সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন প্রাগে ছিলেন

নাদিরা মজুমদার
Published : 7 Nov 2012, 05:58 PM
Updated : 7 Nov 2012, 05:58 PM

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও স্বাতী বৌদি'র সঙ্গে ডঃ হানা প্রায়েনহেলতেরোভা ওরফে আমাদের হানা'দির ভালো জানাশোনা ছিল। যতবার কোলকাতা গেছেন, গাঙ্গুলী পরিবার সমাদরের সঙ্গে হানাদি'কে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গেছেন তাঁদের গরিয়াহাটের বাড়িতে। তাই সুনীল যে অন্য পৃথিবীতে পাড়ি দিয়েছেন, আর নেই- সংবাদটি হানাদি'কে ফোন করে জানালাম। হানাদি'র কাছে শুনেছি যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেশে-দেশে ঘুরতে খুব ভালবাসতেন। সে হিসেবে সুনীলের সম্ভবত সর্বশেষ বিদেশ ভ্রমণ হয় প্রাগে।

সুনীল আগেও প্রাগে এসেছিলেন, প্রথমবার সেই ১৯৮৮ সালে। ২০১২ সালের মে মাসে আসেন "বইয়ের বিশ্ব প্রাগ" নামক চেকদেশের সবচেয়ে বড় বইমেলা ও সাহিত্য উৎসবের অতিথি হয়ে। সঙ্গে ছিলেন হিন্দি, গুজরাটি, মালয়ালম ও অহমিয়া ভাষার কয়েকজন সাহিত্যিকও। বইমেলাটি প্রতিবছর হয়; চারদিন স্থায়ী এ বইমেলার এক বিশেষত্ব হল সাহিত্যবিষয়ক ও লেখকসংক্রান্ত জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান থাকতেই হবে, এবং এর পরিধি আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্য়ন্ত বিস্তৃত হতে হবে। এলাহি ব্যাপার! ২০১২ সালের মেলায় বিশ্বের ত্রিশ দেশের শ'চারেক অতিথি আসেন- তাঁদেরই একজন ছিলেন সুনীল, সঙ্গে ছিলেন অগ্রহণ কৃষ্ণমূর্তি, রমণ সোনি, রমেশ চন্দ্র শাহ ও আসামের পঙ্কজ ঠাকুর। সুনীলের নেতৃত্বে ভারতের সাহিত্য একাডেমি প্রতিনিধিদলটিকে পাঠায় 'বইয়ের বিশ্ব' প্রাগে।

ইনস্টিটিউট অব সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়া সমসাময়িক ভারতীয় (দেশীয় ভাষায় রচিত) সাহিত্য নামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সে অনুষ্ঠানে, সুনীল ও তাঁর কলিগদের বদৌলতে আমরা বিভিন্ন ভাষায় রচিত ভারতীয় সাহিত্যের ক্রমপ্রবৃদ্ধির ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা পাই। তবে আমার জন্য আরও বেশি চমকপ্রদ ছিল যে চেক সাহিত্যের সঙ্গেও তাঁরা নিবিড়ভাবে পরিচিত। ফ্রান্স কাফকা, কারেল চাপেক, ভ্লাতিমিল হ্রাবাল, এমনকী বিতর্কিত সমসাময়িককালের মিলান কুনডেরাসহ অনেকের সাহিত্যকর্ম বাংলায় কী হিন্দি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে, তাঁরা এ সব পড়েছেন। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী চেক কবি ইয়ারোস্লাভ সেইফার্টের কবিতার সঙ্গেও ভারতীয় পাঠকরা পরিচিত। বাংলাসহ অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় রচিত সাহিত্য, যেমন, হিন্দি সাহিত্যও চেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে ও হয়ে থাকে।


ফলে, সুনীলের সাহিত্যর্কমও, বিশেষ করে ছোটগল্প, চেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। বলা যায় যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে চেকরা পরিচিত হয় দুই মনীষীর মাধ্যমে – আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও চেকদের পক্ষে প্রফেসর ভিনসেন্স লেসনি। রবীন্দ্রনাথের আমন্তণে প্রফেসর লেসনি শান্তিনিকেতনে পড়াতে গিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যে দু'বার প্রাগে আসেন, দু'বারই বড় মাপের ভিআইপি সমাদর দেওয়া হয় তাঁকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে হিটলারের জার্মানির সঙ্গে চেকোস্লোভাকিয়াকে সংযুক্ত করে নেয়ার প্রস্তুতিলগ্নে, রবীন্দ্রনাথের সরব প্রতিবাদী ভূমিকা চেকরা যেমন ভুলে যাননি-আমরা, বাঙালিরা, রাজনৈতিক সঠিকতার প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথের আপোষহীন ঋজুতার নতুন এক পরিচয় পাই। এমনকী পরাধীন ভারতের রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে পন্ডিত জওহরলাল নেহরু ১৯৩৭ সালে প্রাগে আসেন। সে যা হোক, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যপ্রীতির সঙ্গে চেকদের সেই যে রাখিবন্ধন হয়, সেটি এখনও অক্ষুণ্ন রয়েছে।

চেক ভাষায় সুনীল পরিচিতি লাভ করেন হানাদি'র মাধ্যমে। বিভিন্ন পত্রিকায় সুনীলের গল্পের চেক অনুবাদ আগেই প্রকাশিত হয়েছে। অবশেষে ২০০৬ সালে বাংলা ভাষায় রচিত প্রেমভিত্তিক গল্পের একটি সংকলন চেক ভাষায় প্রকাশ করেন তিনি; তাতে সাকুল্যে চৌদ্দজন লেখকের চৌদ্দটি গল্প নিয়ে "লাসকি নেলাসকাভে" (বাংলায় বোধহয় হবে- অনুদার ভালবাসা, বা দয়াহীন ভালবাসা-ও হতে পারে), এবং তাতে সুনীলের 'রূপের কাঙ্গাল' গল্পটি রয়েছে। গল্পসংগ্রহের তৃতীয় খন্ড থেকে এ গল্পটি নেয়া হয়েছে; চেক পাঠকের বোধগম্যের জন্য হানাদি সুন্দর নাতিদীর্ঘ একটি টিকা মূল গল্পের শুরুতে জুড়ে দেন। ভালো অনুবাদককে মাতৃভাষার দখল ও সাহিত্যজ্ঞান থাকা যে কত জরুরী, এবং হানাদির দুই'ই রয়েছে, তাঁর অনুবাদ পড়লে বোঝা যায়। সংকলনের বাকি তেরোজন লেখকের সবাই ভারতীয়।

হানাদি'র বাসায় নিজস্ব সংগ্রহে সুনীলের গল্পসংগ্রহের চারটি খন্ড রয়েছে। একেকটি গল্প পড়েন আর নিজের মতামত লিখেন। যেমন, ভালো লাগল কি লাগল না, লাগা না-লাগার কারণগুলো, চেক ভাষায় অনুবাদ সম্ভব কি প্রায়-সম্ভব, নাকি মোটেই সম্ভব নয় – ইত্যাদি ব্যক্তিগত নোট। দেখলাম যে সুনীলের চারখন্ডের সবক'টি গল্পই হানাদি'র পড়া হয়ে গেছে অনেক আগেই। বাঙালি পাঠকের যে অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক সুনীল, হানাদি জানেন; তাঁর মতে, প্রচুর লিখেন তিনি, এত পাবলিকেশন খুব কম লেখকেরই রয়েছে!

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্পসমগ্র থেকে বাছাই করে কিছু গল্পের চেক অনুবাদের একটি বই তিনি প্রকাশ করেন, নাম "মহাপৃথিবী" (ওহ্রমনী সোয়েত)। অনূদিত সংকলনের প্রথম গল্প 'মহাপৃথিবী' দিয়ে শুরু। বাকি গল্পের অধিকাংশই নেয়া হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড থেকে; তৃতীয় খন্ড থেকেও- তবে মাত্র দুটো গল্প এবং চর্তুথ খন্ড থেকে একটিও নয়। প্রথম খন্ড থেকে অনুবাদ করেন: 'মহাপৃথিবী' ছাড়াও 'ধর্মাধর্ম', 'যা চলছে', 'ক্ষরা', 'প্রতিদিনের জীবন', 'টেলিগ্রাম', 'একজন মানুষ', 'হলুদ বাড়ি', 'স্বর্গদর্শন', 'পলাতক ও অনুসরণকারী'; দ্বিতীয় খন্ড থেকে নেন: 'ইরফান আলি', 'ফুল ও নারী', 'দূর থেকে দেখা', 'ব্যক্তিগত', 'স্বর্গের বারান্দায়', 'মনের অসুখ', 'দূর উদাস', 'নীরার অসুখ', 'বিজন তুমি কি', এবং তৃতীয় খন্ড থেকে হানাদি যে দুটো গল্প বেছে নেন, সেগুলো হল: 'দেবদূতের ভয়' ও 'দেবদূত অথবা বারোহাতের কান্না'। দেখা যাচ্ছে যে 'ওহ্রমনী সোয়েত' বা 'মহাপৃথিবী' গল্পসংগ্রহের পঞ্চাশ ভাগ গল্পই বেছে নেন প্রথম খন্ড থেকে, তারপরই প্রাধান্য পায় দ্বিতীয় খন্ডের গল্পগুলো।


সর্বোপরি, পাঠকের আগ্রহ মেটানোর জন্য বইটিতে খুব যত্ন করে সুনীলের একটি জীবনী জুড়ে দিতে ভোলেননি অনুবাদক হানাদি। তাছাড়াও, এক সেমিনার উপলক্ষে প্রকাশিত সংকলনে সুনীলের 'হঠাৎ একটি নারী' গল্পটিরও চেক অনুবাদ প্রকাশিত হয়; হানাদির এক ছাত্রী অনুবাদটি করেন। পাঠক, গল্পের বানানসহ অন্য কিছু ভুলটুল থাকলে, দোষটি আমার; কারণ, সংকলিত গল্পের বাংলা তালিকাটি হানাদির কাছ থেকে নিই ফোনের মাধ্যমে। হানাদির অনুবাদে বাংলাদেশের হাসান আজিজুল হক ছাড়া আর কেউ নেই; মূল কারণ, বাংলাদেশের লেখকদের গল্প-উপন্যাস পড়ার মোটেই সুযোগ নেই তাঁর।

সুনীল কমবেশি ২৫০টি বইয়ের লেখক; সাহিত্য ক্ষেত্রের প্রতিটি 'জেনর'কে তিনি ছুঁয়ে গেছেন। খুব খুব কম লেখক-সাহিত্যিকই এমন পারদর্শী ছিলেন। তাঁর গল্প নিয়ে সত্যজিৎ রায় ফিল্ম বানিয়েছেন, টিভি'তে নাটক হয়েছে; সুনীল কবিতা লিখেছেন; সুনীল দু'হাতে লিখেছেন, এবং সফল সৃষ্টিকর্মের জন্য পুরস্কৃতও হয়েছেন। হানাদি'র মতে, পশ্চিমের মাপকাঠিতে সুনীলের ছোটগল্প বিশ্বসাহিত্যের পর্যায়ে পড়ে।

ইনস্টিটিউট অব সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়া'র অনুষ্ঠানে সুনীল বললেন যে তাঁর জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরে; বাবা চাকরি করতেন কোলকাতায়-সে সুবাদে শৈশবে কোলকাতায় চলে যান। পড়াশুনো করেন কোলকাতায়। আরও বললেন যে, কেবলমাত্র লেখাকে জীবিকানির্বাহের একমাত্র উৎস করে জীবনধারণ প্রায়ই সম্ভব হয় না বলে লেখক-কবিদেরও চাকরি-বাকরি করতে হয়, এবং তা যখন করতেই হয়, তো সবচেয়ে সৃজনশীল উপায় হল পত্রপত্রিকায় কাজ করা। জীবনসংগ্রামের শুরুতে তিনি নানারকমের আর ধরনের চাকরিবাকরি করেন। অবশেষে সাংবাদিকতার কাজে ঢোকেন, আনন্দবাজারে চাকরি হয় তাঁর। দীর্ঘদিন দেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দিল্লীভিত্তিক সর্বভারতীয় সাহিত্য একাডেমির প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

চারদিনের বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর, ভারতীয় প্রতিনিধিদলের বাকিরা সবাই দেশে ফিরে গেলেও গাঙ্গুলী-পরিবার প্রাগে আরও তিন-চারদিন বাড়তি থেকে গেলেন বা থাকতে হল তাঁদের। স্বাতী বৌদি অবশ্য বলছিলেন যে ক'জন পরিচিত আসছেন বিভিন্ন দেশ থেকে, সবাই একসঙ্গে প্রাগে বসে আড্ডা দেবেন, ইচ্ছা হলে সবাই মিলে অন্য শহরে বেড়াতেও যেতে পারেন ইত্যাদি। বেশ কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের প্ল্যান বলে মনে হল। তবে সবই সম্ভব, প্রায়-সম্ভব! মামুন 'কারি হাউস' নামে একটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট চালায়; সে ও তার স্ত্রী মুন্নি ফোন করে রোববার দিন সন্ধায় সেই রেস্টুরেন্টে আসতে বলল। কী নাকি সারপ্রাইজ রয়েছে!

প্রাগ থেকে ফিরে গিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আনন্দবাজারের এক কলামে লিখেছিলেন যে, কাউকে-কাউকে দেখলেই মনে হয় লোকটি বাঙালি। উদাহরণস্বরূপ তিনি যে মামুনের কথা বলেন, এই সেই মামুন। গিয়ে দেখি সত্যি সারপ্রাইজই বটে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, স্বাতী বৌ এবং আরও ক'জন বিশাল এক টেবিলজুড়ে বসে আছেন। এই বাকিরা সব সুনীলের মহাভক্ত, সুহৃদও! একজন এসেছেন প্যারিস থেকে, তিনি কবিতা লিখেন। সুদূর ক্যানাডা থেকে আরেক পরিবার। ইংল্যান্ড থেকে সৌমিত্র ও মুনমুন। গাঙ্গুলী-পরিবার যখন মাঝরাস্তায় এসে গেছেন, তবে ঝটপট তাঁদের একটা দেখা দিলে ক্ষতি কী? এই ভেবে ক্যানাডার দম্পতি প্রাগে এসেছেন। বাকিরা এসেছেন 'মাত্র তো কয়েক ঘন্টার পথ' বলে।

এঁদের মধ্যে সৌমিত্র ও মুনমুন কোলকাতায় থাকেন, নাটক-থিয়েটার নিয়ে ব্যস্ত। কথায় কথায় জানা গেল যে ১৫০তম রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শর্মিলা ঠাকুর যে প্রোগ্রামটি করেন, সেটির ব্যবস্থাপনা করেছিলেন তাঁরা। বললাম যে, টিকেট-ঘাপলার জন্য যাওয়া হয়নি। শুনে বললেন যে, টিকেট-সংক্রান্ত বিষয়টি তাঁদের হাতে ছিল না। তাঁরা লন্ডনে এসেছিলেন অন্য কাজে। তবে গাঙ্গুলী-পরিবার এত কাছে থাকায় প্রাগে ঢুঁ দিয়ে দেখা করে যাওয়া আর কি! বাংলাদেশের অনেকের সঙ্গে সৌমিত্র ও মুনমুনদের পরিচয় রয়েছে; দিলারা হাফিজকে ওঁরা 'ভাবি' বলে ডাকেন।

খাবার টেবিলে প্রথম চোটে এল বেগুনভাজা-ভর্তি একাধিক প্লেট। বেগুনভাজা সুনীলের প্রিয় ডিশ। সঙ্গে তন্দুরে সেঁকা রুটি। বোঝা গেল যে, মামুন-মুন্নি তাঁর আগেভাগেই প্রিয় খাবারের হদিশ করে নিয়েছে। তবে সুনীলের জন্যই বিশেষভাবে বেগুনভাজা করা হয়েছে বললেও অন্যরাও এটা যে খেতে ভালবাসে, দেখে তাই মনে হল। আরও হরেক খাবার ছিল। আমার মনে হল, 'কারি হাউস'-এর রান্না ভালো। নামি লোকরা এখানে নিয়মিত আসেন বলেই হয়তো! খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চলে ছবি তোলার ধুম; অটোগ্রাফ নেয়া ইত্যাদি।

প্রাগে আতিথ্যকর্তার সংগ্রহে সুনীলের এতগুলো বই যে রয়েছে, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সুনীল নিজেও কি বিস্মিত হননি! জিজ্ঞাসা করা হয়নি তাঁকে; আর কোনদিন হবেও না। রাত বেশ খানিকটা হয়ে গেছে, সুনীল অটোগ্রাফ দিতে অভ্যস্ত; আর আতিথ্যকর্তাকে অখুশিই-বা করেন কীভাবে? অটোগ্রাফ-দানরত সুনীলকে সবাই যখন ঘিরে রয়েছে, স্বাতী বৌদি তখন সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছেন, আর হাসছেন। বললাম, নামিদামি লোকের স্ত্রী হওয়াটা সহজ নয় বোধহয়! হেসে বললেন, এই লোকটিকে বিয়ে করতে বাড়ি থেকে আপত্তি উঠেছিল ….. । …ইত্যবসরে অটোগ্রাফের পালা শেষ, রাত অনেক হয়েছে বলে হোটেলে চলো'র তাড়া, তাই আপত্তি ওঠার সে গল্প শোনার সময় হয়নি। কোলকাতায় গেলে গরিয়াহাটের বাড়িতে অবশ্যই যেন যাই, আর বললেন যে ওখানটায় গেলে বাড়ি চিনতে কোনও অসুবিধে হবে না। না শোনা গল্পটি গরিয়াহটের বাড়িতে গিয়ে শুনে আসতে হবে।

স্বাতী বৌদি, আমরা সবাই সব্যসাচী এক সাহিত্যপ্রতিভাকে হারিয়েছি। আর আপনি হারিয়েছেন অনেক অনেক বেশি …. তবু যা শুধু আপনারই, কারও তাতে ভাগ বসানোর পথ নেই; তা কেবলমাত্র আপনার সঙ্গেই থাকবে, আমৃত্যু থেকে যাবে। এ সব কিছু উতরে যাওয়ার ক্ষমতা আপনার আছে। ভালো থাকুন। কোলকাতায় গেলে অবশ্যই গরিয়াহাটার বাড়িতে যাব!

নাদিরা মজুমদার: বিশ্লেষক, লেখক, সাংবাদিক।