ফ্রম ‘স্টুপিড ডিসিশন’ টু ‘সাবস্ট্যান্সিয়াল ড্যামেজ’

অজয় দাশগুপ্তঅজয় দাশগুপ্ত
Published : 27 May 2021, 12:49 PM
Updated : 27 May 2021, 12:49 PM

শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'আমার দেখা নয়াচীন' গ্রন্থ কেবল প্রকাশই করেননি, ২০২০ সালের একুশের বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজেই মোড়ক উন্মোচন করেছেন। এ বইয়ে চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শুরুর দিকের নানা অর্জন তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৫২ সালে শান্তি সম্মেলনে ৩২ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার চীন সফর করেন) যেভাবে তুলে ধরেছেন, অন্য কোনো দেশের রাজনৈতিক নেতাদের কয়জন তেমনটি করেছেন? কৃষক ও শ্রমিকদের কল্যাণে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পদক্ষেপ থেকে নারী মুক্তি ও শিশুদের রাষ্ট্র কর্তৃক বহুবিধ সুবিধা দেওয়া- কোনও কিছুই তার নজর এড়ায়নি। মুসলিম লীগের নেতৃত্বে চলা পাকিস্তান কেন পিছিয়ে রয়েছে এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে  চীন কেন এগিয়ে চলেছে- এ প্রশ্ন বার বার করেছেন বঙ্গবন্ধু।

শেখ হাসিনা বইটি প্রকাশ করার মাধ্যমে চীনের প্রতি একটি বার্তা দিয়েছেন- বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়া। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে বাংলাদেশ; কিন্তু সেতু নির্মাণ ও নদী শাসনের ঠিকাদারি পেয়েছে চীনের প্রতিষ্ঠান। আরও কয়েকটি বড় অবকাঠামো প্রকল্পের কাজও মিলেছে চীনা কোম্পানিগুলোর। পদ্মা সেতু প্রকল্প ভণ্ডুল করার জন্য বিশ্বব্যাংক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (২০০৯-২০১২) পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং বাংলাদেশের কিছু লোক যখন দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তোলে, তখন শেখ হাসিনাকে প্রায় একাই লড়তে হয়েছে।

বাংলাদেশের ভেতরে চীনের যে সব 'রাজনৈতিক বন্ধু' রয়েছেন, তারা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমস্বরে বলতে থাকেন- 'পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে লুটপাট চলছে'। সে সময়ে বিশ্বব্যাংক ও অন্যরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যে সব অভিযোগ তুলছিল, তা মোকাবিলায় চীন সরকার শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছে, এমন সামান্যতম প্রমাণও পাওয়া যায়নি। এই অন্যায় অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ বেকসুর খালাস পেয়েছে কানাডার আদালতে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও এমন শক্তি তৎপর রয়েছে, যারা পদ্মা সেতু এলাকার নদী তীরের একটি ইট বন্যার কারণে খসে গেলে উল্লসিত হয়। সেতুর কাজ একদিন পেছালেও তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। খালেদা জিয়া চীনের প্রযুক্তি সক্ষমতার প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে বলেছিলেন, 'পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে তৈরি হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবে না।'

পরম বিস্ময়ের যে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত বছর (২০২০) ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের দিনেই খালেদা জিয়াকে 'জন্মদিনের' শুভেচ্ছা বার্তা ও ফুল পাঠিয়েছিলেন। আবার এ জন্মদিন যে ভুয়া, পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ডে তার ভিন্ন জন্ম তারিখ- সেটা জেনে পরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, ক্ষমাও চেয়েছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বিষয়টি যে বাংলাদেশের জনগণের কাছে এতটা স্পর্শকাতর, সেটা জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে তাদের কোনো রিসার্চও নেই। [প্রথম আলো, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০]

অথচ ঘটনাটি ঘটেছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের ১৫ অগাস্ট। খালেদা জিয়া নিজেও অনেক অনেক মানুষের, এমনকি নিজের দলের  ভেতর থেকে সমালোচনা হওয়ার কারণে ১৫ অগাস্ট কেক কাটার অনুষ্ঠান এ বছর বাতিল করেছেন।    

চীনা নেতৃত্বের নিশ্চয়ই জানা আছে, পদ্মা সেতু তাদের জন্যও প্রেস্টিজ প্রজেক্ট। উন্নয়নশীল দেশ হতে চলা একটি দেশ বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ দিয়ে নিজের অর্থে এত বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার নির্মাণ কাজ দেওয়া হয়েছে চীনকে। এ প্রকল্প সফলভাবে সমাপ্ত করার অর্থ হচ্ছে বহু বছর পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতির জন্যও পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ। এ সেতু চালু হলে ভারতসহ এ অঞ্চলের অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। কানেকটিভিটি হয়ে উঠবে সহজ।

ভাল বার্তাও যে সকলে তাৎক্ষণিক গ্রহণ করে, এমন বলা যায় না। 'আমার দেখা নয়াচীন' গ্রন্থ প্রকাশ উপলক্ষে শেখ হাসিনার বন্ধুত্বের বার্তার উত্তর কয়েকদিন যেতে না যেতেই এসেছিল ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের মাধ্যমে। তবে সেটা ছিল তিক্ত। আমাদের স্মরণ আছে, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। চীন তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকে গোটা বিশ্ব থেকে। তাদের রপ্তানি বাণিজ্য বিঘ্নিত হতে থাকে। বাংলাদেশের  পোশাক শিল্পের মালিকরা কাপড়ের জন্য বিকল্প উৎস খুঁজতে থাকেন। ভারত থেকে আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাবও আলোচনায় আসে। ১২ ফেব্রুয়ারি (২০২০) নিউ এইজ পত্রিকা খবর দেয়- ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সাংবাদিকদের বলেছেন, "করোনার কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য চীন থেকে কাঁচামাল সরবরাহ নিয়ে কথা উঠছে। এর প্রয়োজন আছে কী? এর উত্তরে আমি বলব- না। আর চীন থেকে কাঁচামাল সরবরাহ অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করা হলে সেটা হবে স্টুপিড ডিসিশন।"

চীনা দূতাবাস এবং বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের মালিকরা ভারত থেকে কাপড় আমদানি বাড়াতে উদ্যোগী হতে পারে, চীনের রাষ্ট্রদূত তেমন শঙ্কায় ছিলেন। সে কারণেই তিনি প্রকাশ্যে 'স্টুপিড ডিসিশন' বলেছেন। অন্য কোনো  দেশের দূত এভাবে একটি সার্বভৌম দেশের ব্যবসায়ী ও সরকারের উদ্দেশ্যে 'স্টুপিড' শব্দটি উচ্চারণ করলে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি উঠত, সন্দেহ নেই।

চীনের ঢাকাস্থ এ রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ১০ মে (২০২১) ফের বিস্ফোরক  মন্তব্য করেন 'কোয়াড' নিয়ে। সংবাদকর্মীদের  সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন- যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান 'চীনবিরোধী' যে জোট করছে তাতে বাংলাদেশ যোগ দিলে এ দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের 'সাবস্ট্যান্সিয়াল ড্যামেজ' হবে। কীভাবে ড্যামেজ হবে, সেটা খোলাসা করেননি। কেউ বলছেন- বাংলাদেশ 'কোয়াড'-এ যোগ দিলে চীন মিয়ানমারের নিষ্ঠুর সামরিক সরকারকে আরও উৎসাহ দিতে পারে যাতে নতুন করে রোহিঙ্গার ঢল নামে কক্সবাজারে। কেউ বলছেন, চীন বাংলাদেশের পণ্যে যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে তা প্রত্যাহার করে নিতে পারে। কেউ বলছেন, পদ্মা সেতু এবং অন্য যে সব প্রকল্পের কাজ করছে চীনা ঠিকাদাররা তারা ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করতে পারে। কেউ বা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে সচেষ্ট হতে পারে বেজিং। এমনও মত আছে যে করোনার ভ্যাকসিনের জোগান নিয়েও অনাবশ্যক দরকষাকষি করা হতে পারে।  

অথচ বাংলাদেশ 'চার দেশের অনানুষ্ঠানিক নিরাপত্তা সংলাপ বা কোয়াড-এ' যোগদানের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। এমনকি বিষয়টি এজেন্ডাতেও নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, "আমরাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করব, বেইজিং বা অন্য কেউ নয়। তবে লি জিমিং যে মন্তব্য করেছেন সেটা দুর্ভাগ্যজনক এবং এতে  আগ্রাসী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে।"

বাংলাদেশের এ কঠোর অবস্থানের কারণে একদিন যেতে না যেতেই রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ব্যাখ্যা দেন- তিনি ইংরেজিতে কাঁচা, কী বলতে কী বলে ফেলেছেন! তবে চীনা দূত যে মুখ ফসকে বাংলাদেশকে হুমকি দিয়েছেন, সেটা বলা যাবে না। ১২ মে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেইজিংয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন- "বাংলাদেশের কোয়াডে যোগদান প্রশ্নে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়নি।"

আরও কয়েক মাস আগে, ২৬ জানুয়ারি (২০২১) গ্লোবাল টাইমস-এ এক নিবন্ধে লেং শুমেইয়ের মন্তব্য আমরা স্মরণ করতে পারি- "বাংলাদেশে চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের ট্রায়াল না করার পেছনে রয়েছে ভারত।" অথচ বাংলাদেশ ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য ওষুধ প্রশ্নে একটি নীতি অনুসরণ করছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও এর অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

আমরা জানি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে অনেক ইস্যুতেই অভিন্ন মত নেই। প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালে ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী করোনার মতো ভয়ংকর ভাইরাস ছড়ানোর জন্য চীনকে দায়ী করেছেন।

চীন করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী হোক বা না হোক, এ ভাইরাস যে দ্রুত মানুষের মাধ্যমে অতি সহজে ছড়ায় সে বিষয়টি চীন কয়েক সপ্তাহ গোপন রেখেছে- এটাই একমাত্র সত্য। চীনের নেতৃত্ব কি বিষয়টি নিয়ে কখনও অনুতাপ প্রকাশ করছে? তারা নিজেদের দেশে সংক্রমণ ঠেকাতে সফল বলে দাবি করছে। কিন্তু অন্য দেশে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তার দায় কি তাদের একটুও নেই? করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে- এটা চীনের ঘোষণা এবং তা প্রশংসা পাবে। তাদের কাছ থেকে ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পেয়েছে বাংলাদেশ। আরও পাবে, এমন প্রতিশ্রুতি মিলছে। তবে এমন বদান্যতার পরও চীন থেকে ভয়ংকর ভাইরাস বাংলাদেশসহ অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়া কেন তারা রোধ করতে পারল না, সে প্রশ্নের জবাব মানবজাতি চাইতেই থাকবে। 

চীনের একটি মস্ত সুবিধা বা অ্যাডভান্টেজ রয়েছে বাংলাদেশে। তারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার। কিছু লোক রয়েছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় প্রবল আপত্তি তোলে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ যেন জাতিসংঘের সদস্য হতে না পারে সেজন্য মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রকাশ্যেই চীনকে জাতিসংঘে ভেটো দেওয়ার অনুরোধ করেন এবং সেটা রক্ষা করা হয়। তিনিসহ আরও কয়েকজন নেতা কারণে-অকারণে ভারতবিরোধী জিকির তোলেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে অস্ত্র ও নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল চীন। চীনের সৈন্যরা বাংলাদেশ ও ভারতের মিত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে লড়াই করবে, এ বিশ্বাস ছিল ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর। কিন্তু সবচেয়ে জনবহুল দেশটির বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে অবস্থান বিবেচনায় রেখে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তারপরও চীন ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা জবরদখলকারী জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীকালে এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়া চীনের তরফে সমর্থন পেয়েছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধুর নীতি অনুসরণ করতে থাকেন। চীন ও ভারতের অনেক ইস্যুতে বিরোধ রয়েছে। বাংলাদেশ উভয় দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে পারছে, এটা পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের নজর এড়ায় না। 

দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রকৃত প্রসার ঘটেছে আওয়ামী লীগ শাসনামলেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণ ও প্রমত্ত পদ্মা নদীর নিয়ন্ত্রণের দুইটি কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন চীনের দুটি কোম্পানিকে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে চীনের বাণিজ্য হু হু করে বাড়ছে এবং এটা একতরফা। বলা যায়, পুরোটাই চীনের অনুকূলে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশ চীন থেকে ১৩৮৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে এ বছর আমদানি ছিল ৭৬৪ কোটি ডলারের পণ্য। চীন থেকে আমদানি ভারতের প্রায় দ্বিগুণ!

বাংলাদেশ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে চীনে রফতানি করেছে ৮৩ কোটি ডলারের পণ্য। এ বছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১২৪ কোটি ডলার।

ভারত ও চীন, উভয় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রকট- আমদানি বেশি, রপ্তানি অনেক কম। কিন্তু চীনের সুবিধা হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য তাদের বিপুলভাবে অনুকূলে হলেও সেটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনা তেমন হয় না, যতটা উচ্চবাচ্য ভারতের প্রসঙ্গ নিয়ে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ স্থান দিচ্ছেন, এটা স্বীকৃত। অর্থনৈতিক কূটনীতি গুরুত্ব পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, ভারত, চীন, জার্মানি, সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, কানাডা- সবার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক। আবার অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্যর রয়েছে। এ পার্থক্য কমিয়ে আনার উদ্যোগ  আছে। তবে কখনও বা প্রকাশ্য বিতর্কে বিষয়গুলো না আনা কূটনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং 'কোয়াড' প্রশ্নে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা অগ্রহণযোগ্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, "আমরা চীনের সঙ্গে  বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। তাদের কাছে আমাদের অভিমতও তুলে ধরব। কিন্তু কূটনীতির  রীতির কারণে সবটা প্রকাশ করা হবে না। তাতে ক্ষতির শঙ্কা থাকে। ভারতসহ অন্য দেশের জন্যও এটা প্রযোজ্য। বাংলাদেশ তার নিজের স্বার্থ বুঝে নিতে শিখেছে এবং এ পথে দৃঢ় পদক্ষেপে চলতে সংকল্পবদ্ধ।"

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীন সত্ত্বার কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন ১৮ মে (২০২১) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে। তিনি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় রেললাইন তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, "এক সময়ে অন্যের পরামর্শেই দেশ চলেছে। আমি এটা করব না। কারণ, দেশটা আমাদের এবং আমরাই ভালো জানি কিসে দেশের এবং জনগণের উন্নতি হবে।" 

চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল নিশ্চয়ই এ বার্তার মর্মার্থ  উপলব্ধি করবে।