মির্জা সাহেবের গোঁফে তেল

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকশামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
Published : 16 May 2022, 11:48 AM
Updated : 16 May 2022, 11:48 AM

গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল বলে একটি প্রবাদ আমাদের দেশে অনাদিকাল থেকে প্রচলিত। এ কথাটি এমন অবিবেচনাপ্রসূত ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয় যার কল্পনা সত্যিকার অর্থে আকাশ কুসুম, কিছুটা 'হ্যালুসিনেশন'-এর মতো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোনও কাঁঠাল গাছের নিকটে গেলে ওই গাছের কাঁঠালগুলোর প্রতি এতই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে যে সে আগেভাগেই গোঁফে তেল দিয়ে নেয়, কাঁঠালগুলো আদৌ পাবে কিনা সেই চিন্তা না করেই। সোজা বাংলায় এ ধরনের ব্যক্তিকে আহম্মকের স্বর্গের বাসিন্দা ভাবা হয়। এই উপমহাদেশে আরেকটি ফারসি ভাষার প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে, যা হলো 'দিল্লি হনুজ দুরাস্ত' যার অর্থ দিল্লি অনেক দূর। কথাটি সম্ভবত মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর বলেছিলেন। আবার বলা হয় এটি মোহাম্মদ বিন তুঘলকের কথা ছিল, কেননা রাজধানী পরিবর্তনের সময় তুঘলকের বহু সৈন্য পথেই প্রাণ হারিয়েছিল, যার জন্য তাকে পাগলা তুঘলকও বলা হয়। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের মনে এমনি একটি আকাশ কুসুম কল্পনা এখন কাজ করছে। তিনি শ্রীলঙ্কার দূরাবস্থা দেখে এই আশায় কাছা বেঁধে আছেন যে, আমাদের দেশে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তারা সহজেই ক্ষমতায় যেতে পারবেন। কিন্তু তার সেই গুড়ে যে বালির পরিমাণ অনেক বেশি, এই কথাটি বোঝার মতো সচেতনতা সম্ভবত তিনি আয়ত্ব করতে পারেননি। এক কথায়, তিনি না পেরেছেন শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির পটভূমি বিশ্লেষণ করতে, না পেরেছেন বাংলাদেশের অবস্থা বিবেচনায় আনতে।

শ্রীলঙ্কার ডুবন্ত পরিস্থিতি গোটা বিশ্বকেই স্বাভাবিক কারণেই ভাবিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশেরও অনেকেই শঙ্কিত, কেননা এক সময় শ্রীলঙ্কাও ছিল উন্নয়নের নজির সৃষ্টিকারি একটি দেশ। কিন্তু যারা যৌক্তিক কারণে শঙ্কিত তাদের চেয়ে বেশি সোচ্চার আর একটি গোষ্ঠী যারা আসলেই শঙ্কিত নয় বরং এই ভেবে আনন্দিত যে, বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা ঘটলে এ দেশের বর্তমান সরকারকে ধাক্কা দিয়ে তারা ক্ষমতা দখল করতে পারবে এবং এই কথা ভেবেই উচ্চস্বরে গলাবাজি করে বলছে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হওয়ার পথে। এই গোষ্ঠী মন থেকে চাইছে, বাংলাদেশ যেন শ্রীলঙ্কা হয়ে যায়, যাতে তারা সহজেই ক্ষমতার মসনদ দখলে নিতে পারে। মির্জা ফখরুল তো বলেই ফেললেন শ্রীলঙ্কার নেতারা ঝাঁপ দিয়েছে নদীতে আর আওয়ামী সরকার ঝাঁপ দেবে বঙ্গোপসাগরে। মির্জা সাহেবের চিন্তা জগতের গুড়ের বস্তাটি যে আসলেই বালির বস্তা, সে কথা তিনি হয়তো বুঝতে অক্ষম অথবা জ্ঞান পাপীর মতো জেনেও না জানার ভান করছেন এবং জনগণকে ধোঁকা দিয়ে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছেন, যে কাজে তার বেশ দক্ষতা রয়েছে। তিনি এবং তার সহকণ্ঠীরা সকলেই ভালো করে জানেন, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা পৃথিবী থেকেই আলাদা।

কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্যের বহুল পঠিত গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত শ্রীলঙ্কার ভরাডুবির ময়না তদন্তমূলক প্রতিবেদনটি সকলের বিবেচনার দাবি রাখে। শ্রীলঙ্কার আজকের এই হাহাকারের জন্য দুটি বিষয় কাজ করেছে। একটি রাজনৈতিক, অন্যটি অর্থনৈতিক। দুটি অবশ্য অসম্পৃক্ত নয়, কেননা রাজনৈতিক বেহাল দশাই অর্থনীতিতে এনেছে বিপর্যয়।

শ্রীলঙ্কায় কয়েক বছর ধরে চলে আসা রাজনৈতিক পরিস্থিতির পটভূমিতে রয়েছে ওই দেশের তামিলদের ব্যর্থ স্বাধীনতার যুদ্ধ। এই যুদ্ধ শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ইতিহাসকে ঘোর নেতিবাচক দিকে প্রবাহিত করে। এটি ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা দেশকে তামিলশূন্য করার যুদ্ধ। তামিল জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান। এই যুদ্ধ শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের গতি যেমন পরিবর্তন করেছে, ঠিক তেমনি সারা বিশ্বের জন্য নতুন ইতিহাস গড়েছিল খ্রিষ্ট্রপূর্ব ২ শতকের কলিঙ্গ যুদ্ধ। তবে পার্থক্য হলো কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতার পরে এক মঙ্গল যাত্রা শুরু হয়েছিল। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় তামিলবিরোধী যুদ্ধ সূচনা করেছিল অমঙ্গলের যাত্রাধ্বনি। কলিঙ্গ যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু দেখে মহারাজা অশোক ভেঙ্গে পড়েছিলেন, গ্রহণ করেছিলেন অহিংসার ভিত্তিতে সৃষ্ট বৌদ্ধ ধর্ম। তার ছেলে এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের পাঠিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে বুদ্ধের বাণী প্রচারের কাজে। আজ পৃথিবীতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের যে বিপুল জনসংখ্যা রয়েছে, যা আজ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ধর্ম, তা কলিঙ্গ যুদ্ধেরই ফসল। ওই যুদ্ধের পরে রাজা অশোকের প্রচেষ্টায় বৌদ্ধ ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল বহু দেশে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার তামিলবিরোধী যুদ্ধে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলিরা ধরেছিল ঠিক উল্টো পথ, নিয়েছিল ধ্বংস আর খুনের দায়িত্ব, যা কিনা বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতির পরিপন্থী। তাদের এই কর্মকাণ্ড দেখলে মহামতি বুদ্ধ হয়তো নিজেই আত্মহত্যা করতেন। তামিলদের ওপর সিংহলিরা মূলত গণহত্যাই চালিয়েছে। আর এই নৃশংসতার নেতৃত্বে ছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবার। যুদ্ধ জয়ের পর সংখ্যাগুরু সিংহলি জনগোষ্ঠীর কাছে তাদের জনপ্রিয়তা পৌঁছে সর্বোচ্চ অবস্থানে, আর তারই সুযোগ নিয়ে এই পরিবার ইচ্ছামতো একাধিকবার সংবিধান পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘস্থায়ী পারিবারিক শাসন। এক ভাই হন প্রধানমন্ত্রী, অন্যজন রাষ্ট্রপতি এবং অন্য দুই ভাই মন্ত্রী। ভাইয়ের ছেলেরাও বিভিন্নভাবে ক্ষমতায়। অনেকটা হবু চন্দ্র রাজা আর গবু চন্দ্র মন্ত্রীর কাহিনীর মতো, সত্যজিত রায়ের 'হিরক রাজার দেশে' গল্পের মতো। পৃথিবীর জানা ইতিহাসে এ ধরনের পরিবারকেন্দ্রিক স্বৈরশাসনের নজির নেই। পরিবারটি এভাবে ক্ষমতা হস্তগত করার পর ডুবে যায় দুর্নীতির অতল সাগরে। ভালো যোদ্ধা হলেও দেশ শাসনে তারা ছিল সম্পূর্ণ নাবালক। একদিকে শাসন কাজ তথা নীতিনির্ধারণের ব্যাপারে তাদের চরম ব্যর্থতা, অন্যদিকে দুর্নীতি– দুইয়ের মিলনে ভেস্তে যায় ওই দেশের শাসন ব্যবস্থা। অতীতে তাদের পিতাও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বটে কিন্তু তিনি তার ছেলেদের মতো দুর্নীতিবাজ বা স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। রাজাপাকসে পরিবার বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতা প্রাপ্তির পর চীন থেকে উঁচু সুদে প্রচুর ঋণ নিয়ে এমন সব প্রকল্প গ্রহণ করে যা শুধু অবিবেচনাপ্রসূতই ছিল না, ছিল ভয়ংকর এবং অনুৎপাদনশীল। তারা এমনও বিশালকায় প্রকল্প গ্রহণ করেছিল, যার সময়কাল ছিল ২৫ বছর। চীনও সুযোগ পেয়ে গেল তার নব্য আবিষ্কৃত 'ঋণের ফাঁদের কূটনীতি' ব্যবহার করে শ্রীলঙ্কার ভূমি দখলের পাঁয়তারায়। চীন শ্রীলঙ্কার জন্য ঋণের ভাণ্ডার খুলে দিলেও, ঋণ শোধের দাবির ব্যাপারে শ্রীলঙ্কাকে কোনও ছাড় দেয়নি। চীন গ্রাম্য মহাজনদের মতো শ্রীলঙ্কার দূরদৃষ্টিহীন নেতাদের ডেকে ডেকে ঋণ দিয়ে ঋণের ফাঁদে এমনভাবে আটকে দিল, যেভাবে মাকড়সাগুলো তাদের জালে আটকে দেয় তাদের আহারসমূহ। চীন তাদের এই নতুন প্রবর্তিত 'ঋণের ফাঁদ কূটনীতি' বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করেছে, তবে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে শ্রীলঙ্কায় কেননা শ্রীলঙ্কার বেকুব শাসক ভ্রাতৃগণ ঋণ নেয়ার সময় এর পরিণতির কথা চিন্তায় আনতে পারেননি, বলতে গেলে এটি বিবেচনা করার মতো মেধা তাদের ছিল না। সে দেশের প্রজ্ঞাসম্পন্ন অর্থনীতিবীদদের কঠোর সতর্কতার পরেও হাম্বানটোটা বন্দরের জন্য বিশাল ঋণ নিয়ে অবশেষে বাধ্য হয় বন্দরটি চীনের হাতে ৯০ বছরের জন্য তুলে দিতে, যা ছিল চীনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো শ্রীলঙ্কা তার দেশের একটি অংশ চীনের হাতে তুলে দিল অথচ দেশের লোক কোনও প্রতিবাদ করেনি, বাংলাদেশে হলে ১৬ কোটি লোকই রাস্তায় নামত, যেমনটি ঘটেছিল চেকস্লোভাকিয়ায়।

আমাদের দেশে কেন, পৃথিবীর কোনও দেশেই শ্রীলঙ্কার মতো ভাই-ভাতিজাদের কুক্ষিগত পারিবারিক শাসন নেই। তাই এ অবস্থার সাথে আমাদের অবস্থার তুলনা হয় না। দ্বিতীয়ত, আমরা যে চীনের ঋণের ফাঁদে পা দেয়নি, সে কথা সম্প্রতি উচ্চারিত পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, চীনের সাথে বহু এমওইউ স্বাক্ষর হলেও আমরা চীনের অনেক ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। কয়েক মাস পূর্বেও জার্মানিতে অনুষ্ঠিত এক বহুজাতিক সম্মেলনে মন্ত্রী মহোদয় বলেছিলেন চীন প্রতিনিয়ত তাদের টাকার বস্তা দেখাচ্ছে। সে লোভেও আমরা চীনের ফাঁদে পা দেইনি। আমরা চীনের ঘুঘু যেমন দেখেছি, ঘুঘুর পেছনে ফাঁদও আমাদের নজর এড়াতে পারেনি। আমাদের ঋণের পরিমাণ সবসময়ই সহনীয় পর্যায়ে রেখেছি বলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আমাদের সঞ্চয় বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছে। আমাদের দেশে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে দেশী এবং বিদেশী স্বনামধন্য অর্থনীতিকরা স্বীকার করেছেন। তদুপরি শেখ হাসিনার সরকার যে এ ব্যাপারে কত সচেতন, তা প্রকাশ পেলো এ মর্মে সরকারি সিদ্ধান্ত থেকে যে, এখন কোনও সরকারি কর্মকর্তা নেহায়েত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বিদেশে যেতে পারবেন না। তাছাড়া গাড়িসহ বিভিন্ন বিলাসদ্রব্যের আমদানির ব্যাপারে প্রয়োগ করা হয়েছে বিধি নিষেধ। বিশ্ব পরিস্থিতির অপ্রতিরোধ্য নিষ্ঠুরতার কারণে আমাদের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ে কিছুটা পতন ঘটলেও, অন্যদিকে রপ্তানি বাণিজ্যে অভাবনীয় সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। কৃষিমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ভোজ্য তেল রপ্তানি কমানোর প্রয়াসে সরিষার উৎপাদন বাড়ানো হবে। এ সব কারণে ভয় পাবার কোনও আশু সম্ভাবনা নেই বলে অনমনীয় অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যসহ অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাসমূহের ভবিষ্যদ্বাণীও একই রকমের। দেবপ্রিয় বাবু অবশ্য তিন বছর পরে বিপদ আসতে পারে এমনটি বললেও তিন বছরে আমাদের রপ্তানি এবং প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। তাই মির্জা সাহেব এবং তার রাজনৈতিক সহচররা নিশ্চয়ই হতাশ হবেন, গাছের কাঁঠাল আর তাদের ভাগ্যে জুটবে না।

একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের বহু গুণের মধ্যে অন্যতমটি হচ্ছে অনাগত, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিপদ প্রতিহত করার চিন্তা মনে ধারণ করা, এক কথায় তাকে হতে হয় প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। এই অনিশ্চিত ভূবনে কখন কোন বিপদ এসে হাজির হবে তা আগে ভাগে আঁচ করা বহু ক্ষেত্রেই অসম্ভব, কেননা এগুলো পূর্ব সতর্কবাণী না দিয়েই চলে আসে। কয়েক বছর আগে জাপানে যে সুনামি হয়েছিল, ৮০-এর দশকে ভূপালে গ্যাস কারখানায় যে বিস্ফোরণ হয়েছিল, কাছাকাছি সময়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিলের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, ইদানিংকালে কোভিড নামক যে রোগ বিশ্বব্যাপী অতিমারির সৃষ্টি করেছে এবং সব শেষে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কোনও আগাম সতর্কতা ছিল না। অথচ এ ঘটনাগুলো বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চিত্রপটকে ওলট-পালট করে দিয়েছে। এর ফলে বহু দেশ আজ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে নামার অবস্থায়। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনির্ধারিত প্রতিকূলতা ঠেকানোর জন্য তৈরি থাকার মতো যোগ্যতা শ্রীলঙ্কার পারিবারিক সরকারের কারোরই ছিল না বলে প্রথমে কোভিড এবং পরে ইউক্রেইন যুদ্ধ যে প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি করেছে তা মারাত্মকভাবে শ্রীলঙ্কাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। দেশটি যদি এ ধরনের অচিন্তনীয় পরিস্থিতির জন্য সদা প্রস্তুত থেকে তার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত তাহলে এই বিপদজনক অবস্থায় তাকে পড়তে হতো না। পাকিস্তানও সে দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে এবং চীনা ঋণের ফাঁদে পা দিয়ে আজ শ্রীলঙ্কার অবস্থার দিকেই এগুচ্ছে। একই কারণে, একই ভাবে নেপালও শ্রীলঙ্কার পথেরই সারথী হতে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আমাদের সৌভাগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যার মতো একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক পেয়েছি, যিনি পিতার মতোই ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এবং সম্ভাব্য বিপদ দুটোই মনে ধারণ করে সব পরিকল্পনা গ্রহণ করার মতো মেধাসম্পন্ন। চীনের টাকার বস্তার দিকে তিনি তাকাননি, ততটাই ঋণ নিয়েছেন যা সহনীয়। আর তাই আজ এমনকি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতো নিন্দুক অর্থনীতিবিদও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে আগামী তিন বছর বাংলাদেশ ঋণের বোঝা সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পড়বে না। শেখ হাসিনার সুচিন্তিত নেতৃত্বে যে সব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, তার প্রায় সব কটিই অচিরেই ফল প্রসবকারী বৃক্ষের মতো অবস্থায় রয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি এখন সমাপ্তির পথে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক চিত্রপট পরিলক্ষিত হবে, মানুষের ভাগ্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে, দেশ চলে যাবে উন্নতির চরম শিখরে– এ কথাগুলো আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদরাই বলে চলেছেন। একদিকে শিল্প প্রসারে প্রাধান্য দিলেও কৃষিকে বাংলাদেশ কখনো অবজ্ঞা করেনি বলে দেশে আজ খাদ্যাভাব নেই, যেটি পৃথিবীর বহু দেশকেই আক্রান্ত করেছে। তিনি হাম্বানটোটার মতো কোনও বাস্তবতা বিবর্জিত অবান্তর এবং অযথা ব্যয়বহুল প্রকল্প হাতে নেননি। শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সফল নেতৃত্ব যতদিন থাকবে ততদিন বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি উদ্ভূত হবে না, আর তাই মির্জা সাহেবের দিবাস্বপ্ন চুরমার হতে বাধ্য। তার স্বপ্নটা গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেলেরই মতো। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হবে বলে মির্জা সাহেব তার চিন্তাশক্তির অসারতাকেই প্রমাণ করেছেন। তাছাড়া তিনি ক্ষমতা দখলের জন্য দেশের অমঙ্গল কামনা করে নিজেকে দেশ শাসনের অযোগ্য বলেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ধরনের ক্ষয়িষ্ণু চিন্তার মানুষদের ক্ষমতায় বসালে দেশের কি অবস্থা হবে, তা বুঝতে কারো বাকি নেই। তাই মির্জা সাহেবের গোঁফের তেল গোঁফেই শুকাবে।