নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা কি ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অংশ?

মর্তুজা হাসান সৈকতমর্তুজা হাসান সৈকত
Published : 30 March 2021, 04:46 PM
Updated : 30 March 2021, 04:46 PM

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকটি ইসলামী দল ও বাম রাজনৈতিক সংঘটন ব্যাপকভাবে বিক্ষোভ ও সহিংসতা প্রদর্শন করেছে টানা কয়েকদিন২৬ মার্চ দুপুরে বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। এর কিছুক্ষণ পরে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা থানা ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা চালালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এর পাশাপাশি তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলওয়ে স্টেশনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে। সেখানেও হতাহতের ঘটনা ঘটে। 

যে দেশটি, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এক কোটিরও বেশি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে, খাবার জুগিয়ে এবং সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে বাংলাদেশের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল সে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিহত করতে এমন নজিরবিহীন ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেয় দলটি তাদের এ তাণ্ডবের পেছনে বিএনপিজামায়াতের মদদের পাশাপাশি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর কানেকশন নিয়ে বিভিন্ন কানাঘুঁষা আছে কারণ, হেফাজতের ডাকা হরতালে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন না দিলেও হেফাজত কর্মীদের সাথে রাজপথে তাদের কর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় ছিল। তাছাড়া তাদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় বাসে অগ্নিসংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ভাইরাল হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। উল্লেখ্য গ্রেপ্তার হওয়া নিপুন রায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে। 

যে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিহত করতে গিয়ে দেশজুড়ে এমন তাণ্ডবলীলা চালানো হলো, মুক্তিযুদ্ধের ঘোর দুর্দিনে সেই দেশটিই সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছিল তাছাড়া অর্থনীতি, রাজনীতি, ভৌগোলিক অবস্থান ও নিরাপত্তার প্রশ্নে এই দেশটি বাংলাদেশের সাথে সবচেয়ে গভীরভাবে জড়িত। তাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে সেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে আসবেন এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া, এখানে নরেন্দ্র মোদী তো শুধু কোনো ব্যক্তি নয়, তিনি ১৩০ কোটি ভারতবাসীর প্রতিনিধি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতবাসীকে সম্মান জানাতে হলে তার মাধ্যমেই জানাতে হতো। কারণ, তিনিই এখন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী। 

আরেকটি বিষয় হচ্ছে- বাংলাদেশ কিন্তু ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানায় নি, জানিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। মোদীর জায়গায় অন্য কেউ যদি এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকতেন তাহলে তিনিও আসতেন ভারতের জনগণের প্রতিনিধি হয়ে, যেমনটা নরেন্দ্র মোদী এসেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারত সরকারের অবদান, ভারতের সাধারণ মানুষের ত্যাগ ও সহযোগিতার কথা মনে রাখলে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আগমন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। 

তবে একটি গোষ্ঠী এবং তাদের সুবিধাভোগীরা ব্যাপারটি নিয়ে অনেক জল ঘোলা করেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি সম্পূর্ণ নতুন একটি তত্ত্ব হাজির করেছে তারা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকে রাষ্ট্রীয় সফরের চাইতে রাজনৈতিক সফর হিসেবে প্রচার করতে চাইছে৷ তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের জন্যই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর।  কারণ, সফরের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির একটা রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিলো নরেন্দ্র মোদীর দিক থেকে৷ কিন্তু বিএনপি প্রচার করছে, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়াদের কাছে টানতে বাংলাদেশের মতুয়াদের মন জয়ের চেষ্টা করতেই এই সময়ে সফরে এসেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। আসল বিষয় হচ্ছে, এই সময়ে বাংলাদেশে যখন এসেছেনই, মূল কাজ সেরে তার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে তার দল বিজেপির বিজয়ের জন্য মতুয়াদের মন জয়ের একটা চেষ্টা চালিয়ে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দিনশেষে তিনি তো একজন রাজনীতিকই। তাছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে তার দল বিজেপি ক্ষমতাসীন হতে পারলে আখেরে লাভ তো বাংলাদেশেরই। কারণ, সব পক্ষের সম্মতি থাকার পরও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে তিস্তা চুক্তি ঝুলে আছে বছরের পর বছর ধরে।

কিন্তু ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের জায়গাটি নরেন্দ্র মোদীর ভোটের রাজনীতির থেকেও অনেক বড়। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কিন্তু গতবছরই বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুজিববর্ষের সবরকম অনুষ্ঠান স্থগিত হওয়ায় সফরটিও স্থগিত হয়েছিল। তখনও কি পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন নিয়ে ডামাডোল বেজেছিল? সেই কারণেই কি গতবছরও নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন? মূলত, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তখন আসতে পারেননি বলে এখন এসেছেন। 

আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের জন্মদিন উপলক্ষে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর কাবুল থেকে ভারত ফেরার পথে পাকিস্তান সফর করে এসেছিলেন। কই পাকিস্তানে তো তখন 'গুজরাট দাঙ্গার মূলহোতা' নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে কোন বিদ্রোহ হয় নি। বিক্ষোভ সংঘর্ষও হয় নি কোথাওনরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানে গেলে পাকিস্তানের কারও কোন সমস্যা হয় না, তাহলে বাংলাদেশে কেন হয়? এর মূল কারণটা হচ্ছে রাজনীতির স্বার্থসিদ্ধি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।  

আর এই কারণেই চিহ্নিত মৌলবাদী গোষ্ঠী, তথাকথিত বাম সংগঠন স্বঘোষিত সুশীল নামধারী বিএনপি জামায়াতের এজেন্টরা নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা ও প্রতিহত করার নামে একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে মূলত এই কারণেই হেফাজতের হরতালে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন ঢুকে হামলা ভাংচুর করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, অন্তত ২০ জন গণমাধ্যমকর্মী তাদের হামলার শিকার হয়েছেন। এরাই তো ২০১৪ সালে ভারতে যখন নরেন্দ্র মোদি প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল তখন উল্লাস করে রাস্তায় রাস্তায় মিষ্টি বিতরণ করেছিল। এরাই তো অমিত শাহের নামে ভুয়া টেলিফোনের নাটক করেছিল, সে কথা কিন্তু মানুষ এখনো ভুলে যায়নি।

আবার এরাই কিছুদিন আগে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়েও সুকৌশলে ভারত–বিদ্বেষী নেতিবাচক প্রচারণা ছড়িয়েছিল। প্রথমে তারা গুজব ছড়িয়ে বলেছে যে, ভারত বাংলাদেশকে কখনোই এই ভ্যাকসিন দেবে না। এরপর সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির পর যখন প্রথমেই বাংলাদেশের জন্য পাঠানো হলো, তখন তারা ভারতকে কটাক্ষ করে নতুন মিথ্যা ছড়ানাে শুরু করলো। তারা বলতে লাগলো, ভারত আমাদের গিনিপিগ বানাচ্ছে, ভারত ভ্যাকসিনের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের শরীরে স্পাই ক্যাম (গোয়েন্দা ডিভাইস) পুশ করবে। আরও বললো, ভারতের ভ্যাকসিন পানি ও গরুর প্রস্রাব দিয়ে তৈরি। তারা এই ভ্যাকসিন না নেওয়ার জন্যও জনগণকে আহ্বানও জানিয়েছিল। কিন্তু যখন ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হলো তখন সবার আগে লাইন ধরে এরাই ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়ে এসেছে। ভ্যাকসিনের কথা যেহেতু এলোই আরেকটি তথ্য দিয়ে রাখি, এদের মুরুব্বিদের দেশ পাকিস্তান কিন্তু ভারতের এই সেরাম ইন্সটিটিউটের ভ্যাকসিনের জন্যই মরীয়া হয়ে বসে আছে। তারা আশা করছে, বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের পরও ভারত পরিস্থিতি বিবেচনায় পাকিস্তানে অবশ্যই ভ্যাকসিন পাঠাবে। মূল কথা হলো, এরা সবই জানে এবং বোঝে কিন্তু ফায়দা হাসিলের জন্য ভারত বিরোধিতার ট্রাম্পকার্ড খেলে। 

এই কারণেই ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে এবং তার আগমনের বিরোধিতা করে জল ঘোলা করছে। সাম্প্রদায়িকতা এবং ইসলামের হেফাজত করাই যদি তাদের মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর বাংলাদেশ সফরের সময় তারা প্রতিবাদ করলো না কেন? মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যার প্রতিবাদ এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমদের অন্যায়ভাবে বাস্তুচ্যুত করার কারণে বড় কোন আন্দোলন করলো না কেন বাংলাদেশে? রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনার নামে মিয়ানমার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তা, মন্ত্রীরা যখন বারবার ঢাকায় আসলেন তখনও কোন প্রতিবাদ করেনি কেন? তদুপরি, চীনের উইঘুরে মুসলিম হত্যা, গণধর্ষণের প্রতিবাদে বাংলাদেশের রাজপথে কোন প্রতিবাদ করলো না কেন? 

চীন সরকারতো ওই অঞ্চলের নাম পর্যন্ত বদলে জিনজিয়াং রেখেছে। ১ কোটি ১০ লাখ মুসলিম অধ্যুষিত সে প্রদেশে মুসলিমদের দমন পীড়নের জন্য যেসব 'পুনঃশিক্ষণ' কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে- তাতে নারীরা পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন বলে নতুন পাওয়া তথ্যে জানতে পেরেছে বিবিসি। ওই সেলগুলো থেকে প্রতিরাতে নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। সেসব নিয়ে বাংলাদেশে কোন প্রতিবাদ  নেই কেন? ইরাক যুদ্ধের সময় বহু ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছিলো আমেরিকা; বাংলাদেশে এসবেরও প্রতিবাদ হয় না, হলেও দায়সারা গোছের হয়। তাদের আসল অনুভূতি জাগে কেবল ভারতে কিছু হলে। অন্য দেশের বেলায় তাদের অনুভূতি হারিয়ে যায়, জাগে না। কারণ, মানবতার টানে তাদের অনুভূতি জাগ্রত হয় না, জাগ্রত হয় ফায়দা হাসিলের টানে। 

এই ফায়দা হাসিলের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার পেছনে ঢাকায় পাকিস্তানি দূতাবাস এবং দেশটির কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের বড় ভূমিকা থাকে বারবার সতর্ক করার পরও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা এবং ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে আসা তাদের পুরনো স্বভাবএবারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে তাদের আঁটঘাট ভূমিকা ছিল। মূলত তাদের অর্থায়নে এবং তাদের দ্বারা নৈতিকভাবে মদদপুষ্ট হয়ে বাংলাদেশের উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলি ব্যবহার করে অপপ্রচার চালিয়ে সরলপ্রাণ সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে গেছে। কিছুদিন পূর্বে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত বিরোধিতার কোন সুযোগই হাতছাড়া করতে চাইছে না পাকিস্তান। বিশ্বের দরবারে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত পাকিস্তান এখন দুই প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও বাংলাদেশের জনগণকে ভারত বিরোধী করতে চাইছে।

বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকা আইএসআই এর আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের পতন ঘটানো। এ কাজে অতীতের মতো তারা তাদের দূতাবাসকে ব্যবহার করতে পারে। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান কৌশলে এদেশে তাদের চরের সংখ্যা বহুগুণে বাড়িয়ে ফেলেছে। পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ভবিষ্যতে তা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের জন্য সংকট আরও ঘনীভূত করবে। তারা ভাস্কর্য বিরোধিতার নামে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বঙ্গবন্ধুকে বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয়। এখনো তারা বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে। এদের অনেকেই লোক দেখানো মানলেও হৃদয়ে ধারণ করে না। তাদের কাজই হচ্ছে, ভারত বিরোধিতার 'ট্রাম্পকার্ড' খেলে রাজনীতির মাঠে ফায়দা লোটা, ধর্মকে রক্ষা করা নয়। 

ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী, একইসাথে বন্ধুরাষ্ট্রও। তবে সম্পর্ক যত গভীর, যত বন্ধুত্বপূর্ণই হোক না কেন, প্রতিটি সম্পর্কেই কিছু টানাপড়েন, কিছু স্বার্থের সংঘাত থাকেই। সেটা ব্যক্তিগত সম্পর্কই হোক অথবা রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক। এরা সম্পর্কের সেই টানাপড়েনকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ইস্যু সৃষ্টি করছে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যতই সাম্প্রদায়িক হোন না কেন বাংলাদেশের প্রতি তিনি যে বন্ধুভাবাপন্ন, এ কথায় কোনো সন্দেহ নেই। ফলে, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তার বাংলাদেশ আগমনকে ঘিরে যা ঘটে গেল, এটা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই লজ্জাজনক। ভবিষ্যতে এমন কোন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে এখন থেকেই লক্ষ্য রাখতে হবে