টিকা রাজনীতি: চীন-রাশিয়ার নতুন ভূ-রাজনৈতিক বিন্যাস

মর্তুজা হাসান সৈকতমর্তুজা হাসান সৈকত
Published : 18 May 2021, 03:57 PM
Updated : 18 May 2021, 03:57 PM

করোনাভাইরাস একদিকে যেমন মানুষের প্রাণ হরণ করছে, অন্যদিকে এই নিয়ে বিশ্বরাজনীতিও জমে উঠছে দিন দিন। এটা এখন প্রমাণিত যে, করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনার সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল হচ্ছে টিকা। বর্তমানে ভূ-রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আছে টিকার আবিষ্কার ও বাজারজাতকরণ নিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলোর কৌশল। এ নিয়ে চলছে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। মোটা দাগে পাঁচটি দেশ এখন করোনার টিকার রাজনীতিতে খুবই সক্রিয়: চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও ভারত। এ দেশগুলো কোভিডের টিকাকে তাদের কূটনীতির হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

ভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে মানবিক পৃথিবী কিংবা জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বের যে আশাবাদ সামনে এসেছিল- দিন দিন তা ফিকে হয়ে আসছে। এখন সামনে এসেছে টিকা রাজনীতি।  ব্যাপারটা অনেকটা এমন হয়ে গেছে যে, কে টিকা পাবে কে পাবে না, তা নির্ভর করছে এই দেশগুলোর সাথে কার কেমন সম্পর্ক তার উপরে। 

আমরা দেখেছি যে, করোনাভাইরাসে টিকা বাজারে আসার আগে থেকেই দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভারত কেন্দ্রিক প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। দেশগুলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহের জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপরই নির্ভর করেছিল। এর কারণ হচ্ছে, এসব দেশে সুলভে সরবরাহের শর্তে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদনের লাইসেন্স নিয়েছিল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। এর বাইরেও এ দেশগুলোর টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গঠিত কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিতেও টিকা সরবরাহের কথা ছিল ভারতের। বাংলাদেশ তখন দারুণ দক্ষতা দেখিয়ে আগাম অর্থ দিয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা কেনার চুক্তি করে বেশ কিছু টিকাও নিয়ে আসে। 

অন্যদিকে, ভারতও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার টিকার বাজারের একচেটিয়াকরণ করে। তারা চীনের টিকাগুলোকে আঞ্চলিক বাজার থেকে সরিয়ে দিতে কোন কিছুই বাদ রাখে নি। এক পাকিস্তান বাদে সার্কভুক্ত প্রতিটি দেশকেই তারা বিপুল পরিমাণ টিকা উপহার দেয়। এমনকি চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে এমন কিছু দেশকেও তারা উপহার হিসেবে বিপুল পরিমাণ টিকা পাঠায়। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও তারা সবচেয়ে বেশি ৩৩ লাখ টিকা উপহার দেয়।  

তবে সম্প্রতি দেশটিতে ভাইরাসের সংক্রমণ বহুগুণ বেড়ে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র কাঁচামাল রফতানি বন্ধ  করে দেওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, সেরাম ইনস্টিটিউট ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণেই হিমশিম খাচ্ছে। ফলে ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। বেশি বেশি মানুষকে টিকা দিতে রফতানি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি দেশটি এখন অন্যান্য  বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আমদানি করছে৷ 

ভারত ছাড়া বিশ্বে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশ টিকা উৎপাদন করছে। এর ফলে বাকি দেশেগুলোর টিকাদান কর্মসূচী নির্ভর করছে এই গুটিসংখ্যক দেশের উপর। এ কারণে সৃষ্ট ভারসাম্যহীন নির্ভরশীলতার কারণে ভ্যাকসিনের চাহিদা ও সরবরাহে দেখা দিয়েছে অসামঞ্জস্যতা। 

অন্যদিকে, পেটেন্টের কারণেও চাইলেই টিকার উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। এ নিয়েও আছে রাজনীতি। ওষুধ কোম্পানিগুলো টিকার সূত্র কিনে রেখেছে। সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এদের বাইরে কেউ টিকা উৎপাদন করতে পারছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়া এবং চীন নিজেদের অনুকূলে থাকা পররাষ্ট্রনীতির বিনিময়ে বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহ ও উৎপাদনের অনুমতি প্রদান করেছে। প্রসঙ্গত বিশ্বের অনেক দেশই এখন টিকা বানাতে প্রস্তুত, কিন্তু অপেক্ষা শুধু টেকনোলজি ট্রান্সফারের। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রও টিকার পেটেন্টে সাময়িক ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে। তবে পেটেন্ট ও মেধাস্বত্বে ছাড় দেওয়ার প্রসঙ্গ ওঠার পর থেকে এর বিরোধিতাও জোরালো হয়ে উঠেছে। ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। 

কোভিড-১৯ মহামারী এখন বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ সুবিধাকেই সক্রিয়ভাবে কাজে লাগাতে চাইছে চীন ও রাশিয়া।  কেবল পররাষ্ট্র নীতিমালা নিয়ে আপসের মাধ্যমে নয়, বরং টিকার বদলে তারা নিজেদের অনুকূলে ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্গঠনেও মনোযোগ দিয়েছে। ভারতের কথা তো আগেই বলেছি। চীন ও রাশিয়াও একইভাবে টিকাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। 

গত ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ায় স্পুৎনিক পাঠানোর শর্তে সিরিয়ায় আটক রাশিয়ান নাগরিকের মুক্তির দাবি তুলেছিল রাশিয়া। এই টিকা রাজনীতির কল্যাণেই রাশিয়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এমনকি ঐতিহ্যগতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশেও সখ্যতা গড়ে তুলেছে দেশটি। 

একইভাবে মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশগুলোকে নিজেদের ভূ-রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে রাশিয়া ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। এদিকে, নতুন করে ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, টিকা কূটনীতির মাধ্যমে তাইওয়ানের বিষয়ে প্যারাগুয়ের অবস্থান পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে সফল হয়েছে চীন। এছাড়া, টিকার চালানের পূর্বশর্ত হিসেবে ব্রাজিলের উপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশটির ফাইভ-জির বাজার হুয়াওয়ের জন্য উন্মুক্ত করেছে চীন। 

এখন পর্যন্ত ৭০টি দেশে টিকা পাঠাতে সম্মত হয়েছে রুশ সরকার। চীনও দ্রুত সময়ের মধ্যে ১০০ টি দেশে টিকা পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। যদিও শুরুর দিকে দেশ দুটির টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ ছিল খুবই কম। পশ্চিমা গণমাধ্যমও দেশ দুটির টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে নানা প্রতিবেদন-নিবন্ধ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সময়ে। তবে ভারতে সংক্রমণ বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে সেরাম ইন্সটিটিউটের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেশ দুটির টিকা রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। দুটি দেশই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহ ও উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। 

সম্প্রতি চীনের উদ্যোগে 'ইমার্জেন্সি ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ফর কোভিড ফর সাউথ এশিয়া' নামক একটি প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশও। তবে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলো দ্রুততম সময়ে চীন বা রাশিয়ার কোন উৎস থেকে টিকা পাবে কি না, কিংবা ভারত সরকারকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে রাজি করাতে পারবে কি না, তার সবকিছুও নির্ভর করছে এ ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ এবং বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনায় এই দেশগুলোর কূটনীতিকদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতার ওপর। 

ভারতে ডাবল মিউটেটেড ও ট্রিপল মিউটেটেড ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি বলে কোনও কোনও সংবাদ মাধ্যম বলছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও ভাইরাসের এ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এ ভ্যারিয়েন্ট যদি ভারতের মতো বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সংক্রমণে মৃত্যু ঝুঁকি মোকাবেলা করতে বাংলাদেশ সরকারকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তাই ভারত থেকে নিকট ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত টিকার চালান পাওয়া নাও যেতে পারে, আবার সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে টিকা না পাওয়া মানে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকেও টিকা না পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হওয়া। এসব ইক্যুয়েশনকে সামনে রেখে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাশিয়া ও চীনের করোনা টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এটিই ছিল সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সরকার আশা করেছে মে মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ চীন ও রাশিয়ার টিকা পাবে। 

এসবের পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজন মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উৎপাদিত ৪০ লাখ ডোজ টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র সুনজরে নাও দেখতে পারে। ভূ-রাজনীতিতে এই দেশগুলোর অবস্থান পরষ্পরবিরোধী। 

টিকার মেধাস্বত্ত্ব শিথিল হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বায়োফার্মাসিউটিক্যালস প্রযুক্তি রাশিয়া ও চীনের দখলে চলে যেতে পারে বলে এমনিতেই উদ্বেগে রয়েছে বাইডেন প্রশাসনে। অন্যদিকে, ভারত অসন্তুষ্ট হতে পারে এ কারণে পূর্বেও চীনা টিকার পরীক্ষা ও সরবরাহের প্রস্তাব নাকচ করেছিল সরকার। তবে সম্প্রতি চীনের সিনোফার্মের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তাছাড়া চীনের সিনোভ্যাকের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার বিষয়েও সংস্থাটি দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। ফলে বর্তমানে একইসাথে সব পক্ষকে 'ম্যানেজ' করার নীতিতে আগাচ্ছে সরকার। কারণ, অতীত অভিজ্ঞতা সামনে রেখে ভবিষ্যতেও কেউ যদি টিকা দিতে না পারে তখনকার পরিস্থিতি কী হতে পারে তা সামনে রেখেই বর্তমান কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করা হচ্ছে। 

তাছাড়া কেবল বাংলাদেশই নয়, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানির মতো নাক উঁচু পশ্চিমের অনেক দেশই এখন চীন ও রাশিয়ার টিকা নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। পশ্চিমা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রথম দিকে চীন ও রাশিয়ার উদ্ভাবিত করোনার টিকাকে পাত্তা না দিলেও বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে। কার্যত কোনো উপায় না পেয়েই তারা পশ্চিমা দুনিয়ার বাইরের টিকা নেওয়ার গরিমা থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে চীনও ঘোষণা করেছে যে, তাদের সিনোভ্যাক এবং সিনোফার্ম ভ্যাকসিন দুটো 'বৈশ্বিক জনসাধারণের সম্পদ'। 

তথ্য-উপাত্ত বলছে, এ দুই রাষ্ট্রের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকাও বেশ কার্যকর। রাশিয়ার টিকা স্পুৎনিক এর মানবদেহে পরীক্ষার অন্তর্বর্তী ফলাফল প্রকাশ করেছে শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা সাময়িকী দ্যা ল্যানসেট। এতে দেখা গেছে, টিকাটি ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ কার্যকর। অন্যদিকে টিকাটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের দাবি স্পুৎনিক-ভি এর কার্যকারিতা আরও বেশি। প্রায় ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে, সম্প্রতি টিকাটির আরেকটি সংস্করণ এনেছে রাশিয়া। এক ডোজের এ টিকার নাম দেওয়া হয়েছে স্পুৎনিক লাইট। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ  বলছে, করোনা প্রতিরোধে এক ডোজের এই টিকা ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশ এ টিকাটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমতি এখনো দেয়নি, যেটিকেও একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। 

একসময় টিকা তৈরির সক্ষমতা বাংলাদেশেরও ছিল। মহাখালিতে অবস্থিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ছয় ধরনের টিকা উৎপাদন করত এবং তা বিদেশে রপ্তানিও হতো। যদিও  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে ২০১১ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এখন আবার সময় এসেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে পুনরায় টিকা উৎপাদনে যাওয়ার। তাছাড়া যদি প্রতি বছর টিকার বুস্টার হিসেবে একাধিক ডোজের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে বিশ্বের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনাই বেশি। তাই চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে টেকনোলজি ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেশেই টিকার উৎপাদন  বিষয়ে যে আলাপ আলোচনা চলছে এটাকে গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের জন্য আশার আলো হতে পারে গ্লোব বায়োটেকের উদ্ভাবিত টিকা বঙ্গভ্যাক্স। এই টিকাটির মানবদেহে ট্রায়ালের বিষয়ে দ্রুত পজিটিভ সিদ্ধান্তে আসা উচিত। হবে হবে করেও অনেকদিন ধরেই এটি হচ্ছে না। টিকাটি ৯৫ শতাংশ কার্যকর এবং গুরুতর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এই কাজগুলো করে ফেলা গেলে আগামী দিনে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে অন্যতম টিকা উৎপাদনকারী দেশ। শুধু নিজেদের জন্য নয়, বিশ্ববাজারের জন্যও। 

টিকার প্রয়োজন বহাল থাকবে দীর্ঘদিন, হয়তোবা চিরদিন। পুরনো ভূ-রাজনৈতিক সম্পদের দখলদারিত্ব থেকে যে উপনিবেশবাদ রাজনীতির সূচনা হয়েছিল, করোনাকালে তা এখন রূপ নিয়েছে বৈশ্বিক টিকা রাজনীতিতে। এ রাজনীতির খপ্পরে পড়ে কোন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত যাতে না নেওয়া হয় সে বিষয়েও নীতিনির্ধারকদের সচেষ্ট থাকতে হবে।