বাংলাদেশে যথেষ্ট রপ্তানিকারক নেই আসলেই কি তাই?

দেশপ্রেমিক
Published : 23 Feb 2012, 05:03 AM
Updated : 23 Feb 2012, 05:03 AM

আজকে প্রথম আলোর অর্থ ও বাণিজ্য শাখাই একটি সংবাদ দেওয়া হয়েছে যা হচ্ছে এইঃ সংবাদটি পড়তে ক্লিক করুন।

ভারত মুখে যতই আন্তরিকতা দেখাক বিভিন্ন নিয়ম শৃঙ্খলার বেড়া জালে বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রপ্তানিতে তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেই। আমরা অতীতে দেখেছি ভারতে জনপ্রিয় হওয়া বাংলাদেশের লুকাস ব্যাটারি এন্টি ডাম্পিং আইন এর মাধ্যমে সে দেশে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা দেখি বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে বাংলাদেশি টি ভি চ্যানেল ভারতে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আর পোশাকের রপ্তানির যে কথা বলা হয়েছে তা সম্ভব না কারণ বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে ভারতের প্রধান প্রতিদন্ধি আর ভারতের টাকার মান আমেরিকা এবং ইউরোপ এর মত না। বাংলাদেশ ভারতে পোশাক রপ্তানি করলে তা খুব একটা লাভ জনক হবে না। ভারতের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের আরব ধনী দেশগুলিতে পোশাক রপ্তানি করতে পারলে বাংলাদেশের জন্য আরও বেশি লাভজনক হবে।

বাংলাদেশে যথেষ্ট রপ্তানিকারক নেই এই কথাটি কতটুকু সত্য? বাংলাদেশের ঔষুধ, সিমেন্ট, সিরামিক, মেলামাইন, ফার্নিচারসহ আরও অনেক পণ্য এখন পৃথিবীর সব উন্নত দেশে রপ্তানি হয় তাহলে শুধু ভারতে রপ্তানিতে এত সমস্যা কেন।

আমাদের দেশের অনেক জনগণ মনে করেন এবং বলেন বাংলাদেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল। ভারত ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারবে না । যারা এটা মনে করেন দয়া করে তারা ভাল করে লেখাটা পড়বেন।

প্রসঙ্গত, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করে ৫১ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য। আর ভারত থেকে আমদানি হয় ৪৫৭ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পণ্য। ফলে বাণিজ্যঘাটতি দাঁড়ায় ৪০৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার। তাহলে ভারত বাংলাদেশ হতে বেশি রপ্তানি আয় করছে ৩৪৫৩০.৪০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশি পর্যটক যারা বিদেশে বেড়াতে যেতে আগ্রহি তাদের প্রধান পছন্দ ভারত এর প্রধান কারণ কম খরচে বিদেশ বেড়ানোর সুযোগ। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বেড়ানোর জন্য যদি ১০ লক্ষ পর্যটক ভারতে যান এবং ২০০ ডলার করে খরচ করেন তাতে ভারতের আয় ১৭০ কোটি টাকা। এবং এই খরচের সঠিক কোন হিসাব নাই। এই খরচের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে কত জন বাংলাদেশ থেকে যান এবং কত টাকা ওখানে খরচ করেন তারও কোন সঠিক হিসাব নাই। একই অবস্থা শিক্ষার ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে ভারতে পড়া লেখা করার জন্য যায় এবং তারা কত টাকা খরচ করে তারও সঠিক কোন হিসাব নাই। খরচের যোগান দেই বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের বাবা মা যে টাকাটা বাংলাদেশ থেকেই আয় হয় কিন্তু খরচ হয় ভারতে।

অবৈধ ভাবে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে কত টাকা পাচার হয় তারও কোন হিসাব নাই।

বৈধ হিসেবে ভারতের টি ভি চ্যানেল বাংলাদেশ দেখানোর জন্য ভারতের আয় হয় বছরে ২০০০ কোটি টাকার বেশি। হুন্ডির মাধ্যমে কত টাকা পাছার হয় আমরা জানি না।

ভারত তার মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৭ ভাগ আয় করে বাংলাদেশ থেকে। তার মানে ভারতের রপ্তানি আয়ের একটা প্রধান উৎস বাংলাদেশ। এরপর পর্যটন, ডিশ, চিকিৎসা, শিক্ষা মাদক, চোরাকারবারির মাধ্যমে কত টাকা আয় করে ভেবে দেখুন।

ভারত বাংলাদেশের নয় বাংলাদেশই ভারতের একটা প্রধান বাজার।

আসলেই কি বাংলাদেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল না ভারত বাংলাদেশের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল একটু ভেবে দেখুন । এরপরও ভারত বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণের সাথে যে আচরণ করে তা কি মেনে নেওয়া যাই?

ভারত একটি অনেক বড় দেশ এবং শক্তিশালী দেশ কোন সন্দেহ নাই। আমাদের তাদের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতেও বাংলাদেশের কারও সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু তারা বাংলাদেশ থেকে অনেক ভাবে সুবিধা পাচ্ছে তার সম্মান টা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণের পাওয়া উচিৎ। আমরা কখনো ভারতের সাথে যুদ্ধে পারব না কিন্তু বাংলাদেশের এই ১৬ কোটি জনসংখ্যা ভারত কেন পৃথিবীর কোন শক্তি কি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে????

আমাদের রাজনীতিবিদরা সারাজীবন আমাদের অন্ধকারে রেখেছে। এখন আমাদের উচিৎ চোখ খোলে দেখার এবং আমাদের অধিকার আধায় করার। যারা বি বি এ, এম বি এ করেছেন তারা জানেন মার্কেটিং ক্রেতা হচ্ছে রাজা। বিক্রেতা সবসময় তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের বেলাই তার উল্টা। ভারত আমাদের সাথে যেরকমই ব্যবহার করুক না কেন আমাদের মেনে নিতে হবে। এর প্রধান কারণ যুগ যুগ দরে আমাদের মেরুদন্ডহীন সরকার এবং বেশ কিছু বাংলাদেশী নামধারী ভারত প্রেমিক। তারা নিজের দেশ বাংলাদেশের চেয়ে ভারতকেই বেশি ভালবাসে।

আমার এই লেখাটি তাদের জন্য যারা মনে করেন বাংলাদেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল দেশ । যদিও কেও কারও উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল নয় তবুও বাংলেদেশের চেয়ে ভারতই বাংলাদেশ থেকে বেশি অর্থনৈতিক ভাবে সুবিধা পাচ্ছে। তাহলে কেন তারা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণকে যথাযোগ্য মূল্যায়ন করবে না ?