মে দিবস: বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দিন

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 1 May 2021, 10:10 AM
Updated : 1 May 2021, 10:10 AM
এক
আমার একটি কবিতা দিয়েই শুরু করি শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ও সংহতির দিন হিসেবে স্বীকৃত এবং দুনিয়াব্যাপী নানা আয়োজনে উদযাপিত মে দিবস নিয়ে কিছু কথা। 
আমি পথ তৈরি করি
তুমি সে পথে গাড়ি হাঁকাও
আমি ইমারত গড়ি
সেখানে ঠিকানা হয় তোমার।
আমি ঠিকানাহীন
স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে রাতভর আকাশের তারা গুনি। 
আমার পায়ে হাঁটা পথও
হয়ে যায় বেদখল। 
আমি ফলাই ফসল
ওঠে তা তোমার গোলায়, 
কতদিন আর এ অনিয়ম
মেনে নেওয়া যায়? 
তোমার গন্তব্য উপরে ওঠা
আমি তোমার সিঁড়ি, 
হররোজ তুমি আমাকে ঠকাও  
আমি ঠকি বলেই তুমি জেতো। 
তোমার ক্লান্তি আছে,
আছে পিপাসা, দরকার হয়
আরাম-বিশ্রাম,
আর আমার? 
ক্ষুধা, ব্যাধি, অশিক্ষা আমাকে
করে স্বপ্নচ্যুত 
প্রতিনিয়ত।
দিনযাপনের সুখ
তোমার গুদামজাত। 
তোমার আঙ্গিনাজুড়ে দোল খায় বসন্তবাতাস।
রোগজীর্ণ শীর্ণ বাহু নিয়ে আমি
আছি ক্লান্তিহীন তোমার সেবায়।
তবে দিন চিরদিন যাবে না এমন,
কান খুলে শোনো
মহাকালের ঘণ্টাধ্বনি
আমার মতো শক্তিহীন জনেরা জলস্রোতের মতো যখন আছড়ে
পড়বে, পাড় ভাঙবে
বদলে যাবে তোমার চিরচেনা ভূমি।  
মানুষের মানচিত্রে আঁকা হবে নতুন চিত্রলিপি।
দুই
পয়লা মে, মহান মে দিবস। সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধারাবাহিক সংগ্রামের  এক ঐতিহাসিক গৌরবময় দিন। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কর্ম-সময়ের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারায় ১০জন শ্রমিক। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৯ সালে  প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক কনভেনশনে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে পয়লা মে তারিখকে 'মে দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে মেহনতি মানুষকে সম্মান জানাতে ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মে দিবস। 
বাংলাদেশেও প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মে দিবস পালন করা হয়। পয়লা মে সরকারি ছুটির দিন। কিন্তু সব শ্রমজীবী মানুষ এই ছুটির অধিকার পায় না। অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা জানেনও না যে মে দিবসে তাদের ছুটি পাওনা। কাজ নেই তো মজুরিও নেই– এ অবস্থায় পেটের খাবার জোটাতে মে দিবসেও সকাল সন্ধ্যার অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয় আমাদের দেশের অনেক নারী, শিশু এবং অন্য শ্রমিকদের। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, আট ঘণ্টা কাজের সময়সীমা না মেনে ১০/১২ ঘণ্টা কাজ করে  শ্রমিকরা যে মজুরি পান তা নিয়ে কি তারা সন্তুষ্ট? চিকিৎসা, বিশ্রাম, বিনোদনের কোনো সুযোগ কি তাদের আছে? এ সব প্রশ্নের একটাই জবাব – না।
বাস্তবে আমাদের শ্রমিকদের জীবন নানা দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিয়ে কাটছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ শ্রমিকদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার হলেও এর অভাবে দেশের, বিশেষত গার্মেন্টস কারখানাগুলো, শ্রমিকের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডসহ একের পর এক দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা হতাহত হলেও এ সংক্রান্ত আইনের কোনো প্রয়োগ হয় না। এ প্রসঙ্গে তাজরিন গার্মেন্টস এবং রানাপ্লাজার দুর্ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়।
নানা কারণে আমাদের দেশে আদমজীসহ পুরনো কিছু বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। পাটকলগুলো ধুকে ধুকে চলছে। ফলে সংগঠিত খাতের চেয়ে অসংগঠিত খাতের শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি আমাদের দেশে বেশি। সংসারের প্রয়োজনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নানা ধরনের কাজে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আছে চরম মজুরি বৈষম্য। সমান কাজ করলেও পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকের মজুরি কম। গার্মেন্টস ছাড়াও কৃষি, নির্মাণ, রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা, কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রি, চা বাগান, ওষুধশিল্প, কোমল পানীয়, খাদ্য-প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, হস্তশিল্প ইত্যাদি খাতে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বেশি। সমান কাজে সমান মজুরির ন্যায়সঙ্গত দাবি উপেক্ষিত। প্রয়োজনের তুলনায় শ্রমস্বীকৃতি পুরুষের বেশি হওয়ায় নারীর দরকষাকষির সুযোগও কম। দেশের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনও এখন কার্যত মুখ থুবরে পড়েছে। নানা অসুস্থ প্রবণতা ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে গ্রাস করেছে। সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলন দেশে আছে তবে সেই ধারাটা দুর্বল।
প্রবীণ শ্রমিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান খান বছরকয়েক আগেই বলেছিলেন, "শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকস্বার্থ রক্ষা না করে শ্রমিকের ক্ষতি করে। নেতাগিরি একটা ব্যবসা, প্রচুর টাকা-পয়সা পাওয়া যায় এতে।"
বাংলাদেশের এখনকার ট্রেড ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশের ক্ষেত্রে মঞ্জুরুল আহসানের অভিযোগটি নির্মম সত্য। শ্রমিকস্বার্থের কথা বলে, শ্রমিকদের নাম ভাঙিয়ে, শ্রমিকদের সংগঠিত শক্তির ও রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন সেক্টরে বা শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব যা করছে তার নাম স্রেফ ব্যবসা, বিনা পূঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। সেজন্য আমাদের দেশে শ্রমিকরা ভালো না থাকলেও ভালো থাকেন শ্রমিক নেতারা এবং মালিকরা।
তিন
রাবেয়া খাতুন একটি স্পিনিং মিলের শ্রমিক। কয়েক বছর ধরে একটি স্পিনিং মিলে কাজ করছেন। প্রতিদিনের কাজ শেষ করতে হিমশিম খেতে হয় রাবেয়াকে। আবার একটু এদিক ওদিক হলেই শুনতে হয় কটূ কথা। তিনি বলেন, "এভাবে বাঁচার চেয়ে মারা ভালো। সারাদিন দাঁড়িয়ে কাজ, বসার উপায় নাই। মাঝে মাঝে পা চিনচিন করে ওঠে।" তবে অন্যান্য কারখানা থেকে তাদের সুযোগ-সুবিধা কিছুটা ভালো বলে তিনি জানান। এখানে তাদের কারখানার কাজে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেজন্য চিকিৎসা-খরচ দেওয়া হয়। রোজার সময় ইফতারি দেওয়া হয়। এসব সুযোগ-সুবিধা পেলেও মজুরির ব্যাপারে রাবেয়া বেশ হতাশ। সারাদিন কাজ করে তিনি যে টাকা সামান্য টাকা পান অভাবের সংসারে এই অল্প টাকায় চলতে চায় না। বেতনের বড় একটা অংশ ঘর ভাড়াতেই চলে যায়। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং এ প্রতিকূল সময়ে তার পক্ষে বেঁচে থাকাই যেন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেবার কোনো মানসিকতা যেন আর তার নেই। তাই তো মে দিবসের কথা উঠলেই তাকে বলতে শোনা যায় 'ও' আমি জানি না। সে আবার কী?
লেদমেশিন কারখানায় কাজ করেন হাসান হাবিব। তিনি বলেন, "একজন শ্রমিক হিসেবে কাজের ন্যায্য মজুরি পাই না। তারপরেও সংসারের প্রয়োজনে, জীবন বাঁচানোর তাগিদে বা ভবিষ্যতের জন্য অল্প টাকায় শ্রম বিক্রি করি।" যে বয়সে তার ব্যস্ত থাকার কথা পড়াশুনায়, জীবন গড়ার সেই সময়েই তাকে নামতে হয়েছে জীবন সংগ্রামে। ছয় সদস্যের সংসারে বাবা ও হাসানই হচ্ছে উপার্জনকারী। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯/১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় হাসানকে। দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পরিশ্রম করে মাসে যে মজুরি পান তা বর্তমান বাজারে খুবই সামান্য। কাজের সময়, পরিবেশ, মজুরি, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা প্রতিটি বিষয়েই হাসানের ভীষণ ক্ষোভ। তাই এ মে দিবসে তার দাবি, চাই সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী ন্যায্য মজুরি, ৮ ঘণ্টা শ্রম, সরকারি ছুটিভোগের অধিকার, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ।
উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা শহরের আবদুর রহিম একজন ওয়েল্ডিং শ্রমিক। বেঁচে থাকার জন্য তার কাছে কাজের কোনও বিকল্প নাই। রাত পোহালেই তাকে বের হতে হয় কাজের উদ্দেশ্যে। তার মতে কাজ নিয়ে বেঁচে থাকাই জীবন। জীবনের জন্য কাজ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্বাভাবিক কাজের সময় থাকলেও তাকে প্রায় প্রতিদিনই বাড়তি দৈনিক ১/২ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয় রহিমকে।
ঘণ্টা হিসেবে দৈনিক মজুরি পান তিনি। প্রতি ঘণ্টা ১০টাকা, সেই হিসেবে দৈনিক গড়ে ৯/১০ ঘণ্টা কাজের মজুরি পেয়ে থাকেন। রহিম বলেন, "মালিকের সুবিধা মতো কাজ করলে কাজের যথেষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে। ইলেকট্রিক ও লোহা দিয়ে কাজ করতে হয় বলে আমাদের প্রত্যেকটি কাজের ঝুঁকি বেশি। বর্তমান বাজার হিসেবে আমাদের মজুরি বৃদ্ধি হয় না। কাজ শেখার সময় নামমাত্র মজুরিতে কাজ করতে হয়। যার ভিত্তিতে  জীবনধারণ খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তবে কাজে দক্ষতা অর্জন করায় এখন হেড মিস্ত্রি হয়েছি, যা বর্তমানে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করছে।"
খুলনায় রূপসা এলাকায় প্রায় ৪২টি মাছের কোম্পানি আছে। সেখানে প্রায় কয়েক হাজার নারীশ্রমিক নিয়োজিত আছেন। তাদেরই একজন জুলেখা বেগম, তিনি চিংড়ি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। মে দিবসে তার ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "শ্রমিক হিসেবে আমাদের ন্যায্য দাবি ও ন্যায্য মজুরি আদায়ের আন্দোলন। তিনি আরও বলেন, সকাল সন্ধ্যা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঠিকমতো মজুরি পাই না। একজন পুরুষ ৮ ঘণ্টা কাজ করে যে মজুরি পাচ্ছে, আমি সেই কাজ করে তার তুলনায় পাচ্ছি অর্ধেক মজুরি। আমাদের এখানে মজুরিবৈষম্য আছে।"
জুলেখা আরও বলেন, কোম্পানিতে পুরুষের তুলনায় তাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। সরকারি বিধান আছে, গর্ভকালে নারীরা ৪ মাস ছুটি ভোগ করবে। কিন্তু তাদের কোম্পানিতে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। কখনো কখনো এমন হয় যে কোম্পানির মধ্যে বাচ্চাপ্রসব হয়ে যায়। এ ছাড়া সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয় বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। কাজের পরিবেশ ভালো না। লিখিত কোনো নিয়োগপত্র তাদের নেই। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যেই জুলেখা জীবন কাটাচ্ছেন।
ঢাকার নলগোলার মোকসেদা কাজ করেন ভাঙ্গারি শ্রমিক হিসেবে। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা কাজ করেও মোকসেদা যে টাকা পান একজন পুরুষ শ্রমিক পান তার দ্বিগুণ টাকা। এছাড়া শ্রমিক হিসেবে একই কাজ করা সত্ত্বেও তাকে দুপুরের খাবারের সময় সবার জন্য পানি নিয়ে আসা এবং থালা-বাসন ধোয়ার কাজও করতে হয়। কিন্তু এসব কাজের বিনিময়ে মজুরি এত অল্প পান যে, তিনি অসন্তোষ লুকিয়ে লাখতে পারেন না। তবু কেন এই কাজে আছেন জানতে চাইলে আক্ষেপ করে বলেন, "কাজ নাই, কী করুম ভাই?"
পুরান ঢাকায় নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন মোকসেদা। ২ ছেলে ১ মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে তার সংসার। বাইরে সারাদিন অনিচ্ছা আর অসন্তোষ নিয়ে কাজ করেও ঘরেও শান্তি নেই। স্বামী নেশা করে আর প্রায়ই তাকে মারধোর করে। ঘরে বাইরে এত অশান্তির মাঝেও বেঁচে আছেন জুলেখা, লড়াই করে যাচ্ছেন অবিরাম।
চার.
এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর আরও সব দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকা ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়েছে। লকডাউনসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো বন্ধও হয়ে গেছে। এ অবস্থায় মে দিবস পালনও উচ্ছ্বাসহীন হওয়াই স্বাভাবিক। কবে এই দুর্যোগকাল শেষ হবে, কবে আবার স্বাভাবিক কাজকর্ম, আয়-উপার্জন শুরু হবে তা জানা না থাকায় চরম অনিশ্চয়তায় জীবন কাটছে যেসব শ্রমজীবী মানুষের,
তাদের কাছে মে দিবস কোনো আলাদা বার্তা নিয়ে এসেছে বলে মনে হয় না।
তবে এটা ঠিক যে, কোনো কালে, কোনো দেশেই শ্রমিকদের অধিকার, সুযোগ সুবিধা, ন্যায্য মজুরি কেউ আপনাআপনি দিয়ে দেন না, লড়াই করেই তা আদায় করতে হয়, হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য শিল্প প্রয়োজন। আবার শিল্পবিকাশের জন্য শিল্পক্ষেত্রে শিল্পবান্ধব পরিবেশ প্রয়োজন। অসুস্থ ও সুবিধাবাদী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন শিল্পের বিকাশ ও স্থিতির জন্য ক্ষতিকর। সেজন্যই শিল্পবিকাশের স্বার্থে, জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতির স্বার্থে দেশে সুস্থ ধারার ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের যে অভাব এখন দেশে তৈরি হয়েছে তা দূর করতে হবে। অসংগঠিত খাতের লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবনের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সবার জন্য বেঁচে থাকার মতো ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। সব খাতেই শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে। শ্রমআইন যাবে বাস্তবায়িত হয় তার প্রতি কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। 
গত শতকে শ্রমের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে সোভিয়েত দেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং তারপর আরও কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পর আশা করা হচ্ছিল যে, শ্রমজীবী মানুষের জীবনের বঞ্চনার বুঝি অবসান ঘটার সময় সমাগত। কিন্তু শতাব্দী শেষ হতে না হতেই সাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ভেঙে পড়ায় এখন আবার প্রথম থেকে শুরুর অবস্থা হয়েছে। চাহিদা এবং প্রাপ্তির ব্যবধান দূর করার শপথ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর মে দিবস পালন হয়। আশা এটাই যে, হয়তো একদিন মানুষের সাম্য চিন্তা সফল হবে, ভেদাভেদ মুক্ত সমাজ শুধু কল্পনায় নয় বাস্তবেও সম্ভব হবে। শ্রমজীবী মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও দীর্ঘশ্বাসের অবসান হবে। মে দিবস অমর হোক।