ইসলামী রাষ্ট্র: জরিপ বনাম বর্ষীয়ান আলেমের মন্তব্য   

হাসান মাহমুদহাসান মাহমুদ
Published : 6 March 2022, 12:05 PM
Updated : 6 March 2022, 12:05 PM

ফ্যাক্ট ১: 

বৈশ্বিক কনসোর্টিয়াম 'রিজলভ নেটওয়ার্ক'- এর বাংলাদেশে গবেষণা জরিপে '৮০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা মনে করেন শরিয়াহ আইন থাকলে দেশে দুর্নীতি কমবে…। ২০১১-১২ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপেও একই সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল'। দৈনিক প্রথম আলো ২৬ জানুয়ারি, ২০২২। (শারিয়া আইন এবং ইসলামী রাষ্ট্র সমার্থক – লেখক)।   

ফ্যাক্ট ২: 

'পুরাতন যে সমস্ত গৎবাঁধা ফিকাহের কিতাব আছে সেখানে অনেক ভুল আমি লক্ষ্য করেছি' – গত ১৭ জুন ২০২১ তারিখে কানাডাভিত্তিক টিভি চ্যানেল 'ফেইস দ্য পিপল' আয়োজিত 'ইসলামী শারিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনা' অনুষ্ঠানে আমার সাথে আলোচনায় এ মন্তব্য করেছেন জাতির বর্ষীয়ান আলেম কামালউদ্দীন জাফরী, যিনি বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ইসলামিক বীমার শারিয়া কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের সম্মানিত নেতা। এ অনুষ্ঠানের জন্য 'ফেইস দ্য পিপল'-কে ধন্যবাদ, ইন্টারনেটে প্রায় দশ লাখ মানুষ এটা দেখেছেন।  

অর্থাৎ দেশের ৮০ শতাংশ নাগরিক যে আইনের সমর্থনে বিনিয়োগ করছেন অঢেল সময়, শ্রম, ধর্মীয় আবেগ, অর্থ ও পরিশ্রম, ঠিক সেই আইনেই অনেক 'ভুল' লক্ষ্য করছেন দেশের একজন বর্ষীয়ান আলেম। 

এই মারাত্মক বৈপরিত্য জাতির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বিষয়টা তর্কের নয়, বিষয়টা নির্মোহ গবেষণার। অনুষ্ঠানের শুরুতেই এবং আগাগোড়া আমি অগ্রজবয়সী আলেমকে সম্মান দেখিয়েছি, এতে ইসলামী অনুষ্ঠানে 'মোরগ-লড়াই' দেখতে অভ্যস্থ দর্শকদের মধ্যে একটা শালীন অনুষ্ঠান দেখার মন তৈরি হয়েছেI আমার বিশ্বাস এই বিপুল দর্শকের তরুণ প্রজন্ম এই পর্যবেক্ষণ থেকে কৌতুহলী হবেন এবং খুঁজে দেখবেন শারিয়া আইনকে যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা এবং সেটা কতটা সম্ভব।     

জাতি এতকাল ইসলামী বক্তাদের মুখে শুধু ইসলামী রাষ্ট্রের সমর্থনে কোরান-হাদিসের ব্যাখ্যাই শুনেছেI অথচ অনেক মুসলিম বিশেষজ্ঞ সেই কোরান হাদিস ও ইতিহাসের তথ্যসত্য থেকেই ইসলামী রাষ্ট্রতত্ত্বের বিপক্ষে যে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আর সতর্কবাণী দিয়েছেন, সেটা জাতির কাছে পৌঁছয়নি। তেমনি কিছু সূত্র আলেম-উলামাদের প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর বৃহত্তম ইসলামী সংগঠন নাহদালাতুল উলামা-র প্রকাশিত 'ইসলামী রাষ্ট্রের বিভ্রম' (The illusion of an Islamic state), ড. হাশিম কামালীর 'প্রিন্সিপলস অব ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স', ড. আবদুল্লাহ আন নাঈম- এর 'টুওয়ার্ডস ইসলামিক রিফর্মেশন', ডক্টর বাসাম টিবি-র 'দ্য চ্যালেঞ্জ অব ফান্ডামেন্টালিজম', বিশ্ববিখ্যাত আলেম হামজা ইউসুফের ভিডিও ইত্যাদি। এগুলো শুধু দেখানো পর্যন্তই আমার কাজ, তারপরে জাতি দু'পক্ষকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন কোনটা গ্রহণযোগ্য, কোনটা নয়। কাউকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি শুধু চিন্তা করার জন্য জাতির সামনে কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছি মাত্র। এখন তো ইন্টারনেটে অনেক কেতাবই ফ্রি পাওয়া যায়, তার পরেও আগ্রহীরা চাইলে কেতাবের স্ক্যান পাঠানো যাবে। অনুষ্ঠানে আমি ক্যামেরায় শারিয়া কেতাব দেখিয়ে আইন নম্বর উল্লেখ করে কয়েকটা আইন পড়ে আলেম জাফরীর মন্তব্য চেয়েছি যেমন:  

'খুন-জখম, চুরি-ডাকাতি, মদ্যপান, মানহানী, ব্যাভিচার ও ইসলাম ত্যাগ এগুলো হুদুদ মামলাতে নারীদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় – (হানাফি আইন পৃঃ ৩৫৩; শাফি'ই আইন পৃঃ ৬৩৮ Law #o.24.9, ক্রিমিন্যাল ল'ইন্ ইসলাম অ্যাণ্ড দ্য মুসলিম ওয়ার্লড পৃঃ ২৫১, পেনাল ল-অব্ ইসলাম পৃঃ ৪৪ ও বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন ১ম খণ্ড ধারা ১৩৩ ও ২য় খণ্ড ধারা ৫৭৬ (ইসলামী বিশেষজ্ঞ জনাব শাহ আবদুল হান্নান সহ ৬ জন আলেম দ্বারা প্রধানত: হানাফী আইন থেকে সংকলিত তিন খণ্ডের "বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন", প্রকাশক বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশন)।

এরপরে আমি কেতাব দেখিয়ে এই আইনগুলো পড়ে শুনিয়েছি (সংক্ষেপ করার জন্য সূত্রগুলোর উল্লেখ করছিনা, অনুষ্ঠানের লিংক এখানে):  শারিয়া আইনে ইচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কিন্তু মৃত্যুদণ্ড হবেনা – (১) তওবা করলে গণহত্যাকারী গণধর্ষণকারীদের, (২) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের, এবং (৩) ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনিকে খুন করলে খুনি বাবা-মা, দাদা-দাদি বা নানা-নানির।  

এর ওপর আলেম জাফরী বলেছেন, "পুরাতন যেগুলো গৎবাঁধা যে সমস্ত ফিকাহের কিতাব, যেমন- আমার কাছেও একটা আছে, এর মধ্যে মাঝে মাঝে অনেক ভুল আমি লক্ষ্য করেছি।  এগুলো নতুন করে দেখতে হবে। বর্তমান অবস্থাটা কি তার প্রেক্ষিতে কোনটা আমাদের জন্য প্রযোজ্য। আমরা হুদুদের মধ্যে এদিক সেদিক করতে পারবোনা, বাকিগুলো তো আমাদের এখতিয়ার দেওয়া আছে সুতরাং এই প্রেক্ষিতে ফিকাহকে নতুন করে আমরা সাজাতে পারবো, ইনশাআল্লাহ এর মধ্যে কোন সন্দেহ নাই। "    

অবশ্যই এখতিয়ার দেওয়া আছে, এর নাম ইজতিহাদ আলেমদের প্রতি জাতির সম্মান শর্তহীন নয়, তাদের দায়িত্ব আছে ইসলামের উৎস থেকে ইজতিহাদের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ তুলে আনার। তারা পরস্পরকে গালাগালি না করে সেদিকে দৃষ্টি দিলে জাতির কল্যাণ হবে। এবারে দেখা যাক শারিয়া আইনকে যুগোপযোগী করাটা কতটা জটিল। শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি বইয়ের 'শারিয়া আইনের উদাহরণ' অধ্যায়ের অজস্র উদাহরণের দুটো দেখাচ্ছি।

উদাহরণ ১: বাবা মা, দাদা-দাদি বা নানা-নানি ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনিকে খুন করলে খুনির মৃত্যুদণ্ড হবে না। 

স্পষ্টতই এটা অন্যায় আইন। কিন্তু এ আইনকে সংশোধন করতে গেলেই আলেমদের সামনে এসে দাঁড়াবে সহি তিরমিজি ১৪০৫ ও ১৪০৬ ও সুনান ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড হাদিস ২৬৬২। কথাটা নাকি নবী (সা:) বলেছেন! এর সমর্থনে আছে সহি তিরমিযী হাদিস ১৪০৪ (দিয়াত বা খুনের রক্তমূল্যের প্রেক্ষাপটে)। এখন, আলেমরা কি অন্যান্য খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দেবেন কিন্তু ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনির খুনি বাবা মা দাদা-দাদি নানা-নানির মৃত্যুদণ্ড দেবেন না?

উদাহরণ ২: কোনো অমুসলিমকে খুন করলে মুসলিম খুনির মৃত্যুদণ্ড হবেনা, পেনাল ল অফ ইসলাম পৃ- ১৪৯। 

স্পষ্টত এটাও অন্যায় আইন এবং এর বিরুদ্ধে অনেক হাদিস এবং অনেক আলেমের প্রতিবাদও আছে। কিন্তু হাদিস বা প্রতিবাদ তো আইন নয়। আদালত আইনের জায়গা, সেখানে আইনের কেতাব থেকে আইনই প্রয়োগ হয়, হাদিস বা প্রতিবাদ নয়। কিন্তু এ আইন সংশোধন করতে গেলেই সামনে এসে দাঁড়াবে: 

ক. মদিনা সনদ, – 'দ্য ফার্স্ট রিটন কন্সটিটিউশন ইন্ দ্য ওয়ার্ল্ড' (পৃথিবীর প্রথম লিখিত গঠনতন্ত্র) – ড. মুহম্মদ হামিদুল্লাহ, পৃষ্ঠা ৪৫: – 'কোন অবিশ্বাসীকে খুন করার বদলে কোন মুসলমান অন্য মুসলমানকে খুন করিবে না'- ধারা ১৪। 

খ. সুনান আবু দাউদ হাদিস ২৭৪৫ – 'কোনো অবিশ্বাসীকে খুন করিবার জন্য অবশ্যই কোনো বিশ্বাসীর মৃত্যুদণ্ড হইবেনা',    

গ. শারিয়া আইনের অন্যতম স্তম্ভ ইমাম শাফি-র রিসালা – 'কোনো অমুসলিমকে খুন করার জন্য কোন মুসলিমের মৃত্যুদণ্ড হইবে না'। (al-Shafii's Risala – Treatise on the Foundations of Islamic Jurisprudence- পৃষ্ঠা ১৪২)। 

ঘ. হযরত আলীর (রা) বর্ণনায় সহি বুখারী ৪র্থ খণ্ড হাদিস ২৮৩:  'কাফেরকে হত্যা করার জন্য কোনো মুসলমানকে হত্যা করা উচিত নহে'।

আলেমরা তাহলে কী করবেন? অমন পক্ষপাতদুষ্ট নির্দেশ রহমতুল্লিল আল আমিনের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়, সেটা কেউ বললেই সে হয়ে যাবে 'কাফের' 'মুরতাদ' বা 'নাস্তিক', যদিও ওসব হুমকিকে কেউ আর পাত্তা দেয় না। এরকম প্রশ্নবিদ্ধ শারিয়া আইনগুলো কে, কবে, কেন, কোন প্রেক্ষাপটে এবং কোন অধিকারে শারিয়া কেতাবে লিখলেন সেটা বের করা আলেমদের কাজ, আমাদের নয়I   

অনুষ্ঠানের পরে 'শারিয়া কি বলে আমরা কি করি' বইয়ের লিংকে ক্লিক হয়েছে অজস্র। ইসলামী আন্দোলনের অজস্র তরুণ সূত্রগুলো মিলিয়ে আরও গবেষণা করে মেসেঞ্জারে জানিয়েছেন আলেম জাফরীর কথা সঠিক। ইসলামী রাষ্ট্রপন্থিদের তুলনায় তাদের সংখ্যা কম, কিন্তু 'স্নো-বল এফেক্ট'- এ বাকি অংশের মধ্যে এই উপলব্ধি ছড়িয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। 

যেহেতু অনেক শারিয়া আইন হাদিস-ভিত্তিক তাই হাদিসের কথা আসবেই। হাদিস এক অনন্য ও মৌলিক গ্রন্থ, পৃথিবীর আর কোনো ধর্মবিশ্বাসীদের এমন রত্নভাণ্ডার নেই। এ নিয়ে 'অনলি কোরান' (যারা হাদিসকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন) দলের সাথে আমি বিতর্ক করেছি। কিন্তু সেই সাথে এটাও সত্যি যে অতীত-বর্তমানে অনেক বিশেষজ্ঞ বিশেষ কিছু হাদিসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেনI যেমন:      

ক. বানর অবৈধ যৌনসঙ্গম করিয়াছে (committed Illegal sexual intercourse)" – সহি বুখারী ৫ খন্ড ১৮৮,  

খ. প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ডের আয়াত, এবং এক নারীকে নবীজি (সা:) অনাত্মীয় বয়স্ক পুরুষকে স্তন্যপান করানোর নির্দেশ দিয়েছেন, এই আয়াতগুলো ছাগলে খেয়েছে বলে আমাদের কোরানে নেই – ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড ১৯৪৩, ১৯৪৪ ও সহি মুসলিম ৩৪২৪ থেকে ৩৪২৯, ৬টি হাদিস,

গ. জনাকীর্ণ রাস্তায় হযরত মুসা (আ) নগ্ন হয়ে দৌড়োচ্ছেন (নাউযুবিল্লাহ) – সহি বুখারী ১ম খণ্ড হাদিস ২৭৭, 

ঘ. সাহাবী জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা) বলছেন হযরত মুহম্মদকে (সা:) সেদিনের পর আর কখনো নগ্ন দেখা যায়নি  (নাউযুবিল্লাহ) – সহি বুখারী ১ম খণ্ড হাদিস ৩৬০, 

ইত্যাদি। 

আমরা তো জানি নগ্নতা হলো অশ্লীলতা এবং অশ্লীল আদেশ শয়তান দেয় – বাকারা ১৬৯। 

আগেই বলেছি কাউকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়, তাই অনেকে সহ্য করতে পারবেন না বলে আর উদাহরণ দিলাম না। কিন্তু আমাদের কেতাবের মুখোমুখী আমাদের হতেই হবে এই সত্যটা বুঝেছিলেন আর কেউ নয়, বুঝেছিলেন বিশ্ব-মুসলিমের অনন্য নেতা কোরানে হাফেজ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী তাইয়্যেপ এরদোগান। সেজন্যই হাদিসগুলো বাছাই করে সহি হাদিসের পরিচ্ছন্ন সংকলন করার প্রস্তাব করেছিল তুর্কি সরকার ২০০৪ সালে। অনেক লিংক পাবেন ইন্টারনেটে 'TURKISH HADITH PROJECT' নামে, একটা উদ্ধৃতি:-      

"২০০৪ সালে তৎকালীন তুরস্কের ধর্মমন্ত্রী মেহমেত আয়দিন এই নতুন হাদিস সংকলন তৈরির প্রস্তাব করেন। এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের নেতৃত্বাধীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থন এবং পৃষ্ঠপোষকতা পাইয়াছে।" 

বিভিন্ন কারণে ওটা এখনো হয়নি। কিন্তু আশা করি এই প্রাজ্ঞ নেতার কাজটা একদিন করা হবে, তখন অবধারিতভাবে তার প্রভাব হাদিস-ভিত্তিক শারিয়া আইনেও পড়বে। 

পাদটীকা    

ধর্মবিশ্বাসীরা প্রায়ই ধর্মবিশ্বাসকে নিজের ব্যক্তিসত্তার সাথে গুলিয়ে ফেলে তাদের বিশ্বাসটাকেই 'আমি' করে তোলেন এবং বিশ্বাসের বিন্দুমাত্র পরিবর্তনকে পরাজয় মনে করে প্রাণপনে প্রতিরোধ করেন। অথচ ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো। আমরা জেনে বা না জেনে বহু বিষয়ে আমাদের বিশ্বাসকে ক্রমাগত আপডেইট করে চলেছি, এটাই জীবন। ধর্মের মূল কল্যাণবাণী অক্ষুণ্ণ রেখে ধর্মবিশ্বাসের শুদ্ধতর স্তরে উন্নীত হতে হলে এই আপডেট অপরিহার্য। অনেক ইমামই সেটা করেছেনI ইমাম শা'ফি করেছেন। ( 'al-Shafii's Risala – Treatise on the Foundations of Islamic Jurisprudence' পৃষ্ঠা ৭), ইমাম মালিকও করেছেন, জানতে চার ইমামদের ওপরে অনন্য কেতাব  'দি ফোর ইমামস' – আবু জাহরা, পৃষ্ঠা ৮০ দেখুন।

এক অনুষ্ঠানে আমি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছি কোন দুটি ক্ষেত্রে আলেমরা ইজতিহাদ-কিয়াসের মাধ্যমে সমাজের প্রভূত কল্যাণ করেছেন, যেমন:- (১) 'বেহেশতী জেওর কেতাব' যাতে জঘন্য যৌন অশ্লীল কথাবার্তা আছে তা বাতিল করেছেন, ও (২) তাৎক্ষণিক তালাকের মতো নারী-বিরোধী কুপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার ফলে ওটা এখন প্রায় উচ্ছেদ হয়ে গেছে। 

সেজন্য তাদের ধন্যবাদ, কিন্তু এখনো অনেক কাজ বাকি। আজ অথবা কাল সেগুলো তাদের করতেই হবে, যত দেরি হবে ততই ধর্মীয় অপব্যাখ্যার বীভৎসতার কাছে ধর্মের শান্তিবাণী পরাজিত হবে।   

সেক্ষেত্রে বিবেক-বুদ্ধি বিচার-বিশ্লেষণে 'মানুষ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি' একথা অসার হয়ে যাবে।