শিক্ষক লাঞ্ছিত: লজ্জা পাওয়ার অবকাশও কি নেই?

কামরুল হাসান বাদলকামরুল হাসান বাদল
Published : 24 Feb 2012, 05:20 AM
Updated : 29 June 2022, 04:28 PM

ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে শত শত পুলিশ ও মানুষের মধ্য দিয়ে এক লোক হেঁটে আসছেন তার গলায় জুতার মালা আর হাত দুটি ক্ষমা প্রার্থনার মতো করে উত্তোলিত।

নড়াইলে এক কলেজ অধ্যক্ষকে পুলিশের সামনে গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় সারাদেশের মানুষের মনে যখন ক্ষোভ চলছে, লজ্জায় আর অপমানে যখন প্রতিটি বিবেকমান মানুষ ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল তখনই জানা গেল আরেক শিক্ষককে পিটিয়ে মেরেছে তারই ছাত্র।

দেশে এসব কী ঘটছে? কারা ঘটাচ্ছে? কেন ঘটাচ্ছে? যারা ঘটাচ্ছে তারা এমন দুষ্কর্ম করার সাহস পাচ্ছে কী করে? তারা কি ধরে নিয়েছে এমন অপরাধের জন্য তাদের বিচার হবে না? অর্থাৎ সমাজ বলি রাষ্ট্র বলি, সেখান থেকে এমন বার্তা কি পৌঁছেছে? আসলে বার্তা তো টেলিগ্রাম বা এসএমএস করে দিতে হয় না। বার্তাটি দেওয়া হয় অপরাধীদের যথাযথ বিচার না করে।

২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে এক সংসদ সদস্যের সামনে কান ধরে উঠ-বস করানো হয়। সেই ঘটনায় সংসদ সদস্যের তেমন কোনো বিচার হয়নি। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নওগাঁয় হিজাব বিতর্ক নিয়ে আমোদিনী পালকে নানাভাবে হেনস্থা করা হলো। এভাবে একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে কিন্তু জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, অমুসলিমদের জন্য শিক্ষকতা পেশা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটুকু বলা যথেষ্ট হচ্ছে না, বলতে হয় এদেশে অমুসলিমদের বাস করাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে যেকোনো উসিলায় একজন অমুসলিমের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া, তাকে দোষী সাব্যস্ত করা কোনো কঠিন কাজ নয়। আর বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষয়টি আরও সহজ করে দিয়েছে। ফেইসবুকে ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে দিতে পারলেই হবে, পঙ্গপালের মতো শত শত ধর্মান্ধ উম্মাদ কী লিখেছে, কবে লিখেছে, কে লিখেছে তার খোঁজ না নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। দুর্ভাগ্যজনক হলো এমন 'মব' বা পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়াও সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব তো নয়-ই, অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সম্ভব হয় না।

ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেল পুলিশসহ দু-পাশে শত শত মানুষ, তার মধ্য দিয়ে গলায় জুতার মালা, উত্তোলিত করজোড়ে এক ব্যক্তি ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসছেন। এ দৃশ্য অনেকে দেখেছেন। এ দৃশ্য অমানবিক। এ দৃশ্য অসহ্য। এ দৃশ্য মানুষের জন্য, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য চরম অপমানের। এ দৃশ্য একটি জাতির জন্য চরম গ্লানির।

আমরা ঘটনাটি একটু স্মরণ করি। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া সেদিনের ঘটনার বিবরণ। ভারতে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করে সম্প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে পড়েন বিজেপি নেতা নূপুর শর্মা। চাপের মুখে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি মামলাও হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র গত ১৭ জুন রাতে ফেইসবুকে নূপুরকে প্রশংসা করে একটি পোস্ট দেন। এরপর ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন স্থানীয় মির্জাপুর হাজীবাড়ি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. ওমর ফারুক।

পরদিন বিষয়টি নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের কাছে নালিশ জানায় কয়েকজন ছাত্র। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে জানান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। একপর্যায়ে এলাকায় গুজব রটানো হয় যে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়া ছাত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, "সকালে কিছু ছাত্র আমাকে ঘটনাটি জানালে আমি তিনজন শিক্ষককে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তাদের মধ্যে ছিলেন কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শেখ আকিদুল ইসলাম, পরিচালনা পরিষদের আরেক সদস্য ও কৃষি শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক কাজী তাজমুল ইসলাম। বাকি আরেকজন হলেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু।"

স্বপন কুমার আরও বলেন, "কলেজের যেকোনো অঘটন ঘটলে আমি সব থেকে আগে এই তিন শিক্ষককে জানাই। প্রতিবারের মতো সেদিনও একইভাবে তাদের জানালাম। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়ার বিষয় নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে আলোচনা করলাম। তবে তারা নীরব ছিলেন। কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এরই মধ্যে কলেজে গুজব ছড়িয়ে পড়ে আমি ওই ছাত্রকে সাপোর্ট করছি। তখন কিছু ছাত্র কলেজে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।"

স্বপন কুমার বলেন, "একপর্যায়ে কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন ও পাশের একটি মাদ্রাসার ছাত্ররা এসে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে। তখন আমি কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অনেককে ফোন করে কলেজে ডেকেছি। তবে কেউ সময়মতো আসেননি।"

এই ঘটনার পর জড়ো হওয়া লোকজনের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সে সময় শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এরপরের ঘটনার দায় কেউ তো নিচ্ছেনই না এমনকি জুতার মালা কেউ দেখেছেন বলেও স্বীকার করছেন না।

কলেজ অধ্যক্ষকে আটক করা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ কোনো ধর্ম অবমাননা করেননি। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথাও ঠিক নয়। সেদিন তাকে নিরাপদে বের করা হয়েছিল। যেহেতু তিনি অপরাধ করেননি, তার বিরুদ্ধে মামলা করারও বিষয় নেই। পুলিশের সামনে জুতার মালা পরানোর ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বলেন, জুতার মালা পরানোর কোনো ঘটনা আমি দেখিনি। সেরকম কিছু আমার জানা নেই।

এই ঘটনার পর থেকে ওই অধ্যক্ষ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। জানা গেছে, ওই শিক্ষক আতঙ্কে বাড়িতে থাকছেন না। "৩০ বছর ধরে আমি এই কলেজে শিক্ষকতা করি। ছাত্ররা আমার প্রাণ, স্থানীয়রাও আমাকে ভালোবাসত। তবু আমার সঙ্গে যা ঘটে গেল, এরপর এই মুখ নিয়ে কী করে আমি কলেজে যাব"– বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে সাংবাদিকদের এই কথা বলছিলেন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।

চূড়ান্ত হেনস্তার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষক স্বপন কুমার বলেন, "পুলিশ আমাকে কলেজ কক্ষ থেকে বের করে আনে। তখন দুই পাশে শত শত পুলিশ ছিল। এর মধ্যেই স্থানীয়রা আমাকে পুলিশের সামনেই জুতার মালা পরিয়ে দিল। আমাকে পুলিশ ভ্যানের কাছে নেয়ার সময় পিছন থেকে অনেকে আঘাত করেন। আমি মাটিতে পড়ে যাওয়ায় পায়ের কিছু জায়গায় কেটে যায়। তখন অনুভব করি পিছন থেকে কেউ আমার মাথায় আঘাত করছে।"

ভুক্তভোগীর বয়ান ও ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখার পর আমরা কি প্রশ্ন তুলতে পারি না পুলিশের সামনে কী করে একজন শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানো হলো? আমরা কি প্রশ্ন তুলতে পারি না শিক্ষকের গলায় জুতা পরানো আর জাতির গলায় জুতা পরানোর মধ্যে তফাৎটা কতটুকু?

শুরুতে বলেছিলাম এ দেশ অমুসলিমদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেসকোড মানতে বলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয় কিংবা কোনো স্বার্থন্বেষী মহলের স্বার্থ উদ্ধারের চক্রে বলি হতে হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমারের বেলায়ও তেমন কিছু ঘটে থাকতে পারে বলে আমার ধারণা জন্মেছে। এর কারণ হলো কিছু সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র। সেখানে বলা হয়েছে, "এরই মধ্যে কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিবর্তনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু। টিংকুর দাবি, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক তাকে দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব করেছেন।"

কয়েকদিন আগে চ্যানেল একাত্তর- এর অনুষ্ঠান উপস্থাপিকা শত চেষ্টা করেও সেদিনের ঘটনার প্রকৃত বর্ণনা তার কাছ থেকে আদায় করতে পারেননি। তিনি বারবার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সন্দেহটি ঘনীভূত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের (মাউশি) বক্তব্যে। শিক্ষক লাঞ্ছিত করার বিষয়ে সরকারি এই সংস্থা বলেছে, "অপদস্ত শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।"

কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতিও বলছেন, "স্বপন কুমার নিজে থেকে না চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে তাকে সরানো হবে না।"

অর্থাৎ স্বপন কুমারকে ভারপ্রাপ্ত (অচিরেই তিনি অধ্যক্ষের পূর্ণ দায়িত্ব নিতেন) অধ্যক্ষের পদ থেকে সরাতে কোনো পক্ষ এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে? ধরে নিলাম এখন এই পদ থেকে তাকে সরানো হচ্ছে না কিন্তু যে অপমানের বোঝা তার জীবনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তার ভার তিনি কী করে বহন করবেন।

এই ঘটনার কি প্রকৃত বিচার হবে? নাকি অতীতের নানা ঘটনার মতো আরেকটি ঘটনা এসে এই ঘটনাকে চাপা দিয়ে যাবে। দুয়েকদিন টিভিতে টক শো হবে, পত্রিকায় কলাম লেখা হবে, দুয়েকটি জায়গায় মানববন্ধন হবে এবং একসময় সবাই ভুলে যাব। অপরাধের যদি বিচার না হয় তাহলে অপরাধীর সংখ্যা তো কমবে না সমাজে। অপরাধী দেখছে এ দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করে সহজে পার পাওয়া যায়। ফলে যেকোনো অজুহাতে, যেকোনো অভিসন্ধি চরিতার্থ করতে সংখ্যালঘুদের 'ভিকটিমাইজ' করা সহজ হয়ে উঠছে।

কেউ ওই কলেজের অধ্যক্ষের পদটি হস্তগত করতে চায়। ওই পদে আসীন যদি মুসলিম হতেন তাহলে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা সহজ হতো না। যেহেতু তিনি হিন্দু সেহেতু পরিস্থিতি ৯৯ শতাংশ তার প্রতিকূলে। যেন একটি বারুদ, সামান্য আগুনের ছোঁয়া পেলেই হলো। তবে যে যেভাবেই খেলুক একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে আগুন নিয়ে খেলা কারো জন্যেই নিরাপদ নয়। সাম্প্রদায়িকতা একটা ভয়ানক আগুন। এ নিয়ে খেলতে নেই। নিজের হাতও পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।

এদিকে ঢাকার সাভারে দশম শ্রেণির এক ছাত্রের বিরুদ্ধে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার দুপুরে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মারধরের শিকার হন শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

উৎপল কুমার সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতিও ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এলংজানি গ্রামে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাড়ি আশুলিয়ায়। সে দশম শ্রেণিতে পড়ত। নিহত শিক্ষকের পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও কলেজে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। শনিবার দুপুরে খেলা চলাকালে দশম শ্রেণির ওই ছাত্র ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত শিক্ষক উৎপল সরকারের ওপর হামলা চালায়। পরে শিক্ষকেরা এগিয়ে গেলে ওই ছাত্র সেখান থেকে সটকে পড়ে।

উৎপল সরকার শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হওয়ায় তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সিলিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেন। কেন ওই ছাত্র এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটি এখনো কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে না পারলেও আমাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না ছেলেটি কী কারণে শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছিল। এখন প্রশ্ন হলো এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা নেমে আসবে। ভয়ে কোনো শিক্ষক বিজ্ঞান নিয়ে বলবেন না। ভয়ে কোনো শিক্ষক সুপরামর্শ দেবেন না। হয়ত এমন দিন আসবে ভয়ে কোনো শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যাবেন না।

হয়ত এমন দিন আসবে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও থাকবে না।