১.
মনটা ভীষণ খারাপ ও অস্থির। মন স্থির না থাকলে কোনও কাজ গুছিয়ে করা যায় না। প্রতিদিন মৃত্যুসংবাদ শুনতে শুনতে মনটা ভেঙে যাচ্ছে। বন্ধু-স্বজনের মৃত্যুর পাশাপাশি দেশের বরেণ্য সন্তানদের মৃত্যু দেখতে দেখতে ভাবি দেশ কি তবে মেধাশূন্য হয়ে পড়বে? ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানিরা এদেশে গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি দেশের বরেণ্য, কৃতী সন্তানদেরও হত্যা করেছিল। একাত্তরের পর এটা আরেকটি বিপর্যয় বলে বিবেচিত হবে এদেশের ইতিহাসে। এমন পরিস্থিতিতে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকা দায়।
ধরে নিয়েছিলাম, মহামারীকালে মানুষের বোধের কিছু পরিবর্তন হবে। মানুষ মানুষের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হবে। মানুষে মানুষে মেলবন্ধন সুদৃঢ় হবে। মানুষ অনুধাবন করতে পারবে জীবন কত ঠুনকো। ধন-দৌলত, ক্ষমতা-প্রভাব কিছুই মানুষকে রক্ষা করতে পারে না। নভেল করোনাভাইরাস নামক এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে মানুষ কত অসহায়! বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশের বড় বড় ক্ষমতাধররা পর্যন্ত কী অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করছে ভাইরাসের কাছে। পৃথিবী নামক গ্রহটিকে অনেকবার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভারের মালিক ক্ষমতাশালীদের অবস্থা আজ তৃতীয় বিশ্বের যেকোনও ফকির-মিসকিনের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভেবেছিলাম, যে ভাইরাস ধনী-গরিব দেখছে না, সাদা-কালো দেখছে না, নারী-পুরুষ দেখছে না, আস্তিক-নাস্তিক দেখছে না, মুসলিম-অমুসলিম দেখছে না সে করোনাভাইরাস নামক অভিন্ন শত্রুকে মোকাবেলায় বিশ্বের সব মানুষ এক কাতারে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টোটি।
বরং করোনাকালে বিশ্বে হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কলহ-বিবাদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ অব্যাহত আছে। দেশে লকডাউন চলায় গরিব দেশের গরিব মানুষগুলো অভাবে পতিত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ নিরন্ন ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে এই মহাদুর্যোগকালেও কিছু মানুষ বিপুল অর্থ-সম্পত্তির মালিক হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ফোর্বসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর মধ্যেই বিশ্বে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় ২০২১ সালে বিশ্বে বিলিয়নিয়ার বেড়েছে ৬৬০ জন। এক বছরে এতজন এ শত কোটি ডলারের ক্লাবে এর আগে কখনো ঢুকতে পারেননি। এবার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হওয়াদের মধ্যে ৪৯৩ জনই প্রথমবারের মতো বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। অর্থাৎ বিশ্বে প্রতি ১৭ ঘণ্টায় একজন ব্যক্তি বিলিয়নিয়ার হয়েছেন।
বাংলাদেশে নব্য ধনী হয়ে ওঠাদের বিষয়ে এ মুহূর্তে কোনো তথ্য নেই। তবে দারিদ্র্য নিয়ে একটি জরিপের ফলাফল জানা গেল। জরিপে জানা গেছে, কোভিডকালে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এ নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
টেলিফোনের মাধ্যমে দেশব্যাপী তিন ধাপে করা এ জরিপে কভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি ও স্বল্প আয়ের মানুষদের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শহুরে বস্তিতে কোভিড-পূর্ব অবস্থার আয়ের চেয়ে এখনকার আয় ১৪ শতাংশ কম।
দেশে বিদ্যমান দারিদ্র্য সংকট নিয়ে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান ও বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন গতকাল অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ ফল তুলে ধরেন-
মহামারীর কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ। তাদের মাঝে রয়েছে হতদরিদ্র ও মাঝারি দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। তাদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। এছাড়া রয়েছে দরিদ্র নয় কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা এক শ্রেণির মানুষ, যাদের বলা হচ্ছে ভালনারেবল নন পুওর বা ভিএনপি। দেখা গেছে, দারিদ্র্যসীমার ওপরে কিন্তু মধ্যম জাতীয় আয়সীমার নিচে থাকা এ শ্রেণির মানুষদের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে সবচেয়ে ধীরগতিতে। গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সে ঝুঁকিতে থাকা এ মানুষদের ৭২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল 'নতুন দরিদ্র' হিসেবে। সেই নতুন দরিদ্রদের ৫০ শতাংশ এখনও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। এই হার শহরে ৫৯ শতাংশ, গ্রামে ৪৪ শতাংশ। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ১৪ দশমিক আট শতাংশ নতুন দরিদ্রদের এ হার বিগত বছরের জুনে ছিল ২১ দশমিক দুই শতাংশ।
জরিপ বলা হয়েছে, 'যদিও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিগত জুন থেকে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারপরও কোভিডের আগে কাজ ছিল কিন্তু এখন বেকার এমন মানুষ রয়েছে আট শতাংশ। কর্মহীনতার এ ধারা নারীদের জন্য বেশ আশঙ্কাজনক। কভিডের আগে কর্মজীবী ছিলেন এমন নারীদের এক-তৃতীয়াংশ গত বছর জুন থেকে এখনও বেকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার নেমে এসেছে ১৬ থেকে ৬ শতাংশে।'
লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিবরা। অথচ সমস্যাটি তৈরি করলাম আমরা মানে সমাজের সুবিধাপ্রাপ্তরা। আর ভুগতে হচ্ছে বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত, দিনমজুর, দিনে এনে দিনে খাওয়া গরিবদের। অথচ ওদের কোনো রোগ নেই, সংক্রমণ নেই, আক্রান্তের সংখ্যাও উল্লেখ করার মতো নয়। আমরা তথাকথিত ভদ্রলোকেরা বিয়ে, গায়েহলুদ, বৌভাত, পুনর্মিলনী, পিকনিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতাপাঠ, নাট্যোৎসবের নামে যাচ্ছেতাই করে মহামারী পরিস্থিতির অবনতি করেছি। নিজেরা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল অচল করে দিয়েছি। সেই 'আমরা'দের ঘরে যথেষ্ট মজুদ আছে। কিন্তু এ পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী নয় সে গরিবগুলোর কী হবে? লকডাউনে তাদের উপার্জনের কী হবে? ওদের খাদ্য জোগাবে কে?
বিশ্বে মহামারীতে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে তিন মিলিয়নের বেশি মানুষ। মহামারির দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অবস্থা টালমাটাল। মহামারীর টিকা আবিষ্কার হলেও অনেক দেশ এখনো টিকা পায়নি। ভবিষ্যতে এসব দেশের মানুষ টিকা পাবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ টিকা কেনার সামর্থ্যও সেসব দেশের নেই। এরইমধ্যে টিকা নিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্বরাজনীতি। এ চক্করে পড়ে কোটি কোটি মানুষ টিকা নিতে না পেরে অরক্ষিত থেকে যাবে।
২.
এমন দুর্যোগেও কি আমরা সামান্য বদলেছি? এ লেখা যেদিন লিখছি সেদিন বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১১২ জন। দেশে করোনায় মৃত্যুসংখ্যা দশ হাজার অতিক্রম করেছে। গত একবছরে আমরা হারিয়েছি দেশের অনেক বরেণ্য সন্তানকে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে দেশে মেধাবী মানুষের অভাব হবে, জাতি মেধাশূন্যতায় পতিত হবে। কিন্তু এমন ঘটনা দেশের একশ্রেণির মানুষকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করেনি, ব্যথিতও করেনি। বরং অনেক বরেণ্য সন্তানের প্রয়াণের পর ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের প্রতিক্রিয়া দেখে হতবাক হয়েছি মানুষ এত নির্মম, অসভ্য, অভব্য কী করে হতে পারে তা ভেবে।
অন্য ধর্মাবলম্বী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদির পক্ষে বলেছেন বা মত দিয়েছেন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যুসংবাদে এদেশের একশ্রেণির তথাকথিত মুসলিম প্রকাশ্যে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলেছেন। অনেকে ফেইসবুকে তাদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে মন্তব্যও করেছেন। অনেকে কারো কারো জানাজা না পড়ানোর জন্যেও ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ধর্মীয় উসকানি ও অপব্যাখার বিরুদ্ধে সোচ্চার বেসরকারি টেলিভিশনগুলোও এদের আক্রমণের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে। কয়েকটি টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে এরা প্রতিনিয়ত প্রপাগান্ডা চালায় এবং বয়কটেরও ডাক দেয়। এ টিভি চ্যানেলগুলোর সাংবাদিক ও নিউজ প্রেজেন্টারও এদের আক্রমণের শিকার। কয়েকদিন আগে একাত্তর টিভির এক নারী প্রযোজক সন্তান প্রসবকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের ধর্মান্ধগোষ্ঠীর কুৎসিত, নোংরা ও হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখে আমি মর্মাহত। বিষয়টি দেশের যেকোনো সুস্থ মানুষকে আহত না করে পারে না। একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এমন কুৎসিত মন্তব্য করা কীভাবে সম্ভব তা ভেবে পাই না। আমার ভাবতে কষ্ট হয় এমন মানুষও আমাদের সমাজে আছে, আমাদের চারপাশেই আছে।
একাত্তর টিভির প্রযোজক মুসলিম ছিলেন তাই তাকে আক্রমণকারী সবাই ছিলেন মুসলিম। কিন্তু কবরীর মৃত্যুর পর প্রতিক্রিয়াশীলরা ছিল দুই সম্প্রদায়েরই। দেশবরেণ্য শিল্পী ও রাজনীতিক কোভিডে আক্রান্ত হয়ে কবরীর মৃত্যুর পর একদল বলেছে, 'আলহামদুলিল্লাহ'। আরেকদল ঘৃণা প্রকাশ করেছে তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন বলে।
কয়েকদিন আগে আমাদের অগ্রজতুল্য এক বন্ধু কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশের খ্যাতিমান কবি ও শিল্পী প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। আজ থেকে অন্তত সাড়ে তিন দশক আগে দেশের প্রচলিত আইনে তাকে বিয়ে করতে হয়েছিল। ফলে তার স্ত্রীকে ধর্মান্তরিত হতে হয়েছিল। এ উপমহাদেশে সাধারণত যা হয় হিন্দু-মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে যিনি হিন্দু তাকেই ধর্মান্তরিত হতে হয়। অন্য ধর্ম ত্যাগ করে সনাতন ধর্ম গ্রহণের কোনো সুযোগ সনাতন ধর্মমতে নেই। অবশ্য বর্তমানে ধর্ম ত্যাগ না করে বিয়ে করার আইনি সুযোগ আছে।
আমাদের সে বন্ধুটি ছিলেন আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক, উদার ও মানবতাবাদী মানুষ। ধর্ম নিয়ে তিনি কখনো মানুষকে বিচার করেননি। জীবনে কাউকে আঘাত করে কথা বলেননি। দেশে বিশেষ করে শিল্প-সাহিত্যচর্চা করেছেন অথচ তার কাছে সহযোগিতা চেয়ে পাননি এমন ঘটনা বিরল। বড়ই দুঃখজনক যে আমাদের সে বন্ধু এবং সদা বিধবা হওয়া তার স্ত্রীও এমন ঘৃণাজীবীদের হাত থেকে পরিত্রাণ পাননি। প্রায় চল্লিশ বছর আগে ধর্ম ত্যাগ করার অপরাধের (!) শাস্তি তাকে দেওয়া হচ্ছে। আর এমন ন্যাক্কারজনক কাজটি করছেন মুখে মানবতার জন্য ফেনাতোলা কতিপয় 'বিশিষ্টজন'। তাদের সে বক্তব্য এতই স্থুল ও অশোভন যে তার উদ্ধৃতি দিতেও আমার সংকোচবোধ হচ্ছে। আমি দুঃখিত খুবই বক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরলাম বলে। আসলে এই পরিস্থিতি তুলে ধরে আমাদের সমাজের বর্তমান বাস্তবতাটি বোঝাতে চেয়েছি।
এদের কাছে ধর্মীয় পরিচয়টিই প্রধান। প্রেম, ভালোবাসা, দয়া-মায়া, মানবতাবোধ কোনোকিছুরই মূল্য নেই এদের কাছে। অন্যের দুর্বল স্থানে আঘাত করে, অন্যের মুখ ম্লান করে দিয়ে এরা একধরনের অনাবিল আনন্দ লাভ করেন।
সম্ভবত সমাজ এখন এধরনের বিকৃত, হিংস্র, নিষ্ঠুর মানুষে পরিপূর্ণ। এরা সমাজে অনবরত ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়ে এক বিকৃত আনন্দ লাভ করছে। এই কাজটি এখন শুধু ইসলামী মৌলবাদীরা করছেন তা নয়। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজনও। সাম্প্রদায়িক আচরণের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক আচরণ করা কিংবা মন্দকে মোকাবেলায় মন্দ হওয়া নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। কাজেই একটি মৌলবাদী গোষ্ঠীকে প্রতিহত করতে আরেকটি মৌলবাদী গোষ্ঠীর সহযোগিতা নেওয়ারও বিপক্ষে আমি।
লেখাটি শেষ করব একটি চীনা উপকথা দিয়ে। ঈশ্বর মানুষ বানিয়ে একসময় ক্লান্ত হয়ে সহকারীদের বললেন, আমি বিশ্রামে যাচ্ছি, তোমরা জন্তুজানোয়ার বানিয়ে রাখবে। একসময় বিশ্রাম শেষে ঈশ্বর এসে দেখলেন তার সহকারীরা হিসাবের বাইরে প্রচুর জন্তুজানোয়ার বানিয়ে ফেলেছে। ঈশ্বর বললেন, আমি পৃথিবীতে সবকিছুরই একটি ভারসাম্য রাখতে চাই। তোমাদের বানানো এতবেশি পশু যদি পৃথিবীতে পাঠাই তাহলে সেখানে ভারসাম্য নষ্ট হবে।
সহকারীরা দেখলো একটা ভুল হয়ে গেছে। এত বিপুলসংখ্যক পশুকে পৃথিবীতে পাঠানোর আগে বধ করা সম্ভব নয়।
এ সমস্যা নিয়ে কেটে গেল কয়েকদিন। অবশেষে তারা একটি উপায় খুঁজে পেয়ে ঈশ্বরের কাছে গেল এবং বললো, ঈশ্বর আমরা একটা উপায় বের করেছি। যেহেতু বাড়তি পশুগুলো এখানে বধ করতে পারছি না তাই ওদের পৃথিবীতেই পাঠাবো তবে পশুর চেহারায় নয়। ওদের চেহারাটা শুধু মানুষের মতো করে দেব।
ফলে মানুষ দুই প্রকার, একদল মৌলিক মানুষ অর্থাৎ যাদের মানুষ হিসেবেই বানানো হয়েছিল। আরেকদল চেহারাটা মানুষের কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা পশু।