শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখাই বড় সমস্যা? 

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 24 Jan 2022, 06:24 AM
Updated : 24 Jan 2022, 06:24 AM

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের চোখ রাঙানিতে আর কেউ ঘাবড়ে গিয়েছে কিনা বোঝা না গেলেও আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ঘাবড়েছে সেটা বিলক্ষণ বোঝা যাচ্ছে। করোনার কারণে দেড় বছর কার্যত বন্ধ থাকার পর গত সেপ্টেম্বর থেকে একটু একটু করে চালু হচ্ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে পড়াশোনার কার্যক্রম। নতুন বছরের শুরুতে যখন স্কুল-কলেজে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিনের আটকে থাকা পরীক্ষা নিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আবারও নতুন করে শিক্ষাজট বাড়াবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, হঠাৎ করেই শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংক্রমণের হার কমে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তবে এখন অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এর আগেও করোনাকালে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালু ছিল। রেডিও, টেলিভিশনেও চেষ্টা হয়েছে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের। কোনো কোনো দৈনিক পত্রিকায়ও এই প্রচেষ্টা চালু ছিল। শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে শিক্ষকদের একাংশ যথাসম্ভব ও সীমিত পরিসরে এর গুরুত্ব শিক্ষার্থীদের বুঝাতে চেষ্টা করলেও ডিভাইস না থাকা কিংবা গুরুত্ব তেমনভাবে বিবেচনায় না নেওয়ার কারণে সব শিক্ষার্থী এই ব্যবস্থার সুযোগ নিতে পারেনি। ব্র্যাকের একটি জরিপ থেকে জানা যায়, প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষার বাইরে ছিল। এটাও জানা যায়, বিশ্বের প্রতি ৩ জনে একজনের বেশি অর্থাৎ প্রায় শতকরা সাড়ে ৪৬ ছিল অনলাইন বঞ্চিত।

গণসাক্ষরতা অভিযানের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে অনলাইন, টেলিভিশন, বেতার ও মোবাইলের আওতায় ৩১ শতাংশ। পাওয়ার ও পার্টিসিপেশন সেন্টার ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের যৌথ গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ালেখার বাইরে। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, উচ্চশিক্ষায় ৯২ শতাংশ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষার ৬৫ শতাংশ ডিভাইসের আওতায় এসেছে। কিন্তু এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়াও সম্ভব হয়নি। অটোপাস দেওয়া হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ক্লাস শুরু করাও সম্ভব হয়নি। তাছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলায় শিক্ষার্থী রয়েছে এমন পরিবারগুলোতে নানা দিক থেকে সমস্যা তৈরি হয়েছে।

ওই সমীক্ষা থেকেই জানা যায়, ছাত্রদের মধ্যে শিক্ষায় অনাগ্রহ সৃষ্টি হওয়া, একাংশের পরিবারিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া, মেয়েদের বাল্য বিবাহ দেওয়া, একা থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, স্কুলে-পাড়ায় খেলাধুলা- দৌড়াদৌড়ি না থাকায় শারীরিক সমস্যা বেড়ে যাওয়া, বইয়ের চাইতে ডিভাইসে আসক্তি মাত্রাতিরিক্ত হওয়া, পড়তে না বসায় অভিভাবকদের চাপ-বকার কারণে জেদ বেড়ে যাওয়া, নানাবিধ মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়া প্রভৃতি বহু ধরনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, জানা-অজানা সমস্যা নতুন প্রজন্মের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে, যা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।

করোনাকালের এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ভুরঙ্গামারী উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাত কিশোরী ফুটবলার এখন ঘর সংসার করছে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা স্কুলের ছাত্রী ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক স্কুল ফুটবল গোল্ডকাপ প্রতিযোগিতায় হ্যাটট্রিক করা কিশোরী এখন ঘর-সংসার করছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এমন বিয়ের সংখ্যা বেড়েছিল। সমাজ জীবনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা থেকে ধারণা করা যায়, করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় নিচের দিকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টায় যা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল, করোনা আবার তা বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাজধানীর পূর্বাচলে মহাসমারোহে মাসব্যাপী যে বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে, তা বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, খোলা রয়েছে সব পর্যটনকেন্দ্র। মানুষ সমুদ্র সৈকতে আনন্দভ্রমণ করছে স্বাস্থ্যবিধির কোনো তোয়াক্কা না করেই। ক্রিকেটের আসর বিপিএলও শুরু হয়েছে। বিয়েশাদি, ওয়াজ মাহফিলসহ সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানও সমানে চলছে। সবকিছুই যখন স্বাভাবিকভাবে চলছে, ঠিক তখনই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। যেহেতু করোনার সংক্রমণ উর্দ্ধমুখী, সেহেতু ৬ ফেব্রুয়ারির পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।

করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত সেপ্টেম্বর থেকে একটু একটু করে চালু হচ্ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে পড়াশোনার কার্যক্রম। নতুন বছরের শুরুতে যখন স্কুল-কলেজে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিনের আটকে থাকা পরীক্ষা নিতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আবারও নতুন করে শিক্ষাজট বাড়াবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সবকিছু খোলা রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'আমরা বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি ফলপ্রসূ হবে কিনা, তা নির্ভর করবে আমাদের সবার ওপর।'

করোনা-কাল খুব সহজে বা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে, এমনটা একবারেই মনে করা ঠিক হবে না। তাই আমাদের পুরো বিষয়টি ভাবতে হবে গভীরে গিয়ে। আবেগ ও তাৎক্ষণিকতার দোষে দুষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত উপকারে আসবে না। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে সবাইকে বাধ্য করা কঠিন, আবার টিকা নিলেও আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা দূর হচ্ছে না। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আমেরিকায় নাকি স্কুল খোলার কারণে ১ মাসে ১ লাখ মানুষের করোনা বেড়ে গিয়েছিল। সিঙ্গাপুরে দুইবার স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়ে থাকে তাহলে সর্বাত্মক চেষ্টা হতে হবে এই মেরুদণ্ড যেন কোনোভাবেই দুর্বল না হয়ে পড়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা নয়, ভাবা দরকার খোলা রাখার উপায় নিয়ে। করোনাকালে শিক্ষায় দুই দিক থেকে 'গ্যাপ' তৈরি হয়েছে। এক, সরাসরি ক্লাস না করায় লেখাপড়ার সমস্যা; দুই, যারা ডিভাইস ব্যবহার করেছে আর করেনি তাদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার সমস্যা। এই সমস্যা দূর করার উপায় বের করতে হবে।

নতুন করে ক্লাস শুরু হলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে, কোন কোন সমস্যা সমাধান করে অগ্রসর হওয়া ভালো তা নিয়ে ওই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ বা শিক্ষকদের মতামত নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে আমলানির্ভরতা বা শর্টকার্ট পথসন্ধান বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যারা সমালোচনা করছেন বা সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না তাদের কথাও শুনতে হবে। সমালোচনাকে কখনো গোলাপ ফুলের কাঁটা আবার অনেক সময় বন্ধুও বলা হয়ে থাকে। সমস্যা-সমালোচনা সবসময়েই চ্যলেঞ্জ মোকাবেলার সাহস ও কর্মতৎপরতায় অনুপ্রাণিত করে।

স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন পাঠে জানা যায়, তিনি সবসময় নীতিতে অটল থেকে কৌশলে নমনীয় হয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পছন্দ করতেন। 'যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, সে যদি একজনও হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব'– একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে তার এই অমূল্য উক্তিটির কথা আমরা প্রসঙ্গত মনে করতে পারি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও নীতিগত অবস্থান গ্রহণে বঙ্গবন্ধুর পথরেখা অনুসরণ করে থাকেন। তার অবস্থান সব সময় বৃহত্তর জনকল্যাণের পক্ষে। এটা মনে রাখা ভালো যে, যুদ্ধ (করোনার সঙ্গে তো আমরা যুদ্ধই করছি) বা জাতীয় বিপর্যয়ে একদিকে কিছু লোভী-স্বার্থপরদের অপতৎপরতার সুযোগ বাড়ে এবং ওপরে-নিচে অশুভ বৃত্ত তৈরি হয়, অন্যদিকে বিপুল জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালোবাসাও জাগ্রত করে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, করোনা-দুর্যোগে এ দুই-ই পাশাপাশি চলছে। দ্বিতীয় বিষয়টি আমদের জাতীয় সম্পদ, যার মূল্য অর্থ-সম্পদের চাইতে অনেক বেশি।

শিক্ষার সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য নতুন কিছু ভাবতে হবে। যাদের উদ্ভাবনী চিন্তাক্ষমতা আছে তাদের কাছে যেতে হবে, পরামর্শ নিতে হবে। কিছু বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। গাদাগাদি করে শ্রেণিকক্ষে বসার পরিবর্তে দূরে দূরে বসার ব্যবস্থা করা, এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থান সংকুলান না হলে ক্লাস বিভক্ত করে নেওয়া, ক্লাসের সময়সীমা কমিয়ে নেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি কমানো, ক্লাস-সংখ্যা বাড়ানো, আগের ক্লাসের পড়া কাটছাট করে বর্তমান ক্লাসে পড়ানো, বিভিন্ন অজুহাতে বিশেষভাবে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষকদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকা বন্ধ করা, ডিভাইস ব্যবহার করা আর না করা শিক্ষার্থীদের গ্যাপ দূর করতে শিক্ষকদের মনোযোগী হওয়া, ঝরেপড়া শিশুদের ক্ষেত্রে স্কুলে আসার প্রচারসহ আর্থিক সুবিধা দেওয়া, যদি কোনো ছাত্রের মানসিক সমস্যা শিক্ষকদের নজরে আসে তাহলে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ছাত্রের অভিভাবকদের জানানো, চিকিৎসায় সহযোগিতা দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হল-হোস্টেল ও এর চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা, পরিস্থিতি বুঝে খেলাধুলা ও শরীর চর্চা বাড়ানো, করোনার কারণে অভাবে পড়া শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো প্রভৃতি বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

শিক্ষাঙ্গনে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়ে লেখাপড়ার ক্ষতি যাতে না হয়, সেদিকে নজর দেওয়াটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে সরকার বিশেষভবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবার। নতুন কিছু বা অতিরিক্ত কিছু করতে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করা যাবে না। সুচিন্তিতভাবে ধৈর্য ধরে অগ্রসর হওয়া ভিন্ন বিকল্প নেই। দেশপ্রেমিক ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠন বিশেষত ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো পরিস্থিতি বিবেচানায় এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে পারে। কেউ কেউ এটা বলার চেষ্টা করেন যে, সরকার ছাত্র-আন্দোলন ঠেকাতে ইচ্ছে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় এই অভিযোগ সত্য বলে মনে হয় না। দুর্যোগের সময় রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচারণা চালানোর বদঅভ্যেস পরিহার করা বাঞ্ছনীয়।

প্রাসঙ্গিক ও জরুরি বিবেচনার আরেকটি বিষয় হলো, শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি নিয়ে চলমান অভিযোগ। যতটুকু মনে হয়, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেকেই একমত হবেন যে, আমাদের দেশে শিক্ষার মান ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে গ্রাম-শহরের, ভালো-মন্দ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈষম্য তো আছেই। এক সময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানগত অবস্থান আজ কোথায়? স্বাধীনতার পর একবিংশ শতাব্দীতে এসে এবং স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও এই পর্যবেক্ষণ কেন, কীভাবে নিম্নগামী হলো বা হচ্ছে; কেন ভালো ছাত্ররা বিদেশ যাচ্ছে, সাধারণভাবে দেশে আসছে না– 'ব্রেনড্রেন' বা 'একমুখী ট্রাফিক' হচ্ছে, ভবিষ্যতে দেশের উপযুক্ত নেতৃত্ব দেওয়ার আঁতুরঘর ছাত্র সংসদ নির্বাচন কেন বছরের পর বছর বন্ধ রয়েছে, এতে কার কী লাভ হয়েছে বা হচ্ছে, তা জাতি হিসাবে আমাদের গভীরভাবে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা-বিষয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে নয়, করোনা মোকাবিলায় চাই সমন্বিত কর্মপরিল্পনা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে যে ক্ষতি হয় তা সাময়িক এবং সে ক্ষতি পোষানো সম্ভব। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষতি সুদূরপ্রসারী এবং অপূরণীয়। অপূরণীয় ক্ষতির পথে হাঁটা বন্ধ করতেই হবে।