স্বাধীনতার ৫০ বছর: প্রথম ম্যাচ সেরা আতহার

নাজমুল হক তপন
Published : 2 May 2021, 06:50 AM
Updated : 2 May 2021, 06:50 AM

টিপ্পনী কেটে রমিজ রাজা বললেন, "টিপিক্যাল বাংলাদেশি কমেন্ট।" আতহার আলী খানের পাল্টা জবাব, "অ্যান্ড রশিদ ডিড হোয়াট ইজ টিপিক্যাল পাকিস্তানি স্টাইল"। মুলতানের প্রেসবক্সে এভাবেই সেদিন জমেছিল বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের 'যুদ্ধ'! এবং সে যুদ্ধে জয়ী বাংলাদেশের প্রতিনিধি আতহার।

ধারাভাষ্যের ক্যারিয়ারে এমন আরও কত-শত ঘটনা আছে তার! ক্রিকেটের মাঠেও আছে দারুণ সব প্রাপ্তি। আব্দুল কাদিরকে ছক্কা মারার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। পেয়েছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি স্পিনারের বিস্ময়মাখা প্রশংসা। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম ম্যাচ সেরার মুকূটও উঠেছিল আতহারের মাথায়।

১৯৯০ সালের শেষ দিন। এশিয়া কাপে ক্রিকেটের তীর্থক্ষেত্র ইডেন গার্ডেনে মুখোমুখি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। ৪৫ ওভারের ম্যাচে আগে ব্যাট করা লংকানরা জমা করল ২৪৯ রান। জবাব দিতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ল বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটল মাত্র ১০৮ রানে। প্রান্ত আগলে রেখেও ধস আটকাতে পারলেন না আতহার। বড় ব্যবধানে হারের সব আয়োজনই চূড়ান্ত। 

ইডেনের গ্যালারিতে তখনও ১০/১২ হাজার দর্শক। ম্যাচের শেষ আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা। মৃত ম্যাচকে জীবন্ত করে তুললেন আতহার। ছক্কা মারলেন সনাথ জয়সুরিয়াকে। এখানেই থামলেন না। ছক্কা মারলেন অরবিন্দ ডি সিলভা, ডন অনুরাসিড়িকেও। বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারিতে জীবন ফিরে পেল পৌষের শেষ বিকালের ইডেন। আতহার, আতহার চীৎকারে কেঁপে কেঁপে উঠল ক্রিকেটের নন্দন কানন।

সঙ্গীর অভাবে আতহারের ইনিংসটি সেদিন পায়নি পূর্ণতা। দলও জেতেনি। তিনি অপরাজিত থাকলেন ৭৮ রানে। ৯৫ বলের ইনিংসটি সাজানো ছয় বাউন্ডারি আর তিন-তিনটি ছক্কায়। ম্যাচ শেষ। মাঠের এক পাশে সতীর্থদের সঙ্গে বসে আছেন আতহার। হঠাৎই টিম ম্যানেজার তানভীর হায়দারের (প্রয়াত) ডাকে চমকে উঠলেন। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তার নাম! প্রথমে তো বিশ্বাসই করতে পারেননি। পরাজিত দল থেকে ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি পাবেন, এটা হয় নাকি? কিছুটা বিস্ময় নিয়েই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গেলেন। পেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি। 

৩১ বছর আগের সেই প্রেজেন্টশন অনুষ্ঠানে আতহার বলেছিলেন, "আলহামদুলিল্লাহ। তবে আমি মনে করি, এই পুরস্কারের দাবিদার অরবিন্দ (ডি সিলভা)।" ম্যাচে সর্ব্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন লংকান গ্রেট অরবিন্দ ডি সিলভা। ৬০ বলের ইনিংসে ৮৯ রান করেছিলেন।

এরপর আরেকটি প্রথমের সঙ্গেও জুটে গেল আতহারের নাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে নিজেকে তথা বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কথা বলার প্রথম পথটাও দেখান তিনিই। 'অ্যান্ড রশিদ ডিড হোয়াট ইজ টিপিক্যাল পাকিস্তানি স্টাইল', 'টেক দ্যাট অস্ট্রেলিয়া' কিংবা বাংলা ওয়াশ-এই শব্দগুলো এখন তো ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে মুখে।

মাঠে খেলেন দেশের ক্রিকেটাররা। বিপক্ষ দলের জানা-অজানা সব অস্ত্রের মুখোমুখি হন, আর কমেন্ট্রি বক্সে 'যুদ্ধ' চালিয়ে যান আতহার। গত দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে কমেন্ট্রি বক্সে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নির্ভরতা তিনি। সহজ কথায়, আতহার মানেই 'ভয়েস অব বাংলাদেশ ক্রিকেট'। 

আতহার এখন পুরোদস্তুর ধারাভাষ্যকার। বিশ্লেষণ করেন। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ম্যাচ সেরাদের সাক্ষাৎকার নেন। বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করেন। বিশ্বসেরা এক্সপার্টদের পাশে বসে দেশকে তুলে ধরেন, সুকৌশলে জবাব দেন কথার প্যাচেঁর। ৩১ বছর আগে ইডেন গার্ডেনের সেই দিনটিতে ছিলেন ক্রিকেটার। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়েছিলেন সঞ্চালকের মাইক্রোফোনের সামনে। অনুষ্ঠানে একটি কথাতেই অনেক কিছুই যেন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আতহার। আবেগে ভেসে না গিয়ে বলেছিলেন, ম্যাচ সেরার পুরস্কার ডি সিলভার প্রাপ্য। পরিচয় দিয়েছিলেন তার বিশ্লেষণী সামর্থ্যের।

তিন দশক আগের ক্রিকেট এত জমকালো ছিল না। পুরস্কার বিতরণী আয়োজনও ছিল সাদামাটা। ওই সময়টাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জায়গা করে নেওয়ার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছে বাংলাদেশ। পুরো সময়টাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে এই কণ্ঠযোদ্ধা বললেন, "এখনকার মত এমন জমকালো প্রেজেন্টশন মঞ্চ তখন ছিল না। চার/পাঁচ জনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। খুব দ্রুতই শেষ হয়ে গিয়েছিল সবকিছু। তবে আমাদের জন্য এটি ছিল অনেক কিছু।"

যোগ করেন, "আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা খুব কমই খেলার সুযোগ পেতাম। তখনও আমরা আইসিসির গণ্ডি পেরুতে পারিনি। খেয়াল করবেন, ১০ বছরে আমি মাত্র ১৯টি ম্যাচ খেলেছি। তবে যতটুকু সুযোগ পেয়েছি, সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।"

 সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়েই আজকের অবস্থান পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট, এই মত আতহারের। তার ম্যাচ সেরার ৮ বছর পর প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালে হায়দরাবাদে তিনজাতি ক্রিকেটে কেনিয়াকে বিপক্ষে আসে সেই বহু কাঙ্ক্ষিত জয়। প্রথম জয়ের নায়ক ছিলেন মোহাম্মদ রফিক। ওই ম্যাচেও যথেষ্ট উজ্জ্বল ছিলেন আতহার; খেলেছিলেন পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই ইনিংস।

প্রথম জয়ের স্মৃতি ভোলা যায় না। আতহারেরও মনে আছে সবটুকু, "আমি আর রফিক উদ্বোধনী জুটিতে ২৬ ওভারে ১৩৭ রান যোগ করেছিলাম। আর এতে ২৩৬ রান টপকানোর কাজটা সহজ হয়ে যায়। রফিকের ব্যাট থেকে এসেছিল ৭৭ রান। আর আমি করেছিলাম ৪৭ রান।" 

'সীমিত সুযোগ কাজে লাগানো' প্রসঙ্গে পাকিস্তানের কিংবদন্তীর লেগ স্পিনার কাদিরের বলে তার ছক্কা মারার কথা উঠল। ১৯৮৮ সালের উইলস এশিয়া কাপ। বিশ্বক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত শক্তি পাকিস্তানের মুখোমুখি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অচেনা বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের গড়া ২৮৪ রানের জবাবে ব্যাট করছে বাংলাদেশ। ম্যাচের এক পর্যায়ে কাদিরকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা মারলেন আতহার । বিস্মিত কাদির বললেন, "তোমরা দেখি ছক্কাও মারতে পার!"

পরের বলেও কাদিরকে একইভাবে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন আতহার। ম্যাচে অনুমিতভাবেই হার হলো বিশাল ব্যবধানে। তবে কাদিরকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মারার মধ্যে যে বার্তাটা ছিল, সেটাই বাংলাদেশ ক্রিকেট। কাদিরের যে বিস্ময়, সেটা ক্রিকেট দুনিয়া দেখল এর দুবছর পর, ১৯৯০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইডেন গার্ডেনে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কণ্ঠযোদ্ধার ভুমিকা কতটা অপরিহার্য সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা তীব্রভাবে অনুধাবন করতে পারল ২০০৩ সালে পাকিস্তান সফরে। মুলতান টেস্ট। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের লিড ১০৬ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছে বাংলাদেশ। উইকেটে থিতু হয়ে গেছেন অলক কাপালি। খেলছেন ২২ রানে। এমন সময় পেসার ইয়াসির আলীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন কাপালি। ঠিক মত বল তালুবন্দি করতে পারলেন না পাকিস্তান অধিনায়ক রশিদ লতিফ। মাটিতে পড়া বল কুড়িয়ে নিয়ে আবেদন করলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। আউট ঘোষণা করলেন আম্পায়ার। শুরু হয়ে গেল কমেন্ট্রিবক্সের লড়াইও।

আতহার জোরালভাবে বললেন, "আমি মনে করি না, এটা পরিস্কার ক্যাচ ছিল।" পাকিস্তানি ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা খানিকটা উদ্ধতকণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, "তুমি কি পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে প্রতারক দাবি করছ।" উত্তরে আতহার বললেন, "আউটের ধরনটা ঠিক ছিল না, আমি শুধু এটাই বলতে চাচ্ছি।' এবার রমিজ টিপ্পনী কাটেন, "টিপিক্যাল বাংলাদেশি কমেন্ট।" আতহারও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন, "অ্যান্ড রশিদ ডিড হোয়াট ইজ টিপিক্যাল পাকিস্তানি স্টাইল"। 

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই কথার বোধকরি কোন তুলনা হয় না। টিভি সেটের সামনে লাখো লাখো ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়ে গেঁথে গেল আতহারের এই কথাগুলো। পাকিস্তান ক্রিকেটে 'মিস্টার ক্লিনম্যান' বিবেচিত লতিফের এ ক্যাচ নিয়ে শুরু হল প্রবল বিতর্ক। মাঠে প্রতারণার দায়ে ৫ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হলেন রশিদ লতিফ। এ যেন এক অন্যরকম বিজয়। যার শুরুটা করেছিলেন আতহার।

স্বাভাবিক কারণেই আলাপচারিতায় মুলতানের ওই প্রসঙ্গও উঠে আসল। ওই যুদ্ধ জয়ের পরে ঘটে যাওয়ার আরেক মজার ঘটনাও শোনালেন আতহার, "ওই ঘটনার পর একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। আমার কাছে সরি বলার জন্য রমিজ রাজাকে বাধ্য করেছিলেন তার স্ত্রী। ঘটনার জন্য রমিজ আমাকে সরি বলেছিল। তার বাসায় দাওয়াতও দিয়েছিল।"

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংগ্রামমুখর দিনগুলোতে ছিলেন খেলোয়াড়। মাথা ঠাণ্ডা রেখে হজম করতে হয়েছে অনেক কিছুই। কমেন্ট্রি বক্সেও একটা সময় পর্যন্ত একইভাবে থাকতে হয়েছে ব্যাকফুটে। তবে মাঠের পারফরম্যন্সের গ্রাফটা একটু একটু করে উর্ধ্বমুখী হতে থাকলে শুরু হয় দিন বদলানো। আর এটাই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন 'ভয়েস অব বাংলাদেশ'। বললেন, "কমেন্ট্রি বক্সে একটা সময় অনেক কথাই নিরবে সয়ে যেতে হত। তোমরা কি খেলতে পার, কি খেলবা, এসব কথা হজম করতে হত। আর সে-ই দিন নাই। এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলি। আর আমাকে এ সুযোগ করে দিয়েছে আমাদের ক্রিকেটাররা।"

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রায় সব অর্জনের সঙ্গী আতহার। তবে ২০০৫ সালের কার্ডিফ জয় আর ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জেতাটাকে আলাদাভাবে দেখেন এ কণ্ঠযোদ্ধা। ওই সময়টাতে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া যাকে সামনে পাচ্ছিল, গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল। ওই ম্যাচে ধারাভাষ্যের সময় আতহারের সঙ্গী ছিলেন বব উইলিস, ড্যারেন লেম্যানরা। এদিকে বাংলাদেশের জয় নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। ওই সময়ে নিজের অনভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে আতহার বলেন, "মানসিকভাবে দলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলাম। ধারাভাষ্যে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ড্যারেন লেম্যান। আমাকে কিছু বলতে বললেন বব উইলস। আমি বললাম, টেক দ্যাট অস্ট্রেলিয়া।"

এর দু বছর পর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে শক্তিধর ভারতকে হারানোটা বিশেষ ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, "ওই বিশ্বকাপে খুবই শক্তিশালি দল ছিল ভারত। ওদেরকে নিয়ে হাইপও ছিল খুব। বাংলাদেশের কাছে হেরে ভারত বিদায় নিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা শুরু হল। আমি সব সময়ই বলি ক্রিকেট দলের স্ট্যটাস বাড়লে, আমাদেরও স্ট্যটাস বাড়ে।"

আতহারের 'ভয়েস অব বাংলাদেশ' হয়ে ওঠার গল্পটাও কম চমকপ্রদ নয়। ১৯৯৯ এর বিশ্বকাপ মাথায় রেখে ১৯৯৮ সালে ইংল্যান্ড সফরে যায় বাংলাদেশ। ওই দলে ছিলেন আতহার। ওই সময় একটা বিদেশী চ্যানেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ভদ্রলোক মাইকেল ডয়্যার। সফররত বাংলাদেশ দলের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এদের একজন ছিলেন আতহার। বিদেশী চ্যানেলে ইংরেজি ভাষায় ক্রিকেট বিশ্লেষণের পাশাপাশি বলতে হয়েছিল আরও অনেক কথাই। আর এখানে থেকেই ডয়্যারের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক হয়ে যায় আতহারের। 

ওই একই বছর অক্টোবর মাসে নক আউট বিশ্বকাপের (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ১৯৯৮) আসর বসে ঢাকায়। বিশ্বসেরা সব দলগুলো অংশ নেয় আইসিসির প্রথম চ্যম্পিয়ন্স ট্রফির আসরে। আর আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যকার হওয়ার সুযোগ পেয়ে যান আতহার। এ নিয়ে বলেন, "বিদেশী দলগুলো আসছে। এরকম একটা সময়ে কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে গেলাম হোটেল শেরাটনে। কপালটা খুবই ভাল বলতে হবে। ডয়্যারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমরা অনেকক্ষণ কথা বললাম। একটা পর্যায়ে, ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করার আগ্রহের কথাও জানালাম। আমি সিরিয়াস কি-না এটা জিজ্ঞাসা করলেন ডয়্যার। পরের দিন আমাকে দেখা করতে বললেন। এভাবে ইন্টারন্যাশনাল কমেন্ট্রিতে যোগ দিলাম।"

আইসিসি চ্যম্পিয়ন্স ট্রফির অভিষেকে আয়োজক হলেও বাংলাদেশ ছিল শুধুই দর্শক। কেননা ওই আসরে সুযোগ পেয়েছিল শুধু টেস্ট স্ট্যটাস সমৃদ্ধ দেশগুলোই। আর বলা বাহুল্য, ওই সময় পর্যন্ত ওয়ানডে স্ট্যটাস পেলেও টেস্ট স্ট্যাটাস তখনো বাংলাদেশের অধরা। আর তাই ধারাভাষ্যকার হিসাবে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করাটা ছিল বিশেষ ঘটনা বৈ-কি। 

নক আউট বিশ্বকাপের অভিষেক আসরে নিজের অভিষেক সম্পর্কে আতহারের ভাষ্য, "শুরুতে খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। নার্ভাসও ছিলাম। আপনাদের মনে আছে কি-না জানি না, খেয়াল করবেন ওই সময় আমি শুধু প্রশ্ন করতাম। টনি গ্রেগ, ইয়ান চ্যাপেল, সুনীল গাভাস্কর, মাইকেল হোল্ডিংদের মত সব গ্রেটদের পাশে বসে কমেন্ট্রি করছি , বিষয়টা একবার ভাবুন তো! আর এভাবে প্রশ্ন করতে করতেই একটা সময় আত্মবিশ্বাস জন্মে গেল। আর মাঠে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভাল হতে থাকাটাও ভীষণভাবে কাজে দিল।"

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ সেরার স্বীকৃতির কোন স্মারক কিংবা ট্রফি নাই আতহারের। একটা ভুলের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে জানান, "ম্যাচ সেরার পুরস্কার হিসেবে একটা ট্রফি দেওয়ার কথা ছিল আয়োজকদের। সেটা তারা দেয়নি। আবার আমাদের দিক থেকেও সেটা নেওয়া হয়নি।" 

দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত ব্যাটটিকে (যে ব্যাট দিয়ে খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন) এখনো রেখে দিয়েছেন সযত্নে। তবে আপাতত ব্যাটটি আছে স্পোর্টস শো রুমে। বলেন, "ট্রফি যেহেতু নাই, তাই ব্যাটটিকেই শো কেইসে রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাটটিতে ময়লা জমে যাওয়াতে পরিস্কার করতে দিয়েছি শো রুমে। ওরা এখনো ফেরত দেয়নি। এদিকে আমি কোভিড আক্রান্ত হলাম। সবকিছু স্বাভাবিক হলে, ব্যাটটা নিয়ে এসে নিজের কাছে রাখব।"

সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আছেন ক্রিকেটের সঙ্গে। এটাকে বিশেষ প্রাপ্তি হিসাবে উল্লেখ করে বললেন, "আমার জন্ম নারায়ণগঞ্জে। ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। থাকতে চেয়েছিলাম ক্রিকেটের সঙ্গে। এই যে ক্রিকেটের সঙ্গে থাকা, এটাকে আমি খুব বড় প্রাপ্তি বলে মনে করি।" 

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে দেশের ক্রিকেট তথা ক্রীড়াঙ্গন কতটুকু প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে? এ প্রশ্নের জবাবে কুশলী ধারাভাষ্যকারের মতই বললেন, "লংগার ভার্সন ক্রিকেটে খুব বেশি উন্নতি হয়নি। হয়ত অনেক কিছুই হয়নি। তবে অতীত নিয়ে ভেবে লাভ নাই। অতীতের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তাকাতে হবে সামনের দিকে। অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ জিতেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ দলের অনেকেই জাতীয় দলে আসবে। এদিকে আমাদের গলফ, আরচারিতে উন্নতি হয়েছে। ফুটবলকে একটা জায়গায় আসতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে ভাল কিছু সম্ভব বলেই আমি মনে করি।"