু সাংবাদিকতার সূত্র 5W1H ব্যক্তি বা ঘটনায় যেমন সে প্রয়োগ করে, তেমনি সমাজকেও তা দিয়ে দেখতে পারে, যে দেখাটা দেখা হয় না, আপনি দেখেন না। কেবল ঘটনাকে তথ্য হিসেবে দেখা হয়, তাও কনটেক্সট বিচ্ছিন্ন। এই কনটেক্সট বিচ্ছিন্ন করে দেখাটা মেয়াদোত্তীর্ণ ধারণা। এই ধারণা নিয়ে সাংবাদিকতা কেবল তথ্য হাজির করে যা 'টিপ অব আইসবার্গ'- এর মতো। যেমন লতা সমাদ্দারের ঘটনাকে কেবল একজন ব্যক্তির টিপ নিয়ে হেনস্তা হিসেবে দেখলেন, দেখলেন না ব্যক্তির ভেতরের সমাজটাকে, যেখানে রয়েছে আইসবার্গ। ব্যক্তিটি সেই আইসবার্গের 'টিপ' মাত্র। তাই টিপ শুধু টিপ নয়, যেমন আরও অনেক কিছু, তেমনই টিপকাণ্ডের সাংবাদিকতা শুধু ব্যক্তি ঘটনার বিষয় নয়। এখানে সমাজটাই চরিত্র। সমাজকে আমরা সাংবাদিকতার বিষয় করিনি! বদলে যাওয়া মেয়াদে বা সময়ে সংবাদ কর্ম হলো 'তথ্য' বা 'টিপ'-কে কনটেক্সটে দেখা। যেমন পরীমনির ঘটনায় আলাপ উঠেছিল এটি জনআগ্রহের বিষয়, তাই টিআরপি বাড়াতে মিডিয়ার বাড়াবাড়ি। আসলেই কি এটি শুধু জনআগ্রহ, নাকি এখানে জনস্বার্থও রয়েছে? পরীমনি কি এখানে সেই 'আপোরিয়া' নয়, অর্থাৎ সেই পাজল বা সূত্র নয়, যা ধরে এগোলে সমাজের মন উন্মোচিত হয়, উন্মোচিত হয় ইন্ডাস্ট্রি, ক্ষমতা কাঠামো? এভাবে দেখলেই কেবল সংবাদকর্ম শুধু টিআরপি থাকে না কিংবা 'টিপ' দেখায় না, বরং নিয়ে যায় সেই গভীরে যেখানে রয়েছে বিপদ, আইসবার্গ।

নানা সময়ে এমন নানা ঘটনা জমতে জমতে সে এখন সমুদ্রের গভীরে ভয়ানক পাহাড়, যেখানে আপনার উন্নয়নের টাইটানিক ধাক্কা খাওয়ার ঝুঁকিতে, আপনি দেখছেন না তা, দেখছেন কেবল অগ্রভাগ অর্থাৎ 'টিপ', যেমন সংবাদকর্মী দেখছে কেবল তথ্য।

অথচ আমরা বস্তুনিষ্ঠতার কথা বলি, কিন্তু বস্তুত নিষ্ঠ নই, নিরপেক্ষতার কথা বলে গোলমাল করি কনটেক্সট।

হাজার তথ্য সোশ্যাল মিডিয়া হাজির করছে, কোনটা নেবো আর কোনটা নেবো না, সে এক তুলকালাম। এ যেন এসটি কলেরিজের সেই নাবিকের মতো আলবাট্রসকে হত্যা করার পর যার দশা 'water water everywhere, nor a drop to drink'। কারণ misinformation, disinformation, malinformation। এ যেন হতে যাচ্ছে গণতন্ত্রের আরেক 'একিলিস হিল!' তার মধ্যে অনেক information বা নতুন তথ্যও আছে বৈকি। তাই বলে সেটা সংবাদ? ইন্ডিভিজুয়াল কনটেন্ট ক্রিয়েটররা দখল করে নিচ্ছে এমন 'তথ্য' সংবাদের প্রথাগত ধারণা। তাই এটি হতে চলেছে মেয়াদোত্তীর্ণ। সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান যা গণমাধ্যম, তার কাজ এখন তাই 'তথ্য'র অধিক।

যেমন রাজনীতি, তেমন সাংবাদিকতা কিংবা যেমন সাংবাদিকতা, তেমন রাজনীতি

একসময় বাঙালি দুঃখে রাজনীতি করত, দুঃখে সাংবাদিকতাও। আর এখন দুঃখ রাজনীতি ভুলে যাওয়ার!

ফলে যেমন আপনার রাজনীতি, তেমন আপনার সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতাও ভুলছেন! এ যেন সেই দশা, মার্কিন মুল্লুকের প্রেস-পলিটিক্স সম্পর্ক নিয়ে যা বলেছিলেন বিল মোয়ার্স। ক্ষমতা সম্পর্ক এমনই। ভুলিয়ে দেয়া তার কাজ, কাজ মুখাপেক্ষী রাখা!

আমরা ভুলে গেছি সাকিব আল হাসান কলকাতায় 'পূজা' উদ্বোধনে গেছেন বলে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এখানেও ক্ষমতা, বাজারের। আমরা ভুলে গেছি পাটগ্রামের সেই শহীদুন নবীকে, যাকে দিনে-দুপুরে রাস্তায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে, এই ২০২১- এ, মসজিদে কোরআন হাত ফসকে পড়ে যাওয়ায়, অবমাননার অভিযোগে। এখানেও ক্ষমতা, ধর্মের অন্ধত্বের! ভুলে গেছি ভোলায় পূজা পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্রকে নিরাপত্তার জন্য কারাগারে রাখা। এখানেও ক্ষমতা, সংখ্যার! ভুলে গেছি সুনামগঞ্জ শাল্লার ঝুমন দাসকে।

ভুলে গেছি কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে হামলা! একজন পুলিশ সদস্যের লাইভ! ভুলে গেছি মুজিব শতবর্ষের বছরেও ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপিত না হওয়া! ভুলে গেছি গোড়ালির উপর প্যান্ট পরার জন্য একজন সচিবের প্রজ্ঞাপন! ভুলে গেছি হেফাজতের দাবিতে পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথ, হুমায়ুন আজাদ, শরৎচন্দ্রসহ কয়েকজনের লেখা বাতিল। ভুলে গেছি শিশু বই, অক্ষর পরিচয় প্রাথমিকে, কিন্ডারগার্টেনে সাম্প্রদায়িক বাক্য গঠন শেখানোর কথা, 'অ-তে অযু, 'ও-তে ওড়না! কিংবা ভুলে গেছি অ-তে অজগর, ভয় শেখানোর কথা। বর্ণ পরিচয়ের মধ্যে কীভাবে আপনার শিশুর মগজে ভয় ঢুকছে, ঢুকছে সাম্প্রদায়িকতা, সেই সাংবাদিকতা কই? বেদখল হওয়া এই মগজ যখন কিশোর হয়ে 'গ্যাং' হবে, নামবে ভয় ব্যবসায়, কিংবা হবে জঙ্গি, নামবে ধর্ম ব্যবসায়, তখন আপনার সাংবাদিকতা কেবলই তথ্য!

যেখানে খেদ আছে, খোঁজ নাই। কারণ শিক্ষা নিয়ে আপনার তদন্ত নাই। শিক্ষাকে আপনি করেননি সাংবাদিকতার বিষয়। অথচ সন্তানরা বড় হচ্ছে টেলিভিশনে, আপনারই উৎপাদিত দৃশ্য গিলে।

নানা তথ্য-ঘটনায় একবার ফেইসবুকে দেখলাম চিররঞ্জন সরকার, একজন উন্নয়নকর্মী লিখেছেন, আমরা ইন্তেকালের দিকে যাচ্ছি। তাহলে এখন আমাদের রাজনীতি কি ইন্তেকালের? জীবন ভুলিয়ে দেয়ার? যে রাজনীতি জীবনকে মেয়াদহীন করছে, সেখানে কি আর সাংবাদিকতা বাঁচে? অথচ সাংবাদিকতার কাজ তো জীবনের কথা বলা, রাজনীতিরও তাই বটে। কিন্তু রাজনীতি যখন ক্ষমতার ঘেরাটোপে, তখন সাংবাদিকতাকে হাজির হতে হয় দ্বন্দ্বের সূত্র হাতে, তথ্য সাংবাদিকতার প্রথাসূত্র পথে নয়। এ দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক আরও জরুরি যখন কোনকিছুই আর থাকছে না আগের মতো। আমরা যতই স্বাধীনতার আলাপ করছি, ততই হয়ে পড়ছি বৃহৎ ডেটার অধীন, ডেটা ওনারের নিয়ন্ত্রণে। মানুষ যেন সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মভাবে এক অথরিটি থেকে আরেক অথরিটির অধীন হয়, মুক্ত হয় না। পৃথিবী চলে যাচ্ছে সার্ভেল্যান্স ক্যাপিটালিজমের অধীন, যেমনটি বলছেন শোশানা যুবোফ। বদলে যাচ্ছে আমাদের ব্যক্তি নিরাপত্তা, গোপনীয়তার ধারণা। হাসপাতালে রোগী এখন রোগ, শিক্ষার্থীরা আর টেলিভিশনে নেই, তারা এখন 'নিউ মিডিয়া ডিভাইস'। একদিকে নজরদারির রাজনীতি, আরেকদিকে ধর্মের। একদিকে উদোম, আরেকদিকে হিজাব। দুটোই বন্দী দশা, একদিকে নজরদারিতে, অন্যদিকে ধর্মে। কিন্তু দুই বন্দী আলাদা। বৈষম্যও বিপুল। সে বৈষম্য টের পাইয়ে দেয় বাজার। কিন্তু বৈষম্যকে আপনি সাংবাদিকতার বিষয় করেননি, করেছেন বাজারকে। আপনি নিজে বাজারবন্দী!

এই বন্দীদশা বিদীর্ণের সাংবাদিকতা কোথায়? এই বাস্তবতায় মূলধারা বা প্রথাগত 'তথ্য' সাংবাদিকতার মেয়াদ আর কতদিন? আদৌ কি আর আছে?

ইতিহাস যখন কেবল শাসনের যন্ত্র

সংস্কৃতিতে ধর্ম টানলে যেমন বিপদ, রাজনীতিতে টানলেও বিপদ। এই দুই বিপদ আমরা পাকিস্তানে দেখেছি। ভাষা প্রশ্নে, গান-সাহিত্য প্রশ্নে, রবীন্দ্রনাথ প্রশ্নে বা রাজনীতি প্রশ্নে। এই বিপদ এখন ৫০ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশেও। প্রতিবেশী ভারতেও। এখানে হেফাজত, ওখানে আরএসএস। তাই লতা মুঙ্গেশকরের শেষকৃত্যে এসে শাহরুখ খানের প্রার্থনার 'ফু' সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়ে যায় 'থুতু'। এখানে যারা ইসলামী রাষ্ট্র চায়, তারাই আবার ভারতকে দেখতে চায় ধর্মনিরপেক্ষ। ওখানে হিজাব পড়ার জন্য সাফাই করতে হয় আর এখানে হিজাবকে চাপিয়ে দেয়াকে ইসলামী কাজ মনে করা হয়। ক্যান্টনমেন্ট থেকে গণতন্ত্রের সবক যেমন আসে, তেমনি ধর্ম থেকে আসে সংস্কৃতির সবক। বিপদ! অথচ, আপনি এই প্রশ্নে উদারনৈতিক! মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রশ্নে নিরপেক্ষ!

উদারনীতিতে নীতি বলে কিছু নেই। উদারনৈতিকরা যেন নীতি প্রশ্নেই উদার। অথচ যে সমাজ-উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে আপনি আছেন, তা সহিংসতা উৎপাদন করছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এখানে কোনো আনঅর্থডক্স কিছু ভাবা যায় না চাইলেই। এ যেন 'আমি যা বলছি, তা চিন্তা করতে, তাই ভাবতে হবে'। টিপকাণ্ডের নাজমুল তারেক এখানে সেই প্রতিনিধি, সেই উৎপাদন। কেউ ধর্ম নিয়ে আসলে, আর আপনিও ধর্ম নিয়ে দাঁড়ালে, ক্রুসেডই হবে। পরে খণ্ড খণ্ড রাষ্ট্র হবে, সম্প্রদায় হবে। ইতিহাস তাই বলে। তা থেকে আপনি শেখেননি, ইতিহাসকে কেবল করেছেন শাসনের যন্ত্র। এই যে রাষ্ট্রের ভাবাদর্শিক উৎপাদন যেটাকে দার্শনিক আলথুসের বলছেন 'ISA' বা 'Ideological State Apparatus' তা 'RSA' অর্থাৎ 'Repressive State Apparatus' থেকে আলাদা হলেও, এই দুইয়ে মিলে যে সহিংস-বিদ্বেষ সংস্কৃতির উৎপাদন করছে, তা নিয়ে আপনার সাংবাদিকতা কই? এই দুইয়ের উৎপাদনে ক্ষমতা।

'ISA' আপনার সাংবাদিকতার বিষয় নয়, আপনার সাংবাদিকতা কেবল আইন-শৃঙ্খলা, শুধু 'RSA'।

ক্ষমতা জ্ঞানকে বৈধতা দান করে। আর বৈধ জ্ঞান ক্ষমতাকে পরিপুষ্ট করে। ফলে আপনার সাংবাদিকতা কোন জ্ঞানকে বৈধতা দিচ্ছে, কাদের ক্ষমতাবান করছে, তা ভাবাটা জরুরি।

সেতু যখন সতর্কীকরণের চিহ্ন!

প্রমত্তা পদ্মায় সেতু একটা আশ্চর্য ঘটনা বটে। পশ্চিমের আধিপত্যে নত না হয়ে স্বমর্যাদায় দাঁড়ানো! কিন্তু পদ্মায় যখন দাঁড়াল সেতু তখন আমরা দেখছি কি, ভেঙ্গে পড়েছে সমাজে সংস্কৃতির সেতু! ঠিক মেলাচ্ছি না, তবু একটু মেটাফোরই করি, যেমন করতেন ওয়াল্ট হুইটম্যান। একাত্তরে প্রশ্ন ছিল আরেক পশ্চিম ধর্মবাদী সশস্ত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নত না হওয়া। আমাদের অগ্রজরা নত হননি। কী ভীষণ সাহসে, চিন্তায় লড়েছে ৬০ বা ৭০-এর দশক। প্রশ্ন করেছে ক্ষমতাকে, জ্ঞানকে। এটাই হলো সাংবাদিকতার কাজ, বুদ্ধিজীবিতার কাজ, রাজনীতির কাজ। ক্রমাগত ন্যায় আর মানবিক মর্যাদার ক্ষেত্র তৈরি করা। আর আজ 'পদ্মা সেতু' ওঠার কালে ভাঙছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। আঘাত এসেছে লালনে, নজরুলে, রোকেয়ায়। চিন্তা বা মানবিক সংস্কতির ওপর এমন আঘাতের কালে ক্ষমতাকে নিয়ে আপনার গভীর প্রশ্ন কোথায়, সমাজকে তদন্তের সাংবাদিকতা কোথায়, কোথায় সেই বুদ্ধিজীবিতা? পদ্মাসেতু যেন সতর্ক করে বলছে, আমাদের টাকায় আমাদের সেতু হলে একাত্তরের দেশে একাত্তরের রাজনীতি হবে না কেন? কোথায় মানবিক মর্যাদা? কোথায় সাংস্কৃতিক জিডিপি? বিত্তে বাড়ছি কিন্তু চিত্ত প্রসারের সাংবাদিকতা, বুদ্ধিজীবিতা কই?

দ্বান্দ্বিকতার সূত্র ছাড়া সাংবাদিকতা দুর্বল। দুর্বল সাংবাদিকতা সবসময় ক্ষমতার মুখাপেক্ষী। এটি আপনি জানার আগে ক্ষমতা জানে।

সাংবাদিকতা যদি 'ইতিহাসের ফার্স্ট ড্রাফট' হয়, তাহলে ভাবু্ন, আপনি কী ড্রাফট করছেন। আর সম্প্রচার সাংবাদিকতা তো একইসাথে ক্রাফট। তাহলে ভাবুন, আপনি কী ক্রাফট করছেন।

সংস্কৃতি আপনার সাংবাদিকতার বিষয় নয়, শিক্ষা আপনার সাংবাদিকতার বিষয় নয়, সমাজ আপনার সাংবাদিকতার বিষয় নয়, মানুষ আপনার সাংবাদিকতার বিষয় নয়। আপনার সাংবাদিকতার বিষয় উপরিতলের রাজনীতি, উপরিতলের অপরাধ। তাও কেবল তথ্য। রাজনীতিবিদের যেমন কেবল তারিখ। আপনি মুখস্থ বলেন, 'if it bleeds, it leads'।

তখনই আপনি প্রথার ফাঁদে, তখনই আপনি মেয়াদোত্তীর্ণ।