যেকোনও দাবিতে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে কেন?

আনিসুর রহমান
Published : 30 Nov 2021, 05:40 PM
Updated : 30 Nov 2021, 05:40 PM

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার মেয়ের একটি প্রশ্নের জুৎসই জবাব দিতে পারিনি। ঘটনা খুলে বলি। আমাদের মেয়েটি, ওর মা আর আমি, এই তিনজন আলাপ করছি। আলাপের এক পর্যায়ে প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়টিও এলো। একপর্যায়ে মেয়েটি জানতে চাইল, আচ্ছা বাংলাদেশে যেকোনও দাবিতে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে কেন?

আমি একটু চুপ হয়ে ভাবছি কী বলবো! কেননা আমি একটা সত্য মেনে চলি, বাবা বা মা হিসেবে সন্তানের প্রশ্নের উত্তর সতর্কতার সঙ্গে দিতে হয়, যেমনটা দিতে হয় শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তর। আমি অপেক্ষা করছি ওর মা কী জবাব দেয় সেটা শোনার জন্য। ওর মা যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিয়েছে, তার সঙ্গে দ্বিমত করিনি। তারপরও আমার মেয়ের প্রশ্নটি মাথা থেকে সরছে না। সাধারণত মেয়েটির কোন প্রশ্নের উত্তর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওর মা-ই দিয়ে থাকে, মাঝেমাঝে আমি পরিপূরক হিসেবে সঙ্গত কিছু বিষয় যুক্ত করি। ক্ষেত্রবিশেষে এর ব্যতিক্রমও হয়।

আমার মেয়ের প্রশ্নসহ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর কম-এর মতামত বিভাগে প্রকাশিত তন্ময় ইমরানের 'কেবল হাফ ভাড়া নয়, হাঁপ ছাড়ারও আন্দোলন' শীর্ষক লেখাটি পড়ে গোটা কয়েক প্রশ্ন আমার মাথায় কাজ করছে। সব মিলিয়ে প্রশ্নগুলো এরকম:

১. বাংলাদেশে যেকোনও দাবিতে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে কেন?

২. তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বা তেলের মূল্য অন্যদেশে আমাদের চেয়ে বেশি থাকলেও ওসব দেশে আনুপাতিক হরে ভাড়া বেশি নয় কেন?

৩. আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যখন কমে তখন আমাদের দেশেও তেলের দাম কমে, তখন আমাদের পরিবহন ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুর কি দাম কমে?

৪.জাতীয় সংসদ ছাড়াও আমাদের দেশে নানা পর্যায়ে নির্বাচিত পরিষদ থাকার পরও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত যথাযথ আলোচনা আর বিতর্কের মধ্য দিয়ে না গিয়ে এক ধরনের নির্বাহী কর্তৃত্বের মাধ্যমে আসে কেন? তাহলে নির্বাচিত সংসদ আর পরিষদগুলোর ভূমিকা কি প্রশ্নের মুখে পড়ে না?

তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ পরিবহন ভাড়ার মতো কোনো ফয়সালাই পর্যাপ্ত আলোচনা আর বিতর্কের মধ্যে দিয়ে যে আসে নাই তা আমাদের কাছে পরিষ্কার। পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের বৈঠকে কোনও ফল না আসেনি। পরে সবশেষ সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের 'হাফ' ভাড়ার বিষয়টি মেনে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঢাকার পরিবহন মালিকরা। তবে এটি কেবল ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রযোজ্য। সারাদেশে একই নিয়ম চালু হয়নি বলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও থেমে যায়নি।  জানিনা শেষ পর্যন্ত এর ফল কী দাঁড়াবে!

বাস ভাড়া বা রেল ভাড়া বলে কথা নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই শিক্ষার্থীদের জন্য বা কর্মের বয়সসীমা অতিক্রমকারী অবসর ভাতাভোগীদের জন্যে অনেক ক্ষেত্রে স্থায়ী মূল্য ছাড় থাকে। এর মধ্যে প্রেক্ষাগৃহ, রেস্তোঁরা নানা উৎসব পার্বনাদিও থাকে। একইসঙ্গে মৌলিক অধিকারগুলো মেটাবার পর্যাপ্ত রক্ষাকবচও থাকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্যে বিশেষ ডিজিটাল পরিচয়পত্র থাকে যা তাদেরকে এইসব অধিকারগুলোর সুবিধা পেতে সাহায্য করে। আমরা হয়তো সবটা রাতারাতি পারবো না, কিন্তু পুরো ব্যবস্থার গলদগুলো চিহ্নিত করে, সেগুলো দূর করে ধাপ ধাপে আমরাও নিশ্চয়ই পারব।

পরিবহন মালিক সমিতির নেতা এনায়েতুল্লাহ খানের জবানী মতে বাস মালিকদের 'গরিব' হবার বাস্তবতা থেকে, একটা প্রশ্ন মনে পড়ল। খোদ রাজধানী থেকে শুরু করে সারাদেশে চলমান বাসগুলো কি রাজনীতি, প্রশাসন, আইনের রক্ষক আর আইনভঙ্গে বিলাসী মাস্তান গডফাদারদের চাঁদা বা উৎকোচ না দিয়ে রাস্তায় নামাতে পারে? আমজনতার একজন হিসেবে এটা আমার একটা মামুলি প্রশ্ন কেবল। যেকোনো তরফ থেকে উত্তরটা পেলে বাধিত হবো। আর এই উৎকোচ যদি মালিকদের বা শ্রমিকদের গুনতে হয়, তা কিন্তু আকাশ থেকে আসবে না, তা আপনার-আমার পকেট থেকেই যাবে।

এই প্রশ্নগুলো নিয়ে কার্যকর বিতর্ক বা আলোচনার জন্যে সংশ্লিষ্ট কোনও ক্ষেত্র কি ব্যবহার করা হয়েছে? জাতীয় সংসদে বা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে? প্রসঙ্গ আরো আছে। কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে দেখা যায় শিক্ষাসহ নগরপরিবহনের মতো দায়িত্বও নগরসংস্থার হাতে থাকে বা নগরসংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালিত হয়। আমাদের কী হয়? সব ব্যাপারে সমাধান হয় মন্ত্রণালয় নয়তো কেবল সরকারের কেন্দ্র থেকে আসতে হবে। তা আসতে পারে, দোষের কিছু না। কিন্তু তা ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্যে ভাল বার্তা দেয় না, তা যদি একটা অবধারিত নিয়মের পর্যায়ে চলে যায়। কর্তৃপক্ষের প্রধান ব্যর্থ হন, মন্ত্রী ব্যর্থ হন সমাধান দিতে, শেষতক তা গিয়ে পরে সরকার প্রধানের উপর। এক্ষেত্রেও কি তাই হবে? তা হলেও ভালো, কোনো গোঁজামিলের সমাধানের চেয়ে সরকার প্রধানের কাছ থেকে দিকনির্দেশনামূলক সমাধান আসা জরুরী।

এখানে একটা কথা বলি, বাস বা লঞ্চের মালিকরা, তারা যানবাহনের মালিক হতে পারেন, তারা কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থার মালিক না। এই যে তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে তারা পরিবহন ধর্মঘটে গিয়ে জনজীবন অচল করে দিয়েছিলেন, তার দায় এড়াবার এখতিয়ার কেন পাবেন? সরকারকে মনে হলো অসহায়। এই 'অসহায়' অবস্থার কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। এই বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমিক আলোচনা আর পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে এসে গেলে কিন্তু এই সমস্যা হতো না।

আমার মেয়ের প্রশ্নে ফিরে আসার আগে একটা ঘটনা বলে নিতে চাই। এবছর ইউরোপের একটি দেশে আমাদের একটি দূতাবাসের অনুরোধে ওয়েলস বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক, কবি এবং অনুবাদক বাংলাদেশের ঐতিহাসিক একটি দলিল এবং সাহিত্যকর্ম অনুবাদ করে দিয়েছেন। বিনিময়ে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ কোনো প্রয়োজনীয় সম্মানী আর একটা শুভেচ্ছা বার্তা দেবার কথা থাকলেও তার কিছুই করেনি। তারা গোটা বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষাবিদরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গিয়েছে। একপর্যায়ে সরকারের দায়িত্বশীল দুই মন্ত্রীর নজরেও আনা হয়েছে, তারাও বিষয়টি কার্যত উপেক্ষা করেছেন। এখন বাকি থাকল কী? এখন বিকল্প কী হতে পারে– বিষয়টা সরকারের আরো উপর মহলের নজরে আনা অথবা দূতাবাসের সামনে গিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বসে থাকা অথবা বেমালুম ভুলে যাওয়া।

কিন্তু সব বিষয় তো বেমালুম ভুলে যাওয়া যায় না। ডাক শুনে যখন মানুষ পাত্তা না পায়, তখন তারা রাস্তায় নেমে আসে। তবে এই রাস্তার নামার পেছনে কোন কোন মহলের উদ্দেশ্যও থাকে। কথায় কথায় যখন সরকার পতনের ডাক আসে, তখন দাবিগুলোর কার্যকরণ রূপরেখা তৈরি করা যায় না, জনকল্যাণের পক্ষে বিষয়গুলো লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। আমাদের দেশে তাই ঘটে আসছে। কখন, কে, কার ঘরে আগুন দেবে আবার কেউ সুযোগ বুঝে সেই আগুনে আলু পুড়ে খাবে।

এবার আমার মেয়ের প্রশ্নে ফিরে আসি। মানুষের ডাক যখন উপেক্ষিত হতে থাকে তখন তারা রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু বিষয় হলো, কার্যকর কল্যাণরাষ্ট্রেও তো দাবি উপেক্ষিত হয়, কোনও দেশ তো আর স্বর্গের সর্বোচ্চ আরশ নয়।

ওসব দেশে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা প্রস্তাব আকারে বিস্তারিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এমনকি বিজ্ঞাপন আকারে পত্রিকাতেও প্রকাশ করা হয়। সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গণশুনানির ব্যবস্থাও থাকে তা যত বড়ই বা ছোটই হোক, তারপর প্রস্তাবের পক্ষে বিপক্ষর রাজনৈতিক দলগুলো সংশ্লিষ্ট পরিষদে বিতর্কে অংশ নিয়ে থাকে। বিরোধীদল অনেক সময় পাল্টা প্রস্তাবও দিয়ে থাকে, এমনকি পাল্টা বাজেটও দিয়ে থাকে। এমন দৃষ্টান্তও আছে, সরকারি দল তাদের নির্ধারিত বাজেট পাশ করতে পারেনি, পাশ হয়েছে বিরোধীদল উত্থাপিত বাজেট। বিরোধীদলের বাজেট বাস্তবায়ন করে ক্ষমতাসীন দলকে সরকার চালাতে হয়েছে। এরকম কার্যকর গণতন্ত্রের দেশগুলোতে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা বা আঞ্চলিক পরিষদের মতো স্থানীয় সরকারের পরিষদগুলো পরিচালিত হয় অনেকটা জাতীয় সংসদের আদলে। এসব কারণে ওসব দেশে মানুষদের রাস্তায় নামার দরকার পড়ে না।

দৃশ্যত বা অদৃশ্যত আমাদের রাজনৈতিক বিতর্কের জায়গা এককেন্দ্রিক, একারণে মানুষের জন্যে খোলা থাকে শুধু রাজপথ। এবার প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে গণমাধ্যম আছে কী জন্যে? গণমাধ্যম বলতে আমি এখানে মূলধারার গণমাধ্যমকে বিবেচনায় নেব। কোন কোন গণতান্ত্রিক কল্যাণরাষ্ট্রে এমন দৃষ্টান্ত আছে, চিঠিপত্র বিভাগেও যদি কোনো প্রশ্ন বা প্রসঙ্গ ছাপা হয় সেখানে সরকারি হোক, বেসরকারি হোক সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এমনকি খোদ মন্ত্রী পর্যায় থেকেও পত্রিকায় জবাব পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের মূলধারার গণমাধ্যমে অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক অনেক লেখাজোকা ছাপা হয়, প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়, দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো মহল থেকেই এসব বিষয়ে খুব একটা পাত্তা দেওয়া হয় না। ভাবখানা এরকম, পত্রিকার কাজ পত্রিকা করেছে, আমার কাজ আমি করব। তবে পাত্তা যদি কখনো দেয়াও হয়, তাও আবার 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের' খাড়া দেখিয়ে।

এই বিষয়ে একটা উদাহরণ দেব। একবার ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কিছু অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকায় লেখা ছাপা হয় । উপাচার্য মহোদয় ক্ষেপে গিয়ে ফোন করে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের হুমকি দিয়েছেন। শেষতক পত্রিকাটি লেখা প্রত্যাহার করেছে। এখানে উপাচার্য কিন্তু একটা প্রতিবাদ বা তার একটা বিস্তারিত বক্তব্য পাঠাতে পারতেন। পত্রিকাটি তা না প্রকাশ করলে উনি পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারতেন। একজন ক্ষমতাশালী উপাচার্যের ক্ষমতার খাসলত যদি এরকম হয়, তাহলে বাকিরা কোন পর্যায়ে যেতে পারে আমরা একটু কল্পনা করে নিতে পারি। সমস্যা তো কেবল গাজীপুরের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নয়। জাহাঙ্গীরের ব্যাপারেও সরকারের টনক নড়াতে গাজীপুরের মানুষদের রাস্তায় নামতে হয়েছিল।

উদাহরণ আরো আছে, শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার জায়গাগুলো দেশব্যাপী অকার্যকর হয়ে আছে। তাই তাদের দাবি জানানোর জায়গাগুলো অনেকটাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের কথাই যদি ধরি, প্রায় তিন দশক পরে ডাকসুর নির্বাচন হলো একবার। তারপর বছর কয়েক হয়ে গেল নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ নাই। দেখা যাবে নির্বাচনের দাবিতে ছাত্রদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে খোঁজ নিয়ে দেখুন কি অবস্থা? অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, স্টকহোম, উপসালা, দিল্লি, প্যারিসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রসংসদের নির্বাচন কিন্তু নিয়মিতই হয়।

তাই মানুষ যাতে রাস্তায় না নামে তার প্রয়োজনীয়তা দায়িত্বশীল পর্যায়ের সকলকে উপলদ্ধি করতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা আনতে হবে। নির্বাচনে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মানে জবাবদিহিতা থেকে রেহাই পেয়ে যাওয়া নয়। কথায় কথায় 'ডিজিটাল' 'ডিজিটাল' করবো আর গণতান্ত্রিক চর্চায় ডিজিটাল স্বচ্ছতা আনব না, তা হবে না। আর যে কোনো সংকটে সরকার প্রধানের ওপর দায় চাপাব আর সরকার পতনের স্বপ্ন দেখে যাব, সেই প্রবণতা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে দেশের ছাত্রসমাজসহ আদমীদের কাউকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে না।

একটা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির যতই পসার বাড়ুক, জিডিপি তুঙ্গে উঠুক, বন্দুক আর কলম এক সুরে কথা বলুক, বুদ্ধিজীবীরা ক্ষমতাবানদের নিয়ে নেচে গেয়ে কবিতায় সংগীতে মেতে থাকুক, ক্ষমতাসীন কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যতই নিশ্চিন্তে থাকুক সমাজ ও নগরে; জাতি ও রাষ্ট্রে যদি কুৎসিত রকম বৈষম্য থাকে, মানুষ রাস্তায় নামবেই। রাস্তায় নামার জন্যে যেমন অজস্র কারণ থাকবে সেরকম ধান্দাবাজ মহল নানা অজুহাতে মানুষকে রাস্তায় নামানোর জন্যে বিনিয়োগও করবে। এরকম উদাহরণ আমাদের দেশে কিন্তু রয়েছে। সে যাই হোক, আমাদের নগরজীবনে কুৎসিতরকম বৈষম্য নির্দেশ করার জন্যে একটি গল্প দিয়ে লেখাটি শেষ করছি:

মন্ত্রীর প্রতিবেশি

এই তুই কে?

আমি টোকাই স্যার। আপনি কে?

আমি ঠ্যাঙামারা টেলিভিশনের সাংবাদিক। কী করোস?

কাগজ কুড়াই।

খাস কী?

যখন যা পাই। না পাইলে না খাই।

তোর বাড়ি কই?

বাড়ি নাই স্যার। আমরা অমুক মন্ত্রীর এলাকার লোক।

এখন থাকোস কই?

রাজধানী শহরে।

রাজধানী শহরের কোথায়?

ঐ যে মন্ত্রীগোর বাসাগুলা চিনেন স্যার?

চিনি।

মন্ত্রীদের বাসাগুলোর শেষ মাথায় যে বাড়িটা আছে না।

আছে।

তার বাড়ির পরে একটু পার্কের মতো, পার্কের পরে একটা বাউন্ডারির পরে বড় একটা খাদের মতো। খাদের অই খানে, একটা রাস্তা, রাস্তার পারে একটা দোকান, অই দোকানের পেছনে একটা পলিথিন প্যাচাইয়া ঘুম দেই। দোকানের পেছনে চিপা মতো একটা জায়গা ওখানে পলিথিন মুড়ি দিয়ে দেই এক ঘুম। এক ঘুমেই রাত কাবার।