আমাদের ধনীরা নিতে চান, দিতে চান না

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 23 May 2021, 08:12 AM
Updated : 23 May 2021, 08:12 AM

পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবারের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়ায় বাঙালিরা ক্ষুব্ধ হয়েছিল। ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে গরীব মানুষদের উত্তেজিত করা ছিল রাজনৈতিক নেতাদের একটি প্রিয় কাজ। শোষণ-বঞ্চনা-বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করলাম, স্বাধীন হলাম। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূল স্বপ্ন ছিল 'বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো'। ৫০ বছরে এসে আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, তখনও এটা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, দেশের সব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এখনও সম্ভব হয়নি।

তবে এটা ঠিক যে, এখন দেশের সম্পদের সিংহভাগ মাত্র ২২ পরিবারের হাতে কুক্ষিগত নেই। দেশে ধনী বা কোটিপতির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কারও কারও হিসেবে দেশে এখন কোটিপতির সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৯ সালের হিসাবে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৮৪ হাজারের মতো। প্রতি বছরই এই সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি করোনার সময়ও কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। দেশে ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক হিসাব আছে প্রায় তিনশর মতো। দেশে একদিকে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে বাড়ছে অভাবী মানুষের সংখ্যা। ধর্ম-বৈষম্য যেভাবে বাড়ছে তাতে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। মানুষ অন্যায্য কিছু বেশিদিন বরদাশত করে না।

এতসব কথা বলার কারণ হলো, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের একজন শিল্পপতি বা ধনকুবেরের একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের দেশের একটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর এমডির একটি ঘটনা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। 

ভারতের একজন অন্যতম শিল্পপতি রতন টাটা করোনাভাইরাসের এ সময়ে অভাবগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় এক হাজার ৫০০ কোটি রুপি  দিয়ে বলেছেন, "শুধু ১৫০০ কোটি রুপিই নয়, আমার দেশ যদি সংকটে পড়ে, তাহলে আমি আমার সমস্ত সম্পত্তিও দিয়ে দিতে রাজি আছি।" ভারতের আরেক ধনাঢ্য ব্যক্তি আজিম প্রেমজির বক্তব্যও দেখা যাচ্ছে। তিনিও প্রায় একই রকম মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তার মানে বিশ্বখ্যাত এসব ভারতীয় ধনী ব্যক্তি দেশের সংকটে নিজেদের বিপুল সম্পদ অসহায় সাধারণ মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিতে তাদের যে দ্বিধা নেই, সেটা জানিয়েছেন।

আমাদের নিজের দেশের ধনীদের কারো কাছ থেকে এমন বক্তব্য শোনা যায়নি। এমন একজনের নাম বলা যাবে না, যিনি এরকম একটি বিবৃতি দিয়েছেন অথবা অসহায় মানুষের কাছে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। একজন শিল্পপতি বা ধনাঢ্য ব্যক্তিও কি পাওয়া যাচ্ছে যিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করছেন?

বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ হয়তো কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করছেন কিন্তু তারা অত বড় ধনী নন।  পাড়া মহল্লায় হয়তো কিছু চাল, ডাল দিচ্ছেন। কিন্তু সত্যিকার বিত্তবান বা ধনীদের ওই ভাবে অসহায় অভাবী মানুষের পাশে দেখা যায়নি, যাচ্ছেও না।

এ কোভিডের আঘাত বা লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, হকার ও একেবারে যাদের ধরাবাধা নিয়মিত কোনো কাজ নেই, আয়-উপার্জন নেই । এসব মানুষেরা কীভাবে  খেয়ে-পরে টিকে থাকার যুদ্ধ করছেন, তার সবটা আমরা জানি না। তাদের এই জীবনসংগ্রামে সরকার ছাড়া আর কাউকে তেমনভাবে দেখা যাচ্ছে না। সরকারের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, ব্যবস্থাপনার ত্রুটি-দুর্বলতা আছে এবং  আছে অনিবার্যভাবে কিছু অনিয়ম এবং দুর্নীতি। 

আমাদের দেশে ধনিকগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে মূলত লুটপাটের মাধ্যমে। সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে কেউ কেউ বিত্তের অধিকারী হননি, তা অবশ্যই নয়। তবে তাদের সংখ্যা খুব কম। কিছু দান খয়রাত এই সৎ ও উদ্যোগী ধনীরাই করে থাকেন। ১৯৮৪ সালে সাপ্তাহিক একতা পত্রিকায় 'ধনিকগোষ্ঠীর লুটপাটের কাহিনী' শিরোনামে ৩৬ পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। তখনই এটা জানা গিয়েছিল যে সরকারি আনুকূল্যে ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে দেশে একটি লুটেরা ধনী শ্রেণি গড়ে উঠছে। পরে এই ধারা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। সব সরকারের আমলেই কিছু মানুষকে বড় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এই লুটেরারাই এখন দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর, রাজনীতি, সরকার সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে। একসময় দলীয় তহবিলে চাঁদা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা হলেও এখন অনেকে সরাসরি রাজনীতি করছেন, মন্ত্রী-এমপি হয়ে নীতিনির্ধারণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছেন।

সরকারের কাছ থেকে নগদ সহায়তা, শুল্ক-কর ছাড়, ব্যাংকঋণের সুদের হারে ছাড়, নানা রকম প্রণোদনা নিয়ে বেসরকারি খাত ফুলেফেঁপে উঠলেও দেশ এবং দেশের সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে তাদের সেভাবে পাওয়া যায় না। তারা সব সময় শুধু নিতে জানেন, দেওয়ার হাত তাদের একেবারেই নেই।  লাখ লাখ মানুষ যখন দুই মুঠো ভাতের জন্য নিরূপায় ছোটাছুটি করেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করতে ভয় পান না, তখন বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য নানা আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা পেতে সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে ব্যস্ত। তারা প্রণোদনা আদায়ও করতে সক্ষম হচ্ছেন।

শুধু তাই নয়, অনেক বেশি সুবিধা নেওয়া কিছু কিছু খাত কাজ করিয়ে নেওয়া শ্রমিকদের মাসের মজুরি দেওয়ার জন্যও সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকছে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাদের বলতে গেলে এখন খেয়েপরে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য নগদ সহায়তা কিংবা খাবার সাহায্য প্রয়োজন। সব যে সরকারই করবে এমন নয়, সরকার তার সক্ষমতার মধ্যে করে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকার দিতে চাইলেও মাঝপথে নানান অনিয়ম বিশৃংখলার কারণে এ সহায়তা তাদের হাতে ঠিকমতো পৌঁছায় না। তাই কথা উঠছে যে, বড় বড় গ্রুপ বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান চাইলে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিপত্র জারি করেছে যাতে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক তাদের সিএসআরের আওতায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আথিক প্রতিষ্ঠান তাদের মুনাফার একটি অংশ সিএসআরের আওতায় তহবিল জোগাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআরও পরিপত্র জারি করে রেখেছে, যেসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান সিএসআর করবে তাদের আয়ের একটি অংশ করমুক্ত সুবিধা পাবে। এরকম নানান ছাড় দেওয়ার পরও এই করোনা কালে ধনীদের মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার ঘটনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ অর্থনৈতিক জরিপ বলছে, দেশে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৭৮ লাখ। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব ছোট একটি অংশ যদি এ দুর্দিনে এগিয়ে আসে তাতেও সরকারের ওপর চাপ কমে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন-আইএফসির সর্বশেষ গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের উৎপাদনশীল কারখানার অংশীদারির দিক থেকে ৩৭ শতাংশ ক্ষুদ্র, ১৪ শতাংশ মাঝারি হলেও ৮ শতাংশ বৃহৎ শিল্পের হাতেই বিপুল পরিমাণ পুঁজি।

সংস্থাটির ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াজাত, পোশাক, টেলিযোগাযোগ, ইলেকট্রনিক, খাদ্য, স্টিল, মোবাইল, ওষুধ খাতের শীর্ষ ১৩টি প্রতিষ্ঠানের বছরে আয় ১৭০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ১০০ কোটি ডলার বা সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত। এ প্রতিষ্ঠানগুলো হল—এ কে খান গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপ।

এছাড়া আরও ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের আয় সাড়ে চার হাজার কোটি থেকে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—নোমান গ্রুপ, বিএসআরএম গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ, হা-মীম গ্রুপ, এসিআই গ্রুপ, ট্রান্সকম গ্রুপ, ভিয়েলাটেক্স গ্রুপ, প্যাসিফিক জিনস, কনফিডেন্স গ্রুপ ও ওয়ালটন গ্রুপ। বর্তমানে করোনার এ দুর্দিনেও একচেটিয়া ব্যবসা করছে দেশের টেলিযোগাযোগ বা মোবাইল অপারেটররা। পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদক, বিপণন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসাও বেশ ভালো। তাদের দিক থেকেও এ সময়ে সহায়তার কোনো তথ্য জানা যায়নি।

এনজিওগুলো দরিদ্র মানুষদের নিয়ে কাজ করলেও এ দুর্দিনে তাদের বেশির ভাগেরই বড় কোনও সহায়তার কথা জানা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনজিওদের মধ্যে ব্র্যাক গত বছরে সাহায্য-সহায়তা করেছে। এছাড়াও আশা, সাজিদা ফাউন্ডেশন কিছু কাজ করেছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ এনজিও গ্রামীণ ব্যাংক, আরডিআরএস, ব্যুরো বাংলাদেশসহ আরো যেসব বড় এনজিও রয়েছে, এ দুর্দিনে তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো আর্থিক সহায়তামূলক কার্যক্রমের খবর জানা যায়নি। গ্রামীণ ব্যাংকসহ দেড় ডজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিক থেকেও কোভিডের এ দুঃসময়ে বড় কোনো আর্থিক সহায়তা বা কার্যক্রম নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি তাকে কোনো বিবৃতি দিতেও দেখা যায়নি।

জানা যায়, বিশ্বের শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান, শিল্প গ্রুপ, ধনী ব্যক্তিরাও করোনাভাইরাসের এ আর্থিক মন্দা মোকাবেলায় নিজ নিজ দেশ, এমনকি অন্য গরীব দেশের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। গত বছর অনলাইন বাজার আমাজন পাঁচ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ঘোষণা করেছে। মাইক্রোসফট, আলাস্কা এয়ারলাইনস, স্টারবাক আড়াই মিলিয়ন ডলার, ফেসবুক ২০ মিলিয়ন ডলার এবং অ্যাপল ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রোচি প্রতি সপ্তাহে চার লাখ মানুষের করোনাভাইরাসের টেস্ট কিট বিনামূল্যে দিয়েছে। 

গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড, ডাইসন, জেনারেল মোটরস গাড়ির বদলে আপাতত জীবন বাঁচাতে ভেন্টিলেটর ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি বানিয়ে বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে। ফ্রান্সের বিশ্বসেরা যন্ত্রপাতি ও প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদক ব্র্যান্ড এলভিএমএইচ মানুষকে সুরক্ষা দিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করেছে। আলিবাবা ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা সারা বিশ্বে মাস্ক, পিপিই ফ্রিতে সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতের শীর্ষ গ্রুপের উদ্যোক্তারাও দেশের এ দুর্দিনে সাড়া দিয়েছে। টাটা গ্রুপ, দিয়াগু ইন্ডিয়া গ্রুপ, বেদান্ত রিসোর্সের প্রধান নির্বাহী অনিল আগারওয়াল, রিলায়েন্স গ্রুপের মুকেশ আম্বানি, পাইথন গ্রুপের সিইও শেখর শর্মা, মাহিন্দ্র গ্রুপ, গোদরেজ, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার গেলবার থেকে সহায়তা দিয়ে আসছে।

অন্যদিকে, করোনাকালেও আমরা বাংলাদেশের কিছু মানুষের নানা দুর্নীতির খবর জেনেছি। জরুরী স্বাস্থ্য সামগ্রী কেনাকাটায় অনিয়মসহ আরও নানা দুর্নীতির খবর শুনে বিচলিত না হয়ে পারা যায় না। মানুষের জীবন রক্ষার নামে সম্পদের পাহাড় গড়ার মানসিকতা যাদের, তাদের মানুষ বলতেও বাধে। দেশের অন্যতম বড় একটি শিল্প-ব্যবসায়ী গ্রুপ বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নারী কেলেংকারী, একটি কলেজ পড়ুয়া মেয়ের আত্মহত্যা এবং এসব কেলেংকারী ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের খবর পড়ে ক্ষুব্ধ হওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকে না। এই ধনীরা ব্যক্তিগত ভোগবিলাসের পেছনে দুহাতে টাকা উড়ালেও গরিব মানুষের জীবন রক্ষায় টাকা ব্যয়ে তাদের কার্পণ্যের শেষ নেই।

লুটেরা ধনীদের বিরুদ্ধে শক্ত মনোভাব দেখানোর দৃঢ়তা সরকারের না থাকলে সরকারের প্রতিও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়বে। বিদেশে অর্থ পাচার করবে, বিদেশে দ্বিতীয় 'হোম' বানিয়ে যারা নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ ভাবে তাদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর দুর্বলতা সরকারকে পরিহার করতে হবে। সরকার ওই লুটেরাদের মাথা থেকে আশীর্বাদের হাত টেনে নিলেই তারা বুঝবে, কত ধানে কত চাল। 

বাংলাদেশে এখন অনেক ধনী আছেন, ধনসম্পদও কম নেই।  কিন্তু ধনবানদের নেই একটি দরদী মন। তারা নানা ফন্দিফিকির করে, ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে, সরকারের আনুকূল্য নিয়ে অঢেল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন, কিন্তু কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তাদের গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় না। প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানালে গণভবনে বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরাসরি উপস্থিত হয়ে তার ত্রাণ তহবিলে দলবেঁধে চেক জমা দিয়ে ফটোসেশন করেন, আর এটা করেন উদারতা থেকে নয়, পরে সুদে-আসলে উসুল করার মতলবে। এ মতবাজদের থেকে সাবধান হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। সরকার লুটেরা ধনীদের লাগাম টেনে না ধরলে তাদের বেপরোয়া ভাব বড় ক্ষতির কারণ হবে।