স্বাধীনতার ৫০ বছর: ভারত জয় করে আবাহনীর ফেরা

নাজমুল হক তপন
Published : 13 March 2021, 12:55 PM
Updated : 13 March 2021, 12:55 PM

যতদূর দৃষ্টি যায় মানুষ আর মানুষ। রাজপথে, ফুটপাতে গিজগিজ করছে। গাড়িতে, এমনকি ট্রাকভরে আসছে তো আসছেই! 'আবাহনী-আবাহনী', 'বাংলাদেশ-বাংলাদেশ'- শ্লোগানে মুখরিত বিমানবন্দর এলাকা। ভক্তদের চাপ সইতে না পেরে ভেঙে পড়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনি ভারতের নাগজী ট্রফি জয় করে দেশে ফেরা আবাহনীকে বরণ করে নিতে এমনই হুলস্থুল অবস্থা হয়েছিল সেদিন।

১৯৯০ সালে ভারতের কেরালার ঐতিহ্যবাহী নাগজি ট্রফিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে আবাহনী। ওই আসরে সেরা ফুটবলারের মুকুট উঠেছিল স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলামের মাথায়। ফাইনালে তার গোলেই ভারতের সেসময়কার ফেডারেশন কাপ জয়ী সালগাওকারকে ১-০ গোলে হারায় উৎসবে মেতেছিল আবাহনী। কেরালায় উড়িয়েছিল নিজেদের বিজয় কেতন।

নাগজি ট্রফিতে ভারতের শীর্ষ দলগুলো ছাড়াও অংশ নিত দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ক্লাবগুলো। ওই টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ঢাকা মোহামেডান। রানার্স আপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় সাদা-কালো জার্সিধারীদের। সব মিলিয়ে নাগজি ট্রফি জয় আবাহনী ভক্তদের জন্য, এ দেশের আপামর ফুটবলপ্রেমীদের জন্যও ছিল বিশেষ কিছু। এ ট্রফি জয় উপলক্ষে ফুটবলারদেরকে দেওয়া সংবর্ধনায় মানুষে-মানুষে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল আবাহনী মাঠ। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরও মানুষ বাড়ি ফিরতে চাইছিল না।

সেবার গ্রুপ পর্বে আবাহনীর পথচলা শুরু হয়েছিল দারুণভাবে; ১-০ গোলে কেরালা লিগ চ্যাম্পিয়ন টাইটোনিয়ামকে হারিয়ে। টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত খেলেনি কলকাতার ইস্টবেঙ্গল। সেমি-ফাইনালে আবাহনীর প্রতিপক্ষ গোয়া লিগ বিজয়ী এমআরএফ স্পোর্টস ফাউন্ডেশন ক্লাব। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দু লেগেই এমআরএফকে ১-০ গোলে হারায় আকাশী-হলুদ জার্সিধারীরা। ফাইনালের মঞ্চে অপ্রতিরোধ্য আবাহনীকে থামাতে পারেনি সালগাওকার।  আসলামের গোলে বাজিমাত করেছিল আবাহনী।

ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া সেই গোলের স্মৃতি আজও আসলামের স্মৃতিতে অমলিন। প্রসঙ্গটি পাড়তেই এক ঝটকায় এক বুক গর্ব নিয়ে গোলের বর্ণনা দিয়ে এই সাবেক তারকা স্ট্রাইকার বলেন,  "আমাদের সঙ্গে গিয়েছিল ওয়াসিম (ব্রাদার্স ইউনিয়নের ওয়াসিম ইকবাল)। একটা পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে বল বাতাসে ভাসিয়ে দিলেন তিনি। বক্সের বাইরে দারুণ জায়গায় বল পেয়ে যাই। হেডে বল জালে জড়িয়ে দিই। বলটাও সুন্দর ছিল আর আমার গোলটাও ছিল চমৎকার।"

সেবার মুঠোভরে পেয়েছিলেন আসলাম। ট্রফির সঙ্গে টুর্নামেন্ট সেরার মুকুট জিতেছিলেন। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন টেলিভিশন। আসলাম বলেন, "টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলাম একটা ২০ ইঞ্চি সাদা-কালো ফিলিপস টেলিভিশন। ওই টিভি নিয়ে সবার মধ্যে সে কী আনন্দ! মনে রাখতে হবে ওই সময় টিভি কিন্তু বেশ বড় ব্যাপার। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতেও সেভাবে ঘরে ঘরে টিভি আসেনি তখনও।"

১৯৮০-র দশকে ফুটবলে নতুন মাত্রা যোগ করে বাংলাদেশের ক্লাবগুলো। দেশের সীমানা পেরিয়ে আলো ছড়ানো শুরু করে। যদিও বিদেশের মাটি থেকে প্রথম শিরোপা জয়ের সঙ্গে দেশের ক্লাব ফুটবলের দুই প্রতিভূ আবাহনী কিংবা মোহামেডানের যোগ নাই। ১৯৮০ সালে নেপালের কাঠমান্ডু থেকে আনফা কাপ ফুটবলে শিরোপা জেতে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। এর দুই বছর পর ভারতের দুর্গাপুরে অনুষ্ঠিত আশীষ জব্বার স্মৃতি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখায় মোহামেডান। ১৯৮২ সালের ওই আসরের ফাইনালে সাদা-কালো জার্সিধারীরা হারায় ভারত বিমান বাহিনীকে। তবে দেশের বাইরে ক্লাব ফুটবলে বাংলাদেশের প্রথম বড় অর্জন যদি বলতে হয়, প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে পড়ে কেরালার নাগজি ট্রফি। ধারে-ভারে-ঐতিহ্যে নাগজি ট্রফি ভারতের প্রাচীনতম ফুটবল টুর্নামেন্টের একটি। ১৯৫২ সাল থেকে শুরু হওয়া এ আসরে বাংলাদেশের প্রথম দল হিসাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়ে আবাহনী।

নাগজি ট্রফি জয়ের চার বছর পর কলকাতা থেকে চার্মস কাপ শিরোপা জিতে দেশে ফেরে আবাহনী। ১৯৯৪ সালের এই আসরে উপমহাদেশের সেরা দলগুলোর বিপক্ষে দাপুটে ফুটবল খেলে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতে আকাশী-হলুদ জার্সিধারীরা। অপরাজিত থেকেই শিরোপা জেতে দলটি। ওই আসরে অংশ নিয়েছিল ঢাকা মোহামেডানও। সেমি-ফাইনালে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে মোহামেডানকে ১-০ গোলে হারায় আবাহনী। শিরোপার লড়াইয়ে দলটি  মুখোমুখি হয় কলকাতা মোহামেডানের। গ্রুপ পর্বে ১-১ ড্র করেছিল এই দুই দল। কিন্তু ফাইনালে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা আবাহনীকে থামাতে পারেনি কলকাতা মোহামেডান। ২-০ গোলের জয় নিয়ে শিরোপা উৎসব করে আবাহনী। গোল করেন জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু ও মামুন জোয়ার্দার।

মানের দিক থেকে একই রকম হলেও নাগজিকে এগিয়ে রাখলেন আসলাম ও আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু। নাগজি ট্রফি জয়ের সময় আবাহনীর টিম ম্যানেজার ছিলেন চুন্নু।

দুটো আসরের তুলনা প্রসঙ্গে বলেন, "দুটো টুর্নামেন্টেই দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দলগুলো অংশ নিয়েছিল। মানের দিক থেকে একই রকম। তবে নাগজি ট্রফির আগে বাংলাদেশের কোন ক্লাব সেভাবে বড় কোন টুর্নামেন্ট থেকে ট্রফি জেতেনি। নাগজী ট্রফি জয় বেশ  আলোড়ন তুলেছিল।"

আসলামের ভাষ্য, "ঐতিহ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে নাগজিকে এগিয়ে রাখতেই হবে।"

এ একটি শিরোপা আবাহনী সমর্থকদের কিভাবে আন্দোলিত করেছিল সেটাও আসলাম মনে করিয়ে দিলেন বিমানবন্দরের সেই ফেরার ক্ষণের প্রসঙ্গ টেনে, "বিমান বন্দরে নেমে তো আমরা অবাক। চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। নিরাপত্তাবেষ্টনি ভেঙে পড়েছে। শতাধিক ট্রাক এসেছিল। বিমানবন্দরে এসেছিলেন আমার মা জাহানারা বেগম। আগে থেকে কিছুই জানতাম না। ককপিটের কাছে চলে এসেছিলেন মা। আমার জীবনে এটা খুব বড় একটা প্রাপ্তি।"

১৯৮০-র দশকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দলগুলোর সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়েছে বাংলাদেশের ক্লাবগুলো। বিশেষ করে আবাহনী ও মোহামেডান। দেশ স্বাধীন হওয়ার এক দশকের মধ্যেই দেশের মানুষের গর্ব-আবেগ-ভালাবাসার সবটুকু জায়গা জুড়ে ছিল ফুটবল। আর এই স্বপ্নের কেন্দ্রে ছিল আবাহনী-মোহামেডান। এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিল?

এ প্রশ্নের জবাবে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্না বলেন, "এর অনেকখানি কৃতিত্ব আবাহনীর। শেখ কামাল ছিলেন খেলাধুলা অন্তপ্রাণ। ফুটবলকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সমর্থন ছিল। আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ছিলাম। প্রথম থেকেই আমরা কোয়ালিটির উপর জোর দিই। বলা যায়, ওই সময় আমরা নিম্মমানের ফুটবল খেলতাম। লম্বা পাস, ড্রিবলিং- এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল আমাদের ফুটবল। ওয়ান টাচ ফুটবলের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল না। আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য আনা হল আইরিশ কোচ উইলিয়াম বিল হার্টকে। আধুনিকতার ছোঁয়া পেল ঢাকার ফুটবলে। শেখ কামাল তথা আমাদের লক্ষ্য ছিল দ্রুত এশিয়া মান অর্জন। ভাল মান ধরে রাখতে পারলে মানুষ আকৃষ্ট হবেই-এই বিশ্বাসটুকু আমাদের ছিল।"

১৯৭৫-র অগাস্ট ট্র্যাজেডির পর চরম প্রতিকুল অবস্থাতেও মানের দিক থেকে আবাহনী আপস করেনি বলে নিজের মত জানান ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে আজীবন একাত্ম হয়ে থাকা তান্না। তিনি বলেন, "আমি তিন বছর দেশে ছিলাম না। ফিরে এসে ক্লাবে যোগ দিলাম। তখন দুঃসময় চলছে। সবাইকে খুবই কষ্ট করতে হয়েছে। ডোনার ম্যানেজ করা। ভাল দল তৈরি করা, খুবই দুরূহ কাজ ছিল। ওই সময় ক্লাবের জন্য কতজনকে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, তা ভাবাও যায় না। ক্লাব কর্মকর্তারা তো কষ্ট করেছেনই, খেলোয়াড়রা পর্যন্ত অনেক কম টাকায় খেলেছেন।"

একটা সময় পর্যন্ত এশিয়া মান অর্জনের টার্গেট ছিল  আবাহনী-মোহামেডানের। দক্ষিণ এশিয়াতে ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জার ছিল বাংলাদেশ। সেই স্বপ্নরথ থেকে দেশি ক্লাবগুলো কেন ছিটকে পড়ল, এর অনেক কারণও ব্যাখ্যা করলেন তান্না।

তিনি বলেন, "ম্যানেজমেন্টের দূরদর্শিতার অভাব।  আমি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আবাহনীর ফুটবল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ছিলাম। ওই সময় মুন্নাকে ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বাকি প্লেয়াররা ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত পেয়েছিল। একটা বিষয় লক্ষ্য করার মত। মিড-নাইনটিজে বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে একটা 'জেন্টেলম্যান এগ্রিমেন্ট' হয়েছিল। কেউ অন্য কোন ক্লাব থেকে প্লেয়ার কিনবে না- এরকম একটা অলিখিত চুক্তি। আর এতে করে কয়েক বছরের মধ্যে ফুটবলারদের পারিশ্রমিক  ২ লাখ টাকায় নেমে গেল। এটা বাংলাদেশ ফুটবলকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।"

নতুন ফুটবলার উঠে না আসার জন্যও ম্যানেজমেন্টের ব্যর্থতার বিষয়টিকেই তান্না টেনে আনলেন সামনে, "আগের সংগঠকরা ছিলেন খেলাধুলার প্রতি নিবেদিত। ক্লাবকে স্থান দিতেন সবকিছুর উপরে। মফস্বল, মানে জেলা শহরগুলোতেও ক্লাব অন্তঃপ্রাণ অনেক সংগঠক ছিলেন। তারা যে কোনও মূল্যে মাঠের খেলা চালিয়ে যেতেন। এখন সংগঠকদের বড় অংশই আসে কোন না কোন ব্যক্তিগত আকাঙক্ষা নিয়ে। জেলা শহরের খেলাধুলার অবস্থা তো করুণ। আমরা দ্বিতীয়/ তৃতীয় বিভাগ ফুটবল থেকে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল প্লেয়ার পেতাম। এখন তো সে পথও কার্যত বন্ধ।"

ফুটবলের মান ক্রমনিম্নগামী, এ নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নাই। তবে এই ঘুরপাক থেকে বেরিয়ে আসার কি কোন সুযোগই নেই?

এ প্রশ্নের জবাবে কিন্তু আশার কথাই শোনালেন তান্না, "সালাউদ্দিন অনেক দিন ধরে দায়িত্বে আছে। ১২ বছর পার হয়ে গেল। হয়ত অনেক কিছুই হয়নি। তবে ফুটবল কিন্তু মাঠে আছে। সব থেকে বড় কথা ফুটবলে এখন টাকা অনেক বেড়েছে। ঢাকার ফুটবলে ৫০/৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছে ফুটবলাররা। এই টাকাটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে ফুটবলকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে  সংশ্লিষ্ট করতে পারলে  ফুটবলের এ গতি থামবে না।"

ঢাকার ফুটবলে বিদেশিদের দাপটে জাতীয় দলের ফুটবলাররাও সেরা একাদশে সুযোগ পান না, হালের আবাহনীও অনেকটা বিদেশি খেলোয়াড় নির্ভর। কিন্তু এগুলোকে খুব বড় সমস্যা দেখছেন না তান্না, "এখন একটা নতুন ফেজ। শুরুর দিকে এই ধরনের সমস্যা থাকেই। এই যে জামাল ভুঁইয়া কিন্তু দুর্দান্ত খেলছে। এছাড়া অনেকেই ভাল করছে। ভাল পারিশ্রমিক পেলে স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যেও প্রণোদনা তৈরি হবে।"

ফুটবল গতির খেলা, কিন্তু এ গতিটাই যে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ ফুটবল থেকে। ফুটবলের গৌরব, ঐতিহ্য এগুলোও আর অনুপ্রাণিত করে না। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচও এখন নিরুত্তাপ। এই লেখাটির জন্য আবাহনী ক্লাব সংশ্লিষ্ট যার সঙ্গেই কথা বলেছি, সবার এক কথা, সেভাবে কিছু মনে নাই, সুবাস সোমের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

প্রায় চার যুগ ধরে, আবাহনী ক্লাবের তথ্যভাণ্ডারের দায়িত্ব একা সামলাচ্ছেন সুবাস সোম। আমি একটা করে বিষয় নিয়ে কথা বলি আর সুবাস দা ফাঁইলের পর ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকেন। জরাজীর্ণ দশা ফাইলগুলোর। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হারিয়ে গেছে বলে জানালেন সুবাস দা। নাগজি ট্রফি নিয়ে মূল ফাইলটা খুঁজে পেলেন না। বললেন, "আমি অন্যভাবে ম্যানেজ করে দিচ্ছি। আলমারীর ভিতর থেকে একগাদা জীর্ণ-শীর্ণ ফাইল বের করে আনলেন। কিছুক্ষণ খোঁজার পর একটা কাগজ হাতে নিলেন।

এরপর জোরে জোরে পড়ে শোনালেন, 'আসলামের গোলে সালগাওকারকে ..।"

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল হচ্ছে কত কিছু। কিন্তু দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ক্লাব এখনও ঠিকঠাক ডিজিটাল হতে পারেনি। অথচ সেই কবে শেখ কামাল ক্লাবটিতে আধুনিক ফুটবল চালু করেছিলেন! আরও বিস্ময়ের কথা ডকুমেন্টেশেনের পাশাপাশি, ক্লাবের উল্লেখযোগ্য অর্জন আলাদাভাবে নিজে হাতেই লিখে রাখার কাজটিও করেছেন সুবাস সোম। তার হাতে লেখা এই নথিপত্রই ভরসা। জিজ্ঞাসা করলাম, দাদা এভাবে আর কতদিন? একটু দীর্ঘশ্বাস টেনে বললেন, "যতদিন বেঁচে আছি।"

বাংলাদেশ ফুটবলকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একটা প্রজন্ম ঢেলে দিয়েছেন তাদের জীবনীশক্তির সবটুকু। সেই আবেগ স্পর্শ করার মানসিকতা যেন হারিয়ে গেছে দেশের ফুটবল থেকে। ফুটবল মাঠে গড়াচ্ছে, করপোরেট এগিয়ে আসছে, ফুটবলারদের পারিশ্রমিক বাড়ছে। কিন্তু ভালবাসা না থাকলে দেশের এ নিষ্প্রাণ ফুটবলে কি আবার নতুন করে প্রাণ ফিরবে? এ নিয়ে আশাবাদী হওয়াটা কঠিন বৈ-কি। কিন্তু ফুটবলের প্রতি গভীর, নিবিড় ভালবাসার কারণে তান্না-আসলামদের কেউ কেউ এখনও আশার আলো দেখেন।

এ প্রজন্মের মধ্যে যে এই ভালবাসারই বড্ড অভাব। তারা ঠিক শুনতে পায় না নিঃস্বার্থ  ভালোবাসায় মোড়ানো সুবাস সোম ঘোষণার সুরে বলে যাওয়া কথাটুকু, "আসলামের গোলে সালগাওকারকে…।"