সনাতন কিংবা আসমানি কোনও ধর্মই অধর্মকে সমর্থন করে না। তাই ধর্মগ্রন্থকে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে সম্মান করে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির কৃষ্টি কালচারে বিভিন্নভাবে ধর্মযাত্রা অনুপ্রবেশ করে পর্যায়ক্রমে অভিযোজিত হয়েছে। একই ধর্ম বিভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশের যাত্রায় ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপিত হয়েছে।
এ বাস্তবতার মূল কারণ হলো যখন যে দেশে, যে সময়, যে অঞ্চলে ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটতে শুরু করেছে- ওই সময়ে ওই দেশে চলমান সংস্কৃতি, সামাজিক বাস্তবতা ও মানুষের শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞান-গরিমার বাস্তব অবস্থান ধর্মকে গ্রহণের ক্ষেত্রে কতটুকু সহায়ক ছিল তার উপর নির্ভর করতে হয়েছে। সে কারণে, যে জাতি লেখাপড়ায় পিছিয়ে ছিল তাদের মধ্যে ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যত বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে- এমনকি রক্তপাত হয়েছে, সে তুলনায় অপেক্ষাকৃত সভ্য, আচরণগতভাবে বিনয়ী, জাতিগোষ্ঠির মধ্যে ধর্মের যাত্রা শুরুতে কিছুটা অসুবিধা দেখা দিলেও এতটা প্রকট ছিল না। আবার যেসব অতিমানবের হাত ধরে এটি চর্চিত হয়ে মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হয়েছে, সেসব মহামানবদের ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান-গরিমা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কৌশল, উদ্দেশ্য-মিশন-ভিশন, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গৃহীত নীতিমালা এবং পূর্বাপর পরণতি কী হতে পারে সে বিষয়ে গভীর অন্তরধ্যানকে কাজে লাগিয়ে তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার মত নানা বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সেসময়ের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে।
ইতিহাসের দিকে আমরা নজর দিলে দেখতে পাই খোদ আরবে ইসলাম ধর্মের অভিযাত্রায় রাসুল ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) ধর্ম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক প্রকট বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ফলে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক প্রাণহানিও ঘটেছে। শত শত কারণ থাকলেও অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সেসময়ের আরব রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ ছিলেন অশিক্ষিত, বর্বর, অসভ্য। আবার একই ধর্ম আমাদের অঞ্চলে প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্যরকম ভিন্নতা কাজ করেছে। এ অঞ্চলে সাধকশ্রেণি ও সুফি শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে এসে, যে যে অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছেন সে অঞ্চলের মানুষের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, সামাজিক রীতিনীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য নানা বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে চলমান সংস্কৃতির মধ্যে ধর্মকে শান্তিপূর্ণভাবে অভিযোজিত করে ধীরে ধীরে মানুষের অন্তরে গ্রোথিত করবার দারুণ প্রয়াস চালিয়েছেন। ফলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবতারণা করবার প্রয়োজন পড়েনি। মাজারকেন্দ্রিক আচার-আচরণকে এখনো অনেক মানুষ পছন্দ করেন না; সেটি নিয়ে তর্ক বিতর্ক না করে একথা বলা যায়- এসকল মানুষ ধর্মজ্ঞানে আধ্যাত্ম্য সাধন করে তাদের ধর্মীয় জ্ঞানের আলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন আন্তরিকভাবে। বলে রাখা দরকার, অধর্মজ্ঞানে অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যারা ভণ্ডামি করেছেন, তারা আমার এই আলোচনার অংশ নয়। কেননা আমি বিশ্বাস করি অধর্মের ধর্ম-কর্ম, ধর্মের অন্তরায়। এ সব শ্রেণির মানুষ দ্বারা ধর্ম কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা গবেষণা করেও উপসংহার টানা খুব মুশকিল।
প্রখ্যাত সংস্কৃতিতাত্ত্বিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী তার সংস্কৃতি -কথা প্রবন্ধে বলেন-
ধর্ম সাধারণ লোকের কালচার, আর কালচার শিক্ষিত, মার্জিত লোকের ধর্ম।… সাহিত্য, শিল্প, সংগীত কালচারের উদ্দেশ্য নয় -উপায়। উদ্দেশ্য, নিজের ভেতরে একটা ঈশ্বর বা আল্লা সৃষ্টি করা। যে তা করতে পেরেছে সে-ই কালচার্ড অভিধা পেতে পারে, অপরে নয়। বাইরের ধর্মকে যারা গ্রহণ করে তারা আল্লাকে জীবন প্রেরণারুপে পায় না, ঠোঁটের বুলি রূপে পায়।… আল্লাকে সে স্মরণ করে ইহলোকে মজাসে জীবন-যাপন করবার জন্য আর পরকালে দোজখের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে, অথবা স্বর্গে একটা প্রথম শ্রেণীর সিট রিজার্ভ করার আগ্রহে- অন্য কোন মহৎ উদ্দেশ্যে নয়। ইহকালে ও পরকালে সর্বত্রই একটা ইতর লোভ।
তার সংস্কৃতি-কথা লেখায় জর্জ বার্নার্ড শ-র উক্তি Beware of the man whose God is in the skies উল্লেখ করে মোতাহের হোসেন চৌধুরী লিখেছেন, '… কেন না, তার দ্বারা যেকোনো অন্যায় ও নিষ্ঠুর কাজ হতে পারে।… অপরদিকে কালচার্ড লোকেরা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে অন্যায় আর নিষ্ঠুরতাকে; অন্যায় নিষ্ঠুরতাকে তো বটেই, ন্যায় নিষ্ঠুরতাকেও।
কেননা মূলত ধর্মের সার্বিক ক্ষতির খলনায়ক তারাই যারা ধর্মকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন এবং তখনই সেটা অধর্মের রূপ নিয়েছে তাতে ব্যক্তির লাভ হলেও ধর্মের কোনো লাভ হয়নি বরং ধর্ম সেখানে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। অন্যায়ভাবে অন্যের কাছে ধর্ম সমালোচনার বিষয়বস্তু হয়েছে। ধর্মকে ব্যবহার করে কিংবা ধর্মকে সামনে রেখে ক্ষমতা, জোরজবরদস্তি, রাষ্ট্রদখল কিংবা অন্যের হক মেরে ধর্মকে কারণ হিসেবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করবার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যেক্ষেত্রে, ঠিক সেখানেই তখন ধর্ম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষের সংস্কৃতিকে আঘাত করে, জোর জবর দখল করে, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নিয়ে তাদেরকে বাধ্য করে, ধর্মান্তরিত করবার প্রয়াসকে এবং ক্ষেত্রবিশেষ পরাজিত দেশের মানুষকে যা ইচ্ছে তাই কাজে ব্যবহার করে মানবাধিকার লংঘন করাকে যেভাবেই আখ্যায়িত করা যাক না কেন, এমন আচরণে ধর্মের উন্নতি হয়েছে তা বলাটা সমীচীন নয়। বরং অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে যেসব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আর্তচিৎকার ওই ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, এমনকি তাতে ধর্মই অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিদায় হজের ভাষণে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন – যার যার ধর্ম তাকে পালন করতে দাও, জোর করে কাউকে ধর্ম চাপিয়ে দিও না, অনুপ্রাণিত হয়ে স্বেচ্ছায় কেউ যদি তোমার ধর্মে আসতে চায় তাকে গ্রহণ করো।
ধর্মকে অধর্মের হাত থেকে রক্ষা করার মানসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের, সংগ্রামের, সাধনার, গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক সাম্যমূলক অর্থনৈতিক আদর্শভিত্তিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র- বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের বন্দিশিবির থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন: "আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোনো ধর্মীয় ভিত্তিক হবে না। ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এ দেশের কৃষক শ্রমিক, হিন্দু মুসলমান সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।"
সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন বা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা নিষিদ্ধ করা হয়। তাতে স্পষ্ট বলা হয়- "ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, রাজনৈতিক উদ্দেশে ধর্মের ব্যবহার এবং কোন বিশেষ ধর্মাবলম্বীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ করা হলো।"
লোকবিজ্ঞানী অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান তার নির্বাচিত প্রবন্ধে এক আলোচনায় বলেন- "এমন এক রাষ্ট্র গঠন ও সংবিধান রচনা বাঙালির ঐতিহাসিক বোধ, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার পরিচায়ক। বাঙালি জাতির এর চেয়ে বড়ো সাফল্য, বড়ো অর্জন ইতিহাসে আর নেই।…কিন্তু বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস এবং মধ্যযুগের ভারতবর্ষে মুসলিম শাসকদের রাষ্ট্র ও ধর্মনীতির সঙ্গে পরিচয়হীনতার কারণে অথবা রাজনৈতিকবোধের পশ্চাৎপদতার জন্য স্বৈরশাসক জিয়া-এরশাদ এবং পাকিস্তানের গোপন দোসর মোশতাক ও তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা মিলে বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের মূল স্রষ্টা শেখ মুজিবকেই শুধু হত্যা করেনি, রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তন করে একে একটি পাকিস্তানি ধাঁচের ধর্মপ্রবণ পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।"
তার বক্তব্য বিশ্লেষণে এটি খুব স্পষ্ট করেই বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় ধর্মের সুন্দরতম প্রকাশ ছিল- যেখানে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল ধর্মের মানুষ যার যার মতো করে ধর্ম পালন করবে, ধনী-গরীব, শ্রমিক মজুর, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, সকলেই সুখে থাকবে। অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এর বক্তব্যে একথা স্পষ্ট যে ধর্মের সুন্দরতম চর্চাকে পরিহার করে স্বৈরাচার এবং খন্দকার মোশতাকরা ধর্মকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। অধর্মের ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
খুব গভীরভাবে আলোচনা করলে বাংলাদেশের মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠের 'ধর্ম' একটি বিদেশি ভাষা হওয়ার কারণে একটি বিশেষ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে নিজেদের সম্পদে পরিণত করার প্রয়াসে ধর্মের ভাষা-শিক্ষা ও বোধ তৈরিতে গ্রামেগঞ্জে অপেক্ষাকৃত কম সুবিধাপ্রাপ্ত, আধুনিক শিক্ষাবঞ্চিত মানুষের হাতে তুলে দেন এ ধর্ম শিক্ষা দেওয়ার গুরুদায়িত্বটি। ফলে অক্ষর জ্ঞান দেওয়া ছাড়া ধর্মের মর্মবাণী, মূল্যবোধ, স্রষ্টা জ্ঞানের অসীমতা, দর্শন ইত্যাদির কোনও কিছুই শিক্ষার্থীর মনস্তত্ত্বে পৌঁছায় না। নিজের অজ্ঞতার কারণে যা কিছু অতিরিক্ত শেখাবার চেষ্টা করেছেন তার বেশিরভাগই ভুল কিংবা অধর্মে ভরা। ফলে স্রষ্টার প্রেম ভালোবাসা কিংবা পরকালের পুরস্কার লাভের জন্য ধর্ম সম্পর্কীয় যে-জ্ঞান যেভাবে অর্জন করা অনিবার্য ছিল, শুরুতেই তা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। ফলে এখনো পর্যন্ত ধর্মচর্চায় আমরা যে ভাষা ব্যবহার করে থাকি তার অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে না পারায় শুধুই পাঠ করে চলি প্রকৃত অর্থে দাঁড়ি, কমা, আবেগ-অনুভূতিকে যথাযথভাবে নিবেদন করতে ব্যর্থ হই। ধর্মীয় আচার পালনে ব্যত্যয় না ঘটলেও এক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ অন্তরাত্মা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রেমে সফলভাবে নিজেকে নিবেদিত করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে, তাতে কোন সন্দেহ নাই। মাতৃভাষায় ধর্মচর্চা করার ধর্মীয় সংস্কৃতি শুরু থেকে গড়ে উঠলে হৃদয়াঙ্গম করা যেমন সহজ হতো তেমনি করে ধর্মচর্চায় অশিক্ষিত মানুষের মনগড়া ভুলেভরা চিন্তা চেতনা থেকে মানুষ রক্ষা পেত।
আমাদের দেশে ধর্মচর্চার হালনাগাদ চিত্র অনুধাবন করলে যতটুকু পরিতৃপ্তি অনুভব করি বিপরীতে ধর্মকে সামনে রেখে অধর্মের দৃষ্টান্ত আমাদেরকে অনেক বেশি মর্মাহত করে। ধর্মচর্চার নামে কিছু কিছু মানুষকে দেখা যায়, দেশজ নিজস্ব সংস্কৃতিকে ন্যাক্কারজনকভাবে আঘাত করতে। পাশাপাশি তাদের মতের বাইরে ভিন্নমতের কাউকে সম্মান দেখানো তো দূরের কথা, রীতিমতো ধর্মের শত্রু হিসেবে তাকে চিহ্নিত করে ক্ষেত্রবিশেষ তার মৃত্যুকে নিশ্চিত করা হয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হুমায়ুন আজাদ থেকে শুরু করে অনেক প্রগতিশীল লেখকদের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এমনটাই চোখে পড়ে। অহরহ আরেকটি বিষয় ধর্মের সৌন্দর্যকে অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছে ইতোমধ্যে, তা হলো আমরা প্রায়ই দেখে থাকি সরকারি জায়গায় সরকারের অনুমতি ব্যতীত কিংবা একে অপরের ব্যক্তিগত দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের সুবিধা নিয়ে প্রকৃত হকদারকে বঞ্চিত করে যেনতেনভাবে সেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। স্পর্শকাতরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কারো কাছে গিয়ে তার জায়গাটুকু উদ্ধার করতে পারেনা। সর্বশেষ এ অধর্মের বিচার চায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল পরম স্রষ্টা করুণাময়ের কাছে। মনে রাখা দরকার, যারা জেনে শুনে অন্যায়ভাবে পরকালের পুরস্কার লাভের প্রত্যাশায় অন্যের হক বঞ্চিত করে যে উপসনালয় তৈরি করা হয় তা ধর্ম দ্বারা সমর্থিত নয়; এমনকি এমনতর অধর্মের ক্ষেত্রে ওই প্রার্থণালয় বসে পরম করুণাময়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও প্রকৃত হকদার যদি ক্ষমা না করেন, পরম করুণাময়ের কাছে ক্ষমা পাওয়াটা খুব সহজ নয় বলেই আমরা জানি। কাজেই যারা এরকম কাজের সাথে ব্যস্ত রয়েছেন বিশেষ করে না বুঝে যারা সাহায্য সহযোগিতা করছেন, ধর্মের নামে অধর্ম আপনার জন্য যেমন ক্ষতিকর হচ্ছে একইভাবে ধর্মের সৌন্দর্য, দর্শন, মহাত্ম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং নিঃসন্দেহে পরকালের পুরস্কার প্রাপ্তি থেকে আপনি দূরে সরে যাচ্ছেন। জেনে রাখা দরকার, অধর্মের ধর্ম-কর্ম ধর্মের অন্তরায়।