গুজব প্রতিরোধে চাই সর্বজনীন ডিজিটাল মিডিয়ার শিক্ষা

ফাইজুল করিম
Published : 17 Oct 2021, 04:34 AM
Updated : 17 Oct 2021, 04:34 AM

গুজব পরিবহণের মাধ্যম একমাত্র সংবাদ বা গুজব মাত্রই সংবাদ-আশ্রয়ী এটা আমরা বলতে পারি না। সাধারণত সংবাদ বলতে আমরা মূলধারার পত্রিকায় প্রকাশিত খবরকেই বুঝে থাকি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিবিশেষের দেয়া তথ্যকে খবর হিসাবে দেখার চল আছে দেশে, যা অনেক মানুষ যাচাই না করেই বিশ্বাস করে। ফলে তথ্য যে দেয় তার গ্রহণযোগ্যতার উপর নির্ভর করে তথ্যটিতে আপনি আস্থা রাখবেন কিনা। একে সংবাদ ভেবে ভুল গর্তে পা দেয়ার আগে দায়িত্ববান মানুষেরা সাধারণত একাধিক উপায়ে যাচাই করেন। তার অন্যতম একটা উপায় হলো আবার সেই মূলধারার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সাথেই যাচাই করা।

কুমিল্লাকাণ্ডের পরে এ কথা আরো নিশ্চিতভাবে বলা চলে যে গুজবের ঢাল সংবাদ নয়। কারণ মূলধারা বা অ-মূলধারার কোনো পত্রিকাতে পূজা মণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখা ছিল এমন কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি। অথচ একজন ব্যক্তির দেওয়া তথ্য যা অযাচাইকৃত ছিল, যার ফলে নানুয়া দিঘীর পূজামণ্ডপ ও দেব-দেবীর মূর্তি ভাঙা হলো। ওই ব্যক্তি পুলিশের সামনে বসে ফেইসবুক লাইভে এসে একথা বলছেন অথচ তারা কেউ-ই কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী নয় ঘটনাটির। তারা কেবল সকালে এসে দেখতে পেয়েছেন এবং ধরে নিয়েছেন পূজা সংশ্লিষ্ট কেউ রেখেছে। একজন সাধারণ ব্যক্তির চেয়ে পুলিশের একজন ওসির কিন্তু আগে বোঝার কথা যে কোরআন শরীফ সেখানে কে রেখেছে সেটা তদন্ত করে বের করার আগে বলা যায় না যে, এটা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রেখেছে এবং তাদের দায়ী করা বা বিচার করা যায়। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা লাইভটি চালাতে দিলেন!

সুতরাং বলা যায় গুজবের হাতপা আছে, তবে তা দেখা যায় না। পেছনে কেউ এর নির্মাণের সাথে জড়িত, প্রচারের সাথে জড়িত। গুজবের কারণে মানুষ আতঙ্কিত হতে পারে, কারো ঘরবাড়ি ভাঙচুর হতে পারে বা কেউ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে পারে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিতে পারে, কেউ মারধোরের শিকার হতে পারে, কেউ খুনও হতে পারে। পণ্যের কেনাকাটা বেড়ে বা কমে যেতে পারে, শেয়ার বাজারে ধস নামতে বা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তেও পারে। মানুষের রটনা এবং শোনা কথার গতি মূলত সংবাদের চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে।

গুজব আসলে কী! অনেক অনেক গুঞ্জনের ভিড়ে গুজব হয়ে ওঠে খুব সামান্যই। সাধারণত যে গুঞ্জনের মধ্যে বিষয়গত চমক বা পিলে চমকানো তথ্য আছে, আকর্ষণীয় বা মজাদার খবর আছে আর যাচাই করা সম্ভব নয় এমন একটা সূত্র আছে তাই এক একটা সম্ভাবনাময় গুজব। সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন ধরনের গোষ্ঠীর সুনির্দিষ্ট কিছু সংবেদনশীল বিশ্বাস ও রীতিনীতি আছে। যে গুজব এসব সংবেদনশীলতাকে আঘাত করে সেইসব গুজব তখন প্রাণময় হয়ে ওঠে। দুরন্ত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন ২০১৯ সালের ২০ জুলাই বাড্ডায় স্কুল প্রাঙ্গণে 'ছেলেধরা' গুজবে তাসলিমা বেগমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২০২০ এর ৩০ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় বুড়িমারী স্থলবন্দরে একটি মসজিদে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় শহীদুন্নবী জুয়েল নামের একজন ব্যক্তিকে। এ-দুটো ঘটনার পেছনে কোনো পত্রিকা তো দূরের কথা ছিল না কোনো ইন্টারনেট বা অনলাইনের সংশ্লিষ্টতাও।

গুজব ছড়ায় 'মানুষের মুখে মুখে'। ফোন, মেসেঞ্জার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেখানেই সে কথা লিখুক বা বলুক এর পদ্ধতি মূলত মুখে মুখে ছড়ানোর। গুজব শোনার পরে বেশিরভাগ মানুষ সহজেই তা শনাক্ত করতে পারে। বিশেষ করে অনলাইনে গুজব শনাক্তের জন্য বেশ কিছু অভিজ্ঞতালব্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক মানুষ। যেমন পত্রিকাগুলো দেখা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত অন্যান্যরা কি বলছে বিচার করা। তবে কেউ কেউ সত্য বলেও মনে করে। গুজব জেনেও অনেকে তা মজাদার, বিনোদনমূলক অথবা হাস্য-রসাত্মক ভেবে ছড়াতে পারে। কেউ গুজব নিয়ে ব্যঙ্গ করতে পারে, কেউ সংবাদও তৈরি করতে পারে। আবার কোনো গোষ্ঠীর সংবেদনশীলতায় তা আঘাত করলে বিক্ষোভও হতে পারে।

গুজব একইভাবে পরিভ্রমণ করে না। লোকমুখে গল্পটি বিবর্তিত হতে হতে আমূল পাল্টে একটা বিস্ফোরক তথ্যে পরিণত হতে পারে। অফলাইন থেকে অনলাইনে যখন গল্পটি ছড়াতে থাকে তখন তার সাথে যুক্ত হয় নানান প্রযুক্তি। কেউ ছবি যোগ করতে পারে, কেউ ভিডিও, কেউ গল্পটিকে পুনরায় লিখতে পারে। গুজবটি নানা আকার ও অঙ্গসজ্জায় অলঙ্কৃত হয়ে পেতে পারে ভিন্ন মাত্রা। তখন হয়তো গুজবটি বিশ্বাস করতে পারে আরেক দল মানুষ।

তাছাড়া সমাজের একটা বড় অংশ যারা ইন্টারনেট বা সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করলেও বাংলা ভাষা ঠিকমতো পড়তে বা পড়ে বুঝতে পারেন না। মূলধারার পত্রিকায় লেখা সংবাদগুলি তাদের কাছে আরো কঠিন পড়ে পাঠোদ্ধার করা। অনেকেই আছেন যারা খবরপাঠকের উচ্চারণ এবং সংবাদ-ব্যাকরণসমৃদ্ধ টিভি প্রতিবেদন শুনে যতটা না বুঝতে পারেন তার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের মতো মানুষদের বলা কথা বা বার্তা সহজেই বুঝতে পারেন। তাছাড়া প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও প্রচারও একটা বিষয়। ইকো-চেম্বার বা ফিল্টার বাবলের কারণে এমন অনেক মানুষের সামাজিক যোগাযগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টে মূলধারার পত্রিকার লিংকও থাকে না। ফলে তারা যেভাবে সংবাদ পেয়ে থাকেন তার মধ্যে অপতথ্যের মহামারী লেগে থাকে। কোনো অপতথ্য মূলধারায় যদি চিহ্নিত করে প্রচার করা হয় তাহলেও তারা তা জানবেন না।

এই আলোচনা থেকে মূলত আমরা বলার চেষ্টা করেছি যে, গুজব এর নিজস্ব স্বরূপ এবং বিস্তৃতির কথা। সামাজিক গণমাধ্যম বা অনলাইনে প্রচারিত তথাকথিত সকল সংবাদই কিন্তু সংবাদ-শিল্পের সংবাদ নয়। সংবাদ শুধুমাত্র সেটাই যা সাংবাদিকতার ব্যাকরণ মেনে একটি সংবাদপত্র বা মিডিয়া প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচারিত হয়। ওই প্রতিষ্ঠানটির একজন সাংবাদিক ঘটনাস্থল থেকে সংবাদটি সংগ্রহ করেন, সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন, তথ্য যাচাই করেন, গুরুত্ব পর্যালোচনা করেন এবং তারপরে সম্পাদকের হাত ঘুরে সংবাদটি প্রতিষ্ঠানটির পত্রিকা বা ডিজিটাল ফরম্যাটে প্রকাশিত হয়। বোঝাই যাচ্ছে এত কিছু পার করে একটা প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র থেকে গুজব প্রকাশিত হওয়া সহজ নয়। তবে তারপরেও হতে পারে। কিন্তু আমরা যদি বিগত ১০ বছরের গুজব পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব পত্রিকা তা অনলাইন হোক অথবা প্রিন্টেড, একদমই গুজবের বাহন নয়। আমাদের আরো বুঝতে হবে ওয়েব-পোর্টাল মানেই পত্রিকা নয়, যদি সেখানে সংবাদ থাকে তারপরেও তা পত্রিকা নয়। এগুলোকে আমরা ভুতুড়ে পোর্টাল বলতে পারি– যাদের কাজ ক্লিকবেইট বা মিথ্যা তথ্য সম্বলিত শিরোনাম তৈরি করে পাঠক আকর্ষণ করা। এর উদ্দেশ্য থাকে অনলাইন পোর্টালের ট্রাফিক বৃদ্ধি– যা তার "মনিটাইজেশন" বা বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পথ সুগম করে।

ওয়েব-পোর্টালে যে সকল পত্রিকা গড়ে উঠেছে তাকে আমরা অনলাইন পত্রিকা বা মিডিয়া হিসাবে জানি। কিছু হয়তো সরকারি নিবন্ধন পেয়েছে, বাকিরা নিবন্ধনের চেষ্টা করছে। এসব পত্রিকা একটা বিকাশমান সংবাদপত্র শিল্পের চিত্র তুলে ধরছে। স্থানীয় পর্যায়ে একটা প্রিন্টেড পত্রিকা তৈরির জন্য যে বিনিয়োগ দরকার তার তুলনায় অনলাইন মাধ্যম সাশ্রয়ী এবং সঠিক ভাবে পরিচালনার মাধ্যমে অধিক মুনাফা উপার্জনে সক্ষম। গুগোল ও ফেইসবুক তাদের প্লাটফর্মে সংবাদ জনপ্রিয় হলে নিউজপোর্টালগুলোকে লভ্যাংশ প্রদান করে। বিকাশমান এই শিল্প সারা বাংলাদেশের প্রতিটা উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমরা আঞ্চলিক যেকোনো সংবাদ, দুর্নীতি অথবা অপরাধের খবর অধিক পরিমাণে দেখতে পাই। বাংলাদেশের ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে গড়ে যার প্রতিটিতে রয়েছে তিন লাখের বেশি জনসংখ্যা। এমনকি কিছু বড় উপজেলার একটা ইউনিয়নেও আছে লাখের ওপরে জনসংখ্যা। স্থানীয় রাজনীতি এবং উন্নয়নের নানান ঘটনা এসব স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষুদ্র ইউনিটে প্রতিনিয়ত ঘটছে যার সংবাদ মূল্য স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অপরিসীম। ফলে গড়ে উঠছে বিশাল সংবাদ-শিল্প এবং প্রকাশ করছে মানুষের স্বাধীন মতামত। একই সাথে প্রশাসনের জবাবদিহিতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠাতেও এসব সংবাদ ভূমিকা রাখছে। সরকারের উদ্যোগেই প্রতিটা ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে উঠেছিল সিটিজেন জার্নালিজম প্ল্যাটফরম।

বিকাশমান অনলাইন ও স্থানীয় সংবাদ-মাধ্যমের অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সাংবাদিকতার জ্ঞান ও কারিগরি দক্ষতা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও উন্নতি হচ্ছে ধীরে ধীরে। ভুল বা অপতথ্য যাচাই করার দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত যাচাই করার পদ্ধতি এবং সচেতনতার অভাবেই অপতথ্য ছড়িয়ে পড়ে।

সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) এর একটি গবেষণায় আমার অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছিল। তারা স্থানীয় নিউজ-পোর্টালের গুজব শনাক্তের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করে। সারা দেশ থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক নিউজপোর্টালের অংশগহণে এই গবেষণা ও প্রশিক্ষণ থেকে প্রতীয়মান হয় আঞ্চলিক পর্যায়ের নিউজ-পোর্টালগুলো তাদের দক্ষতা ও মান উন্নয়নের জন্য সচেষ্ট এবং আগ্রহী। অপতথ্য যাচাইয়ের সক্ষমতাও তাদের রয়েছে, তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য যাচাইয়ের দুর্বলতা রয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে কখনও সংবাদে অপতথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই নিউজ-পোর্টালগুলো গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে ছড়ানো গুজব যাচাই করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ফিডে প্রকাশ করলে সে অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ আগে জানবে এবং তাদের ভুল ধারণা ভাঙবে।

অনলাইনে প্রচলিত গুজবের বিভিন্ন ধরন যেমন রাজনৈতিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অপরাধ, মানবাধিকার, ধর্মীয় ইত্যাদি যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব এর মধ্যে সংবেদনশীলতার মাত্রায় ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত অপতথ্য সবচেয়ে বেশি মর্মান্তিক এবং রোমহর্ষক পরিণতি ডেকে আনে। মানবাধিকার বিপর্যয়ের ঘটনাগুলো সবই এই ধর্ম বিষয়ক মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ফলশ্রুতিতে উদ্ভূত। সবচেয়ে নির্মম উদাহরণ ২০১৩ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপরে সংঘটিত অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা। উত্তম নামের যে বৌদ্ধ তরুণকে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার, সে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও আজ পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

যদি ধরা হয় অপতথ্যের মহামারী প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে বেশি ছড়াচ্ছে, তাহলে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপতথ্য শনাক্তে এর ব্যবহারকারীদের দক্ষ করা সম্ভব। 'ইনফরমেশন হাইওয়ে' এর বিশাল ভাণ্ডার থেকে অপ মুছে ফেলা বা নিয়ন্ত্রণ করা ঝিনুক দিয়ে সাগর ছেঁচা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা করতে গিয়ে অনেকের ব্যক্তিগত মতামত, রম্য-রচনা বা সমালোচনামূলক লেখাও মুছে ফেলা হতে পারে রাজনৈতিক পক্ষপাত থেকে। অপতথ্যের জন্য ফৌজদারি শাস্তির বিধান রাখাও অনুচিত। কারণ এমন বিধান অপব্যবহৃত হবার ঝুঁকি থাকে, বাক স্বাধীনতা বিপন্ন করতে পারে। জাতিসংঘ ও আরো অনেক মানবাধিকার সংস্থা এমন আইনের বিরোধিতা করে আসছে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন ব্যাখ্যা নির্দিষ্ট করা, যেমন যাচাই করে মিথ্যা প্রমাণ করা হয়েছে এগুলোই কেবল অপতথ্য হিসাবে পরিগণিত হবে। অপতথ্যের নানা ধরনও আছে, যেগুলো মানুষের ক্ষতি করে তা কেবল মুছে ফেলা হতে পারে, কিন্তু যে অপতথ্যের কোনো ক্ষতিকর বিষয় নেই তার জন্য সতর্কতামূলক বার্তাই হয়তো যথেষ্ট।

অনলাইনের ঝুঁকি শুধু অপতথ্যই নয়, একই সাথে ইন্টারনেটের বিস্তৃত পরিসরে রয়েছে অসংখ্য ভার্চুয়াল শত্রু। আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া উপায় নেই। আর ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে অপতথ্য বা গুজব ছড়ানোর সুযোগ সংকুচিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের নাগরিকদের উন্নয়ন যে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাথে যুক্ত, বিশেষ করে "রূপকল্প ২০৪১" যা "ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১" ধারাবাহিকতায় তৈরি, তার অন্যতম লক্ষ্য ডিজিটাল জীবনের সুফল প্রতিটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। এই একই লক্ষ্য পূরণে মিথ্যা তথ্য যাচাইয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় পর্যায়ে নানামুখী সেক্টর যেমন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র, সুশীল সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সমন্বিত গণসচেতনতামূলক ও ডিজিটাল শিক্ষা কর্মসূচি দরকার। একইসাথে দরকার তথ্য-যাচাই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধন। কারণ মিথ্যা তথ্য সকলের ক্ষতি করে, এর দায় নিতে হয় সবার। ডিজিটাল শিক্ষা সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে চালু হলে অনলাইন জীবন নিরাপদ হবে সকল মানুষের এবং আধুনিক শিক্ষার মহাসড়কে যুক্ত হতে পারবে প্রান্তিক পর্যায়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও।