নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে

কবীর চৌধুরী
Published : 13 June 2010, 03:15 PM
Updated : 13 June 2010, 03:15 PM

সরকার নতুন শিক্ষানীতি মন্ত্রীসভায় পাস করেছে। কিন্তু কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে? আসল কথাই হলো এখন বাস্তবায়ন করা। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে অর্থায়ন। সরকারকে এ ব্যাপারে উদারভাবে এগিয়ে আসতে হবে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দাবি করেছে যাতে বাজেটের পঁচিশভাগ শিক্ষাখাতে দেওয়া হয়। না হলে অন্তত ২০ ভাগও যদি এ খাতে দেয়া হয় তা হলেও অন্তত একটা বড় কাজ হবে। এটা একটা দিক।

অন্যদিকে, মাদ্রাসার কথা মনে রেখে বলা হচ্ছে একমুখী শিক্ষা হতে হবে অর্থাৎ বাংলা মাধ্যম হতে হবে। ক্লাশ এইট পর্যন্ত হতে হবে। আরেকটা জিনিস সরকার খুব পরিষ্কার করে বলছেন না, সেটা বলা দরকার। সেটা হচ্ছে ইংরেজী মাধ্যম স্কুলগুলো সম্পর্কে। আমার মতে, ইংরেজী স্কুলগুলো ইংরেজী মাধ্যম হিসেবে নয়, বাংলা মাধ্যম হিসেবেই থাকতে হবে। তবে ইংরেজী তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পড়াতে পারে–এতে কোনো বাধা থাকা উচিৎ নয়।

আরও কতগুলো জিনিসের ওপর জোর দেয়া হয়েছে এই শিক্ষানীতিতে, যেমন বাংলাদেশ স্টাডিজ, মুক্তিযুদ্ধের বিষয়গুলো থাকতে হবে। নৈতিক শিক্ষা থাকতে হবে। ধর্ম শিক্ষাগত ব্যাপারে প্রচুর হৈ চৈ হয়েছিলো। সরকার একটা বিষয়ে একমত হয়েছে যে স্কুলে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ধর্মশিক্ষা দেওয়া হবে না। তবে নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয় যতটুকু সম্ভব আসবে। নামাজ রোজা পূজা অর্চনা এগুলো স্কুলে শেখানোর দরকার নেই। মাদ্রাসায় এগুলো শেখানো যেতে পারে, তবে মূল জিনিসগুলো শেখানোর পরে। মূল জিনিস হিসেবে জোর দেওয়া হচ্ছে বাংলা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা। এর পরে তারা যদি কোরান হাদিস পড়াতে চান তাহলে পড়াতে পারেন। এখন এই শিক্ষানীতির ফলে অনেকেই বলতে পারেন, আমাদের দেশে এমনিতেই প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ওঠার আগেই অনেক শিশু শিক্ষার প্রবাহ থেকে ঝরে পড়ে।

"
শিক্ষা-আইনটা হলে যেটা সুবিধা তা হলো যদি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালার বাইরে ইংরেজি মাধ্যম বা মাদ্রাসায় আরবী উর্দু ভাষার নীতিমালা বহির্ভূত কোনো কার্যক্রম চালাতে থাকে সে ক্ষেত্রে তাদেরকে আইনের আওতায় শাস্তি দেওয়া সম্ভব হবে।

"

এখন অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রলম্বিত করার ফলে ঝরে পড়ার সংখ্যা আরও বাড়বে কিনা, এক্ষেত্রে সরকারের হয়তো কিছু করণীয় আছে। তবে তার চেয়ে বেশি করণীয় হচ্ছে সমাজের। বেসরকারী সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে। বৃটিশ আমলে তো প্রাথমিক শিক্ষার কাজটা সমাজকর্মীরা করতো। গ্রামের লোকরা বা সমাজপতিরা করতো। আমাদের সময়ে এই প্রবণতা অনেকটা কমে গেছে। আরেকটি কথা, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত যেহেতু অবৈতনিক হবে, ফলে ভর্তি ফি, মাসিক বেতন এসব আর অভিভাবকদের বহন করতে হবে না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাস্তবায়নের আইন। এটার উপর আমি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাই। শিক্ষা-আইন হওয়া দরকার। সব দেশে এটা নেই। তবে কোনো কোনো দেশে এটা আছে। শিক্ষা-আইনটা হলে যেটা সুবিধা তা হলো যদি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালার বাইরে ইংরেজী মাধ্যম বা মাদ্রাসায় আরবী উর্দু ভাষার নীতিমালা বহির্ভূত কোনো কার্যক্রম চালাতে থাকে সে ক্ষেত্রে তাদেরকে আইনের আওতায় শাস্তি দেওয়া সম্ভব হবে। এই নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে একটা বড় কাজ হবে।

এর আগে বহুবার শিক্ষানীতি হয়েছে, অষ্টম বা দশম শ্রেণী পর্যন্ত হয়েছে। তাতে আসলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দিক-নির্দেশনার দিক থেকে কুদরত-এ খুদার শিক্ষানীতি খুব ভালো ছিলো। আনন্দের ব্যাপার এই যে ওই শিক্ষানীতিতে আমিও একজন সদস্য সচিব ছিলাম এক বছরের জন্য। এই  শিক্ষানীতি প্রণয়নে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। যেমন অর্থায়নের কথা বলছিলাম। এবারের শিক্ষানীতিতে কো-চেয়ারম্যান ছিলেন ড. খলীকুজ্জামান। তিনি যেহেতু অর্থনীতিবিদ ফলে তিনি অর্থায়নের ব্যাপারটা গুরুত্বের সাথে দেখবেন।